আগন্তুক
– সাবিহা বিনতে রইস
পর্ব – ১৩
বিশাল এক গ্রাম৷ তবে তার পুরোটাই কৃত্রিম। দারুণ সুন্দর আম্রকানন, ছোট ছোট সবজির ক্ষেত, গোলাপ ফুলের বাগান, স্বচ্ছ পানির খাল, ডিঙি নৌকো, বাঁশঝাড় আর গোটা পঞ্চাশেক ছাউনি ঘেরা কাঁচাবাড়ি মিলিয়ে এই তৈরি এই গ্রামের নাম প্রত্যাশা বৃদ্ধাশ্রম। এর আগে অন্তু বৃদ্ধাশ্রমের নামটি শুনলেও, তার ভেতরটা এইরকম হতে পারে, কল্পনাও করেনি। গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে, প্রথমেই রয়েছে রিসেপশন রুম। সেটাও বাঁশের ছাউনি ঘেরা, একদম গ্রামীন পরিবেশের সাথে মানানসই। অন্তু ভেতরে ঢুকতেই একজন রিসেপশনিস্ট এগিয়ে এলো তার দিকে। ছাউনির তলে দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দর এক ওয়েটিং রুম। থরে থরে সাজানো আছে নরম তুলতুলে সোফা। সেখানে বসতে না বসতেই বেয়ারা এসে কোমলপানীয় দিয়ে স্বাগত জানিয়ে গেল। অন্তু চোখ হতে রোদচশমা নামিয়ে ভালো করে তাকালো এদিক ওদিক। আকাশ এখনো গোমড়ামুখো। যখন তখন টুপটুপ করে কান্না শুরু করতে পারে৷ এইরকম আবহাওয়ায় রোদ চশমার দরকার নেই। কিন্তু এই চশমাটি অন্তুর ভিষণ প্রিয়। তনিমার তাকে দেওয়া প্রথম উপহার। তাই চশমাটি পরতে ভালোবাসে সে। মনে হয় যেন সবসময় তনিমার স্পর্শ সাথে নিয়ে ঘুরছে।
– হ্যালো স্যার, গুড আফটারনুন, হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?
অন্তু সোজা হয়ে তাকালো সামনে দাঁড়ানো রিসেপশনিস্ট তরুণীর দিকে৷ হাসি হাসি মুখের চোখ ধাঁধানো সুন্দর মেয়েটি তাকিয়ে আছে তার দিকে। তার চোখেমুখে পেশাদারিত্বের স্পষ্ট ছাপ। অন্তু তার বুক পকেট থেকে অফিসিয়াল আইডি বের করে ধরলো মেয়েটির সামনে।
– গুড আফটারনুন। আই হ্যাভ এ্যান এপয়েনমেন্ট উইথ ইউর ম্যানেজার। ক্যান আই মিট হিম?
– শিওর স্যার। লেট মি জাস্ট চেক দিস এপয়েনমেন্ট শিট।
– ওকে!
মেয়েটি চলে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরই একজন ব্যক্তি এগিয়ে এলো৷ এই বৃদ্ধাশ্রমেরই কোন কর্মচারী হবে।
– স্যার, ম্যানেজার স্যারের চেম্বার ওদিকে। আপনাকে ডাকছেন। আসুন, প্লিজ!
