#আকাশের_চেয়েও_বেশী_তোমায়_ভালোবাসি
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)
সপ্তম পর্ব
এখনো অন্ধকারের রেশ কাটে নি।চারদিকে ফজর আজানের শব্দে আঁচলের ঘুম ভাঙে।।ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে আর আঁচলের রাতের কথা মনে পড়ে।আঁচল তাকিয়ে দেখে আবিরে ওর পাশে নেই।আঁচল ছোট্টো একটা শ্বাস নিয়ে বিছানা থেকে উঠে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়। বারান্দায় এসে দেখে আবির ফ্লোরে বসে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন। আঁচল আবিরকে ডাক দিতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে ডাক না দিয়ে আবার ঘরে চলে আসে। আঁচল আলমারি থেকে একটা থ্রী পিছ বের করে ওটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আঁচল সাদার আর হলুদ একটা থ্রী পিছ পরেছে।মুখে কোনো সাজগোজ নেই মুখটা কেমন সাদামাটা লাগছে।চুলগুলো হাত খোপা করা।বিছানায় বসে ফোন ঘাটছে আঁচল।হঠাৎ আবিরের ফোন বেজে ওঠে।আঁচল আবিরের ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে “Jaan” দিয়ে সেইভ করা একটা নাম্বার থেকে কল আসে সেই সাথে একটা সুন্দরী মেয়ের ছবি ভেসে ওঠে মোবাইল স্ক্রিনে। আঁচল বুঝতে পারে মেয়েটা কে। আঁচল ফোন টা রিসিভ করতেই ওইপাশ থেকে স্নেহা বলে ওঠে
“কি ব্যাপার জান কল রিসিভ করতে এতো সময় লাগে?আর শোনো আঁচলকে তোমাদের বাড়ী থেকে বের করেছো? ওই মেয়েকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে আর তো কয়েকটা দিনের ব্যাপার তুমি ওই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। তারপর আমি আর তুমি বিয়ে করে অনেক হ্যাপি থাকবো।”
স্নেহা এতোটুকু বলতেই আঁচল কল কেটে দেয় ওর আর সহ্য হচ্ছিলো না স্নেহার করা থা গুলো।আরো দুই তিনবার স্নেহা কল দেয় কিন্তু আঁচল ফোনটা আর ধরে নি।আঁচলের চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝরে পড়ে।কিছুক্ষণ পর আবারো স্নেহার নাম্বার থেকে মেসেজ আসে
“বেইবি আমি আমার বাবা মা কে বলে দিয়েছি আমাদের বিয়ের কথা।ওনারা চান তোমার বার্থডের দিনই আমাদের এনগেজমেন্ট করে রাখতে আর তার কয়দিন পরেই বিয়ের তারিখ ঠিক করে হবে।আর শোনো ঠিক সকাল ১০ টায় এশিয়ান রেস্টুরেন্টে চলে এসো আমি অপেক্ষা করবো”
আঁচল একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে চিন্তা করে আজকে আঁচলও ওই রেস্টুরেন্টে যাবে আর আজই ওদের মুখোমুখি হবে।
প্রতিদিনের নিয়ম মতো আবিরের ঘুম ভাঙে আবির নিজেকে বারান্দায় দেখে অবাক হয়।আবিরের রাতের কথা মনে পড়লে আবির নিজে নিজে বলে
“ইস আঁচলের সাথে রাগের মাথায় অনেক খারাপ ব্যাবহার করে ফেলেছি।জানিনা মেয়েটা কতোটা কষ্ট পেয়েছে।উফফ মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে।”
আবির ঘরে গিয়ে দেখে আঁচল বিছানায় বসে হেলান দিয়ে বই পড়ছে।মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে চোখের কোণে পানি স্পষ্ট। আবির ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আঁচল এখনো আগের জায়গায় বসে বই পড়ছে।কোনো রিয়েকশন নেই ওর মধ্যে।অন্য সময় হলে তো এতোক্ষণে কথা বলে বলে পাগল করে মাথা খেয়ে পেলতো।
খাবার টেবিলে বসে আবির এবং আবিরের মা খাচ্ছে আর আঁচল খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। আবিরের মা আঁচলকে অনেকবার খেতে বললেও আঁচল বললো পরে খাবে ওর এখন খিদে নেই বলেই নিজের ঘরে চলে গেলো।ব্যাপারটা আবির বুঝতে পারলেও আবিরের মা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।আবির নিজের ঘরে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিতেই স্নেহার মেসেজ টা চোখে পড়ে আবিরের
সকাল নয়টা পয়তাল্লিশ মিনিট।আবিরে রেডি হচ্ছে স্নেহার সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন্য।এর মধ্যে আবির আঁচলের সাথে কথা বলতে চাইলেও আঁচল তার সাধ্যমতো আবিরকে এড়িয়ে চলে।আবির একটা সাদা টি-শার্ট আর একটা কালো প্যান্ট পরে নেয়।বাম হাতে কালো ওকটা ব্যাসলেট পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। আবির বেরিয়ে যেতে আঁচলও আবিরের পেছন পেছন একটা কালো বোরকা আর কালো নিকাব পরে নেয়।চোখে একটা চশমা আর হাতে হাত মোজা পরে।আঁচলকে একদমই চেনা যাচ্ছে না।
আঁচল আবিরকে ফলো করে আবিরের পেছন পেছন একটা রিক্সা নিয়ে রেস্টুরেন্টের সামনে যায়। আবির রেস্টুরেন্টের ভেতর প্রবেশ করে।আঁচলও প্রবেশ করে চারদিক টা আঁচল ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে নেয়।কিছুক্ষণ পর আঁচল আবিরকে দেখতে পায় আবির আর স্নেহা একই টেবিলে বসেছে।ওই টেবিলের পেছনে একটা খালি টেবিল ছিলো আঁচল গিয়ে ওখানে বসে খাবার অর্ডার করে আর খুব মনোযোগে দিয়ে আবির স্নেহার কথা শুনতে থাকে।
স্নেহা আবিরের হাত ধরে বলে
“বেবি আমরা কবে বিয়ে করবো”
আবির হালকা কাশি দিয়ে বলে
“হুমম খুব তাড়াতাড়ি”
স্নেহা আবিরকে বলে
“আবির আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে”
আবির ভ্রু কুচকে বললো
“কি?”
স্নেহা বললো
“আগামীকাল তো তোমার বার্থডে তো সেই বার্থডে অনুষ্ঠানে তুমি আঁচলকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে আর আমাদের এনগেজমেন্ট টাও করে রাখবে।”
আবির বলে
“কিন্তু”
আবিরের কথার মাঝে থামিয়ে স্নেহা বলে
“কোনো কিন্তু না।তুমি তো জানোই আমার মামা একজন উকিল।মামার সাথে আমার কথা বলা হয়ে গেছে তোমাদের ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবে উনি।তুমি আঁচলকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করবে সিম্পল”
আবির আর স্নেহা টুকটাক কথা বলে হালকা খাবার খেয়ে আবির উঠে চলে যায়।আঁচল ভাবলো স্নেহার মুখোমুখি দাঁড়াবে।আঁচল উঠতেই খেয়াল করে আড়াল থেকে একজন এসে স্নেহার সামনে বসে।আঁচল খানিকটা অবাক হয়। আঁচল ওদের কথোপকথন শুনে তো মহা অবাক।
স্নেহা সিন্ধকে বলে
“প্লান মতো কাজ হচ্ছে। ওই থার্ডক্লাস আবিরকে আরো ইমোশনাল বানিয়ে দিতে হবে।তাহলেই আমরা আমাদের আসল উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবো”
স্নিগ্ধ স্নেহার হাত টা ধরে বাঁকা হেসে বলে
“ইয়াহ সুইটহার্ট।আবির বুঝতেও পারবে না যে আমরা ওর সাথে কতো বড় খেলা খেলছি।তুমি আবিরের সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নাও।তারপর আমরা আমেরিকা গিয়ে সেটেল্ড হয়ে যাবো আর ওই আবির কিচ্ছু টের পাবে না”
স্নেহা কপাল ভাজ করে বললো
“আবির তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।তিন বছরে ওকে যতোটুকু চিনেছি ও সত্যটা জানলে একদমই ছেড়ে দেবে না”
স্নিগ্ধ হেসে বলল
“হুমম প্রয়োজনে আবিরকে খুন করে ফেলবো।না থাকবে বাঁশ তো না বাজবে বাঁশি”
আঁচল রিক্সায় করে বাড়ি ফিরছে।বাড়িতে ঢোকার আগেই বোরকাটা খুলে একটা শপিংব্যাগের মধ্যে নিয়ে নিলো। বাড়ীর দরজা খোলা ছিলো তাই কারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় নি আঁচলকে।
আঁচল নিজের ঘরে প্রবেশ করলো।আবির বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।আঁচল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই আবির বলে উঠলো
“কোথায় গিয়েছিলে”
আঁচল কোনো জবাব দিলো না আবির আবার জিজ্ঞাস করে
“কোথায় গিয়েছিলে এই ভরদুপুর বেলা”
আঁচল আবিরের দিকে একবার বলে
“একটা ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম”
আবির জিজ্ঞাস করে
“কেনো গিয়েছিলে?”
আঁচল মুচকি হেসে বলে
“সেটা আপনার না জানলেও চলবে”
আবির রেগে বলে
“ভালোয় ভালোয় বলছি কোথায় গিয়েছিলে আর কেনো গিয়েছিলে বলো”
আঁচল রহস্যময় হাসি হেসে বললো
“জেনে কি করবেন বলুন”
আবির বিছানা থেকে উঠে এসে আঁচলের সামনে দাঁড়িয়ে আঁচলের চোখে চোখ রেখে রাগী ভাবে বলে
“তুমি আমাদের বাড়ীর বউ আর তুমি আমাদের বাড়ীর সম্মান তাই কোথায় গিয়েছিলে কেনো গিয়েছিলে বলো। তোমার কোনো ক্ষতি হলে সম্মানটাও আমাদের বাড়ীরই নষ্ট হবে”
আঁচল আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“আমার যেখানে ইচ্ছে হয়েছে গিয়েছি তাতে আপনার কি? কে আপনি? আমি আপনাকে কেনো কৈফিয়ত দিবো?হু আর ইউ মিস্টার আবির আহমেদ?হু আর ইউ?”
আবির আঁচলের হাত দুটো চেপে ধরে বলে
“আমি তোমার হাজবেন্ড ওকে”
আঁচল তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলে
“হাজবেন্ড সেটা আর তো মাত্র একটা দিনের জন্য আর আপনার মতো মানুষ কোনো ভাবেই কারো হাজবেন্ড হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।”
এতোটুকু বলেই আঁচল ওয়াশরুমে চলে যায় আর আবির ধপ করে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।
কিছুক্ষণ পর আঁচল একটা খয়েরী রঙের শাড়ী পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়।আঁচল বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে আবির ঘরে নেই।আঁচল গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রোজকার মতোই হালকা কাজল আর লিপস্টিক পরে নেয়।ড্রয়িংরুম থেকে কারো খুব জোরে অট্টহাসির আওয়াজ ভেসে আসছে আঁচলের কানে।আঁচল মাথায় একটা ঘোমটা টেনে নিজের ঘর থেকে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ায়।আঁচল ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখে আবির ও তার এক ফ্রেন্ড সোফায় বসে হাসছে।আঁচলকে দেখে আবির বলে
“তিয়াশ এটা তোর ভাবি আঁচল। আর আঁচল এটা আমার বন্ধু তিয়াশ”
তিয়াশ আঁচলকে দেখে লম্বা একটা সালাম দিলো
“আসসালামু আকাইকুম ভাবি।”
আঁচল সালামের উত্তর নিলো
“ওয়ালাইকুম আসসালাম”
তিয়াশ আবিরকে বললো
“কি মামু আমাদের রেখে
একা একা বিয়ে করে নিলা।
বলি ভাবি আপনার ছোটো বোন আছে লাইন মারার মতো?”
তিয়াশের কথায় আবির আর আঁচল হাসে আবির তিয়াশকে বলে
“তোমার একটা গার্লফ্রেন্ড সামলাইতেই বারোটা বেজে যায় এখন আবার আমার সালি খুজো”
আবির আর তিয়াশের কথার মাঝে পেছন থেকে স্নিগ্ধ এলো।তিয়াশ স্নিগ্ধকে বললো
“কিরে শালা এতোক্ষনে তোর আসার সময় হলো”
স্নিগ্ধ বলে
“আরে মামু রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো”
স্নিগ্ধর কন্ঠটা আঁচলের কাছে বেশ পরিচিত মনে হয় আঁচল ঘুরে তাকায়।আঁচল স্নিগ্ধকে দেখে অনেক বড় একটা শক খায়। আঁচল চিনতে পারে স্নেহার সাথে ছেলেটাই তো এটা যে আবিরকে মারার প্লান করছিলো।স্নিগ্ধ গিয়ে আবিরের পাশে বসে আবির স্নিগ্ধকে বলে
“দোস্ত তোর ভাবি আঁচল।আর আঁচল এইটা আমার বেস্টফ্রেন্ড স্নিগ্ধ”
আবিরের কথায় স্নিগ্ধ বলে
“দোস্ত মাইয়া তো পুরাই জোস” বলেই স্নিগ্ধ আঁচলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যান্ডশেক করার জন্য
“হাই আঁচল আমি স্নিগ্ধ”
স্নিগ্ধর কথায় আঁচল হাত বাড়িয়ে না দিয়ে সালাম দেয়
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া”
আবির আঁচলকে বলে
“আঁচল যাও তুমি ওদের জন্য নাস্তা রেডি করো”
আঁচল ওখান থেকে চলে যায়।
রাত ১১ টা ত্রিশ মিনিট আঁচল বারান্দায় বসে আছে।আর নিজের মনে বলছে
“স্নিগ্ধ বন্ধুত্বের সাথে এতো বড় বেইমানি করছে। নিজের বেস্টফ্রেন্ডকে খুন করার প্লানিং করছে।আর ওই স্নেহা নিজের ভালোবাসার সাথে এতোবড় বেইমানি করছে।ওদের মনুষ্যত্ব বলতে কি কিছুই নেই।ওদের মুখোশ আমি সবার সামনে টেনে খুলবো কাল কিন্তু কিন্তু মিস্টার আবির আহমেদ আপনাকেও যে শাস্তি পেতে হবে,ভয়ানয় শাস্তি। আপনার দেওয়া প্রত্যেকটা আঘাতের শাস্তি আপনাকে পেতে হবে।কিন্তু তার আগে ওই স্নেহার আসল রুপ আপনার সামনে তুলে ধরি। আপনাকে আমি ভেঙে গুড়িয়ে আবার নিজের মতো করে তৈরি করবো। আপনার বলা প্রত্যেকটা কথার হিসেব আপনাকে অক্ষরে অক্ষরে ফিরিয়ে দেবো।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ মিস্টার আবির আহমেদ।আপনি এতো বড় ভুল করেছেন তার শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে””
চলবে_
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)