#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪৪[অন্তিম পর্ব]
বছর পেরিয়ে আবারো এসেছে বসন্ত।পাখির কলতানে মুখরিত চারিপাশ।আকাশ একেবারে স্বচ্ছ।
নীল সাদা মেঘেদের অবিশ্রাম আনাগোনা।বাগানের নরম সবুজ ঘাসের উপর দুহাঁটু গেড়ে করে বসে আছে মায়া।হিমেল হাওয়ায় চুল উড়ছে তার।দুহাত সামনের দিকে বাড়িয়ে রেখেছে সে।ঠোঁটের কোঁণে প্রসারিত হাসি টেনে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলছে,
—“আসো আম্মু তাড়াতাড়ি আসো”
সামনেই লাল ফ্রক পরিহিত এক বছর দুইমাসের ছোট্ট স্নিগ্ধা।এলোমেলো পা ফেলে মায়ের দিকে দৌড়ে আসছে সে।তার পাশে পাশেই আছে ইতি।স্নিগ্ধা হোঁচট খেলে যেন ধরতে পারে সেজন্য।
একেবারে ভালোকরে এখনো হাঁটতে শিখেনি স্নিগ্ধা।তবে আধো আধোভাবে পারে।
কাছাকাছি আসতেই তাকে দুহাতে জড়িয়ে কোলে তুলে নিল মায়া।মাথার ঝলমলে বাদামী রংয়ের চুলগুলো হাত দিয়ে আঁচড়ে দিয়ে গালে চুমু খেতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো স্নিগ্ধা।ছোট্ট ছোট্ট নরম হাতগুলো দিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে বুকে মুখ লুকালো।
একটু দূরেই জ্যাক আর জেনির মাঝখানে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে আয়ান।দুহাতে জেনির বড় বড় কানদুটো ধরে রেখেছে সে।জেনিও স্বআনন্দে মাথা পেতে রেখেছে।তাকে মেরে ফেললেও বোধহয় আয়ানের কোনো ক্ষতি করবেনা সে।
খানিকবাদে ইতির দিকে তাকালো মায়া।ক্লান্ত কন্ঠে বললো,
—“আয়ান কে নিয়ে আসোতে ইতি।জেনিটা ব্যাথা পাচ্ছে কানে।”
ইতি যেয়ে আয়ান কে নিয়ে আসতেই সে একটা রাগি দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করলো।একদম বাবার মতো রাগি হয়েছে ছেলেটা।আরিয়ানের মতোই কাটাকাটা চেহারা।তার মতো নাক ঠোঁট।কিন্তু চোখগুলো মায়ার মতো।
ওরা টুইন হলেও দুজনের চেহারায় তেমন মিল নেই।স্নিগ্ধা মায়ের মতো দেখতে আর আয়ান বাবার মতো।
ছেলের নাম আরিয়ানের সাথে মিলিয়ে রাখলেও মেয়ের নাম আরিয়ান নিজেই রেখেছে।মেয়েকে দেখলেই নাকি স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় তার চারিপাশ।তাই “স্নিগ্ধা” নামটাই রেখেছে সে।
_____________
সারাদিনের অফিস শেষে বাড়িতে ফিরেছে আরিয়ান।রুমে ঢুকে দেখে রুম ফাঁকা।
মায়া তো নেই-ই সাথে বাচ্চারাও নেই।দুবার গলা ছেড়ে মায়াকে ডাকলো আরিয়ান।কোনোরূপ সাড়া না পাওয়ায় কপালে সুক্ষ্ণ চিন্তার ভাঁজ পরলো তার।
শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বেরিয়ে পরলো সে।উপর থেকে নিচে তাকাতেই দেখতে পেলো হলরুমের সোফায় আয়ানকে সাথে নিয়ে টিভি দেখছে ইতি।তখন দ্রুত উপরে আসায় খেয়াল করেনি সে।আরিয়ান সেখান থেকেই ডাকলো,
—“ইতি?”
আরিয়ানের ডাকে দ্রুত ফিরে তাকালো ইতি।টিভির সাউন্ড একটু কমিয়ে নরম গলায় বললো,
—“জি ভাইয়া বলেন।”
—“মায়া কোথায়?
—“আপু তো রুমেই।উনার নাকি ঘুম আসছিলো।”
একমূহুর্ত ভাবে আরিয়ান।ব্যালকনিটা চেক করে আসা উচিত ছিলো তার।আবারো ইতির দিকে তাকিয়ে তীর্যক কন্ঠে সে বলে,
—“আর স্নিগ্ধা?”
—“আপুর কাছেই।”
“ওহ আচ্ছা”বলে রুমে ঢুকে আরিয়ান।সোজা যেয়ে ব্যালকনির দরজা খুলতেই ঠোঁটে কোঁণ ঘেঁষে গাঢ় হাসির রেখা ফুটে উঠে।দোলনায় দু পা ভাঁজ করে তুলে ঘুমিয়ে আছে তার মায়াবতী।তার কোলেই স্নিগ্ধা।পরণের সাদা ওড়না পড়ে গিয়ে স্নিগ্ধার মাথার উপর লেপ্টে রয়েছে।তার ছোট্ট পুতুলটা ঘুমোয়নি।পিটপিট করে চেয়ে আছে।তবে মায়ের ঘুমে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য কোনোরকম শব্দও করছেনা সে।চুপটি করে পুতুলের মতো বসে আছে।আরিয়ান কাছে যায়।স্নিগ্ধার মাথার উপর থেকে ওড়নাটা সরাতেই আস্তে করে তার দিকে দু হাত বাড়িয়ে দেয় স্নিগ্ধা।যার অর্থ”কোলে নাও আমাকে”।আরিয়ান একহাতে মেয়েকে কোলে নেয়।তার বুকে মুখ গুঁজে রাখে স্নিগ্ধা।
আরিয়ান একটু ঝুঁকে।মেয়ের অগোচরে সেকেন্ডের মাথায় মায়ার কপালে চুমু খেয়ে ক্ষীণ স্বরে ডাকে,
—“মায়াবতী?উঠো।”
তার একডাকেই চোখ খুলে মায়া।জড়ানো কন্ঠে বলে,
—“আপনি…আপনি কখন আসলেন?”
—“এখনই আসলাম।তুমি উঠে রুমে যেয়ে ঘুমাও।এখানে গরম।অসুস্থ হয়ে যাবা।”
দুহাতে চোখ কচলে উঠে দাড়ায় মায়া।রুমে যেয়ে দ্রুত আরিয়ানের জামাকাপড় বের করে দিয়ে বলে,
—“আপনি যান।শাওয়ার নিয়ে আসেন।আমি খাবার রেডি করছি”।
স্নিগ্ধাকে কোল থেকে নামালো আরিয়ান।বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
—“কিছু করা লাগবেনা তোমার।আপাতত একটু ঘুমাও।তারপর রাতের খাবারটা খেয়ে ভালোমতো ঘুমিও।”
—“আপনি যানতো।গোসলে যান।বাচ্চারাও খায়নি।ক্ষুধা লেগেছেনা ওদের।খাওয়াতে হবে তো।”
আরিয়ান হাসে।তার মায়াবতীটা এক বছরেই কতটা বড় হয়ে গেছে।বাচ্চাদের খেয়াল রাখায় কোনরকম ক্রুটি হয়না তার।সবদিকে খেয়াল থাকে।একেবারে সবদিকে!শুধু নিজের খেয়াল রাখতে ভুলে যায়।আর সেই খেয়ালটাই রাখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আরিয়ানের।
——————
খাওয়া দাওয়া শেষ।রুমে চলে এসেছে তারা।
স্নিগ্ধাকে একপায়ের উরুর উপর বসিয়ে রেখেছে আরিয়ান।সবে ছোট্ট ছোট্ট দাঁত উঠা শুরু হয়েছে তার।তা দিয়েই আরিয়ানের ডানহাতের বুড়ো আঙ্গুলের নিচের অংশ ক্রমাগত কাঁমড়ে চলেছে সে।আরিয়ান মুচকি হেসে মেয়ের কামড়াকামড়ি দেখছে।
আয়ান বসে আছে বিছানার মাঝখানটায়।নিজের বুড়ো আঙ্গুলট চুষছে সে।লোল দিয়ে ঠোঁট মাখামাখি।
আরিয়ানের হাতে পানির গ্লাস দিয়ে আয়ানের কাছে যায় মায়া।আঙ্গুলটা মুখ থেকে বের করে ওড়না দিয়ে হাত মুখ মুছিয়ে দেয়।আয়ান বড় বড় চোখের পলক ফেলে মায়ার দিকে তাকায়।মায়া হেসে ফেলে।বলে,
—“দেখেন,আপনার ছেলে কিভাবে তাকাচ্ছে!”
ঘাড় বাকিয়ে তাকায় আরিয়ান।বলে,
—“ওকে দাওতো আমার কাছে।ও তো আমার কোলেই আসেনা।”
মায়া আয়ানকে নিয়ে আরিয়ানের আরেকপায়ের উরুর উপর বসিয়ে দিতে দিতে বললো,
—“শুধু আপনার না।ও কারো কোলেই যেতে চায়না।একা একাই খেলতে পছন্দ করে।”
আরিয়ান ঝুঁকে গিয়ে আয়ানের কপালে চুমু খায়।বলে,
—“তাই নাকি বাবা?মা কি সত্যি বলছে?।”
উওরে উল্টাপাল্টা শব্দে আওয়াজ করলে আয়ান।আরিয়ান কিছু না বুঝলেও ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।
॥
চুলগুলো হাতখোপা করতে করতে আরিয়ানের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা জামাকাপড় গুলো লন্ড্রিবিনে রাখলো মায়া।ড্রেসিংটেবিল থেকে একটা চুলের কাঁটা নিয়ে চুল গুলো আটকে নিল।
আরিয়ান তার দিকে ইশারা করে বাচ্চাদের বলছে,”এটা কে বলতো?এটা “মা”,বলতো “মা” বলো বলো “মা” বলো।স্নিগ্ধা হাতটা কাঁমড়ে ধরেই ফ্যালফ্যাল করে আরিয়ানের দিকে চেয়ে রয়েছে।আয়ানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।সে আপনমনে আরিয়ানের বুকের গেন্জি ধরে মুচরামুচরি করছে।
কয়েকদিন যাবতই বাচ্চাদের “মা”,”বাবা” বলানোর জন্য উঠে পরে লেগেছে আরিয়ান।সে শুনেছে যেই জিনিস বাচ্চারা বেশি শুনে সেটাই তারা বলতে চেষ্টা করে।তাই রাতের বেলা বাচ্চাদের কাছে পেলেই তাদের কানের কাছে “মা”,”বাবা” বলে বলে মুখ ব্যাথা বানিয়ে ফেলে আরিয়ান।আজও তার ব্যাতিক্রম নয়।
মায়া কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে।বলে,
—“ওদের যখন বলার তখন এমনেই বলবে।বুঝলেন?”
আরিয়ান তার কথা তোয়াক্কা করেনা।স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আগ্রহ নিয়ে বলে,
—“বলোতো আম্মু,মা বলো।মা…”।
মায়া ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে উঠে যেতে নিলেই স্নিগ্ধা আধো আধো স্বরে “মা” বলে ডেকে উঠে।পরমুহূর্তেই হাসির ঝলকানি দিয়ে উঠে আরিয়ানের মুখে।মায়া ধপ করে ফ্লোরে বসে।বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে স্নিগ্ধার দু গালে হাত রেখে বলে,
—“কি বললো ও?”
আরিয়ানের বলার আগে স্নিগ্ধা আবারো বলে উঠে”মাআ…মা”।
এবার আর নিজেকে আটকাতে পারলোনা মায়া।সশব্দে কেঁদে উঠলে সে।মায়ার কান্না দেখে ভয় পেয়ে গেলো স্নিগ্ধা।তার চেহারাও কাঁদো কাঁদো হয়ে এলো।আরিয়ান স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরা হাতটা দিয়েই মায়ার মাথায় হাত রাখলো।নরম কন্ঠে বললো,
—“মায়াবতী,কাঁদেনা।বাচ্চারা ভয় পেয়ে যাবেতো।”
মায়ার কান্না থামেনা।প্রথমবার “মা” ডাক শোনার অনুভূতিতে কি এতোটাই প্রশান্তির?নিজেকে কেমন পূর্ণ পূর্ণ লাগছে।মনে হচ্ছে জীবনে আর কিছু চাওয়ায় নেই তার।সব পেয়ে গেছে সে!সব!
মায়ার কান্না থামছে না দেখে আরিয়ান এবার প্রগাঢ় কন্ঠে বললো,
—“মায়া আর কাঁদলে কিন্তু আমি রাগ করবো।”
হেঁচকি তুলে কান্না থামায় মায়া।মেয়ের গালে চুমু খেয়ে বলে,
—“থ্যাংকিউ আম্মু।”
আরিয়ান নি:শব্দে হাসে।তার জীবনটা সত্যিই কানায় কানায় পরিপূর্ণ।কোনোকিছুর কমতি নেই।
_______________
বসন্তের সকালবেলার মিষ্টি রোদে ব্যালকনিতে বসে ভেজা চুল শুকাচ্ছে মায়া।ছুটির দিন আজকে।তন্ময় আরিয়ান কেউই অফিসে যায়নি।এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছে তন্ময়ের ঘাড়ের উপর বসে সারা বাগান চড়ে বেরাচ্ছে আয়ান।পাশেই ছায়ার নিচে স্নিগ্ধাকে নিয়ে বসে আছে ইতি।
আরিয়ান ঘুমিয়ে আছে রুমে।গভীর ঘুমে আছে দেখে সে আর ডাকেনি।
চুল মুছতে মুছতে হঠাৎই চোখ যায় ব্যালকনিতে সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো একটা ছবিতে।সেই তার জন্মদিনে তন্ময়ের হঠাৎ তোলা ছবিটা।অতিরিক্ত পছন্দ হওয়ায় ছবিটাকে প্রিন্ট করে ফ্রেমে বাধিয়ে রেখেছে আরিয়ান।
ব্যালকনির জায়গাটা খুব বেশি পছন্দের মায়ার।তাই এখানেই ছবিটা টাঙিয়ে রাখা আছে।একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে মায়া।কতশত সুন্দর প্রেমময় প্রহর সে পার করেছে এসেছে আরিয়ানের সাথে।
টাওয়ালটা ব্যালকনিতে রেখেই রুমে যায় মায়া।আরিয়ান খালিগায়ে উপুর হয়ে মাথা কাত করে ঘুমিয়ে আছে।
ফর্সা পিঠে অসংখ্য লাল লাল আঁচরের দাগ।এগুলা যে তারই কারুকার্য ভাবতেই হাসি পায় মায়ার।
কাছে যেয়ে আরিয়ানের কপালে আসা চুলগুলো সরিয়ে মাথা নামিয়ে আলতো করে চুমু খায় সে।
উঠে যেতে নিলেই তার একহাত শক্ত করে ধরে ফেলে আরিয়ান।চমকে উঠে মায়া।তারমানে আরিয়ান জেগে আছে?
তার আরো কিছু ভাববার আগেই সোজা ঘুরে একটানে মায়াকে বুকে উপর ফেলে আরিয়ান।দুহাতে কোমড় আঁকড়ে ধরে বলে,
—“আমি কাছে আসলেতো লজ্জায় শেষ হয়ে যান।আর ঘুমিয়ে থাকলে এসব?”
মায়া স্বলজ্জায় অন্যদিকে তাকায়।কি পরিমাণ লজ্জা যে লাগছে তার!আরিয়ান জেগে আছে বুঝলেতো কখনোই চুমু খেতোনা সে।কখনোই না!
—“এদিকে তাকান।”
—“দেখুন,আমি জানতাম না যে আপনি জেগে আছেন।জানলে….”
মায়ার মুখের কথা কেড়ে নেয় আরিয়ান।দুষ্টু কন্ঠে বলে,
—“এখন তো জানেন আমি জেগে আছি।তো,এই জাগ্রত অবস্থায় একটা চুমু খানতো।নয়তো কিন্তু আমি ছাড়বোনা।ঠি ক এভাবেই ধরে রাখবো।”
চোখমুখ কুঁচকে ফেলে মায়া।বলে,
—“আপনিতো প্রচন্ড খারাপ লোক।”
—“খারাপ হলে খারাপ।এখন চুমু দাও নয়তো আমি ছাড়ছিনা।”
কাঁচুমাচু করে তাকায় মায়া।আরিয়ান যখন বলেছে ছাড়বোনা মানে সত্যিই ছাড়বেনা।যতো যাই হোক!
চোখ বন্ধ করে ধীরগতিতে আরিয়ানের কপালে চুমু খায় সে।সাথে সাথেই হাতের বাঁধন আলগা করে দেয় আরিয়ান।মায়া সরে গেলে সেও উঠে বসে।মাথা নুঁইয়ে দাড়িয়ে আছে মায়া।আরিয়ানের মৃদু হেসে বলে,
—“বাচ্চারা কোথায়?”
—“বাগানে”।
—“আচ্ছা যাও তুমি।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায় মায়া।মূলত এতক্ষন আরিয়ানের উঠার জন্যই অপেক্ষা করছিলো সে।আরিয়ান বুঝতে পেরেই তাকে যেতে বলেছে।
_______________
যেহেতু ছুটির দিন তাই ঘুরতে বেরিয়েছে তারা।ইতি আর তন্ময় আলাদাভাবে ঘুরতে বেরিয়েছে।তাদেরও তো একটা একান্তে সময় কাটানোর ব্যাপার আছে।তাই তাদের আলাদাই পাঠিয়েছে আরিয়ান।
আরিয়ান আর মায়া বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়েছে।এতক্ষন পার্কে ঘোরাফেরা করছিলো তারা।এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে প্রায়।
মায়ার পরণে গাঢ় নীল শাড়ি,নীল কাঁচের চুড়ি।হাল্কা গোলাপি লিপ্সটিক।চুলগুলো ছাড়া।স্নিগ্ধার সাইজের শাড়ি পায়নি নয়তো তাকেও শাড়ি পরিয়ে দিতো মায়া।তবে শাড়ি না পাওয়ায় নীল রংয়ের ফ্রক পরে আছে স্নিগ্ধা।মাথায় নীল রংয়ের ব্যান্ড।বাদামী চুলগুলোয় ফুটে রয়েছে ব্যান্ডটা।
আরিয়ানের পরণে সাদা পান্জাবি।তার সাথে মিলিয়ে আয়ানের পরণেও সাদা পান্জাবি।সচরাচর পান্জাবি পরেনা আরিয়ান।আজকে মায়ার জোড়াজোড়িতে পরেছে।পান্জাবিতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে আরিয়ানকে।
মায়া নজরই সরাতে পারছেনা।
মায়ার কোলে আয়ান।আর আরিয়ানের পায়ের উপর বসে আছে স্নিগ্ধা।একহাতেই ড্রাইভ করছে আরিয়ান।আর আরেকহাতে মেয়ের মাথায় ক্রমাগত হাত বুলাচ্ছে সে।
আরিয়ান নিচের ঠোঁট কামড়ে মনোযোগ দিয়ে গাড়ি টার্ন নিচ্ছে।হঠাৎই আয়ান চিল্লিয়ে উঠে,
—“বাব…বাব্বা…বাবা।”
হুট করে গাড়ি থামায় আরিয়ান।চমকিত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
—“ও কি বাবা ডাকলো?”
মায়া খুশিতে বাঁধভাঙা কন্ঠে বলে,
—“জি,বাবা ডাকলো।”
আরিয়ানের ঠোঁটে উজ্জল হাসি।আয়ান আরো কয়েকবার “বাবা,বাবা” ডাকলো।”বাবা” ডাকটাতেই কেমন যেন দায়িত্ব দায়িত্ব ভাব।আরিয়ান শব্দ করে হেসে দেয়।ছেলেকে চুমু দিয়ে বলে,
—“আব্বুটা আমাকে বাবা ডাকছে।শুনছো মায়া।”
মায়া মাথা নাড়িয়ে চোখের কোণের পানিটা মুছে নেয়।দুমিয়ার সকল সুখ যেন তাদের জীবনেই ভর করেছে।
॥
॥
গাড়ি চলছে ধীর গতিতে।রাতের আঁধার নেমে এসেছে শহরজুড়ে।একটা নির্জন রাস্তায় গাড়ি থামায় আরিয়ান।মায়া আশেপাশে চেয়ে বলে,
—“গাড়ি থামালেন যে?”
মায়ার সিটবেল্ট খুলে দিয়ে নিজের সিটবেল্টও খুলে আরিয়ান।বলে,
—“জায়গাটা চিনতে পারছো মায়াবতী?”
আরিয়ানের কথায় ভালোমতো চারিপাশে চোখ বুলায় মায়া।খানিক বাদে জায়গাটা চিনে ফেলতেই সে বলে,
—“এটা তো..”
—“আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো।সেই ব্রিজটা।”
বলেই স্নিগ্ধাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।মায়ার পাশের দরজা খুলে তাকেও হাত ধরে বের করে।শাড়ি সামলে একহাতে কুঁচি ধরে দাড়ায় মায়া।আরিয়ান তার এলোমেলো আচঁল ঠি ক করে দেয়।
ব্রিজের রেলিং ঘেঁষে দাড়ায় তারা।ঠান্ডা হাওয়া বইছে।মায়ার চুলগুলো উড়ে যেয়ে আরিয়ানের মুখে উপর আছরে পরছে।দুজনের কোলে দুই বাচ্চা।আজ পূর্ণিমা।চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে চারিপাশ।
মায়া কিছু বলছে না।কখনো কখনো সময়গুলোকে,মূহুর্তগুলোকে নিরব ভাবেই উপভোগ করতে হয়ে।
বেশ কিছুক্ষনের নিরবতা ভেঙে আরিয়ান মোহনীয় কন্ঠে ডাকে,
—“মায়াবতী?”
—“বলেন”।
আরিয়ান মুখে কিছু বলেনা।একবাহু জড়িয়ে ধরে মায়াকে কাছে টেনে নেয়।মায়া মৃদু হেসে তার বুকে মাথা রাখে।দুজনের দু’কাধে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে বাচ্চারা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে আরিয়ান উপলদ্ধি করতে পারে তার আঁধারে ঢাকা জীবনটা আর অন্ধকার নেই।”মায়া”নামের উজ্জল সন্ধ্যাতারাটা তার জীবনটা আলোকিত করে দিয়েছে।
প্রিয় মানুষ পাশে থাকলে জীবন সুন্দর!খুব বেশিই সুন্দর।
________সমাপ্ত________