আনন্দময় ভালোবাসা পর্ব-০১

0
3472

#আনন্দময়_ভালোবাসা
#নিয়াজ_মুকিত
#১ম_পর্ব

১.
যেদিন রিমির স্বামীর বিদেশ যাওয়ার ২বছর পূর্ণ হয় সেদিন থেকে হঠাৎই রিমির পেট ফুলতে শুরু করে।গ্রামের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে স্বামী বিদেশ থাকায় পরকিয়ায় মেতে উঠেছে রিমি,নাহলে ২বছর ধরে যার স্বামী বাহিরে সে কিভাবে গর্ভবতী হয়?রিমির শশুড় বাড়ির সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিমিকে তারা বাসা থেকে বের করে দিবে।এরকম একজন কলঙ্কিনিকে বাসায় রাখলে বাসায় ফেরেশতাও‌ আসবে না।কিন্তু রিমি বুঝতে পারছে না তার পেটটা হঠাৎ ফুলে উঠলো কেন?এত পরিমাণে ফুলে উঠেছে যে,অন্য কেউ কেন সে নিজেই দেখলে মনে হবে পেটের মধ্যে বাচ্চা রয়েছে।
এদিকে রিমিকে বাসা থেকে বের করার প্রস্তুতি চলছে।সারা গ্রামের মানুষ এসে ভীড় জমিয়েছে তাদের বাড়ির সামনে। রিমি চুপ করে নিজের ঘরে বসে আছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অঝোর ধারায়।বিয়ের ২বছর হতে না হতেই শশুর বাড়ি থেকে চলে যেতে হচ্ছে তাকে।এমন সময় ঘরে প্রবেশ করে রিমির শাশুড়ি।তিনি রিমির সামনে এসে দাঁড়িয়ে সপটে থাপ্তর চালিয়ে দেন রিমির গালে।রিমি বিন্দুমাত্র অবাক হয় না।তার শাশুড়ি বলতে শুরু করে,

“তোকে এখনো এ বাড়িতে রেখেছি এটা তোর চানকপাল।ছি.আমার ছেলেটা তোকে বিশ্বাস করে বাসায় রেখে গিয়েছে আর তুই ব্যবসা খুলে বসেছিস।নিজের মামাতো,খালাতো,চাচাতো সব ভাইকে ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করিস।আমরা কি কিছুই বুঝিনা।তখন কিছু বলিনি,আজকে প্রমাণ পেয়ে বললাম।তুই আর এক মুহুর্ত আমার বাসায় থাকবি না।আমার ছেলে তোর মতো মেয়ের মুখ দেখতে চায় না।”

তার শাশুড়ি যে তাকে অপমান করলো তাতে তার কষ্ট নেই কিন্তু তার মামাতো,খালাতো,চাচাতো ভাইদের অপমান করার কারনে তার খুব রাগ উঠে যায়।বহু কষ্টে রাগটাকে দমন করে চিল্লিয়ে কান্না করতে করতে বলে,

“আজকে বের করে দিলেন আমার কথা না শুনে।তবে যেদিন প্রমাণ করতে পারবো এই অপবাদটা আপনারা ভুল মানুষকে দিয়েছেন সেদিন আমি আর এই বাড়িতে থাকবো না।মনে রাখবেন”

এই কথা বলে কান্না করতে করতে বাসা থেকে বের হয়ে আসে রিমি।ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ছে।বাড়ির আঙ্গিনায় সব মানুষের ভীড় ঠেলে কান্না করতে করতে বের হয়ে আসে রিমি।হাটতে শুরু করে অজানা উদ্দেশ্য।তার পিছন পিছন হাটছে কৌতুহলি বালকের দল।তারা রিমির দিকে তাকাচ্ছে আর পিছন পিছন হাটছে।একপর্যায়ে তারা রিমির পিছন পিছন চলা বাদ দিয়ে দেয়।রিমি হাটতেই থাকে।নিজের বাসায় যে যাবে তার ভাড়াটাও নেই।বাসায় যেয়েই বা কি করবে?বাবা-মায়ের বোঝা হতে চায় না সে।রিমি কান্না করছে আর হাটছে।সে যে ডাক্তারের কাছে যাবে তারও টাকা নেই।অথচ তার এখন ডাক্তারকে দেখা সবচেয়ে বেশি জরুরি।

পেট জানান দিচ্ছে যে,বিপুল পরিমাণে ক্ষিধা লেগেছে।হাত-পা জানান দিচ্ছে আমরা খুব ক্লান্ত।রিমি তবুও হাটতেই থাকে।সন্ধ্যে নামছে পশ্চিম দিগন্তে।রাত নামার আগে তাকে নিরাপদ একটা জায়গা খুঁজে বের করতে হবে রাত্রীযাপনের জন্য।‌রিমি হাটতে হাটতে সামনে দেখতে পায় একটা বাসা।আর চারদিকে কোনো বাসা নেই।একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বাসাটা।অযত্নে-অবহেলায় জসে পড়ার মতো অবস্তা।রিমির মনে বিরাজ করছে আরেকটা বিরাট বড় চিন্তা।কালকে তার পিরিয়ডের ডেট রয়েছে।কি করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না?আপাতত পেটটাকে শান্ত করতে হবে।কিন্তু তার কাছে কোনো টাকা নেই।কিভাবে পেটকে শান্ত করবে?সে আস্তে আস্তে বাসাটার দিকে এগোতে থাকে।একপর্যায়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে।ভিতরে ঢুকে সে আজব কিছু জিনিস দেখতে পায়।অনেকগুলো কুকুর বাসা বেধেছে বাসাটায়।রিমি সেখানে একটা জায়গা খুঁজে পায় থাকার মতো।সিদ্ধান্ত নেয় সেখানেই‌ রাত কাটাবে।এখন সমস্যা হলো কি খাবে?খাবারের জন্য ক্লান্ত শরির নিয়ে বের হয় রিমি।মেইনরোড দিয়ে হাটতে শুরু করে।হঠাৎ পিছন থেকে তাকে ফেলে দেয় একটা গাড়ি।রিমি চটকে পড়ে যায় একদিকে।প্রচন্ড ব্যাথা পায় সে।শরিরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্ত বের হতে শুরু করে।গাড়িটা চলে গেছে সেখান থেকে।এমনিতেই রিমি দুর্বল হয়ে আছে তার উপর আবার এক্সিডেন্ট।প্রভু কি একদিনেই তাকে সব বিপদ দিচ্ছে।রিমি যে উঠে দাঁড়াবে তার শক্তিটাও নেই।বাধ্য হয়ে সেখানেই শুয়ে চোখের পানি ফেলতে শুরু করে।হঠাৎ সে তলপেটে ব্যাথা অনুভব করে।বুঝতে পারছে পিরিয়ড শুরু হবে কিছুক্ষন পরই।

রিমি রাস্তায় শুয়েই চোখের পানি ফেলছে।কেউ তাকে তোলার মতো নেই।তার নিজেরও উঠার শক্তি নেই।কিছুক্ষন শুয়ে থাকার পর তার সমস্ত শরির চিনচিন করতে শুরু করে।মনে হয় সব রক্ত শেষ।রিমি বহুকষ্টে উঠে বসে।কিন্তু দাঁড়ানোর শক্তি নেই তার।রিমি উঠে বসে তাকিয়ে দেখে সমস্ত রাস্তায় তার রক্ত।হাতের কনুই ছিলে গেছে।ব্যাথায় হাতটাও নড়াতে পাড়ছে না সে।

রিমি নিরবে চোখের পানি ফেলতে শুরু করে।হঠাৎ চোখ খুলে পাশে একটা লাঠি দেখতে পায়।সেটাতে ভর দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলে প্রথমবার ব্যার্থ হয়।দ্বিতীয় বারও ব্যার্থ হয়ে।মনে পড়ে ছোটবেলার পড়া।রাজা রবার্ট ব্রুস সাতবারের বার যুদ্ধ করে সফল হয়েছে।রিমি আবার চেষ্টা করে।এবার সফল হয় সে।সে মনে মনে বুঝতে পারে যে,রবার্ট ব্রুসের চেয়ে সে এগিয়ে আছে।

আস্তে আস্তে হাটতে শুরু করে সে।তাকে যেতে হবে রাত্রীযাপনের জন্য যে জায়গাটা দেখে রেখে এসেছে সেখানে।এত ব্যাথা করছে যে,ব্যাথার কারণে ক্ষিধার কথা ভুলেই গেছে।এখনো রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি।একপর্যায়ে রিমি পৌঁছে যায় কাঙ্খিত সেই জায়গায়।আস্তে আস্তে বসে পড়ে সেখানে।বাসাটা ভালো থাকা অবস্তায় এই জায়গাটা যে চিলেকোঠা ছিল সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার।

রক্ত জমাট বেধেছে সমস্ত গায়ে।পরিষ্কার করারও ইচ্ছা জাগছে না তার মনে।একদিকে প্রচন্ড ব্যাথা অন্যদিকে প্রচন্ড ক্ষিধা।অনুপস্তিত রয়েছে শুধু ঘুমটাই।তাই সে মনে মনে ঘুম ডাকতে শুরু করে।এই মুহুর্তে তার ঘুম দরকার।পেটটা আস্তে আস্তে আরো ফুলতে।রক্ত জমাট বাঁধা জায়গা গুলোয় ব্যাথা আরো বাড়ছে।তাদের সাথে তাল মিলিয়ে বেরে চলেছে ক্ষিধা।আচমকা ঘুম এসে থামিয়ে দেয় সবকিছুকে।শান্ত করে দেয় সমস্ত শরিরটাকে।রিমিকে নিয়ে রওনা হয় তার দেশে।

২.
রাত ২টার কাছকাছি সময়।আচমকা ভুক ভুক করে ডাকতে শুরু করে কুকুর নামক প্রাণী গুলো।কিছুক্ষন ডেকে শান্ত হয় তারা।রিমি জাগনা পায়নি এখনো।এত ব্যাথা যে ঘুম থেকে উঠছেই না।কেটে যায় কিছু সময়।
আচমকা চিল্লিয়ে উঠে বসে পড়ে রিমি।তলপেটটা অসহনীয় ব্যাথা করছে।আপনা-আপনি চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে।ঠোঁট দুটো জাপটে ধরেছে নিজেদেরকে।হাত গুলো খামছে ধরেছে নিচে থাকা মাটিগুলোকে।রক্তে ভিজে যাচ্ছে পাজামা।রিমি শুধু কান্না করছে আর মনে প্রাণে আল্লাহকে ডাকছে।সব ব্যাথা=পিরিয়ডের ব্যাথা+এক্সিডেন্টের ব্যাথা+শাশুড়ির থাপ্তরের ব্যাথা যুক্ত হয়ে সমস্ত শরিরে হুলস্তুুল কান্ড শুরু করেছে।একপর্যায়ে রিমি চিল্লিয়ে কান্না করতে থাকে।আর সহ্য করতে পারছে না ব্যাথা।সৃষ্টিকর্তা কেন মেয়েদেরকে এতোটা কষ্ট দেয় এই সময়গুলোতে।কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না সে।চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কাঁদছে।কুকুর গুলো সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে রিমির কান্ড-কারখানা।এমন সময় সেখানে প্রবেশ করে কয়েকটা ছেলে।একজন রিমিকে এই অবস্তায় দেখার সাথে সাথে বলে,

“ওহ,আজকে কার মুখ দেখে সকালে উঠছিরে।সামনে টগবগ করছে রক্তগোলাপ।আজকে খুব মজা পাবো।”

তার কথায় তাল মিলায় উপস্তিত সবাই।রিমির সেদিকে কোনো‌ খেয়াল নেই।সে ব্যাথার চোটে তাদের কোনো‌ কথাই শুনতে পারছে না।ছেলেগুলো এগোতে শুরু করে তার দিকে…

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে