আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-৩১+৩২

0
3226

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩১

মায়ার এহেন আচরণে চমকে উঠে আরিয়ান।মনটা “ধক” করে উঠে।মায়া এমন করলে সে কিভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করবে?
মায়া তার উপর সম্পুর্ণ ভর দিয়ে হেলে পরেছে।আরিয়ান মনে মনে হাসে।মেয়েটা ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে নাকি শুধু ঠোঁট ঠেকিয়ে রেখেছে বুঝতে পারছেনা।এই প্রথম নিজে থেকে তার এতটা কাছে এসেছে মায়া,সে ফিরিয়ে দিবে কিকরে?
আরিয়ান মায়ার একহাত তার ঘাড় থেকে সরিয়ে মাথার পিছের দিকের চুলে রাখে।সাথে সাথে শক্ত করে তার চুলগুলো আকড়ে ধরে মায়া।মায়ার কোমড় টেনে নিজের সাথে ঘনিষ্টভাবে লেপ্টে নেয় আরিয়ান।
দোলনায় মাথা ঠেকে যায়।সে অবস্থাতেই গভীর চুম্বনে লিপ্ত হয় সে।
মিনিট পাঁচেক পরই হাপিয়ে উঠে মায়া।সে সরে যেতে গেলেও আরিয়ান তাকে ছাড়েনা।জাপটে ধরে রাখে।আরো কিছুক্ষন অতিবাহিত হতেই প্রচন্ড অস্থির হয়ে উঠে মায়া।মুখ দিয়ে”উম্”জাতীয় শব্দ করতেই তার ঠোঁট ছেড়ে দেয় আরিয়ান।আরিয়ানের কাঁধে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয় মায়া।আরিয়ান তার চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
—“পানি খাবে?বেশি খারাপ লাগছে?”

মায়া উওর দেয়না।ক্লান্ত ভঙ্গিতে আরিয়ানের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে রাখে।আরিয়ান দুষ্টু কন্ঠে বলে,
—“এটুকুতেই ক্লান্ত হয়ে গেলে।আবার বলছো তোমার আরো আদর চাই।”কিছুটা থামে আরিয়ান।
তারপর সিরিয়াস হয়ে আবার বলতে শুরু করে,”মায়া,তোমার বয়স কম,এট এনি চান্স তুমি যদি কনসিভ করে ফেলো তুমি জানো সেটা কতটা রিস্কি হবে তোমার জন্য?তোমার বয়স বিশ গড়িয়ে একুশে পরবে মাত্র।আই নো,এই বয়সেও মেয়েরা কনসিভ করে।
বাট তুমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো,আমি হানড্রেড পার্সেন্ট শিওর যে তোমার ওজন আন্ডারওয়েট।
আমি ডক্টর না তবুও এতটুকু জানি যে,তোমার প্রেগন্যান্সিতে অনেক কমপ্লিকেশন থাকবে।এখন কতশত মেয়েরা মারা যাচ্ছে অল্পবয়সে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে।সো আই কান্ট টেক দ্যাট রিস্ক।আমি তোমাকে হারাতে পারবোনা মায়াবতী।”

মায়া মনোযোগ দিয়ে আরিয়ানের কথাগুলো শুনছিলো।সবটা শোনার পর মনটা যারপরনাই খারাপ হয়ে এলো তার।আরিয়ানের প্রত্যেকটা কথা যুক্তিপূর্ণ।তবে আরিয়ান যে এতদূর পর্যন্ত ভেবে ফেলেছে এটা ভেবে ভালোও লাগলো।
তবুও মন খারাপের আভাস তার কন্ঠেও ছেঁয়ে যায়।আরিয়ানের গলায় মুখ লুকিয়ে বিষন্ন কন্ঠে সে বলে,

—“আমার কিছু হবেনা।আপনি আছেন তো।”
—“তুমি বুঝতে পারছোনা মায়া।”
—“আমি বুঝতে চাচ্ছিনা।…আচ্ছা,আপনার কি আমাকে আদর করতে ইচ্ছে হয়না?”

মায়া এবার ছলছল নয়নে কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে তার দিকে তাকায়।আরিয়ান দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে।কাকে এতক্ষন ধরে বুঝালো সে।মেয়েটা মনে হয় নিজের মধ্য নেই আজ।এমনিই মায়াকে এই রুপে দেখে ক্ষণে ক্ষনে শ্বাস আটকে আসছে।বহুকষ্টে নিজেকে ধরে রেখেছে তার উপর মায়ার এই আবদার।
কিছুক্ষণ ভাবে আরিয়ান।মায়া এখনও তার দিকে উওরের আশায় চেয়ে আছে।
আরিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—“আমাদের ইসলামিক নীতিতে বিয়ে হয়নি মায়া।কাবিননামায় সাইন করে রেজিস্ট্রি হয়েছে।,,,তুমিই বলো এটা কি উচিত হবে?”

মায়া দুবার পিটপিট করে চোখের পলক ফেলে।ব্যাপারটা বুঝে আসতেই ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসির রেখা টেনে সে চট করে বলে,
—“তাহলে চলেন,এখন বিয়ে করে ফেলি।”

আরিয়ান নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকায়।পকেট থেকে ফোন বের করে সময় দেখে বলে,
—“রাত বাজে বারোটা দশ।এখন বিয়ে করবে তুমি?”

—“হ্যাঁ,তো?”

আরিয়ান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে মায়াকে কোল থেকে সরিয়ে উঠে দাড়ায়।এই মেয়েকে আর বুঝিয়ে লাভ নেই।মায়ার উপর সে রাগ ও দেখাতে পারেনা।তাই আর কোন উপায় নেই একে সামাল দেয়ার।
কিন্তু এই রাতের বেলা কাজি পাওয়াটাই ঝামেলা।
মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়েই আরিয়ান মায়ার হাত ধরে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে,
—“একটু বসো।আমি আসছি।”

মায়া মাথা দুলিয়ে সাঁয় দিতেই আরিয়ান বেরিয়ে যায়।প্রায় আধাঘন্টা বাদে ফিরে আসে।সাথে তন্ময়,ইতি,কাজি,আর আরেকটা লোক সে হয়তো কাজির সাথে এসেছে।কাজির চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা।
বোঝাই যাচ্ছে গভীর ঘুম থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে তাকে।মায়া ঠোঁট চেপে হাসে।
আরিয়ান ক্লান্ত ভঙ্গিতে তাকায় মায়ার হাসি দেখে।তাকে এত হয়রানি করিয়ে মেয়েটা এখন হাসছে।

তিনবার কবুল বলে বিয়ে হয়ে যায় আরিয়ান-মায়ার।বিয়ের সাক্ষী থাকে ইতি,তন্ময় আর কাজির সাথে আসা লোকটা।বিয়ের সব নিয়ম শেষ।কাজিকে এতরাতে ডেকে এনেছে সেজন্য তার পাওনার চেয়ে একটু বেশি টাকা দিয়ে দেয় আরিয়ান।উনি হাসিমুখে বিদায় নেয়।আরিয়ান ফিরে আসতেই তন্ময় ইতি মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আরিয়ান অগোছালো ভাবে হেসে দরজা আটকে দেয়।কাবার্ড থেকে বিয়ের জন্য ধার্য করা মোহরানার টাকা বের করে মায়ার হাতে দিয়ে বলে,
—“নাও।শান্তি হয়েছে?এখন তুমি সম্পূর্ণরুপে আমার।”

মায়া টাকাগুলো পাশে রাখে।আরিয়ানকে বলে,
—“এখনতো আর কোন বাঁধা নেই।”

আরিয়ান হাসে।মায়ার দু গালে হাত রেখে বলে,
—“আর ইউ শিওর?”

উওরে লাজুক হেসে আরিয়ানের বাহুতে মুখ লুকায় মায়া।মায়ার সম্মতি বুঝতে পেরে হাসে আরিয়ান।এমনটা নয় যে সে মায়াকে কাছে পেতে চাইছিলো না।বরং এতক্ষন নিজের সাথে প্রবল যুদ্ধ করে মায়ার কথা ভেবে নিজেকে সামলে রেখেছিলো।কিন্তু এখন আর সম্ভব নয়।মায়া যখন তার অধিকার চাইছে তখন তার আর মানা করার স্বাধ্যি নেই।

মায়াকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিল আরিয়ান।মায়া তার গলা জড়িয়ে ধরতেই কাঁচের চুড়িতে রিনঝিন আওয়াজ করে উঠলো।সেই আওয়াজটাও যেন তাদের ভালবাসার পূর্ণতা পাওয়ার আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
আরিয়ান তাকে বিছানার মাঝখানে এনে বসিয়ে দেয়।চুড়ি কানেরদুল গুলো খুব সন্তর্পণে খুলে রাখে।
আরিয়ান নিজের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে আসে।
ব্যালকনির পর্দা খোলা।ঘরে আসা ক্ষীন চাঁদের আলোয় ভীষণ মোহনীয় লাগছে মায়াকে।
আরিয়ান ধীরপায়ে এগিয়ে যায়।মায়াকে শুইয়ে দিয়ে শাড়ির আচঁল ফেলে দেয়।ব্লাউজের হুক খুলতেই আরিয়ানকে দু’হাতে খামছে ধরে মায়া।অত:পর দুজন হারিয়ে যায় ভালবাসার এক অন্য জগতে।এতদিনের
বহু আকাঙ্ক্ষিত মুহুর্তে ডুব দেয় দুজনে।মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় তাদের সত্তা,অস্তিত্ব।

________________
সকালে মুখের উপর আলো পরতেই চোখমুখ কুঁচকে এলো আরিয়ানের।চোখ খুলে সর্বপ্রথম মুখের উপর ছড়িয়ে পরা মায়ার চুলগুলো সরায় সে।তার গলার সাইডে মাথা গুঁজে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মায়া।আরিয়ানের একহাত মায়ার উন্মুক্ত পিঠে।কম্বল সরে গেছে উপর থেকে।আরিয়ান একটু উঠে গলা অবধি কম্বল টেনে নেয়।ফ্লোরে পরে আছে মায়ার শাড়ি।
কালরাতের কথা মনে পরতেই তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে আরিয়ানের ঠোঁটে।কি সুন্দর স্নিগ্ধ ছিল প্রতিটি সেকেন্ড।
মায়ার কথাগুলো মনে পরতেই আরো হাসি পায় তার।মেয়েটা যে কি করলো কাল।আরিয়ান কখনোই ভাবেনি মায়া নিজ থেকে তাকে এসব বলবে।মায়ার লজ্জামিশ্রিত কন্ঠের আধো আধো আবদারগুলো কানে বাঁজছে এখনো।
আজ সে ও তার অনুভূতিগুলো পরিপূর্ণ রুপে পুরিপূর্ণতা পেলো।

খানিক বাদেই নড়েচড়ে উঠলো মায়া।যখন বুঝলো সে আরিয়ানের উপরে ভর দিয়ে আছে তৎক্ষনাত ছিঁটকে সরে যেতে নিলেই আরিয়ান তাকে আঁকড়ে ধরে ফেলল।শ্বাস আটকে আরিয়ানের দিকে চাইলে মায়া।
পরপরই প্রচন্ড লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো।আরিয়ানের ঠোঁটের কোঁণে দুষ্টু হাসি।
হঠাৎ উল্টে গিয়ে মায়াকে নিচে নিয়ে তার উপরে ঝুঁকে পরলো সে।মায়া সিটিয়ে গেলো।বুক পর্যন্ত কম্বল টেনে শক্ত হাতে ধরে রাখলো।আরিয়ান তার অপরপাশে একহাত রাখলো।মূলত মায়া যাতে উঠে যেতে না পারে সে ব্যবস্থাই করলো।একআঙ্গুল দিয়ে মায়ার কপাল থেকে গালে স্লাইড করতে করতে বললো,
—“কি হয়েছিলো আপনার কালরাতে?এতটা ডেস্পারেট্ হয়ে গিয়েছিলেন কেন?হুম?”

মায়া বেশ বুঝতে পারছে আরিয়ান ইচ্ছা করে তাকে লজ্জায় ফেলছে।ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে সে।কালরাতের নিজের বলা কথা গুলো মনে করলে তার নিজেরই লজ্জা লাগছে আরিয়ানকে আর কি বলবে?

আরিয়ান আবার বলে,
—“নিজের ভয়ংকর সুন্দর রুপ দিয়ে তো ভালোই ঘায়েল করলেন আমাকে।এখন লজ্জা মাখা চাহনী দিয়ে কি পুরোপুরি শেষ করে দিবেন?”

—“ধ্যাত্,সরেনতো।”

—“কেন?কেন?এখন লজ্জা লাগছে তাইনা?কালতো খুব আদর আদর করছিলেন।”

মায়া আরিয়ানের বুকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে,
—“সরেননা।শুধু শুধু লজ্জা দিচ্ছেন কেন?”

আরিয়ান মুখ নামিয়ে তার গালে চুমু খায়।উপর থেকে সরে গিয়ে বলে,
—“যাও শাওয়ার নিয়ে আসো।”

মায়া দ্রুত ফ্লোর থেকে শাড়ি উঠিয়ে গায়ে পেচিয়ে নিলো।আরিয়ান পাশে থেকে ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা করছে।ততক্ষনে মায়া নিজের জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে।

বেশ কিছুক্ষন পর বেরিয়ে এলো মায়া।তার পরণে হাল্কা গোলাপী রংয়ের থ্রিপিস।গোসলের পর স্নিগ্ধতা যেন আরো বেরে গেছে।আরিয়ান তখন শরীরে টাওয়াল পেচিয়ে বিছানার চাদর চেন্জ করছে।তার মাঝেই ধপ করে বিছানায় বসে পরলো মায়া।আরিয়ানকে কাজ তখন শেষ।পুরাতন চাদরটা লন্ড্রি বিনে রেখে দিয়ে সে এগিয়ে গিয়ে মায়ার কাঁধে হাত রেখে বললো,
—“শরীর খারাপ লাগছে?”

মায়া দু চোখ বন্ধ করে রেখেছে।মাথা ব্যাথা করছে,দূর্বল দূর্বল লাগছে তার।আরিয়ানকে বলতেই সে একটু পানি খাইয়ে দিয়ে বালিশে সুইয়ে দিলো মায়াকে।চুল আগে থেকেই মুছে বেরিয়েছে তাই চুল মোছার ঝামেলা নেই।আরিয়ান তার শরীরে কম্বল টেনে দিয়ে বললো,
—“চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো,আমি শাওয়ার নিয়ে এসে কিছু খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে।বলেছিলাম জেদ করোনা।আমার কথাতো শুনলেনা।এখন শরীর খারাপ করলোনা?।”

মায়া গোমরা মুখে আরিয়ানের দিকে তাকাতেই সে বলে,
—“চুপ করে শুয়ে থাকো।আমি এলে,তারপর উঠবে”।

আরিয়ান শাওয়ার নিতে চলে যায়।বিছানায় চুপটি করে শুয়ে থাকে মায়া।বাস্তবিকই তার প্রচন্ড দূর্বল লাগছে।
তবে অন্যরকম একটা ভালোও লাগছে।কেমন যেন লজ্জা লজ্জা একটা মিশ্র অনুভুতি….

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩২

শাওয়ার থেকে বেরিয়ে এসেছে আরিয়ান।মায়া উপুর হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।মাথাটা কাত করে বালিশে রাখা।আরিয়ান কাছে যেয়ে তার মুখের উপরের চুলগুলো সরিয়ে দেয়।মায়া অলস ভঙ্গিতে একটু তাকিয়ে আবারো চোখ বন্ধ করে।
মায়ার এমন দূর্বলতা দেখে আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে সন্ধিহান কন্ঠে বলে,
—“তুমি রাতে ডিনার করেছিলে?”

—“নাহ্”।

আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে তেড়ে উঠে।এজন্যইতো এই মেয়ের এত দূর্বল লাগছে।রাতে খায়নি।তাকে একবার বলেওনি পর্যন্ত।সে মৃদু ধমকের স্বরে বলে,
—“এই উঠোতো তুমি।রাতে খাওনি আর এখন বলছো?জলদি উঠো।”

বলে মায়াকে দুহাতে জড়িয়ে উঠিয়ে বসালো আরিয়ান।খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিতেই মায়া পিটপিট করে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
—“বকছেন কেন?”

আরিয়ান উওর দেয়না।চোখমুখ শক্ত করে মায়ার কপালে গালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আসছে কিনা।
তাপমাত্রা স্বাভাবিক দেখে উঠে দাড়ায় আরিয়ান।হনহন করে বাইরে বেরিয়ে যায়।মায়া চোখ মুখ কুঁচকে
চেয়ে থাকে।কালরাতে তো আরিয়ানের জন্য অপেক্ষা করতে করতেই সে ঘুমিয়ে পরেছিলো।তারপর আর খাওয়ার কথা মনে ছিলনা।

হাতে দুই-প্লেট খাবার নিয়ে ভেতরে ঢুকে আরিয়ান।একহাতে ব্রেকফাস্টে আরেক প্লেট ভর্তি ফল।তার পিছে পিছে ঢুকে ইতি।তার হাতে ফলের জুস।পাশের টেবিলে সবকিছু রেখে ইতি বলে,
—“আমি খাইয়ে দিব স্যার?”

আরিয়ান মায়ার পাশে বসে।প্লেটটা নিজের হাতে নিয়ে নরম কন্ঠে বলে,
—“না তুমি যাও ইতি।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।সমস্যা নেই”।

ইতি মায়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।অত:পর মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান আবারো চোখ-মুখ শক্ত করে ফেলে।মায়ার মুখের সামনে খাবার ধরতেই মায়া সেটা মুখে তুলে বলে,
—“আপনি রাগ করছেন কেন?আমিতো আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে গেছি।”

আরিয়ান মায়ার দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।মুখে কিছু বলেনা।একটু পরপর শুধু খাবার তুলে দেয় মুখে।মায়া বিনাবাক্য খেয়ে নেয় সব।আরিয়ান প্লেট রেখে জুসের গ্লাস হাতে নেয়।এক চুমুক খেতেই মুখ বিকৃতি করে ফেলে মায়া।
—“এটা কি?চিনি দেয়নি নাকি?এতো তেঁতো কেনো?”

আরিয়ান কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেনা।আবারো মুখে সামনে গ্লাস ধরতেই মায়া আপত্তি করে বলে,
—“আমি খাবোনা।…আপনি খেয়ে দেখেন,এটা সত্যিই খুব টক।”

আরিয়ান চুপচাপ এক চুমুক মুখে নেয়।স্বাভাবিকভাবেই গিলে ফেলে শান্ত কন্ঠে বলে,
—“টক হলেও এটায় পুষ্টি বেশি।খেতে হবেই।মুখ খুলো”।

মায়া ঠোঁট উল্টিয়ে একবার তাকিয়ে হা করে।এক নি:শ্বাসে তাকে পুরোটা খাইয়ে দেয় আরিয়ান।
খাওয়া শেষে সার্ভেন্ট এসে সব কিছু নিয়ে যায়।
অফিস থেকে ফোন আসায় দ্রুত তৈরি হয় আরিয়ান।এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে।
পকেটে ফোন ঢুকিয়ে ড্রয়ার থেকে ওয়ালেট বের করছে তখনই মায়া বিষন্ন কন্ঠে বলে,
—“আপনি আমার উপর রাগ করেছেন?”

আরিয়ান আয়না দিয়ে মায়ার দিকে তাকায়।ওয়ালেটটা পকেটে ঢুকিয়ে বিছানার কাছে এসে দাড়িয়ে ঝুঁকে যেয়ে মায়ার কপালে উষ্ণতার ছোয়াঁ দিয়ে কাঠকাঠ কন্ঠে বলে,
—“অফিস থেকে এসেও যাতে তোমাকে এখানেই দেখি।ঠিক এখানেই।সারা বাড়িতে টইটই করে ঘুরবা না।শরীর এমনেই অসুস্থ তাই রুমেই থাকবা।আমি ইতিকে বলে যাচ্ছি।ও তোমার সাথে থাকবে এখানে।আজ তারাতারিই ফিরবো আমি”

মায়া মনে মনে হাসে।লোকটা তাকে বকাও দিচ্ছে আবার চিল্লাচ্ছেওনা।কি অদ্ভুত শাসনপদ্ধতি!!
হাহ্!এমন শাসন শুনলেও শান্তি পাওয়া যায়।
___________
বিকেলবেলা…
রান্নাঘরে কিচেন এপ্রোন পরে দাড়িয়ে আছে মায়া।তার পাশে চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে আছে ইতি।শত মানা সত্তেও তার কথা শুনেনি মায়া।সে নাকি এখন গাজরের হালুয়া বানাবে।এমন না যে সে রান্না পারেনা।সে রান্না পারে।কিন্তু রাশেদ চৌধুরি তাকে রান্নাঘরে যেতে দিতোনা।রাশেদ চৌধুরি যখন বাসায় থাকতোনা তখন মাঝে মাঝে রান্না করতো সে।
ইতির চিন্তা সেখানে নয়।ইতি ভাবছে আরিয়ান যদি শুনে মায়া রান্না ঘরে এসেছিলো তবে কি হবে?
মায়া চুপ করে দাড়িয়ে চুলায় দুধ জাল দিয়ে নাড়ছে।অন্য সার্ভেন্টরা সবাই বাইরে।তা অবশ্য মায়ার নির্দেশেই ।মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
—“গাজর বের করো ইতি।ধুয়ে দাও।তারপর আমি গ্রেট করে নিচ্ছি।”

—“ম্যাম,স্যার কিন্তু রাগ করবে।আপনাকে তো বকবেনা।বকবে আমাকে।”

—“করবেনা রাগ।তুমি বের করতো জলদি।”

অগত্যা কোন উপায় পায়না ইতি।মায়ার সাথে চুপচাপ কাজ করতে থাকে।কিন্তু বিপত্তি বাঁধে গাজর গ্রেট করতে যেয়ে।আরিয়ান জলদি ফিরবে ভেবে তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে হাত কেটে ফেলে মায়া।বেরিয়ে আসে রক্ত।
“আহ্”বলে আর্তনাদ করতেই তার হাত চেপে ধরে ইতি।কলের নিচে দেয়ায় রক্ত অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।
চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে মায়ার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয় ইতি।মায়ার ব্লাডফোবিয়া এতো বেশি যে অতটুকু রক্ত দেখেই ঘাম ছুটে গেছে।

—“আপনার আর কিছু করা লাগবেনা।আপনি ঘরে যান।আমি বানিয়ে আনছি।”

—“এই একদম না।আমিই করছি।বেশিক্ষন লাগবেনা।”

মায়ার জেদের কাছে হেরে যায় ইতি।হালুয়া বানিয়ে বাটিতে ঢালতেই আরিয়ানের জুতার শব্দ শোনা যায়।আজকে একটু বেশিই তারাতারি এসেছে আরিয়ান।মায়া বাটিতে চামচ নিতেই আরিয়ানের গলার শব্দ শোনা যায়।মায়াকে ডাকছে সে।

বাটি হাতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মায়া।দ্রুত উপরে উঠতেই আরিয়ানের মুখোমুখি হয় সে।আরিয়ান হন্তদন্ত কন্ঠে বলে,
—“কই ছিলা?তোমাকে না রুমে থাকতে বলেছিলাম।”

মায়া আরিয়ানের হাত ধরে রুমে আসে।আরিয়ানকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে এক চামচ হালুয়া মুখে সামনে ধরে উৎসুক কন্ঠে বলে,
—“এটা খেয়ে বলেন কেমন হয়েছে।”

আরিয়ান মায়ার হাতের বাটিটা খেয়াল করেছে আগেই।ভেবেছিলো,মায়া হয়তো খাচ্ছে ওটা।তাই কিছু বলেনি।

—“কি এটা?তুমি খাচ্ছিলে খাও।আমি খাবোনা।,,,,তার আগে বলো তুমি রুমের বাইরে কেনো গিয়েছিলে?”

মায়া আরিয়ানের প্রশ্ন এড়িয়ে যায়।বলে,
—“এটা গাজরের হালুয়া।আমি বানিয়েছি আপনার জন্য।”

“আপনার জন্য”কথাটা শুনতেই সমস্ত রাগ নেমে যায় আরিয়ানের।প্রচন্ড ভালোলাগে।এই ছোট্ট দু’টা শব্দ যে কাওকে এতটা প্রশান্তি দিতে পারে মায়া না থাকলে বুঝতোনা আরিয়ান।মায়া তার মুখের সামনে এখনো খাবার ধরে রেখেছে।আরিয়ান খাবারটা মুখে নেয়।তার পরপরই মায়াকে টেনে কোলের উপর বসায়।
মায়া মুচকি হেসে বলে,
—“ভালো হয়েছে?”

আরিয়ান মৃদু হেসে তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
—“তুমি এমন কেন মায়াবতী?তোমার উপর রাগ করে থাকা যায়না কেন?কারণটা বলতো?কি আছে তোমার মধ্য?”

মায়া মুদিত নয়নে চেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।আরিয়ানের হঠাৎ মায়ার হাতের দিকে নজর পরতেই চোখ বড় বড় করে সে অস্থিরভাবে বলে,

—“মায়া,তোমার হাত কেটেছে?”

~চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে