আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-৪৩

0
2671

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪৩

ভীত ভীত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মায়া।মুখে হাসি নেই তার।বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সে।আরিয়ান ফিরছে না কেনো এখনো!মামা-মামি নিচে ডাইনিং টেবিলে খাওয়া-দাওয়া করছে।বাচ্চাদের নিয়ে সে আর নামেনি।তন্ময় ইতিও নিচে।উপর তলায় শুধু সে আর বাচ্চারা একা।কস্মিককালেও সে ভাবেনি রাহাত তাদের বাসায় আসবে।কিন্তু সে এসেছে।শুধু আসেইনি বর্তমানে সে মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে ঠি ক মায়ার মুখোমুখি।যদিও এখন পর্যন্ত সে উল্টা পাল্টা কিছু বলেনি।তবুও মায়ার ভয় লাগছে।রাহাতকে সে বিশ্বাস করতে পারেনা।সেই ঘটনার বছর পেরিয়ে গেলেও ভয়টা কাটেনি তার।প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন একবার মামার বাসায় গিয়েছিলো তখন লাস্ট দেখা হয়েছিলো রাহাতের সাথে।তাও শুধুমাত্র কয়েক মুহুর্তের জন্য।তাদের দেখেই নিজের রুমে চলে গিয়েছিলো রাহাত।পরে আর বের হয়নি।

মায়ার দিকে তাকায়নি রাহাত।কোলে থাকা মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে খেলছে।মায়া থম ধরে সেদিকে চেয়ে আছে।হঠাৎই নিচু কন্ঠে বলে উঠে রাহাত,
—“আমি কিন্তু আপনাকে এখনো ভালবাসি মায়া।”

চট করে মাথা নামিয়ে ফেলে মায়া।অসস্তি শুরু হয়ে যায় তার।উশখুশ করে।রাহাত কেন আবারো এসব বলছে সে জানেনা।
মায়ার নত মুখের দিকে তাকায় রাহাত।ঠোঁটের কোঁণ প্রসারিত করে ডাকে,
—“মায়া?”

একবার তাকিয়ে আবারো মাথা নামিয়ে ফেলে মায়া।মিনমিন কন্ঠে বলে,
—“দেখুন,আপনি দয়া করে এসব আর বলেননা প্লিজ।”

রাহাত কিছুক্ষন চুপ করে থাকে।মেয়েটা তার কোলেই ঘুমিয়ে গেছে।রাহাত হাসে।মায়াকে সে প্রচন্ডভাবে নিজের করে চায়।হয়তো এই চাওয়াটা অনর্থক,নিষিদ্ধ।তবুও নিজেকে বোঝাতে পারেনা সে।হতে পারে এইটা ভালোবাসা না।তার ক্ষনিকের মোহ,মায়ার অতিরিক্ত রুপের কারণে সে তার প্রতি আকৃষ্ট।যাই হোক না কেন,মায়াকে প্রথম দেখেই তার ভালো লেগেছিলো।সেই ভালোলাগাটা এখনো বিদ্যমান।

—“আপনাকে অসস্তিতে ফেলে দিলাম।সরি।নিন মেয়েকে কোলে নিন।ঘুমিয়ে পরেছে।”

মায়া চুপচাপ মেয়েকে কোলে নেয়।রাহাত মুচকি হেসে বলে,
—“আপনার মেয়েটা আপনার মতোই অতিরিক্ত সুন্দরী হবে,দেখেন”।

মায়া কিছু বললোনা।রাহাত আবারো বলে,
—“আমার খুব করে আপনাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে।”
এটুকু বলতেই ভয়ে সিটিয়ে যায় মায়া।চোখ বড় বড় করে রাহাতের দিকে তাকায়।
রাহাত তাড়াহুড়ো করে বলে,
—“আরে না না,আমি সেরকম কিছু করবোনা।আমি জানি আপনি আমার নন।আপনাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার নেই আমার।তাছাড়া আপনি কষ্ট পাবেন সেরকম কিছু আমি কখনোই করবোনা।”

একটু শিথিল হয় মায়া।শান্ত কন্ঠে অনুরোধের স্বরে বলে,
—“আপনি প্লিজ এখান থেকে যান।উনি আপনাকে এখানে দেখলে রাগ করবেন।”

রাহাত একটা ফাঁকা ঢোক গিলে।একহাতে মাথা চুলকে বলে,
—“আপনি আমাকে ঘৃণা করেন তাইনা?”

—“নাহ্ ঘৃণা করিনা,তবে ভয় লাগে।”

মায়ার এমন সহজ স্বীকারক্তিতে আরো একবার মুগ্ধ হয় রাহাত।উঠে দাড়ায় সে।মায়া চোখ তুলে তাকাতেই দেখে রাহাত তার চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে।ঝট করে অন্যদিকে তাকাতেই রাহাত বলে,

—“আমার অনুভূতিগুলোকে আমি সামলে নিব মায়া।আপনি সুখী হন।আমি নাহয় আমার নিষিদ্ধ প্রণয়টুকু আঁকড়ে ধরে ব্যর্থ প্রেমিক হয়েই থেকে যাব”।

বলে আর একমূহুর্ত অপেক্ষা করেনা রাহাত।হনহন করে বেরিয়ে যায়।মায়া হতভম্ব হয়ে চেয়ে রয়।রাহাতের কথাগুলো মনে মনে আওড়ায়।মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।
কষ্ট হলেও কিছু করার নেই তার।আরিয়ানকে ছাড়া আর কাউকে সে কখনোই ভাবতে পারেনা।তার সম্পূর্ণ অস্তিত্বে শুধু সেই ব্যক্তিটিই আছে।

সিঁড়ির কাছে আসতেই রাহাত লক্ষ করে আরিয়ান দ্রুতপায়ে উপরে উঠছে।নামতে গিয়েও থমকে দাড়ায় সে।আরিয়ান তার দিকে ঝলসানো দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে।

রাহাত ম্লান হেসে বলে,
—“কিছু করিনি ভাইয়া।তোমার বাচ্চাদের দেখতে এসেছিলাম।মাশআল্লাহ খুব সুন্দর ওরা”
বলে চট করে নেমে যায় রাহাত।

আরিয়ান ভ্রু কুচকায়।রাহাতকে কখনো এমন স্বরে কথা বলতে দেখেনি সে।সবসময় একটা রূঢ় কন্ঠে কথা বলে সে।তবে আজকে এমন ভাঙাচোরা কেন তার স্বর?
____________
সারাদিনে রাহাতের ব্যাপারে আর কিছু বলেনি আরিয়ান।মামা-মামি গিয়েছে সন্ধ্যাবেলা।এসে আর শাওয়ার নিতে পারেনি সে।
মাত্র শাওয়ার থেকে বেরিয়ে দেখে মায়া চুল আচরাচ্ছে।বাচ্চারা ঘুমিয়ে আছে খাটের মাঝখানে।
পেছন থেকেই মায়ার পেট জড়িয়ে ধরে আরিয়ান।ঘাড়ে মুখ গুঁজে গভীর অঁধরের স্পর্শ দেয়।ঘাড় কাঁত করে ফেলে মায়া।বলে,
—“আপনার গা ভেজা।আমি ভিজে যাচ্ছিতো।”

—“ভিজুক”।

—“গা মুছে আসেন”।

—“আসেন আমি মুছে দেই”এটাও তো বলতে পারো।”

মায়া দু ঠোঁট চেপে মুখ লটকায়।আরিয়ানের হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে আয়না দিয়ে তাকিয়ে আরিয়ানের মতো করেই বলে,”আসেন আমি মুছিয়ে দেই”।

মাথা ঝুকিয়ে হেসে তাকে ছেড়ে দেয় আরিয়ান।টাওয়ালটা নিজের হাতে নিয়ে বলে,
—“হয়েছে লাগবেনা।…কাবার্ড থেকে একটা টি-শার্ট বের করে দাওতো।”

মায়া মুচকি হেসে টি-শার্ট বের করে হাতে দেয়।আরিয়ান তা পরতে পরতে বলে,

—“রাহাত কি বলেছে তোমাকে?”

মায়া কোন দ্বিধা ছাড়াই সবটা বলে আরিয়ানকে।আরিয়ানের কাছে কোনো জড়তা নেই তার।
আরিয়ান মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনে।রাগ ওঠলেও প্রকাশ করেনা সে।সবটা বলে মায়া বিষন্ন কন্ঠে বলে,
—“মানুষ কেন ভুল মানুষকে ভালোবাসে বলেনতো?খুব খারাপ লেগেছে উনার কথাগুলো শুনে”

আরিয়ান স্নিগ্ধ ভাবে হাসে।মেয়েটা সত্যিই খুব নরম।খুব বেশিই নরম।তাকে হাত ধরে কাছে টেনে নেয় আরিয়ান।মাথায় হাত রেখে বলে,
—“মন খারাপ করেনা,ও হয়তো ঠি ক কাউকে পেয়ে যাবে সঠিক সময় হলে”।

মায়া ঠোঁট উল্টে তার দিকে তাকায়।মৃদু হেসে বলে,
—“আপনি সত্যিই খুব ভালো।ভেবেছিলাম আমাকে বকবেন।কিন্তু বকেননি।”

আরিয়ান কিছু বলার আগেই চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয় ছোট্ট পরীটা।মায়া হতাশ কন্ঠে বলে,
—“যান আপনার বাবাপাগলী মেয়ের কান্না থামান।আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”

আরিয়ান হেসে এগিয়ে যেয়ে তাকে কোলে তুলে নেয়।ছেলেটা চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে।
মেয়েকে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ায় আরিয়ান।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
—“কাঁদেনা আম্মুটা,বাবা এসে পরেছিতো।কান্না থামাও।”

বলতে বলতেই কান্না থেমে যায় মেয়েটার।আরো কিছুক্ষন হাটাহাটি করে তাকে ঘুম পারায় আরিয়ান।কপালে চুমু খেয়ে তাকে নিয়ে রুমে যায় সে।অত:পর বুকে নিয়েই শুয়ে পরে।

~চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে