#আনন্দময়_ভালোবাসা
#নিয়াজ_মুকিত
#তৃতীয়_পর্ব
মাঠের মাঝখানে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে রিমি। সবাই পাগল বলে চলে যাচ্ছে,কিন্তু কেউ তার দিকে আসতেছে না।এক পর্যায়ে রিমি লজ্জায় পড়ে যায়।সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না? তার এখন কি করা উচিত পরামর্শ দেয়ার মানুষ নেই। এদিকে পেটের ক্ষুধায় উঠে দাঁড়াতেও পারছে না। তারপরেও দাঁতের উপর দাঁত রেখে অনেক কষ্ট করে উঠে দাঁড়ায় সে।হাঁটতে শুরু করে আবার সেই অজানা উদ্দেশ্যে।সব ছেলেরাই তার কোমরের নিচের দিকে তাকাচ্ছে,যে স্থানেটাকে সে তার ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখেছে।ক্ষুধায় নড়াচড়া করতে পারছেনা তবুও সে হেঁটে চলেছে।পেট আগের তুলনায় আরো বেশি ফুলে গেছে।এখন তার ডাক্তার দেখানো উচিত কিন্তু খাবারের টাকা নেই যার,ডাক্তার কিভাবে দেখাবে?
একটা কুকুরেরও খাবার জোটে কিন্তু এখন তার খাবার জুটছে না।বাসায় থাকলে এতক্ষণ হয়তো কোরমা,পোলাও খেতে পারত।কিন্তু এখন তো একটা রুটি খেতে পারছে না। কষ্টে হৃদয়টা ফেটে যাচ্ছে তার।কিন্তু কিছু করার নেই।চোখ দিয়ে অঝোর-ধারায় পানি পড়ছে।তার বুকটা খুব ব্যাথা করছে।বাধ্য হয়ে রাস্তাতেই শুয়ে পড়ে সে।কিছুক্ষণ পরেই অজ্ঞান হয়ে যায়।তারপর কি হয়েছে কিছু জানা নেই তার?
৩.
চোখ খুলে দেখে সে পড়ে আছে একটা মাঠের মধ্যে।মনে করার চেষ্টা করে কি হয়েছিল? একপর্যায়ে মনে পড়ে সে তো মাঠ থেকে উঠে অনেকদূর হেটে গিয়েছিল,তাহলে আবার এখানে কিভাবে আসলো?মাথাটা খুব ব্যাথা করছে।নড়তে পারছে না,সূর্যের আলো এসে পড়েছে তার মুখে। হঠাৎ কেউ তার মাথায় পানি ছুড়ে মারে।সে অবাক হয়ে পিছনে তাকায়।
পিছনে এমন এক ব্যক্তিকে দেখতে পায় যাকে এখানে আশা করিনি সে।তার স্বামী স্বয়ং তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে থাকা বোতলের পানি ছুড়ে মেরেছে তার দিকে। সে বিশ্বাস করতে পারতেছেনা তার স্বামী তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। যার এখন থাকার কথা কাতারে,সে কিভাবে তার পেছনে থাকতে পারে এটা সত্ত্যিই অবিশ্বাস জনক। তবুও তো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতেই হবে।
অজান্তেই এক হাসির রেখা ফুটে ওঠে তার মুখে। দাঁতের উপর দাঁত চেপে কষ্ট করে উঠে দাড়ায় সে। তার স্বামীর দিকে এগোতে থাকে। তার স্বামী ও তার দিকে তাকিয়ে আছে তবে মুখের মধ্যে ফুটে উঠেছে তার প্রতি ঘৃণা।তার স্বামী মূলত তাকে দেখছে না,তার পেট টাকে দেখছে।সে কাছে যেতেই তার স্বামী তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কি ভাবে করতে পারলে এরকম? আমি সত্যিই এখনো বিশ্বাস করতে পারতেছিনা।নিজের সবটুকু দিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।কিন্তু আজ তুমি এই কাজ করলে,তোমার মুখে থু।”
রিমি কিছু বলার আগেই তার স্বামী সেখান থেকে চলে যায়।রিমি খুব ভেঙ্গে পড়ে।তার মনে একটা আশা ছিল যে তার স্বামী তাকে ভুল বুঝবে না। কিন্তু এখন তার স্বামীও তাকে ভুল বুঝল।রিমির বুক ফেটে কান্না আসে। চোখের পানি বাদ সাধছে না।খিদায় পেটটা ফেটে যাচ্ছে। রিমি কান্না করতে করতে সেখানেই বসে পরে।তার স্বামীর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে সে।মনে করেছিল তার স্বামী তার পক্ষে থাকবে কিন্তু এখন তার স্বামী ও তার বিপক্ষে চলে গিয়েছে।এখন রিমি সম্পুর্ন একা। তার এখন ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।সবকিছু পরীক্ষা করে রিপোর্ট টা প্রয়োজন।যা দিয়ে সে তার শ্বশুর বাড়ির লোকের কথা প্রত্যেকটা কথার উচিত জবাব দিতে পারবে।কিন্তু খাবার টাকা নেই যার সে কিভাবে ডাক্তার কে দেখাবে?এতগুলো পরীক্ষা করবে।
চিন্তায় মাথা ভার হয়ে যাচ্ছে তার।বুঝতে পারছে কিছুক্ষণ পর আবার সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। শেষপর্যন্ত তার কথাটাই ঠিক হয়। সে আবার অজ্ঞান হয়ে যায়।সেখানেই পড়ে থাকে।যে ওড়না দিয়ে কোমর বেঁধেছিল,রক্ত ঢেকেছিল সেই ওড়নাটা উপরে উঠে যায়।রাস্তা দিয়ে যাতায়াতরত প্রত্যেকটা পুরুষই তার দিকে তাকিয়ে ছিল।সে অজ্ঞান হয় সেখানে পড়ে আছে কিন্তু কেউ তার তার দিকে এগোচ্ছে না।
দেখতে দেখতে চার পাঁচ ঘন্টা চলে যায়।কিন্তু এখনো জ্ঞান ফিরল না রিমির।বিকেল হয়ে যায়, খেলার জন্য সেখানে ছুটে ছুটে আসতে শুরু করে বালকেরা।সবাই এসে ভিড় করে তার চারদিকে, দূর থেকে এসব দেখে সেখানে আসে একজন পুরুষ।বয়স ত্রিশের কাছাকাছি ,চোখের লেন্সের চশমা,চুলগুলো কালোও নয় সাদাও নয়।দুই রং এর মধ্যবর্তী।সে সবাইকে ছাড়িয়ে দিয়ে এসে রিমির পাশে দাঁড়ায়।পকেট থেকে একটা পানির বোতল বের করে আস্তে করে রিমির মুখে দেয়। প্রথমবারের চেষ্টায় জ্ঞান ফেরাতে পারে না সে, দ্বিতীয়বারের চেষ্টাও বিফল হয়। কিন্তু তৃতীয় বারের চেষ্টায় রিমি চোখ খোলে।
চোখ খুলে চারদিকে তাকাতে থাকে সে।মনে করতে পারছেনা কিছু।হঠাৎ কি মনে করে কোমরের দিকে হাত দেয়। হাত তুলে চোখের সামনে এনে দেখে ভিজে গেছে।মুহূর্তে সে উঠে আসা ওড়নাটা দিয়ে তাড়াতাড়ি ঢেকে ফেলে।অবাক হয়ে তাকায় পাশে থাকা মানুষটার দিকে।মানুষটা এক নজরে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মানুষটার এরকম তাকানো দেখে রিমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায়। মানুষটা সবাইকে সড়িয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।মানুষটা রিমিকে সুন্দর করে জিজ্ঞাসা করে,
“আপনি এখানে কি করছেন?”
রিমি অবাক হয়ে তাকায় লোকটার দিকে।লোকটা এমন ভাবে তার সাথে কথা বলছে যেন চেনা পরিচিত কেউ।কিন্তু আজ অব্দি লোকটাকে দেখেনি সে। রিমি লজ্জা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
ততক্ষণে সব ছেলেরাই সেখান থেকে চলে গিয়েছে। লোকটা আবার থেকে প্রশ্ন করে,
“আপনার এই সময় এখানে থাকা ঠিক নয়। আপনি এখন প্রেগন্যান্ট আর আপনি এখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন।চলুন আপনাকে বাসায় দিয়ে আসি।রিমি তার কথার কোন জবাব দেয় না।লোকটা আবার একই প্রশ্ন করে তাকে।রিমি মাথা তুলে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার না খুব খিদে লেগেছে একটু খাবার কোথায় পাবো?”
লোকটা সাথে সাথে উত্তর দেয়,
“আমার সঙ্গে চলুন।আমার একটা রেস্টুরেন্ট আছে,সেখানে আপনাকে খাওয়াবো।”
রিমি লজ্জা পেয়ে বলে,থাক দরকার নেই।মানুষটা সাথে সাথে উত্তর করে,”থাক বলতে হবে না চলুন” রিমি লজ্জা নিয়ে তার সাথে হাটতে শুরু করে
৪.
লোকটার সাথে হেটেই চলেছে রিমি।কথা হচ্ছে না বিষয় নিয়ে।এতক্ষনের জার্নিতে রিমি বুঝতে পারে লোকটা খানিকটা গম্ভীরই।প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলতে পছন্দ করেননা।প্রচুর কষ্ট হলেও মুখে হাসি রেখে তার সাথে হেটে চলেছে রিমি।একপর্যায়ে লোকটা একটা রিকশা ডাক দেয়।তারপর দুজনে রিকসায় চড়ে বসে।লোকটা রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এবার বলুনতো আপনার কি হয়েছে?”
চলবে..