#আনন্দময়_ভালোবাসা
#নিয়াজ_মুকিত
#পঞ্চম পর্ব
দীর্ঘ 2 ঘন্টা হাসপাতলে অপেক্ষা করার পর অবশেষে কাঙ্খিত সময়টি সামনে এসে দাঁড়ায়।লোকটা আর রিমির ডাক পরে ডাক্তারের চেম্বারে।লোকটা উঠে দাঁড়িয়ে রিমিকে বলে,চলুন আমার সাথে।
তারপর দুজনে ডাক্তারের চেম্বারের উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করে।
যতই ডাক্তারের চেম্বারে দিকে আগাচ্ছে ততোই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে রিমির। না জানি কি হয়?অবশেষে মনকে শক্ত করে ভিতরে প্রবেশ করে রিমি।
প
চেম্বারে প্রবেশ করতেই ডাক্তার তাদের উদ্দেশ্য করে বলে,’বসুন’
লোকটা ডাক্তারের সামনের চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়ে।পাশের চেয়ারটায় বসতে বলে রিমিকে।রিমি পাশের চেয়ারটাতে বসে তাকিয়ে থাকে ডাক্তারের দিকে।ডাক্তার তার ভারী লেন্সের চশমা টা খুলে ডেস্কের উপর রাখতে রাখতে লোকটাকে বলে,”ইনি আপনার ওয়াইফ নাকি!”
লোকটা চটপট করে উত্তর দেয়,না।ডাক্তার খানিকটা চিন্তিত হয়ে বলে,”ওহ,আপনার নাম কি যেন?”
লোকটা তার চশমা টা খুলে ডেস্কের উপর রাখতে রাখতে বলে, “নিশান”
এবার ডাক্তার চশমাটা আবার নিজের চোখে পড়তে পড়তে রিমিকে বলে,”আপনার নাম রিমি তাই না!”
রিমি নীরবে মাথা নাড়িয়ে হা বোধক উত্তর দেয়।ডাক্তার এবার রিমি আর নিশানকে কে উদ্দেশ্য করে বলে,”রিপোর্ট তো খুবই ভয়ঙ্কর এসেছে”
ভয়ংকর কথাটা শুনে রিমি আর নিশান দুজনের মনেই এক প্রকার ভয় সৃষ্টি হয়।বিশেষ করে রিমির মনে ভয় ঢুকেছে,না জানি কী হয়? যদি তার শ্বশুর শাশুড়ির কথা ঠিক হয় তাহলে তার মাথা লজ্জায় কাটা যাবে।আর যদি ঠিক না হয়,তাহলে রিমি তাদের কথার উত্তর দেওয়ার যোগ্যতা রাখবে।দুজনের এমন ভয়-ভীতি যুক্ত চেহারা দেখে ডাক্তার বলে,
“ঘাবড়ানোর কিছু নেই।বেশি ভয়ঙ্কর কিছু না।”
ডাক্তারের ঠোঁটের কোণে মুচকি এক ধরনের হাসি রয়েছে।এবার তিনি রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“আপনার শশুর-শাশুড়ি কোন প্রকার পরীক্ষা ছাড়াই আপনাকে বাসা থেকে বের করে দিল।এটা তাদের কি ঠিক হয়েছে?নিশান সাথে সাথে উত্তর দেয,”না একদমই ঠিক হয়নি”
ডাক্তার আবার রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনি বললেন, আপনার স্বামী আপনাকে ভুল বলে বুঝে চলে গেছে।এটাও তো ঠিক না।অন্তত তার উচিত ছিল আপনার কথা শোনা,তাইনা।রিমি উত্তর দেয়ার আগেই নিশান বলে,
“অবশ্যই,আমি হলে তো আগে তার কথা শুনতাম।তার সমস্যা কি? সেটা জানতে চাইতাম।দরকার হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখতাম।কিন্তু তিনি পরীক্ষা করার আগেই তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন।এটা অবশ্যই ভুল সিদ্ধান্ত তার।
ডাক্তার এবার রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”রিপোর্টে একটা অদ্ভুত জিনিস এসেছে”
নিশান সাথে সাথে বলে,”কি সেই অদ্ভুত জিনিস?”
রিমিও বলে,”কি সেই অদ্ভুত জিনিস?”
ডাক্তারটা ডেস্ক এর উপরে রাখা থেকে একটা রিপোর্ট বের করে। আর একবার দেখে নিশান আর রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”অদ্ভুত জিনিসটি বড়ই বিচিত্র।আপনার পেটটা ফুলে গিয়েছে এরকম আরো তিন চার জন রোগী আমার কাছে এসেছিল।তাদের রোগ আর আপনার রোগ প্রায় সেম সেম।রিমি ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলে,”কি সেই রোগ?যার কারণে আমার পেটটা এত বড় হলো।”
ডাক্তার এবার চশমাটা ডেস্কের উপর রেখে বলে,
“আপনার পেটের ভিতর একটা টিউমার হয়েছে।আপনার অপারেশন প্রয়োজন।তবে ইচ্ছা হলে ঔষধ দিয়ে এটি নিরাময় করা যায়।”
রিমি আর নিশান দুজন দুজনের দিকে তাকায়।ডাক্তার আবার বলতে শুরু করে,
“আপনার যদি ইচ্ছে হয় অপারেশন করতে পারেন।আবার যদি ইচ্ছে না হয়,আমি ওষুধ দিচ্ছি।ওষুধ দিয়ে এটি নিরাময় করতে পারেন। তবে অপারেশনই বেস্ট।নাহ,ওষুধ দিয়ে এটি নিরাময় করা যায়,সেটাও ভালো হবে।আপনাদের যেটা ইচ্ছা হয়।”
রিমি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখে এই মুহুর্তে তার অপারেশন করা ঠিক হবে না।কারণ এ সময়ে তাকে দেখার মত কেউ নেই।সে ডাক্তার কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমাকে ঔষধই দিন।”
কিন্তু নিশান সাথে সাথে উত্তর দেয়,”না আপনার এখন তাড়াতাড়ি এই পেট ফোলা কমানো দরকার।আপনি বরং অপারেশনই করুন।”
এই নিয়ে দুজনের মধ্যে খানিকটা ঝগড়া লেগে যায়।রিমি বলে, ঔষধ দিয়ে তা নিরাময় করবে।আর নিশান বলে,অপারেশন করতে হবে।মাঝখান থেকে ডাক্তার বলে
“ঔষধ দিলে কমপক্ষে হলেও চার-পাঁচ মাস লাগবে।আর অপারেশনে মাত্র 20-25 দিনের মধ্যেই সেরে যাবে।”
রিমি আর নিশানের এরকম ঝগড়া দেখে ডাক্তার আবার বলে, “আপনারা বাহিরে গিয়ে ঝগড়া করুন। আমি নেক্সট পেশেন্টকে দেখি।আর কি সিদ্ধান্ত নিলেন সেটা এসে আমাকে জানাবেন।”
নিশান সাথে সাথে ডাক্তার কে উদ্দেশ্য করে বলে,”ডাক্তার আপনার কাছে কোনটা বেস্ট?অপারেশন নাকি ওষুধ?”
ডাক্তার খানিকটা চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।তিনি একবার রিমির দিকে একবার নিশানের দিকে তাকান।শেষে তিনি মুখ ফুটে উত্তর দেন,
“আমার কাছে অপারেশনই বেস্ট।কোন প্রকার রিক্স নেই।”
নিশান সাথে সাথে একগাল হাসি নিয়ে রিমির দিকে তাকায়।রিমি গভীর ভাবে চিন্তা করছে।অপারেশন করা ঠিক হবে কিনা?অবশ্য অপারেশন করলে সে তাড়াতাড়ি নিজের বাসায় ফিরে যেতে পারবে।আর ঔষুধ হলে কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে।এতদিন সে কোথায় থাকবে?অপারেশন হলেই বা কোথায় থাকবে?তার তো যত্নের প্রয়োজন হবে তখন।কোন কাজ করতে পারবে না এতদূর হাঁটতেও পারবে না।অবশেষে রিমি আর নিশান দুজনে বাইরে বের হয়ে আসে।উদ্দেশ্য একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া।কোনটা করা ঠিক হবে?
রিমির জন্য অপারেশন নাকি ঔষধ দিয়ে রোগটা নিরাময় করা ভালো হবে।কিন্তু শুরু থেকেই নিজের সিদ্ধান্তে অটল নিশান।সে রিমিকে বারবার বলছে,অপারেশনের জন্য রেডী হতে।রিমি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখছে আসলে কোনটা করা ঠিক হবে?
শেষ পর্যায়ে রিমি ভেবে দেখে ঔষধ দিয়ে নিরাময় করলে কমপক্ষে ছয় মাস তাকে বাহিরে থাকতে হবে।এতদিন সে কোথায় থাকবে? আর যদি অপারেশন করে নিরাময় করে তাহলে মাত্র 25 টা দিন থাকতে হবে। এ-কয়দিন না হয় নিশানের হাত-পা ধরে তার কাছে থেকেই ভালো হবে।রিমি নিশানের সিদ্ধান্তে রাজী হয়,কিন্তু নিশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,”শোনেন,অপারেশন করলে আমার যত্নের প্রয়োজন হবে।কমপক্ষে হলেও 20 থেকে 30 দিন।এ কয়েক দিন আমি কোথায় থাকবো?নিশান ঝটপট রিমিকে উত্তর দেয়,
“আমি এখনো বিয়ে করিনি,আমি আর আমার বাবা-মা একসাথে থাকি।আমার সঙ্গে থাকতে পারেন।রিমি চিন্তামুক্ত হয়।শেষ পর্যন্ত সে নিশান কে বলে সে অপারেশনের রাজি।তবে মনের ভিতর এক প্রকার ভয় কাজ করছে তার।নিশানসহ দুজনই ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করে।ডাক্তার তাদের দেখে সাথে সাথে বলে,”কি সিদ্ধান্ত হল?” নিশান সাথে উত্তর বলে,”আমরা কালকে অপারেশন করাবো।”
ডাক্তারের সাথে সাথে বলে,”তাহলে তো ভালই হয় তাহলে।আপনারা কাল সকাল 9টায় চলে আসবেন।একেবারে অপারেশনের জন্য রেডি হয়ে।কালকেই অপারেশন হবে।ভয়ের কিছু নেই,এটা খুব কঠিন কোনো অপারেশন নয়।নিশান আর রিমি দুজনে ডাক্তারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে আসে হসপিটাল থেকে।
বাহিরে এসে নিশান একটা রিকশাকে ডাক দেয়।রিক্সা সামনে আসতেই নিশান উঠে বসে এবং রিমিকে উঠে বসতে সাহায্য করে। রাস্তায় দু’জনে কোন প্রকার কথা-বাত্রা ছাড়াই চলে।নিশান রিকশাওয়ালাকে নিজের বাসার ঠিকানা দেয় এবং বলে এই ঠিকানায় যেতে।রিকশাওয়ালা সেই ঠিকানা অনুযায়ী চলতে শুরু করে।প্রায় 20 থেকে 30 মিনিট চলার পর রিক্সাওয়ালা এসে থামে একটা সুন্দর বাসার সামনে।রিমি অবাক হয়ে বাসাটাকে দেখছে।
চলবে..