আনন্দময় ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
1810

#আনন্দময়_ভালোবাসা
#নিয়াজ_মুকিত
#৪র্থ_পর্ব

লোকটা রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”বলুন এবার আপনার সমস্যা গুলো।আপনি কেন এভাবে শুয়ে আছেন?আপনার তো এখন এভাবে থাকা যাবেনা।আপনার শশুর বাড়ির লোকজন কি তা জানে না?”
প্রায় এক নিশ্বাশে কথা গুলো বলে ফেলে লোকটা।রিকসা চলছে।রিমি খানিকক্ষন লোকটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে,
“অনেক কথা,শুনতে শুনতে বিরক্ত হবেন।”
লোকটা অবাক নয়নে রিমির দিকে তাকিয়ে খানিকটা মুচকি হেসে বলে,”ওকে”
রিক্সা নিজ গতিতে চলছে।লোকটা কোন কথা বলছে না,সাথে রিমিও কোন কথা বলছে না।দুজনে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। একপর্যায়ে রিস্কা এসে থামে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে।লোকটা একলাফে রিক্সা থেকে নেমে পকেট থেকে টাকা বের করে রিকশাওয়ালাকে দেয়।রিমিকে রিকশা থেকে নামতে বলে।রিমি রিকশা থেকে নামলে,রিক্সাওয়ালা মুহূর্ত দেরি না করে সেখান থেকে চলে যায়।লোকটা একবার ভালো করে রিমির সম্পূর্ণ শরীরের দিকে তাকায়।তারপর মন্তব্য করে,

“আপনার আগে শপিংমলে যাওয়া উচিত ছিল।এ অবস্থায় এখানে আসা ঠিক হয়নি।ওকে এসেই যখন পড়েছি,ওড়নাটা ভালো করে বেঁধে নিন নিচের দিকটায়।যাতে রক্তগুলো দেখা না যায়।খাওয়া-দাওয়া করে শপিং মলে গিয়ে কাপড় কিনব।চলুন আমার সাথে ভিতরে যাই।এবার রিমি ভালো করে ওড়নাটা বেঁধে নিয়ে লোকটার সাথে চলতে শুরু করে।রেষ্টুয়েন্টে প্রবেশ করতেই কয়েকজন লোকটাকে সালাম দেয়।লোকটা তাদের কিছু কথা বলে,রিমিকে নিয়ে একটা কোণে টেবিলে বসে।রিমি মাথা নিচু করে বসে আছে। লোকটা এক নয়নে রিমির দিকে তাকিয়ে আছে।একটা ছেলে বিভিন্ন রকমের খাবার এনে টেবিলে রাখে।লোকটা চশমা খুলে রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“নিন খাওয়া শুরু করুন! আমিও খাচ্ছি আপনার সঙ্গে।”

এতটা পরিমাণে ক্ষুধা ছিল যে রিমি খপখপ করে খেতে শুরু করে।লোকটা অবাক হয়ে রিমির খাওয়া দেখছে।ক্ষুধার জ্বালায় একপর্যায়ে রিমি সব খাবারই খেয়ে ফেলে।তার এতটা পরিমাণে ক্ষুধা লেগেছিল যা বলে বোঝানোর নয়।লোকটা রিমি কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“বলুন এবার,খুব শুনতে ইচ্ছে করছে আপনার কাহিনীটা।”

রিমি আর কোন কথা না বলে ডাইরেক্ট বলতে শুরু করে,

“এই যে আমার পেটটা দেখছেন না এত ফুলে গেছে,আসলে আমি প্রেগনেন্ট নই।”

লোকটা খানিকটা তাজ্জব হয়ে বলে,”কি বললেন?”

রিমি মাথা নীচু করে বলে,”হ্যাঁ,একদিন আগেও ঠিক ছিলাম।হঠাৎ একদিন সকালে উঠে দেখি আমার পেটটা অনেক দূর ফুলে আছে।প্রথমদিন গায়ে না লাগালেও পরের দিন সকালে উঠে দেখে পেটটা আরো ফুলে গেছে।সেদিনই সম্পূর্ণ গ্রামের রটে যায় আমি পরকীয়ায় মেতে আছি।তার উপর আবার আমার স্বামী বিদেশে থাকে। আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সেটা বিশ্বাস করে নেয়।আমাকে বের করে দেয় বাসা থেকে।সেদিন ভেবেছিলাম আমার স্বামী যদি থাকতো তাহলে হয়তো আমাকে ভুল বুঝতো না।কিন্তু পরে বুঝলাম সেটাও ভুল।আমার স্বামী ও আমাকে ভুল বুঝল।সে আমার কোন কথা না শুনে আমাকে অবিশ্বাস করে চলে গেল।অন্তত তার উচিত ছিল আমার কথাটা শোনা।তাই না?”

লোকটা শুধু নীরবে মাথা নাড়ায়।আর বলে,

“আপনার স্বামী বিদেশ থেকে কবে আসছে এটা জানেন?আর কখনই বা আপনার সঙ্গে দেখা হলো?আপনি তো অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিলেন।তার পরেই তো আমি তুলে আনলাম।তার আগে কি দেখা হয়েছিল?”

রিমি মাথা নাড়িয়ে বলে হ্যা।সাথে মুখ ফুটিয়ে বলে,
“অজ্ঞান হওয়ার আগে আমি সেখানে বসেছিলাম।হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আমার মাথায় পানি ছুড়ে মারে।আমি অবাক হয়ে পেছনে তাকালে দেখি আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে আমার স্বামী।আমার মনটা খুশিতে নেচে ওঠে।তাড়াতাড়ি অনেক কষ্ট করে হলেও তার কাছে যেতে চেষ্টা করি।কিন্তু তার কাছে যেতেই সে খানিকটা ঘৃণিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

“তোমার মত কলঙ্কিত মেয়ে আমার কাছে আসবে না।দূরে থাকো। তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম,মন-প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসে ছিলাম।তাও কেন আমার সাথে ঠকবাজি করলে?”

সে আর আমার কোন কথা না শুনে সেখান থেকে চলে যায়।তারপর পরেই তো আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।
এই কথা বলে রিমি কান্না করতে শুরু করে।রেষ্টুয়েন্টের সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।লোকটা তার হাতটা রিমির মাথার উপর রেখে বলে,”বুঝেছি,চলুন।এখন আপনাকে শপিংমলে নিয়ে যাই।তারপর ডাক্তার দেখাবো।”

রিমি নিজের চোখের পানি মুছে বলে,

“আমার জন্য কেন এত কিছু করছেন?”

লোকটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

“মানুষ তো মানুষের জন্যই।আমি না হয় আপনার জন্য এটুকুই করছি,আপনি হয়ত আমার একদিন অনেক বড় উপকারে আসবেন।”

লোকটা উঠে দাঁড়ায়।রিমিও তার সাথে উঠে দাঁড়ায়।লোকটা চলতে শুরু করে।রিমি লোকটার পিছন পিছন হাটতে শুরু করে।লোকটা রেস্টুরেন্ট হতে বের হয়ে একটা রিকশা কে ডাক দেয়।রিক্সা তাদের সামনে থামলেই দুজনে উঠে বসে।লোকটা রিকশাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”শপিংমলে আগে চলুন।”

তারপর সম্পূর্ণ রাস্তায় তারা দুজনে কোন কথা বলে না।রিক্সাওয়ালা এসে থামে একটা শপিং মলের সামনে।আগেরবারের মতো লোকটা আবার রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমে রিকশা ভাড়া পরিশোধ করে। রিমিকে নামতে বলে।রিমি আস্তে করে নেমে আসে।রিমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে নেয় সব ঠিক আছে কিনা।লোকটা আর রিমি ভিতরে যায়।লোকটা রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আপনার কি কি প্রয়োজন বলেন?”

রিমি খানিকটা মুচকি হেসে বলে,
“এমনিতেই আপনি দয়া করে আমাকে কিনে দিচ্ছেন।তার ওপর আমি আবার আবদার করবো।না আপনার যেটা পছন্দ হয় সেটাই দিন।লোকটা খানিকক্ষণ রিমির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে, “ওকে,আমার সাথে আমার সাথে আসেন”

তারপর লোকটা গিয়ে দাঁড়ায় একটা দোকানের সামনে।দোকানদার কে উদ্দেশ্য করে বলে,”ভাইয়া ভালো একটা শাড়ি দেখান তো অবশ্যই শাড়িটা খয়রি রঙের হতে হবে।”লোকটার কথা অনুযায়ী দোকানদার একটা শাড়ি নিয়ে আসে।শাড়িটা খুব পছন্দ হয় রিমির। সাথে লোকটারও পছন্দ হয়।সেই শাড়িটা কিনে নেয় লোকটা। রিমির হাতে দিয়ে বলে,
“যান ট্রায়াল রুম থেকে চেঞ্জ করে আসুন।”

রিমি ট্রায়াল রুমে গিয়ে কাপড় টা চেঞ্জ করে বাইরে আসে।লোকটা তার জন্য অপেক্ষা করছে।লোকটার কাছে যেতেই লোকটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“এবার চলুন ডাক্তারের কাছে।সব পরীক্ষা করে দেখা দরকার, আমারও আপনার বিষয়ে খুব কৌতুহল।”

তারা বাহির হয়ে আসে। লোকটা একটা রিক্সা ডাক দেয়।দুজনে রিক্সায় উঠে বসে। রিক্সা চলতে শুরু করে,গিয়ে থামে একটা মেডিকেলের সামনে।লোকটা রিকশা থেকে নেমে রিমিকে নামতে বলে।লোকটা ভাড়া পরিশোধ করে রিমিকে নিয়ে ভিতরে যায়। ডাক্তারকে দেখিয়ে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্টের অপেক্ষায় বসে থাকে।কি রিপোর্টে আসবে ভেবে পাচ্ছেনা তারা।আসলে কি তার পেটে বাচ্চার আছে নাকি অন্য কিছু?

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে