আকাঙ্খিতো প্রণয় পর্ব-১৪

0
936

#ধারাবাহিকগল্প
#আকাঙ্খিতো প্রণয়
পর্ব-চৌদ্দ
মাহবুবা বিথী

——-হ্যালো রুহী কেমন আছো? আমার দাদুভাই কেমন আছে?ওকে আমার তরফ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিয়ে দিও। আসলে আমার মনটা খুব খারাপ। তা,না হলে আমি নিজে তোমাদের বাসায় এসে দাদুভাইকে দেখে যেতাম।
আমি মনে মনে ভাবলাম, উনি আসতে পারেন নাই ভালোই হয়েছে। কারণ আব্বু আম্মু উনার সামনে স্বাভাবিক থাকতে পারেন না। যেভাবে স্বতস্ফূর্তভাবে আমার ছেলের জন্মদিনে উনারা অংশ নিয়েছে আমার শ্বশুর আসলে আব্বু আম্মু এই মুডে থাকতো না। আমি বুঝি না থাকাই স্বাভাবিক। উনার ছেলে ডিভোর্স দিয়ে দিলো আর ছেলের বাবা এসে আবার আদিখ্যেতা করে তাদের মেয়েকে আদর করছে,নাতিকে নিয়ে আহ্লাদ করছে। কোনো বাবা মা ই হয়ত মেনে নিতে পারতেন না। যাইহোক আমার সেসব নিয়ে মাথা ব্যথা নাই। তবে শ্বশুরের মন খারাপের কারণ জানতে জিজ্ঞাসা করলাম,
——সে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। আপনার হয়ে আমি মেহেদীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিয়ে দিবো। কিন্তু বাবা আপনার মন খারাপ কেন?
——-তোমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই। আজ না হোক কাল তো প্রকাশ পাবেই। সোহেলকে পুলিশ খুঁজছে।
——–পুলিশ খুঁজছে কেন?
——–খুনী হিসাবে সোহেলকে পুলিশ সন্দেহ করছে।
——-বাবা আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না। উনাকে পুলিশ খুনী হিসাবে সন্দেহ করবে কেন?
——আমি তোমাকে কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা। আসলে দুদিন আগে ঢাকা মানিকগঞ্জ হাইওয়ের পাশে ঝোপের মাঝে একটা মেয়েকে মুমূর্ষ অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। কারা যেন মেয়েটাকে রেপ করেছে। কিন্তু মেয়েটা বাঁচেনি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটার মৃত্যু হয়। সেই সুত্র ধরে পুলিশ ওখানকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেই সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পায় চারজন ছেলে একটা ট্যাক্সি করে মেয়েটাকে গভীর রাতে ঐ রাস্তায়
ফেলে দিয়ে যায়। পুলিশ ঐ ট্যাক্সির নাম্বার সংগ্রহ করে। তারপর ট্যাক্সির অনুসন্ধান করে সোহেলের বন্ধু শিহাবকে পুলিশ অ্যারেস্ট করে। শিহাবের কাছেই পুলিশ বাকী তিনজনের খোঁজ পায়। সোহেলও সেই চারজনের একজন।
—–সোহেলভাই এখন কোথায়?
——-আমি জানি না। যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাক। এরকম একটা কিছু ঘটবে সেটা আমি ঠিক বুঝেছিলাম। ওর মাকে বহুবার সতর্ক করেছি। কিন্তু আমার কথা কানে তুলেনি। একেরপর এক অন্যায়ের প্রশ্রয় দিয়ে গেছে। এখন ও একটা দানবে পরিনিত হয়েছে। ওর ফাঁসি হওয়া উচিত। ছেলের এই কুকীর্তিতে ওর মায়ের শরীরও খুব খারাপ হয়েছে। একটা মাইল্ডস্ট্রোক করেছে। এখন আমার হাসপাতালে ভর্তি আছে। সমস্যা তো হয়েছে আমার।
লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। সবাই আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলছে আমি এক ধর্ষকের পিতা।
এই কথাগুলো বলে ফোনের মধ্যেই আমার শ্বশুর ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো।
আসলে উনার একটু কাঁদা উচিত। কাঁদলে বুকটা হালকা হবে। না,হলে কষ্ট বুকে চেপে উনারও শরীরটা খারাপ হয়ে যাবে।কিছুক্ষণ কাঁদার পর আমি বললাম,
——-বাবা আপনাকে শক্ত হতে হবে। এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো চলবে না। আর শিহাব হয়ত মিথ্যাও বলতে পারে।
——তুমি একথা কিভাবে বলছো? রুহী মা তুমিও জানো সোহেলের চরিত্র কেমন ছিলো। ওর দ্বারাই এসব অপকর্ম করা সম্ভব।
——বাবা আমি বুঝতে পারছি থানা পুলিশ নিয়ে আপনাকে অনেক কঠিন সময় পাড়ি দিতে হচ্ছে।
——না, আমি ওর মাকে বলেছি তোমার এই কুলাঙ্গার ছেলের জন্য আমি থানা পুলিশ করতে পারবো না। ওর ফাঁসি হয়ে মরা উচিত। ওর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা উচিত নয়। যার কাছে মানুষ নিরাপদ নয় তাকে মেরেফেলাই উচিত। এসব থানা পুলিশকে সামলাচ্ছে রাসেল। আমি এসবের মাঝে নেই। এমনকি কোনো টাকাও আমি খরচ করবো না।
——-বাবা মেয়েটার পরিবার থেকে কেউ আসেনি?
——না, আসেনি। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জেনেছে মেয়েটা যৌন কর্মী ছিলো।
—–বাবা আপনাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে।
কারণ মানসিক ভাবে শক্ত না থাকলে আপনার শরীরও ভেঙ্গে পড়তে পারে।
——-না আমি শক্তই আছি। আসলে কি জানো, এ হচ্ছে পাপের ফল। তোমার মতো একটা নিরপরাধ মানুষ এ বাড়ি থেকে কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চলে গেছে। তার ফলতো ভোগ করতেই হবে।
——না, বাবা এখন আমার কোনো কষ্ট নাই। হয়তো আমার ঐ টুকু কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহপাক আমাকে আপনার মতো একজন বাবাকে উপহার হিসাবে দিয়েছেন। তাই আজ আর আমার কোনো দুঃখ নেই।
আমার শ্বশুরকে একথা বলতে গিয়ে আমারও কান্নায় গলার শব্দ বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। নিজেকে সামলে নিলাম। এমন সময় মেহেদী কেঁদে উঠলো। ওর কান্নার শব্দশুনে শ্বশুর আব্বা আমায় বললেন,
——দাদুভাই মনে হয় উঠে পড়েছে। আমি ফোন রাখছি। তুমি ওকে সামলাও।
ফোনটা রেখে আমিও খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। যতই আমার শ্বশুর বলুক না কেন মানসিক ভাবে উনি শক্ত আছেন কিন্তু এর প্রভাব অবশ্যই পড়বে। হাজারো হোক নিজের ছেলে বলে কথা। এতে যদি উনি অসুস্থ হয়ে যান তাহলে তো সমস্যা হয়ে যাবে। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কে যেন রুমের বাইরে দরজা নক করছে।
—–কে?
—–আপু আমি।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত বারোটা বাজে।
——এতো রাতে তোর কি দরকার। আয় ভিতরে আয়।
প্লাবন এসে আমার খাটের কোনায় বসে পড়লো। তারপর কেমন যেন ইতস্তত করতে লাগলো। আমি ওকে বললাম,
——তুই কিছু বলতে চাইলে বলে ফেল। সারাদিন অনেক ঝামেলা গিয়েছে। আমি খুব টায়ার্ড। ঘুমোবো।
——-তুমি কি সোহেল ভাই সম্পর্কে কিছু জানো না?
——কি ব্যাপারে?
——-উনি তো মার্ডার কেসের আসামী।
——তুই কিভাবে জানলি?
——পত্রিকায় নিউজে দেখলাম। আমি ভাবলাম তুমি মনে হয় জানো। উনি নাকি এখন দেশেই নাই। পুলিশ সন্দেহ করছে সীমান্ত দিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ায় পালিয়ে গিয়েছে।
—–হুম, একটু আগে আমার শ্বশুর ফোন দিয়ে জানালো। শোন প্লাবন সৎসঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। সোহেলের বন্ধুবান্ধব একদম ভালো ছিলো না। তুই নিজেও খুব সাবধানে বন্ধু সিলেকশন করবি। অবশ্য সোহেল নিজেও মানুষ হিসাবে ভালো না। প্রচুর পয়সা উড়াতো। আর এগুলো যোগাড় দিতো ওর মা। যা শুয়ে পড়।
প্লাবন চলে যাবার পর আমার খুব ভয় হতে লাগলো। ঐ শয়তানটার চোখ আমার উপরেও ছিলো। আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন। ডিভোর্স হয়ে আমার একপ্রকার মঙ্গলই হয়েছে।
ম্যাসেজের শব্দে মোবাইলে তাকিয়ে দেখলাম হৃদ্য মেসেজ পাঠিয়েছে।
——রুহী সেদিন চারুকলায় যে ছেলেটা বদমায়েশী করতে আসছিলো মানে তোমার দেবর নিউজে দেখলাম ও মার্ডার কেসের আসামী।
——হৃদ্যে ও এখন আমার কেউ নয়। কারণ ওর ভাইয়ের সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। আর আমিও তাই শুনেছি। আমি খুব টায়ার্ড দোস্ত। ঘুম পাচ্ছে। গুড নাইট।
আসলে আমার ও মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বালিশটা ঠিক করে নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। হঠাৎ বালিশের নিচে একটা কাগজে হাত পড়লো। বালিশটা তুলে দেখলাম একটা ছবি সহ কাগজ কে যেন ভাঁজ করে বালিশের তলায় গুঁজে রেখেছে। ছবিটা দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আর ভাবলাম ন্যাড়ারা কেন বারবার বেলতলায় যায়?

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে