আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-০৫

0
2795

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৫

অন্ধকার রুমে ভয়ে জমে আছে মায়া।একটা ছায়ামুর্তি যে তার দিকেই এগিয়ে আসছে বেশ বুঝতে পারছে সে।
গটগট পায়ের শব্দ তুলে ক্রমশ কাছে এসে ধারালো কিছু চেপে ধরে তার গলায়।ফুঁপিয়ে উঠে মায়া।
লোকটা কর্কশ কন্ঠে বলে,
—“একদম শব্দ করবিনা।চুপচাপ আগে চল।”বলেই বিশ্রিভাবে হাসে লোকটা।মনে মনে ভাবে,এরে আজকে নিতে পারলে তার আর কোনোদিন টাকার অভাব হবেনা,মায়ার বিনিময়ে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পাবে সে,এজন্যইতো এতো প্ল্যান,হামলা।
মায়া একপা আগে বাড়াতেই হঠাৎ গুলির শব্দে আৎকে উঠে।সঙ্গে সঙ্গেই পিছনের লোকটা লুটিয়ে পরে।।মায়া পিছনে তাকায়।লোকটা মরে গেছে।অন্ধকারেও সে বুঝতে পারে পায়ের নিচে তাজা রক্ত।মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।
সামনে তাকানোর আগেই কেউ একজন একহাতে কোমড় পেচিয়ে তাকে বুকে টেনে নিয়ে অস্থির কন্ঠে বললো,

—“ইউ ওকে?কোথাও লাগেনিতো?”

কন্ঠটা চেনে মায়া।এটা আরিয়ান।চরম ভরসায় দু’হাতে আরিয়ানকে জাপটে ধরে মায়া।এতটা জোরে ধরেছে যেন আরিয়ানের শার্ট ভেদ করে নখ গেঁথে যাচ্ছে পিঠে।আরিয়ান কিছু বলেনা।মেয়েটার শরীরের কাঁপুনিই জানান দিচ্ছে ঠি ক কতটা ভয় পেয়েছে সে।বন্দুক হাতেই সে মায়ার পিঠে আলতো করে হাত রাখে।মায়ার ভেজা চুলের পানিতে ভিজে যায় হাত।ঘর তখনো অন্ধকার।এমনকি সারা বাড়িই অন্ধকার।গোলাগুলির শব্দ থেমে গেছে।
আরিয়ান আস্তে করে বলে,
—“আমি একটু বাইরেটা দেখে আসি?”

মায়া কান্নামিশ্রিত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
—“না,প্লিজ..যাবেন না।”

—“আচ্ছা যাবোনা।…কাঁদেনা।”

বন্দুকটা পকেটে ঢুকিয়ে ফোন বের করে তন্ময়কে কল দিতে গেলেই লাইট জ্বলে উঠে।দরজা দিয়ে তাকিয়ে দেখে সারাবাড়িতেই আলো চলে এসেছে।সেসময় তন্ময় হুড়মুড় করে ঢুকে।আরিয়ানের বেষ্টনীতে আবদ্ধ মায়াকে একনজর দেখে।তারপর চোখ যায় ফ্লোরে পরা লোকটার মৃতদেহের দিকে।আরিয়ান বাইরের পরিস্থিতি জিজ্ঞেস করে।তন্ময় ধীর কন্ঠে বলে,

—“পুলিশ এসেছে ভাই।গেস্টরা সব চলে গেছে।কিন্তু হামলাকারীরা জীবিত নাই কেও।সব মরে গেছে।তাদের লাশ নিয়ে যাচ্ছে।”

আরিয়ান ইশারায় রাশেদ চৌধুরির কথা জিজ্ঞেস করে।তন্ময় তার কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,

—“হসপিটালে নিয়েছে।হাতের পাশ ঘেঁষে গুলি লেগেছে।সেটা একসিডেন্টলি।গুরুতর কিছু নয়।বোঝাই গেছে তাকে মারার উদ্দেশ্য ছিলোনা লোকগুলোর।”

আরিয়ান মাথা নাড়ায়।সে নিজেও বুঝেছে লোকগুলো মায়ার জন্যই এসেছিলো।কারণ লোকগুলো কাওকেই গুলি করেনি বা কোন ক্ষতি করেনি।যখন সবাই গুলির শব্দে আতঙ্কিত তখন ওদের মধ্যর কয়েকজনকে উপরের দিকে ছুটতে দেখেই তাদের পিছে দৌড়ে এসেছিলো সে।আসতে আসতেই পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়।তখনই বুঝেছিলো সবার অগোচরে মায়ার ক্ষতি করাই তাদের মুল উদ্দেশ্য।কিন্তু এত সিকিউরিটির মধ্য তারা ঢুকলো কিভাবে সেটা আসলেই ভাবার বিষয়।
কয়েকজন এসে লোকটার লাশ নিয়ে যায়।তন্ময় তাদের সাথেই বাইরে যায়।
আরিয়ান মায়ার দিকে তাকায়।মেয়েটা এখন শান্ত।চুলের পানিতে পিঠের জামা ভিজে একাকার।সে কোমড় থেকে হাত সরায়।বাহু ধরে আলতো হাতে ছাড়িয়ে নেয়।বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিপুণভাবে পর্যবেক্ষন করে।
ফর্সা চেহারা ভয়ে রক্তিম আভা ধারণ করেছে,চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পরে সারা মুখে শুভ্রতা ছড়িয়ে দিচ্ছে,লাল জামায়,ভেজা চুলে অসম্ভব আবেদনময়ী লাগছে মেয়েটাকে।
আরিয়ান হাত বাড়িয়ে মুখের সামনের চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দেয়।মায়ার ঠোঁট কাঁপছে।হয়তো ভেজা জামায় ঠান্ডা লাগছে।আরিয়ান পাশের তোয়ালেটা হাতে দিয়ে বলে,
—“চুল মুছে নাও।ভিজে যাচ্ছো।ঠান্ডা লেগে যাবে।”

মায়া একবার তোয়ালেটা দেখে।তারপর মাথা উঠিয়ে আরিয়ানের চোখে চোখ রেখে বলে,
—“বাবা কোথায়?”

