#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩৩
মায়া ঠোঁট এলিয়ে ভাবলেশহীনভাবে হাসে।আমতা আমতা করে বলে,
—“আসলে..একটুখানি কেটেছে।বেশিনা”
আরিয়ান তার দিকে রাগী দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে হাত থেকে বাটিটা নিয়ে পাশে রাখে।আলতো স্পর্শে মায়ার হাত ধরতেই “আহ্”বলে আর্তনাদ করে উঠে মায়া।আরিয়ান শীতল কন্ঠে বলে,
—“একটুখানি কেটেছে তাইনা?”
মায়া মুখ লটকালো।যার রাগ ভাঙানোর জন্য এত কষ্ট করে রান্না করলো সে ই নাকি আবারো তার উপর রাগ করছে।
মায়ার কোমড় পেচিয়ে ধরে একপায়ের উরুর উপর বসিয়ে রেখেছে আরিয়ান।তাই স্বাভাবিকভাবেই আরিয়ানের থেকে একটু উঁচু হয়ে আছে সে।
মায়া একটু কাত করে আরিয়ানের কাঁধের উপর মাথা রাখে।কন্ঠে সিক্ততা নিয়ে বলে,
—“আপনি আমার উপর রাগ করছেন কেন?আপনি রাগ করলে আমার মন খারাপ লাগে”।
মায়ার সিক্ত কন্ঠে কিছুটা শিথিল হয় আরিয়ান।তবুও স্বরে গাম্ভীর্য টেনে বলে,
—“রাগ করার মতো কাজ করো কেনো?”
—“ভুলবশত কেটে গেছে।আমিতো ইচ্ছা করে করিনি।তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হঠাৎই কেটে গেলো”।
—“তাড়াহুড়ো করেছো কেন?”
—“কারণ আপনি বলে গিয়েছিলেন তাড়াতাড়ি ফিরবেন।…আমিতো আপনার রাগ ভাঙানোর জন্য রাঁধতে গিয়েছিলাম কিন্তু দেখেন উল্টা আপনি আরো রাগ করে বসলেন।”
আরিয়ান দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে।এই মেয়ের উপর রাগ ধরে থাকা তার সাধ্যের বাইরে।মায়ার অতিসাধারণ কথাগুলোই তার কাছে শুকনো আবেগে এক পশলা বৃষ্টির মতো প্রিয়।মেয়েটার মধ্য কিছুতো একটা আছে।
সেই প্রথম দিন থেকে যে সে মায়ামীয় ঘোরে ফেঁসেছে আজ পর্যন্ত তার ঘোর কাটলোনা।বরং বেরে চলেছে দিনকে দিন।মায়া নিজের অতিসরল মন দিয়ে তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলছে তার মায়াময়ী এক অজানা ঘোরে।
আরিয়ান মায়াকে একটু নিচু করে বসায়।মায়ার মাথাটা বুকে নিয়ে কাঁটা হাতটা নিজ হাতের মুঠোয় রেখে ধীরস্থির কন্ঠে বলে,
—“মায়াবতী,তুমি কি জানো তোমার গায়ে একটু আঘাতের ছোয়াঁই আমার গোটা পৃথিবীটাকে নিকষ কালো বিষাদে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।তবে কেন আমাকে এই বিষাদময় যন্ত্রনাটা দাও?”
মায়া একেবারে চুপ করে যায়।কথার পিঠে এতক্ষন জবাব দিলেও এখন কিছু বলেনা।
আরিয়ানের বুকের হৃদস্পন্দনের আওয়াজটা তার খুব ভালোলাগে।রোজ রাতে যখন আরিয়ান তাকে বুকে নিয়ে ঘুমায় তখন এই আওয়াজটাই তার উপর ম্যাজিকের মতো কাজ করে।সেজন্যই খুব অল্প সময়ের মধ্য ঘুমিয়ে পরে সে।
মায়ার কোন উওর না পেয়ে আরিয়ান চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।মায়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
—“মায়াবতী?ঘুমিয়ে পরলে নাকি?”
মায়া বুকের মধ্যই মৃদুভাবে মাথা নাড়ায়।আচ্ছন্ন কন্ঠে বলে,
—“উহু!এখনো জেগে আছি।তবে ঘুম পাচ্ছে।”
আরিয়ান নি:শব্দে হাসে।বিছানায় একটু পিছিয়ে আয়েশ করে মায়াকে একহাত দিয়ে ধরে বসে বলে,
—“আচ্ছা ঘুমাও।আমি নাহয় তোমার ঘুম ভাঙলেই ফ্রেশ হবোনে”।
চকিতে মাথা উঠায় মায়া।আরিয়ানের পরণের জামাকাপড়ে একবার চোখ বুলিয়ে বলে,
—“আপনি ফ্রেশ হননি?…ওহ্,হ্যাঁ তাইতো ফ্রেশ হবেন কিকরে?যান জামাকাপড় বদলে আসেন।”
বলে উঠে যেতে নিলেই তাকে চেপে ধরে আরিয়ান।বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
—“ওটার থেকে তোমার ঘুম বেশি জরুরি।ঘুমাও।”
—“পাগলামো করেননাতো।ছাড়ুন!!আরিয়ান ছাড়েনা দেখে মায়া মাথা খাটিয়ে বলে,”দেখুন আপনার গা থেকে ঘামের গন্ধ আসছে।জলদি কাপড় বদলে আসেন”।
আরিয়ান বাঁকা হেসে মায়াকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়।জামাকাপড় হাতে নিয়ে মায়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
—“আপনার যে আমার গায়ের পারফিউমের গন্ধটা অনেক বেশি প্রিয় সেটা আমি জানি ম্যাডাম।আমি অফিসে গেলে আপনি যে সেটা সারা রুমে স্প্রে করে রাখেন সেটাও আমার জানা আছে।তাই অযথা ঘামের গন্ধের দোহাই দিয়েন না।”
মায়ার চোখে মুখে নিমিষেই লজ্জা ছেঁয়ে যায়।আরিয়ান জানলো কিকরে?লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে কিছু বলার আগেই আরিয়ান বলে,
—“উহু!ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগানো নেই।পারফিউমের বোতল প্রতি সপ্তাহেই খালি হয়ে যায়।একই ব্র্যান্ডের পারফিউম কিনতে কিনতে আমি ক্লান্ত মায়াবতী।”
বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে যায় আরিয়ান।মায়া লজ্জামাখা নয়নে চেয়ে থাকে।ইশ্!আরিয়ান না জানি কি ভাবছে।
উফ!!এত লজ্জা সে কই রাখবে?পারফিউমের মতো ছিটিয়ে দিবে নাকি সারাঘরে?
______________
______________
হালুয়ার বাটি সম্পূর্ণ খেয়ে শেষ করেছে আরিয়ান।লজ্জায় বুঁদ হয়ে তার পাশেই বসে আছে মায়া।খালি বাটিটা মায়ার হাতে ধরিয়ে দিতেই মায়া সেটা পাশের টেবিলে রেখে দিলো।আরিয়ান মায়ার নত মুখের দিকে চেয়ে ঠাট্টার ছলে বললো,
—“আর লজ্জা পেয়োনা।প্রতিসপ্তাহে পারফিউম কিনার মতো যথেষ্ট টাকা আমার আছে।কোন সমস্যা নেই!তোমার যত ইচ্ছা ততো স্প্রে করো।”
অতিরিক্ত লজ্জায় মায়া এবার মুখ খুললো।লজ্জামাখা অদ্ভুত এক অভিযোগের স্বরে বললো,
—“হ্যাঁ তো?আপনার গায়ের গন্ধ আমার ভালো লাগে মানে লাগে।আমি সেটা ঘরে দিয়ে রাখি মানে রাখি।আপনি সেটা জানেন তো কি হয়েছে?তাই বলে এভাবে আমাকে লজ্জা দিবেন?,এখন থেকে আরো বেশি করে দিয়ে রাখবো,একদিনেই পুরো বোতল শেষ করে ফেলবো।”
—“আচ্ছা করো শেষ”।
—“করো শেষ মানে?আমি অযথা পারফিউম শেষ করবো আর আপনি বলছেন করো শেষ?”
আরিয়ান তখন পাশ থেকে ল্যাপটপ হাতে নিয়েছে।মায়ার কথার উওরে সে ছোট্ট করে জবাব দেয়,
—“হুম”।
—“এই কি হলো আপনার?”
আরিয়ান ভ্রু কুচকিয়ে মায়ার মাথার তালুতে হাত রাখে।তালু যথেষ্ট গরম হয়ে আছে।আরিয়ান ল্যাপটপ নামিয়ে মায়াকে কাছে টেনে বুকে নিয়ে বলে,
—“শান্ত হও।আমার কিছু হয়নি।বরং তোমারই মাথা গরম হয়ে গেছে।তখন ঘুমাতে পারোনি বলে বোধহয়।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,জলদি ঘুমিয়ে পরো।”
কিছু সময় অতিবাহিত হতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় মায়া।আরিয়ান আবারো ল্যাপটপ হাতে নেয়।মায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,
—“তোমার লজ্জামাখা চেহারার মুগ্ধতায় আমি বারবার আটকে যাই মায়াবতী।সেজন্যইতো সময়,অসময়ে তোমাকে লজ্জায় ফেলি।কিরকম স্বার্থপর আমি দেখেছো?নিজে মুগ্ধ হওয়ার জন্য তোমাকে লজ্জা দেই।”
এমনিভাবেই স্রোতের ন্যায় গড়িয়ে যেতে থাকে সময়।আরিয়ান মায়ার খুনসুটিতে কেটে যেতে থাকে দিনের পর দিন।সময় গড়ালেও তারা দুজন আটকে থাকে তাদের মধ্যেকার ভালবাসায়।আরিয়ান আবিষ্ট থাকে তার মায়াময় দুনিয়ায়।আর মায়া আরিয়ানের ভালবাসার দুনিয়ায় তার মায়াবতী হয়ে।
~চলবে~
#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩৪
ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে কেটে গেছে কয়েকটি মাস।চৈত্রমাসের মাঝামাঝি সময় তখন।গরম পরেছে বেশ।
প্রখর সূর্যতাপের মধ্যেও গাড়ির জানালা খুলে রেখেছে মায়া।মুখের উপর আছড়ে পরছে তপ্ত রৌদ্ররশ্নিগুলো।তাপের চোটে লাল হয়ে আছে চেহারা।চোখগুলো খানিকটা কুঁচকানো তার।রাস্তার জ্যামে গাড়ি থেমে আছে ঘন্টাখানেক যাবত।গাড়ির স্টেয়ারিংয়ে হাত রেখে সিটে মাথা এলিয়ে রেখেছে আরিয়ান।রৌদ্রের মতো মায়ার মেজাজেও আজকে খুব তেজিভাব।সকাল থেকেই কেমন যেন খিটখিট করছে সে।আরিয়ানের ধারণা মায়ার মুড সুইং হলেও হতে পারে।তাই সেও বেশি কিছু বলেনি।মায়াকে নিয়ে বেরিয়েছে দুপুর একটার দিকে।এখন ঘড়ির কাঁটা গড়িয়ে দুইটা চল্লিশ।এতক্ষনেও শপিংমলে পৌছাতে পারেনি তারা।আগামী শুক্রবার ইতি-তন্ময়ের বিয়ে।সপ্তাহখানেক আগে ইতিকে বিয়ে করার প্রস্তাবটা পেশ করে তন্ময়।মানা করার কোনো কারণ নেই বিধায় সবার সম্মতিতেই বিয়েটা পাকা হয়ে গেছে ওদের।তাদের বিয়েটা হুট করে হলেও সবার বিয়েতো আর হুট করে হয়না।আয়োজন করেই হয়।সেজন্যই কিছু কেনাকাটা করতে বেরিয়েছে।
বেরোনোর খানিকপর থেকেই রোদের মধ্য জানলো খুলে রেখেছে মায়া।ওর নাকি রৌদ্রবিলাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
লাইক সিরিয়াসলি?রৌদ্রবিলাসও কারো করতে মনে চায়?আরিয়ান ভেবে পায়না!মায়ার চিবুকের কাছে ঘাম হচ্ছে।আরিয়ানের নিজেরও শার্ট ভিজে গেছে।মায়া স্থির দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।গরম সইতে পেরে আরিয়ান ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলে,
—“মায়া জানলাটা লাগিয়ে দাও।এসি ছাড়ি।গরম লাগছেতো!
মায়া জলন্ত দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে ক্ষীপ্ত কন্ঠে ঠোঁট চেপে বলে,
—“হ্যাঁ,আপনারতো গরম লাগবেই।আপনিতো অনেক হট!মেয়েরাতো আপনাকে হট হট বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।আপনার গরম লাগবেনা তো কি আমার গরম লাগবে?!!
এবার বিষয়টা ধরতে পারে আরিয়ান।এতক্ষন যাবত রোদে পুড়ে ছাই হওয়ার পরও মায়ার জানালা খুলে রাখার কারণটা চট করে ধরে ফেলে সে।
॥॥।।।।
কিছু সময় আগের কথা…
অনেকক্ষন যাবত জ্যামে আটকে ছিলো গাড়ি।প্রথম প্রথম জানালা খোলা থাকায় বাতাস ঢুকলেও তখন আর বাতাসের ছিঁটে ফোঁটাও ছিলনা।একটু স্বস্তির শ্বাস নেয়ার জন্য আরিয়ান যেওনা মুখের মাস্ক খুলেছে
ঠি ক তখনই কোথা থেকে যেনো দুজন মেয়ে দৌড়ে তার জানলার সামনে এসে দাড়ায়।তাদে মধ্য একজন অতি খুশিতে উত্তেজিত হয়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,
—“মিস্টার আরিয়ান,আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছেনা আপনাকে সামনাসামনি দেখছি।ক্যান আই টেক এ সেলফি উইথ ইউ?”
আরিয়ান একটু ডিস্টার্ব বোধ করলেও মুখে সেটা প্রকাশ করেনা।ঠোঁটে সৌজন্যমূলক হাসি ফুটিয়ে বলে,
—“ইয়াহ্ শিওর”।
মেয়েটা দ্রুত ফোন বের করে।চট করে একটা সেলফি তুলে বলে,
—“উফ!ইউ আর টু’মাচ হট।আই হ্যাভ আ বিগ ক্রাশ অন ইউ।”
আরিয়ান এবারো কোন অভিব্যক্তি দেখায়না।আড়চোখে একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে সে বিস্মিত নয়নে এদিকে তাকিয়ে রয়েছে।ততক্ষনে মেয়েটা আরো কিছু বকবক করে যাচ্ছিলো সে শুনতে পায়নি।জ্যাম তখন একটু ছেড়েছে।আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিতে উদ্যত হয়।মুখ ঘুড়িয়ে যখন মেয়েটার দিকে তাকায় তখনও সে বকবক করছে।আরিয়ান হেসে বলে,
—“নাইস টু মিট ইউ মিস!ক্যান আই গো নাও?”
—“জি জি অবশ্যই।অনেক ধন্যবাদ।”
আরিয়ান আর কিছু বলেনা।গ্লাস উঠিয়ে একটু আগাতেই আবারো জ্যামে আটকে যায় গাড়ি।
॥
॥
বর্তমান…
—“আর ইউ জেলাস?”
মায়া চট করে তাকায়।জানলা লাগিয়ে দেয়।নিজেই এসিটা ছেড়ে দিয়ে ঝাঁঝালো ভাবে বলে,
—“অবশ্যই আমি জেলাস।একেবারে জ্বলে পুঁড়ে জেলাস।আমি আপনার বউ,আমি জেলাস হবোনাতো কে জেলাস হবে।জেলাস হওয়ার সম্পুর্ণ অধিকার আছে আমার।আপনার কোন সমস্যা?”
আরিয়ান শব্দ করে হাসে।হাসতে হাসতেই মায়ার গাল টেনে বলে,
—“ইউ আর টু কিউট মায়া।”
মায়া একহাতে গাল ঘষে বলে,
—“ধ্যাত্,ব্যাথা পাইতো।”
______________
শপিংমলের সামনে গাড়ি থামে।আরিয়ান নিজের মাস্ক পরে,চোখে সানগ্লাস পরে মায়ার সিটবেল্ট খুলে দেয়।
নিজে নেমে মায়াকে হাত ধরে নামায়।মায়ার মাথায় ওড়নার আচঁল দিয়ে ঘোমটা টানা।মুখে মাস্ক পরার দরুন তাদের চেনার উপায় নেই।তারা দুজন বের হলে আরিয়ান সাথে কোন বডিগার্ড আনেনা।কখনোই না।
জুয়েলার্সের দোকানে ঢুকেছে তারা।দোকানের বাইরে যথেষ্ট সিকিউরিটি আর দোকানও ফাঁকা।তাই ভেতরে এসেই মাস্ক খুলে ফেলেছে তারা।একপাশে গহনা আবার আরেকপাশে ঘড়ির সেকশনও আছে।
আরিয়ান নিজের জন্য ঘড়ি দেখছে।মায়া দাড়িয়ে আছে পাশেই গহনা পছন্দ করে ইতিমধ্যে রিসিপসনে দিতেও বলে দিয়েছে সে।আরিয়ান একটার পর একটা ঘড়ির ট্রায়াল দিচ্ছে।হাতে পরছে আবার খুলে ফেলছে।নিজের গেট-আপের ব্যাপারে খুব সচেতন আরিয়ান।এই জন্যই তার প্রতি মেয়েরা আকৃষ্ট হয় বেশি।যেমন আজকে ব্ল্যাক প্যান্টের সাথে ওয়াইট শার্ট।হাতে মোটা ডায়েলের ঘড়ি পরা ছিলো।যেটা এখন মায়ার হাতে আছে।
হুট করেই একটা ঘড়ি আটকে যায় হাতে।কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করেও খুলতে পারেনা আরিয়ান।এতক্ষন একজন মেয়ে স্টাফ ঘড়ি বের করে দিচ্ছিলো তাকে।তিনিই মুচকি হেসে বলে,
—“মে আই হেল্প ইউ স্যার?”
আরিয়ান হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
—“কাইন্ডলি ডু ইট ফাস্ট।”
মেয়েটার হাতের ছোয়াঁ আরিয়ানের হাতে লাগতেই আপন শক্তিতে জ্বলে উঠে মায়া।নিজের হাতের ঘড়িটা শব্দ করে কাঁচের উপর রাখে।আরিয়ানের হাতটা ঝাপটা মেরে নিজের হাতের মুঠেয় নিয়ে ঘড়ি খোলার চেষ্টা করতে করতে শক্ত কন্ঠে বলে,
—“আপনাদের এখানে ছেলে স্টাফ রাখা উচিত।”
সামনের মেয়েটা একটু থমকায়।আমতাআমতা করে বলে,
—“আসলে ম্যাম,একজন ছেলে স্টাফ আছে।ও আজকে ছুটিতে।তাই আমি ওর হয়ে কাজ করছি।”
মায়া উওর দেয়না।বিরবির করে বলে,
—“আজকেই যেতে হলো ছুটিতে।”
মেয়েটার কানে কথাটা না গেলেও আরিয়ানের কানে ঠি কই যায়।
মেয়েটা আরো কিছু বলতে চেলে সে চোখের ইশারায় মেয়েটাকে চুপ থাকতে বলে।
আরিয়ানের ঘড়ি খুলে দিয়ে মায়া মেয়েটাকে বলে,
—“নিন এটা প্যাক করে দেন।এটাই নিব”।
মেয়েটা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকাতেই আরিয়ান চোখ নামিয়ে সম্মতি দেয়।মেয়েটা মুচকি হেসে ঘড়িটা প্যাক করে।ভদ্রতার হাসি দিয়ে মায়ার সামনে একটা বক্স খুলে বলে,
—“ম্যাম এখানে ইউনিক ডিজাইনের পায়েল আছে।আপনি চাইলে দেখতে পারেন।”
মায়ার মুখটা চুপসে যায়।গলার স্বর নামিয়ে সে বলে,
—“নো থ্যাংকস।”
এরমধ্যই আরিয়ান একটা পায়েল হাতে তুলে নিয়েছে।লাল রুবি পাথরের অদ্ভুত সুন্দর একটা পায়েল।
দেখলেই চোখ আটকে যায় এরকম!আরিয়ান বলে,
—“এটা সুন্দর।তাইনা মায়া?নিবে?”
মায়ার নিজেরও এটা পছন্দ হয়েছে খুব।তবে তার পায়ের পড়ানো পায়েলটা সে খুলতে পারবেনা।তাই অপ্রস্তুত হেসে বলে,
—“খুব সুন্দর।কিন্তু আমার পায়েল আছে।এটা লাগবেনা।”
আরিয়ান তাকে জোড় করেনা।পায়েলটা রেখে দিয়ে মায়ার হাত ধরে বলে,
—“অনেক শপিং বাকি।চলো।”
ঘড়ি আর গহনার ব্যাগগুলো নিতে গেলেই বাঁধে আরেক বিপত্তি।ব্যাগগুলো আরিয়ানের হাতে দেয়ার সময় রিসিপসনের মেয়েটার হাত ছুটে যায়।ব্যাগগুলো যাতে না পরে সেজন্য শক্ত করে আরিয়ান ধরে ফেলে।ভুলবশত মেয়েটার হাতটাও তার মুঠোয় চলে আসে।সেকেন্ডের মাথায় সেটা ছাড়িয়ে নেয় আরিয়ান।মেয়েটা কাঁচুমাচু করে বলে,
—“এক্সট্রিমলি সরি স্যার।”
আরিয়ান”ইটস্ ওকে বলার পরপরই মায়া বলে,
—“আপনারা দুজন ছেলে স্টাফ রাখবেন।বুঝলেন?একজন না আসলেও যাতে অন্যজন তার কাজ করতে পারে।তাহলেই আর অহেতুক এই ঝামেলা গুলা হয়না।”
আরো কিছু বলার আগেই আরিয়ান তার হাত টেনে বেরিয়ে আসে।সব শপিং শেষে গাড়িতে উঠে তারা।
আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দেয়ার আগমূহুর্তে বলে,
—“মায়াবতী,আ’ম অনলি ইওর’।তুমি ছাড়া কেউই আমাকে আকৃষ্ট করতে পারেনা আর না কখনো পারবে।মনে রেখো।”
____________
আরিয়ান তার অফিসের দিকে গাড়ি ঘুরায়।মায়া জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলে,
—“এখন বাসায় যাবেননা?”
—“না,আমার অফিসে একটু কাজ আছে।শেষ করেই ফিরবো।”
—“আর আমি?”
—“তুমিও যাবে আমার সাথে।এনি প্রবলেম?”
—“নাহ্ চলুন।একটু থেমে আবার বলে সে,তন্ময় ভাইয়া,ইতি ওরা ফিরেছে বাসায়?ওদের না কোথায় যাওয়ার কথা ছিলো?”
আরিয়ান বিরবির করে বলে,”ওরাতো কোথাও যায়ই নি।ফিরবে আবার কি?”
তবে মুখে বলে,
—“ফোন করেনি।হয়তো ফিরেনি এখনো।”
বেশ কিছুক্ষণ পরে অফিসে পৌছায় তারা।আরিয়ান এটা ওটা বলে অনেকক্ষন আটকে রাখে মায়াকে।মায়ার একটু খটকা লাগে।আরিয়ান তো কখনো সে সাথে থাকলে এতো বিজি থাকেনা।বরং জলদি কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে।নয়তো মায়াকে বাসায় দিয়েই অফিসে আসে।আজকে সেই সকালে বের হলো আর এখন রাত হয়ে যাচ্ছে তবুও ফিরছেনা।ঘড়ির কাঁটা যখন দশটা ছুঁইছুঁই তখন তাকে নিয়ে বের হয় আরিয়ান।মায়া তখন ক্লান্ত।ক্লান্ত ভঙ্গিতে সিটে মাথা এলিয়ে দেয় সে।আরিয়ান আরো একটু হেলাফেলা করে।উল্টা রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে অবশেষে এগারোটা বাজে বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়।
~চলবে~