অন্তু উঠে দাড়ালো৷ রিসেপশনের ছাওনি থেকে দূর পর্যন্ত দারুণ সুন্দর পথ। এঁকেবেঁকে ফাঁক ফোকর গলিয়ে অনেক দূর চলে গেছে। বৃদ্ধাশ্রম বলতে মানুষ যা বোঝে, এটা একদমই তেমন নয়। বরং যান্ত্রিক কোলাহল এড়িয়ে যেন এক টুকরো স্বর্গ। কিছু দূর পর পর গাছের তলে বাশের তৈরি বেঞ্চ রাখা হয়েছে। দুজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখতে পেল অন্তু। এক হাতে কফির কাপ, আরেক হাতে খবরের কাগজ হাতে ভূ রাজনীতি নিয়ে চমৎকার আলাপে মেতেছে তারা। ম্যানেজারের চেম্বারটি এক কথায় অসাধারণ। কাঠের তৈরি দোতলা একটি ছোট বাড়ি। অনেকটা বিদেশী দালানের আদলে তৈরি। সামনের ঝুল বারান্দায় থরে থরে অর্কিডের টব সাজানো। উপরের ছাদ থেকে ঝুলছে বাগান বিলাস। একদম কাছাকাছি গিয়ে অন্তু বুঝতে পারলো, এতক্ষন যেগুলো কাঁচা আর কাঠের বাড়ি বলে মনে করেছে, সেগুলো সবই আসলে পাকা বাড়ি৷ আর্কিটেকচাররা দারুণ কাজ করেছে। এই বাড়ির নিচ তলাতে অফিস ঘর। অত্যাধুনিক জীবন যাপনের সব কিছুই বিদ্যমান ভেতরে৷ বাইরে থেকে যা বোঝার উপায় নেই৷ অন্তু অফিস ঘরে ঢুকতেই দেখলো গদিআঁটা চেয়ারে গুরুগম্ভীর চেহারার এক ভদ্রলোক বসে আছেন। মোটাসোটা, ফর্সা গোলগাল মুখ, চোখে চশমা। মাথার চুল প্রায় হালকা হয়ে এসেছে। টাকের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পরনে আকাশি রঙের দামী শার্ট, সুন্দর একটি টাই পরেছে সাথে। তার চোখ সামনে রাখা ফাইলে নিবদ্ধ। কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে বাইরের আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। তবে ঘরের তাপমাত্রা বেশ আরামদায়ক।
– “শতাব্দী লাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা
মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না—
পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা।
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা,
দুর্যোগে পথ হয় হোক দুর্বোধ্য
চিনে নেবে যৌবন-আত্মা”
সামনে বসা লোকটা চমকে তাকিয়েছে অন্তুর দিকে। তারপর চট করে গদি আটা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
– আরে করছিস কী! চুপ কর! কেউ শুনে ফেলবে তো?
অন্তু হেসে ফেললো৷
– আসিফ ভাই! সিরিয়াসলি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না৷ এইটা তুমি? বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই বামপন্থী রাজনৈতিক নেতা, সুভাস মুখোপাধ্যায়ের অন্ধভক্ত কবি আসিফ অঞ্জন?
– আহা! তুই চুপ করবি? এখানে এইসব কেউ জানে না৷ এখানকার কর্পোরেট আসিফ অঞ্জন আর আগের সেই কবি আসিফ অঞ্জনের আকাশ পাতাল তফাৎ। তবে সুভাস কে ছেড়ে দিয়েছি, এটা কিন্তু বলা যাবে না। পড়ি এখনো, রক্ত গরমও হয়। তবে গোপনে। আয় বোস এখানে। এত বছর পর, তোর দেখা পাবো ভাবিনি।
অন্তু হাসল।
– আমিও কি ভেবেছিলাম বলো? সারাজীবন ভেবেছিলাম, পড়াশুনা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হব৷ আর হয়ে গেলাম দেখো, পুলিশ। আর তুমি, যে কিনা সারাজীবন সমাজ পাল্টানোর স্বপ্ন দেখতে, সাম্যের কথা বলতে সেই তুমিই বিলাসবহুল আশ্রমের দায়িত্ব নিয়ে বসেছো।
আসিফ ভ্রু কুচকে তাকালো,
– হিংসা করছিস নাকি?
– হু, তা একটু করছিই বটে! চোর ডাকাতের পিছে ছুটতে কার ভালো লাগে বলো তো?
– আসলে, এই ব্যবসাটা মূলত ছিলো মামার। বড় মামার। যার বাসায় থেকে আমি মানুষ হয়েছি। ভার্সিটি থেকে বেরোনোর পরই মামা ব্রেইন স্টোক করে। লোয়ার পার্ট টা পড়ে গিয়েছিলো একদম। মামার সন্তান বলতে তো শুধু তৃষ্ণা। সো বুঝতেই পারছিস, দুম করে সব দায়িত্ব আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। তৃষ্ণাকে ভালো লাগতো সবসময়। আর মামা মামীও চাইতো বিয়েটা হয়ে যাক আমাদের। বিয়ে হয়ে গেল। তারপর আর এই ব্যবসা বানিজ্য থেকে বেরুতে পারলাম না। প্রায় আট বছর হলো মামা চলে গেছেন। মামী আছে। আমার সাথেই থাকে৷ আমি, তৃষ্ণা, মামী আর আমার ছেলে অদৃক, এই তো সংসার। ভালোই চলছে। রাজনীতি যে টানে না, তা নয়। কিন্তু সংসার, ব্যবসা ফেলে ফুরসৎ পাইনা। ছেলেটার তো ভবিষ্যৎ আছে বল?
অন্তু অবাক হয়ে দেখছিলো। আসিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তুর ডিপার্টমেন্টেই ছিলো। তিন বছরের বড়। সে সময়ে ক্যাম্পাসের প্রতিবাদী চরিত্র। কি না করেছে সে তখন। অনেকেই বলতো, একসময় সে বড় নেতা হবে। দেশের হাল ধরবে। মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক!
– এই অন্তু, কি খাবি বল? তারপর তোর গল্প শুনবো। বিয়ে টিয়ে তো করিসনি যদ্দুর জানি।
– করিনি, তবে করতে কতক্ষণ?
আসিফ হোহো করে হেসে উঠলো,
– তার মানে ম্যাচ সাজিয়ে রেখেছিস, তাই তো?
– হুম, তা একরকম বলতে পারো। সেসব কথায় আসছি। তার আগে কাজের কথা সারি। তোমাকে ফোনে বলেছিলাম, আমার এখানে আসার কারণটা।
আসিফের মুখটা গম্ভীর হলো খানিকটা।
– দেখ অন্তু, একটা কথা শোন। আমাদের কিছু নিয়মনীতি আছে। আমরা এখানে কাউকে রাখার আগে তার পরিবারের কাছে কিছু বিষয়ে কমিটেড থাকি৷ এভাবে ভেতরের তথ্য শেয়ার করার কোন নিয়ম আমাদের নেই৷
– আই নো আসিফ ভাই৷ সেজন্য আমি অফিসিয়াল নোটিশ নিয়ে এসেছি। কোনভাবে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তুমি নোটিশ দেখিয়ে দিবে। আইনি কাজে বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা সসর্বসাধারণের নেই।
আসিফ ঠোঁটের নিচে কামড়ে ধরেছে। যেন ঠিক করতে পারছে না কী করবে৷ তারপর ধীর লয়ে ড্রয়ার টেনে একটা ফাইল বের করে এগিয়ে দিলো তার দিকে। অন্তু অভয় দিলো,
– আমি তো আছি আসিফ ভাই। কোন সমস্যা হবে না। আর হলেও তা আমি হ্যান্ডেল করব। তুমি রিলাক্সে থাকো৷
অন্তু ফাইলটি টেনে নিলো নিজের দিকে৷ সেটি খুলতেই নামটি ভেসে উঠলো৷ অপলা আমান। বয়স ৬৩। পাশে একটা ছবি দেওয়া। ছবিটি কয়েকবছর আগের তোলা বেশ বোঝা যায়, কারণ এই নারীর বয়স ছবিতে ৬৩ নয়। খুব জোর বায়ান্ন হতে পারে। চমৎকার সুন্দর চেহারা। মুখে কোন হাসি নেই৷ কিন্তু তবুও কিছু একটা আছে, চোখ আঁটকে থাকার মতো। অন্তুর বার বার মনে হচ্ছে কোথাও যেন দেখেছে তাকে। কিন্তু কোথায় দেখেছে? মনে পড়ছে না, একদম মনে পড়ছে না! অন্তু দ্রুত চোখ বুলাতে থাকলো তার ডিটেইল ঘটনায়। নাহ! কোন পরিচিত বিষয় চোখে পড়ছে না৷ বাবার নাম, মায়ের নাম, স্বামীর নাম, সব অচেনা। তারপরই থমকেছে অন্তু৷ ঠিকানাটা চেনা চেনা। গ্রামের নামটাও তো। সাথে সাথে তিড়িক করে চমকে উঠেছে মস্তিস্ক। অন্তু ফাইল থেকে মুখ তুললো। বললো,
– আসিফ ভাই, এনাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছেন কে?
– উনার ছেলে। পরের পৃষ্ঠায় দেখ। নাম আছে।
অন্তু দ্রুত গতিতে পৃষ্ঠা ওল্টালো। খুঁজছে নাম, ক্রমাগত খুঁজছে। এই তো এখানে। সাথে সাথে লক্ষ ভোল্টের শক খেয়েছে অন্তু। একসাথে দপদপ করেছে উঠেছে প্রতিটি নার্ভ। চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে একটি নাম।
– রওনক আনাম চয়ন।
লাবণ্য এখনো পড়ে আছে বিছানায়। চোখ বন্ধ। ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তার পাশেই বসে আছে তনিমা। ক্রমাগত মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। লাবণ্যর মায়ের দেওয়া পোশাকটি পরেছে কিছুক্ষণ আগে। তারপর থেকেই মনটা কেমন যেন করছে তার। এই পোশাকটার পেছনে একটা লম্বা কাহিনী আছে। গতবছর লাবণ্যর জন্মদিনে চয়ন এটি উপহার দিয়েছিলো তাকে। অবশ্য উপহার দেওয়া এত সহজ ছিলো না৷ তার ইচ্ছে ছিলো লাবণ্যকে সারপ্রাইজ দেওয়া। কিভাবে সারপ্রাইজ দেওয়া যায় এ নিয়ে আগে থেকে তনিমার সাথে প্ল্যান করে রেখেছিলো সে৷ কথা ছিলো বাংলা সাহিত্যের সেরা ১০০ উপন্যাসের বই এক সাথে লাবণ্যকে গিফট করা হবে। লাবণ্য বইপাগল৷ বাড়ি ভর্তি তার বিশাল বিশাল বইয়ের আলমারি। কিন্তু শেষ মুহুর্তে প্ল্যান পাল্টাতে হলো। লাবণ্যর প্রচুর বই। এর মধ্যে কোনটি আছে, কোনটি নেই তার হিসাব কষা খুব কঠিন কাজ। তাই শেষে ঠিক হলো ওর জন্য ড্রেস কেনা হবে। জন্মদিনের আগের দিন তনিমাকে নিয়ে পুরো শহর চষে ফেললো চয়ন। কিন্তু কোনটায় তার পছন্দ হয় না। অবশেষে সিল্ক হাউজ থেকে দারুণ সুন্দর এই পোশাকটি কিনেছিলো সে। তনিমা পছন্দ করতে হেল্প করেছিলো। লাবণ্য সাদা রঙ পছন্দ করে। সাদা জমিনে মেটে সাদার দারুণ কাজকরা জামাটি। আজ এটা পরার পর থেকে অদ্ভুত একটা শিহরণ কাজ করছিলো তনিমার। পোশাকটি লাবণ্যর হলেও, কেমন যেন চয়ন চয়ন মিষ্টি ঘ্রাণ লেগে আছে এটিতে। ভাবনা গুলো মনে আসতেই নিজেকে ধিক্কার দিলো তনিমা। নিজের প্রিয় বান্ধবীর আজ এই হাল, আর সে কিনা তারই হাসবেন্ডকে নিয়ে চিন্তা করছে। নিজের ভেতরে মরমে মরে যাচ্ছিলো সে। তবুও চিন্তাগুলো যাচ্ছিলো না মাথা থেকে।
– লাবণ্য একবারো ওঠেনি?
তনিমা তাকালো দরজায়। দুজন বোরখাআবৃত ভদ্রমহিলাকে সঙ্গে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন তনিমার মা।
– না আন্টি! ডেকেছিলাম বার কয়েক। কই আর উঠলো?
সামনে দাঁড়ানো ঘিয়ে রঙা বোরখা পরা মহিলাটি বললেন,
– থাক, ওকে ওঠানোর দরকার নেই। আমরা এখানে বসে কিছু আমল করব।
তনিমার মা তাড়াতাড়ি করে ফ্লোরে বসার জায়গা প্রস্তুত করে দিলেন। ঘিয়ে বোরখাপরা মহিলাটি সুমধুর সুরে তেলওয়াত শুরু করলো। পাশে হালকা গোলাপি রঙের বোরখাপরা মহিলাটি অবশ্য চুপ করে থাকলো। হয়তো মনে মনে কিছু পড়ছিলো৷ তার হাতে একটা বোতলে পানি। তিনি কয়েকবার পানিতে ফুঁ দিলেন। তনিমার হঠাৎ মনে হলো, লাবণ্য বোধহয় একটু নড়ে উঠলো। তনিমা তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
– কিছু বলবি? উঠে বসবি একবার?
লাবণ্য চোখ খুললো। অনেকদিন পর দুই বন্ধুর চোখাচোখি হলো৷ সেই বুদ্ধিদীপ্ত চোখে আজ কেমন অসহায়ত্ব, দিশেহারা ভাব।
লাবণ্যর চোখ খোলা দেখতেই তেলওয়াত থামিয়েছে মহিলাটি৷ তিনি পাশের গোলাপি বোরখার মহিলাটিকে ইশারা করতেই তিনি উঠে দাড়ালেন। এসে বসলেন লাবণ্যর পাশে। বোতলের পানিটুকু ঢেলে দিতে চাইলেন মুখে৷ সাথে সাথে এক ধাক্কা দিয়ে বোতলটি ফেলে দিয়েছে লাবণ্য৷ তনিমা অবাক হয়ে তাকালো তার দিকে। এখন আর আগের মতো তার চোখে অসহায়ত্ব নেই। চোখ পাল্টে গেছে হিংস্রতায়। তেলওয়াত ছেড়ে ঘিয়ে বোরখা পরা মেয়েটি ছুটে এলো লাবণ্যর কাছে। তার হাত দুটো শক্ত করে ধরে জোরে জোরে দোয়া পড়া শুরু করলো। কিন্তু লাবণ্যকে শান্ত করা গেল না। বরং দ্বিগুন শক্তিতে সে নিজের হাত ছাড়িয়ে ঘিয়ে বোরকা পড়া মহিলাটির হাতে কামড় বসিয়ে দিলো। চিৎকার করে উঠলো মহিলাটি। লাবন্যর মা, বাবা, চয়ন ছুটে এসেছে সাথে সাথে। কোনভাবেই লাবণ্যকে শান্ত করা যাচ্ছে না। মুখ দিয়ে গোঁগোঁ আওয়াজ করছে সে। গড়িয়ে পড়ছে লালা। তনিমা ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব। হুশ ফিরতেই দৌড়ে ঘরের বাইরে এলো। ড্রয়িং রুমের টেবিলে চয়নের ফোন বাজছে। তনিমা সেদিকে না তাকিয়ে সোফায় বসে পড়লো। তারপর হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো৷ তার মনে হলো, এইমুহুর্তে কাউকে পাশে দরকার। খুব বেশি দরকার। ফোন বের করে অন্তুকে ডায়াল করার কথা ভাবলো। দ্রুত হাতের ফোন নিয়ে অন্তুকে ডায়াল করতে যাবে, কিন্তু তার আগেই থমকালো। ছোট্ট একটা টেক্সট এসেছে অন্তুর নাম্বার থেকে।
” যেভাবেই হোক, চয়নের ফোনটা লুকিয়ে নিয়ে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে এসো। যত তাড়াতাড়ি পারো। ”
কান্না থেমে গেছে তনিমার। মাথা মনে হচ্ছে কাজ করছে না। কোথায় পাবে সে চয়নের ফোন? কিভাবে পাবে? অন্তুর কেনই বা ফোন দরকার?
এদিক ওদিক তাকালো তনিমা। তারপরই চোখ পড়লো টেবিলে রাখা ফোনটিতে। চয়নের ফোন। এদিকে এখন কেউ নেই। সবাই লাবণ্যকে নিয়ে ব্যস্ত। তনিমা কিছু ভাবার সময় নিলো না। চয়নের ফোনটি তুলে নিয়ে ব্যাগের ভেতরে রেখে দ্রুত বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো সে।
( চলবে)