আরিয়ান নির্দিধায় তার গালে হাত রাখে।একটু আশ্বস্তভরা কন্ঠে বলে,
—“তোমার বাবা আছে।ব্যস্ত হয়তো।চিন্তা করোনা।”

মায়া চোখ নামিয়ে নেয়।আরিয়ান গালে রাখা হাত সরিয়ে ফেলে।মেয়েটার নামের মতো তার চেহারাও রয়েছে অদ্ভুত মায়া।

হঠাৎ ইতি দৌড়ে আসে।এতক্ষন সে নিচে ছিলো।পুলিশের ভয়ে উপরে আসার সাহস হচ্ছিলো না।
রুমে এসে আরিয়ানকে দেখে কিছুটা দমে গেলেও অস্থিরভাবে বলে,

—“ম্যাম আপনি ঠিক আছেন?”

মায়া তার দিকে তাকিয়ে উপর নিচে মাথা নাড়ায়।আরিয়ান ইতিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“ওর ড্রেস চেনজ করে মাথা মুছিয়ে দাও।

তারপর ইতির কাছে এগিয়ে এসে ধীর গলায় বলে,”রাশেদ চৌধুরির কথা ওকে বলোনা।প্যানিক হয়ে যাবে।আর ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিও।She will be okay.

ইতি মাথা নাড়ায়।অত:পর বাইরে বেড়িয়ে যায় আরিয়ান।ইতি দরজা আটকে দেয়।


মাঝরাতে বাড়ি ফিরে রাশেদ চৌধুরি।হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।এসেই আগে মায়ার রুমে যায়।মেয়েকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দেখে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে।তবুও একটা চিন্তা থেকেই যায়।কোনরকম শব্দ না করে বেরিয়ে আসেন।দরজার বাইরেই দাড়িয়ে ছিলো তার পি.এ আজিজ।তিনি বের হতেই সে হেসে বলে,

—“মায়া ম্যাম ঠি ক আছেন স্যার।আমার মনে হয়না তারা ম্যামের ক্ষতি করতে এসেছিল।আপনি ভুল ভাবছেন”।

রাশেদ চৌধুরি চোখ গরম করে তাকায়।আজিজের মুখের হাসি দপ করে নিভে যায়।কাঁচুমাচু করে সে।

—————
গাড়ি ড্রাইভ করছে তন্ময়।পাশের সিটে চোখ বন্ধ করে মাথা এলিয়ে বসে আছে আরিয়ান।রাত অনেক গভীর।ফাঁকা রাস্তায় ফুল স্পিডে চলছে গাড়ি।রাশেদ চৌধুরির বাসা থেকে বেরিয়ে একটা জরুরি কাজে গিয়েছিলো তারা।সেখান থেকে ফিরতেই দেরি হয়েছে।প্রকৃতিতে পিনপতন নিরবতা।
সেই নিরবতা ভেঙে তন্ময়ই বললো,

—‘ভাই?’

তাকালো না আরিয়ান।চোখও খুললো না।সেভাবেই বললো,
—‘বল’।

—‘অন্য কেউ হলেও এমনটাই করতেন?’

—‘কেমনটা?’

—‘রাশেদ চৌধুরির মেয়েকে যেভাবে বাঁচালেন।যেভাবে উনাকে আগলে রেখেছিলেন’

—‘হয়তো করতাম’।

—‘আমার মনে হয় না’।

—‘তাহলে তোর কি মনে হয়?’

—‘সেটা আপনি ভালোকরেই বুঝতে পারছেন।’

আরিয়ান হাসে।বিরবির করে বলে,
—“মেয়েটা খুবই সহজ সরল।ওর বাবার নোংরা দুনিয়ায় টিকে থাকতে পারবেনা।বুঝলি?

—‘এটা আমার প্রশ্নের উওর নয়’।

—‘তোর প্রশ্নের উওর আমার কাছে নেই।’

তন্ময় আর কিছু বলেনা।আরিয়ান দু”আঙ্গুলে কপাল চেপে ধরে।মাথা ব্যাথা করছে তার।মাথার ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কিছু বিষয়,”সারাবাড়িতেই এতো সিকিউরিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে ঢুকে পরলো হামলাকারীরা?মায়াকে মারার উদ্দেশ্য হলে লোকটা কেন তার গলায় ছুড়ি ধরে ছিলো?ডাইরেক্ট মেরে ফেললেইতো পারতো।তারমানে তাদের মায়াকে কিডন্যাপ করার উদ্দেশ্য ছিলো।নিশ্চিত সে জানে মায়া রাশেদ চৌধুরির দূর্বলতা।তাকে ব্যবহার করেই কোনোকিছু করতে চায়।কিন্তু কে সে?

~চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে