আধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-০৩

0
3015

#আধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩

রাশেদ চৌধুরি দ্রুতপায়ে সামনে যেয়ে দাড়ায়।তন্ময় নেমে মায়ার পাশের গাড়ির দরজা খুলে দেয়।বাবাকে দেখে মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে মায়ার।আরিয়ান আড়চোখে একবার দেখে আবার ফোনের দিকে দৃষ্টি দেয়।রাশেদ চৌধুরি কে দেখে এমনেই তার রাগ মাথায় চড়ে গিয়েছে বস্তুত এই মুহূর্তে সে কোনো তর্কে জড়াতে চাচ্ছেনা।
গাড়ির ভিতরেই মাথা ঢুকিয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাশেদ।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

—“তুমি ঠি ক আছো মা?”

বাবার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে মায়া।একহাতে বাবাকে ধরে মৃদু কন্ঠে বলে,
—“আমি ঠি ক আছি বাবা।কিছু হয়নি তো।”

রাশেদ মায়াকে ছেড়ে দেয়।গাড়ি থেকে বেরোনোর জন্য একহাত ধরে বলে,
—“বের হয়ে আসো।”

মায়া বেরোতে নিলেই তার অপরপাশের হাত ধরে টেনে নেয় আরিয়ান।মায়া অপ্রস্তুত হয়ে পরে।তার একহাত টেনে ধরেছে রাশেদ চৌধুরি আর আরেকহাত ধরেছে আরিয়ান।মাঝখানে ফেঁসে গিয়েছে সে।
অত:পর আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে চাপা স্বরে বলে,

—“আপনি কি এখন বাবার সামনেও আমাকে কোলে তুলে নিবেন?বলে হাতটা ছাড়ানোর জন্য একটু নাড়াতেই আরো শক্ত করে তা আবদ্ধ করে নেয় আরিয়ান।
মায়া আরো অপ্রস্তুত হয়ে পরে।উনি চাচ্ছেটা কি?এরমধ্যই রাশেদ চৌধুরি বলে,
—“কি হলো মা?বের হও।

মায়া অধৈর্য হয়ে অনুরোধের স্বরে বলে,

—“আমি পারবো হাঁটতে।ব্যাথা নেই তো এখন।…ছাড়ুন”।

আরিয়ান পাত্তা না দিয়ে তন্ময়কে কিছু একটা ইশারা করে।তন্ময় মাথা নাড়িয়ে রাশেদ চৌধুরিকে বলে,

—“আপনার মেয়ে ইনজুরড।হাঁটতে পারবেননা এখন।ফিমেল কাউকে ডেকে বলুন ধরে নিয়ে যেতে।”

রাশেদের মাথায় যেনো বাঁজ পরে।মায়ার গালে হাত রেখে তাড়াহুড়ো করে বলে,
—“কিভাবে?কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?”
মায়া কিছু বলবে তার আগেই উনি পাশে দাড়ানো বডিগার্ডদের কিছু একটা ইশারা করে।দু’সেকেন্ডর মাথায় সেখানে তিনজন ফিমেল সার্ভেনট হাজির হয়।
রাশেদ চৌধুরি একটু সরে দাড়ায়।মেয়েগুলা তাকে ধরতে আসতেই মায়া আরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে মৃদু গলায় বলে,

—“এবারতো হাতটা ছাড়ুন”।
আরিয়ান বাঁধন আলগা করে দিতেই দ্রুত হাতটা ছাড়িয়ে নেয় মায়া।গাড়ি থেকে বের হওয়ার আগমুহূর্তে সে বলে,
—“ধন্যবাদ”।
আরিয়ান তার দিকে তাকায়না।সামনে তাকিয়েই ভরাট গলায় বলে,
—“সাবধানে থেকো”।
তন্মধ্য আর কোনো কথা হয়না।মায়া ভেতরে চলে যায়।তার পিছু পিছু রাশেদ চৌধুরিও চলে যায়।তন্ময় গাড়ির দরজা আটকে দেয়।আরিয়ান আবারো ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।শুধু তন্ময় বসার পর বলে,
—“গোডাউনে চল।গুপ্তচরের মুখ থেকে গুপ্তধন বের করে আসি।”

তন্ময় অগোছালো ভাবে হাসে।না জানি আজ কি হতে চলেছে!!
————–—
পরণের জামা পাল্টে নিয়েছে মায়া। ডক্টর ডেকে পায়ের ব্যান্ডেজও চেনজ করে দেয়া হয়েছে।কোনরকম চলাফেরার অনুমতি নাই তার।বাবা তাকে গতকালের ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।তাই সেও কিছু বলেনি।
নিজের বেডে শুয়ে আছে মায়া।আবারো সেই বন্দি জীবন।আগে তো যাও পুরা বাসায় ঘোরাফিরা করতো এখন পা না সাড়া পর্যন্ত বিছানায়ই থাকতে হবে।যদিও বাসা থেকে বের হলেও একরকম বন্দীই থাকে সে।সবসময় সাথে থাকে এতগুলা বডিগার্ড।বন্দুক নিয়ে যেভাবে আশেপাশে ঘিরে থাকে একরকম ভয়ই করে তার।তারউপর কাল যা হলো বাবা তো মনে হয়না তাকে আগামী তিনমাসের মধ্যেও বেরোতে দিবে।
ভার্সিটিতে পরে সে।সব পড়াশোনা বাসার মধ্যই।রোজকার নোটস বাসায় দিয়ে যাওয়া হয়।পরীক্ষা ছাড়া খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ভার্সিটি যাওয়া হয়না।দীর্ঘ-শ্বাস ছাড়ে মায়া।তারও ইচ্ছা করে মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়াতে।নির্দিধায় এখানে-সেখানে যেতে।কিন্তু পারেনা।বাবার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে সে।
বাবা ছাড়া আর কেইবা আছে তার?চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে মায়া।চট করে মাথায় একটা বিষয় আসে,”আচ্ছা,লোকটার নাম টাইতো সে জানেনা।যতদূর মনে হলো বাবা তাকে চিনে।তারমানে সে সেরকম কেউই হবে।বাইরের দুনিয়া থেকে তাকে সর্বদাই দুরে রাখে বাবা।”


একটা কাঠের একটা চেয়ার টেনে বসে আরিয়ান।রুমটায় ভ্যাপসা ভাব।দেয়ালে পুরোনো রক্তের দাগ।আরিয়ান তন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“মুখ খুলে দে।শুনি কি বলতে চায়?”

সামনে পড়ে থাকা ব্যক্তিটাকে মুখের কাপড়টা নামিয়ে দেয় তন্ময়।লোকটা হাঁপাতে হাঁপাতে দম নেয়।আরিয়ান হাসে।ভয়ংকর হাসি।
পাশে থাকা বড়ছুড়িটা তুলে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,
—“শেষ একটা সুযোগ দিচ্ছি।নিজ মুখে স্বীকার কর তুই রাশেদের পাঠানো গুপ্তচর।”

লোকটা কোনরকম বলে,
—“আমি..আমি..কারো লোক না।আমি কিছু করিনি।আমাকে ছেড়ে দেন।”

আরিয়ান গর্জে ওঠে। ছুড়িটা যেয়ে লোকটার হাতের বাহুতে ঢুকিয়ে দেয়।কলকল করে রক্ত পরতে থাকে।তন্ময় চোখ বন্ধ করে আবার খুলে।ছুড়িটা বের করে ফেলেছে আরিয়ান।
সোজা বুকে মারতে গেলেই লোকটা বলে উঠে,
—“আমি রাশেদ চৌধুরির লোক।রাশেদ চৌধুরিই পাঠিয়েছে আমাকে।”

পায়রে উপর পা তুলে শান্ত হয়ে বসে আরিয়ান।সন্ধিহান কন্ঠে বলে,
—“কেন পাঠিয়েছে?আমাকে মারতে?”

হাতের বাহু চেপে ধরে রক্ত আটকানোর চেষ্টা করছে লোকটা।আরিয়ানের প্রশ্নের উওরে অষ্পষ্ট স্বরে সে বলে,
—“..জি”।

—“ওহ্,আচ্ছা”।বলে কিছুক্ষন শান্ত থেকে হাতের ছুড়িটা দিয়ে একটানে লোকটার মাথা ছিন্ন করে দেয়।তন্ময় কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।আরিয়ানের শার্টে রক্তের ছিঁটা আসে।একপাশে মাথাটা পরে থাকে লোকটার।
আরিয়ান উঠে দাড়ায় শার্টের হাতাটা কনুই পর্যন্ত ওঠাতে ওঠাতে বলে,
—“কাল সকালে এটা সুন্দর মতো পাঠিয়ে দিবি রাশেদের বাসায়।”

আরিয়ান বেরিয়ে যায়।লোকটার দেহটা একবার দেখে নিয়ে তন্ময়ও বেরিয়ে যায়।দীর্ঘ-শ্বাস ফেলে সে।লোকটা তার যোগ্য শাস্তিই পেয়েছে।
—————
শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পরে বেরিয়ে আসে আরিয়ান।আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছিলো তখনই দেখতে পায় বিছানায় কিছু একটা আলোর রিফলেক্ট পরে জলজল করছে।ভ্রু কুচকে সেদিকে এগিয়ে যায় আরিয়ান।জিনিসটা হাতে নিতেই দেখে একটা সাদা পাথরের পায়েল।এটাতো কাল মায়ার পায়ে দেখেছিলো।মায়া তো নিশ্চয়ই এটা খুলে রাখেনি।হয়তো কাল যখন ডাক্তার মহিলা ব্যান্ডেজ করেছে তখন খুলে রেখেছে আর পড়ায়নি।পায়েলটা হাতে নিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যায় আরিয়ান।একটা বক্স খুলে সেটা রেখে দেয় খুব সযত্নে…

~চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে