আগন্তুক পর্ব-০৪

0
1022

#আগন্তুক
– সাবিহা বিনতে রইস

পর্ব – ৪

দরজা খুলে দেখবে একবার বাইরে কে ঘুরছে? চয়নকে ডাকবে নাকি? লাবণ্য নিজেকে অভয় দিলো। এত ভয় পাওয়ার কি আছে? বাইরে তো আলো জ্বলছে। লাবণ্য নিজেই দেখতে পারে। গুনগুন শব্দ এগিয়ে যাচ্ছে, বারান্দা ধরে ঠিক সিঁড়ির দিকে। লাবণ্য নিঃশব্দে দরজা খুললো। জোর করে পা দুটো টেনে নিয়ে বাইরে দাঁড়ালো। বাইরেটা ফাঁকা। কেউ নেই। বসন্তের মৃদু বাতাস আর লেবু ফুলের গন্ধে চারিদিক আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সে ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে রেলিঙের কাছে এলো৷ নিচের গাড়ী বারান্দা আজ আঁধার। ঘুমাতে যাবার আগে ওখানে আলো জ্বলছিল না? জ্বলছিল তো। স্পষ্ট মনে আছে তার। আশ্চর্য! তাহলে নেভালো কে? যাকগে, কাল সকালে চিন্তা করা যাবে। এখন তাহলে ঘরে ফেরা যাক। খামোখাই ভয় পাচ্ছিলো। কিচ্ছু নেই বাইরে। ঘরের দিকে পা বাড়াতে যাবে, তার আগে আবার থমকে দাঁড়ালো। কোথায় যেন ধাস্তাধস্তির শব্দ হচ্ছে। চাপা ফিসফিসানি। ডান দিকের ঘর গুলো থেকে আসছে। কে হতে পারে? অনিন্দিতা আর রূপম ভাই? নাকি প্রত্যয় আর মল্লিকা? একবার ডেকে দেখবে? তার আগেই আবার গোঙ্গানির শব্দে দৃষ্টি ফিরলো তার। ওই তো বারান্দা ধরে হেঁটে যাচ্ছে মেয়েটি৷ শরীরে ভারী, পাথরের কাজ করা পোশাক। মেরুন ওড়না মেঝে ছুঁয়েছে। ভারী ওড়নার অংশ টেনে নিয়ে সে এগিয়ে যাচ্ছে। খুব ধীরে।মনে হচ্ছে কোন এক ছন্দের তালে তালে সে পা ফেলছে। লাবণ্যর সারা শরীর শিরশির করে উঠল। এগিয়ে গেল এসে এক পা, দুপা করে। মেয়েটি থামছে না। কে মেয়েটি? এত রাতে এখানে কি করছে? মেয়েটি কি নয়নতারা, যার কথা আজ শুনেছিলো? ধ্যাত! কি সব ভাবছে! ওটা গল্প ছিলো। তার কি হ্যালুসিনেশন হচ্ছে? আসলে এইসব কিছুই সে দেখতে পাচ্ছে না? সব মিথ্যা, হতেই পারে, তাইনা?

মেয়েটি সিঁড়ির মুখে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। এগুচ্ছে না আর। লাবণ্য পা বাড়ালো। তাকে দেখতেই হবে মেয়েটি কে। তার আগেই কে যেন তার কাঁধ ছুয়েছে৷ লাবণ্য চমকে ফিরে তাকালো।

– লাবণ্য, এত রাতে তুমি এখানে কি করছ? আমার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল৷ পাশ ফিরে দেখি তুমি নেই। আর তুমি কিনা এখানে?

– আমি তো এসেছিলাম….

লাবণ্যর কথা থেমে গেল। সামনেটা পুরোপুরি ফাঁকা৷ কেউ নেই৷

– চয়ন, এখানে একজন ছিলো।

– কে ছিলো? কাকে দেখেছো?

– মুখ দেখতে পাইনি৷ কিন্তু কেউ যেন, রাজকীয় পোশাকে ছিলো এখানে। হাঁটছিলো৷

– লাবণ্য, কি সব বলছো? তুমি ঠিক আছো? এখানে কেউ নেয়, দেখো…

চয়ন আর লাবণ্যর কথা শুনে মল্লিকা আর প্রত্যয়ও বেরিয়ে এসেছে দরজা খুলে।

– কি ব্যাপার চয়ন? কি হয়েছে?

– দেখ না, লাবণ্য বলছে এখানে নাকি কাকে দেখেছে।

প্রত্যয় অবাক হয়ে তাকালো।

– এখানে? এত রাতে কে থাকবে? আমরা তো কিছু টের পাইনি৷

– লাবণ্য, আমার মনে হয় তোমার ঘুম দরকার। যাও, তুমি রেস্ট নাও৷ আমরা সকালে শুনবো বাকি কথা।

লাবণ্য মাথা নাড়লো৷ চয়ন তার হাত ধরে ঘরের দিকে নিয়ে গেল। ঘরে ঢোকার আগে লাবণ্য খেয়াল করলো, গাড়ি বারান্দাটা এখন আর আগের মতো অন্ধকার নেই৷ সবগুলো আলো জ্বলছে ওখানে।

লাবণ্যকে বিছানায় শোয়ায় পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো চয়ন। লাবণ্য অল্প কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে পড়লো৷ তারপর যখন ঘুম ভাঙলো তখন সূর্য বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে৷ লাবণ্য উঠে আড়মোড়া ভাঙলো। চয়ন পাশে নেই৷ বাথরুমে কল ছাড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তার মানে চয়ন বাথরুমে আছে। লাবণ্য বাইরে বেরিয়ে এলো। দারুণ এক সকালে দাঁড়িয়ে রাতের সব কিছু কেমন যেন অর্থহীন মনে হচ্ছে। কেন যে ভয় পেয়েছিল সে! আর কি সব দেখেছিলো রাতের আঁধারে! সবটাই স্বপ্ন ছিলো
বোধহয়। লাবণ্য রেলিঙের কাছে সরে এলো। নিচে ফোয়ারার কাছে বসে প্রত্যয় আর মল্লিকা সেলফি তুলছে। তাকে দেখে দুজনই হাত নেড়ে গুড মর্নিং জানালো।
লাবণ্য জিজ্ঞাসা করলো,

– অনিন্দিতা ভাবী আর রূপম ভাই কই?

মল্লিকা উত্তর দিলো,

– ভাইয়া তো হাঁটতে গেছে। আর ভাবীকে দেখো, ঘরেই আছে বোধহয়৷

– এখনো ঘুমাচ্ছে?

– জানি না। ডেকে দেখো একবার।

লাবণ্য পা বাড়ালো অনিন্দিতাদের ঘরের দিকে৷ দরজাটা ভেজানো ছিলো। আলতো ঠেলা দিতেই খুলে গেল পুরোটা। সাথে সাথে লাবণ্য গলা চিড়ে তীক্ষ্ণ চিৎকার বেরিয়ে এলো। অনিন্দিতা ঝুলছে ঘরের কড়িকাঠ থেকে। পরনে মেরুন রঙের একটা বেনারসি। নিচে বিছানা জুড়ে ছড়ানো অজস্র সাদা আর বেগুনি রঙের নয়নতারা ফুল।

( চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে