আঁধার ভিড়ে সন্ধ্যাতারা পর্ব-২৭+২৮

0
3016

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৭

মায়া চুপ করে থাকে।নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়ে জানালা ঘেঁষে বসে।প্রচন্ড রাগ উঠে আরিয়ানের।
মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।হাতের মুঠি শক্ত করে সে সজোরে স্টেয়ারিংয়ে বাড়ি মারে।মায়া সচকিত দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকায়।ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

—“এরকম করছেন কেনো?ব্যাথা পাবেন তো।”

আরিয়ান রক্তলাল চোখগুলো দিয়ে মায়ার দিকে তাকায়।ভয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে মায়া।
আরিয়ান তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
—“এই ভয়ার্ত চোখগুলো আমাকে কতটা ব্যাথা দিচ্ছে তুমি জানো মায়া?”

মায়া এবারো নিরব।ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয়ার মুহুর্তটা মনে আসতেই গা শিড়শিড় করে উঠছে।লোকটার গাল থেকে কিভাবে রক্ত বেরোচ্ছিল।মায়া চোখ বন্ধ করে ফেলে।ভাবে,আরিয়ানের কি একটুও দয়া হলোনা লোকটার উপর?এতটা নির্দয় সে?
পরক্ষনেই চোখ খুলে মায়া।জিজ্ঞেস করে,

—“আপনার কি একটুও দয়া হয়নি লোকটার উপর?”

—“না হয়নি”বলেই গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে পরে আরিয়ান।মায়া হতভম্ব হয়ে যায়।কিছু বলার আগেই আরিয়ান তার পাশের দরজা খুলে তাকে হাত ধরে বের করে।বিকট শব্দ করে গাড়ির দরজা লাগাতেই মায়া আৎকে উঠে বলে,
—“কি করছেন?”

গাড়ি থেমেছে একটা ব্রিজ এর উপর।আরিয়ান মায়াকে টানতে টানতে ব্রিজের রেলিং ঘেঁষে দাড় করায়।তার দুইপাশে হাত রেখে দৃঢ় গলায় বলে,
—“কেন ভয় পাচ্ছো আমাকে?আর দয়া?আমার কারো উপর দয়া হয়না।আমি নির্দয়,হিংস্র।কিন্তু সেটা ক্ষেত্রবিশেষে।বাকিদের সাথে আমি একরকম।আর তোমার সাথে অন্যরকম।গট ইট?”

মায়া একটা ফাঁকা ঢোঁক গিলে বলে,
—“কেন?কয়টা রুপ আপনার?”

—“মায়া ডোন্ট ডু দিস।রাগাবেনা আমাকে।আমার রাগ সহ্য করার ক্ষমতা তোমার হবেনা।”

—“কি করবেন রেগে গেলে?মেরে ফেলবেন আমাকেও?”
এবার বাঁধ ভেঙে যায় আরিয়ানের।রেলিংয়ে ঘুষি মারতেই হাত ছিলে রক্ত বেরিয়ে আসে।মায়া দ্রুত পাশে তাকিয়ে হাতের রক্ত দেখে জোর করে তার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অস্থিরভাবে বলে,

—“পাগল নাকি আপনি?গাড়িতে ফাস্ট এইড বক্স আছেনা?চলুন।”

আরিয়ান ঝামটা মেরে তার হাতদুটো সরায়।দু হাতে শক্ত করে মায়ার কোমড় চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।হঠাৎ এমন হওয়ায় অপ্রস্তুত হয়ে পরে মায়া।কি হচ্ছে বোঝার পর বার দুয়েক আরিয়ানের বুকে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করে।ফলস্বরুপ আরিয়ান তাকে আরো শক্ত করে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে।হাল ছেড়ে দেয় মায়া।হাতদুটো আরিয়ানের বুকের উপর রেখে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।প্রায় দশ মিনিট পর আরিয়ান কিছুটা শিথিল হয়।হাতের বাঁধন ঢিলা করে দেয়।একহাত মায়ার ঘাড়ে রেখে এতক্ষনের রুড ভাবটা ছেড়ে সফ্টলি কিস করতে থাকে।মায়ার গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরে।আরিয়ান নিজের গালে পানির অস্তিত্ব পেতেই আলতো করে একটা চুমু খেয়ে মায়ার ঠোঁট ছেড়ে দেয়।মায়া ফুঁপিয়ে ওঠে।আরিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
—“খুব বেশি ভালোবাসি মায়াবতী।তুমি অন্তত আমাকে ভয় পেয়োনা।ঘৃনা করোনা।”

বলে সরে দাড়াতে নিলেই মায়া তার বুকের শার্ট দুহাতে খামছে ধরে।বুকে মাঝখানটায় কপাল ঠেকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে,
—“আমি কি একবারও বলেছি আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি?বলেন?বলেছি একবারও?”

আরিয়ান তাকে স্বস্নেহে জড়িয়ে ধরে।পিঠে হাত রেখে বলে,
—“না বলোনি”।

—“তবে?কেন বারবার বলছেন আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি?”

এবার আরিয়ান উওর দেয়না।মায়া আবারো বলে,

—“আমিতো আপনাকে ভয় পাচ্ছিনা।আমি ভয় পাচ্ছি ভিডিওর সেই হিংস্র,পাষাণ লোকটাকে।আমি হিংস্রতা পছন্দ করিনা।আমি যে খুবই ভীতু সেটা আপনার থেকে ভালো কেও জানেনা।আমি নিতে পারিনা এইসব।কাঁটাছেড়া,রক্তারক্তি দেখলে আমার কলিজা কাঁপে।আমি এরকমই।…আপনি একবার অন্তত আমার কথাটা ভাবতেন।এরকমটা করলেন কেন যা দেখে আমি ভয় পাবো?আমি আপনাকে ভয় পেতে চাইনা।কখনো ভয় পেতে চাইনা।…আপনি না আমাকে ভালোবাসেন।তবে কেন করলেন এমনটা?কেন করলেন?”বলে আরিয়নের বুকে ধরে রাখা শার্ট সজোরে ঝাঁকায় মায়া।

আরিয়ান তার হাতের উপর হাত রাখে।নিজের বুক থেকে সরিয়ে দুই হাতের উল্টোপিঠে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বলে,
—“আই প্রমিস,এমনটা আর কখনো হবেনা।তোমার আরিয়ান আর কখনো হিংস্র হবেনা।আই প্রমিস মায়াবতী”।

মায়া একদম শান্ত হয়ে যায়।চোখ নামিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,
—“গাড়িতে চলুন।আপনার হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।”

আরিয়ান হেসে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে বসায়।গাড়ির পেছন থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নিজেও ঢুকে দরজা আটকে দেয়।মায়ার হাতে বক্সটা দিয়ে মায়ার কোলের উপর হাত রেখে বলে,
—“নাও,ব্যান্ডেজ করে দাও।”

মায়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে থাকে।কাজ শেষ হয়ে গেলে সবকিছু আবার সুন্দর করে বক্সের ভিতর ঢুকিয়ে গাড়ির সামনে রেখে দেয়।আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছেনা দেখে বলে,
—“আর কতক্ষন বসে থাকবেন এখানে?বাসায় যাবেন না?”

আরিয়ান তার দিকে ঝুঁকে যায়।সেকেন্ডের মধ্য মায়ার ঠোঁটে চুমু খেয়ে আবারো নিজের সিটে বসে বলে,
—-“এই জায়গাটা চিনেছো মায়াবতী?সামনে তাকিয়ে দেখো,ওইযে রাস্তার মোড় দেখা যাচ্ছে,সেখানেই তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো।সেই যে রাতের বেলা তুমি আমাকে আচমকাই জড়িয়ে ধরেছিলে।মনে আছে?”

মাথা মৃদুভাবে মাথা নাড়ায়।সে রাস্তাঘাট এতো চিনেনা।এখন আরিয়ান বলায় বুঝতে পেরেছে এটা ওই জায়গাটাই।আরিয়ান আবার বলে,

—“আবার,এইখানেই প্রথম তোমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছি।এই জায়গাটা খুব স্পেশাল আমাদের জন্য।তাইনা?”

মায়া স্বলজ্জায় আরিয়ানের দিকে তাকায়।পরমূহুর্তে ঠাট্টার ছলে বলে,
—“সারারাত কি এখানেই থাকবেন?”

—“আরে না না।বাসায় যাচ্ছিতো।”বলে গাড়ি স্টার্ট দেয় আরিয়ান।

______________

মায়ার মুখের উপর বই ধরা।আর এক সপ্তাহ বাদে পরীক্ষা তার।সেমিস্টার ড্রপ যাতে না দিতে হয় সেজন্যই বেশ পড়াশোনা করছে সে।
আরিয়ান বসে আছে সোফায়।আরিয়ানের কোলের উপর তার মাথা রাখা।সামনের টেবিলে ল্যাপটপ রেখে কানে হেডফোন দিয়ে ভিডিও কলে জরুরি মিটিং করছে আরিয়ান।তার একহাত রাখা মায়ার চুলের ভাজে।আরেকহাত ল্যাপটপের কী-বোর্ডে।মায়া সোজা হয়ে শুয়ে আছে পুরো সোফা নিয়ে।আরিয়ান এককোণায় চেপে বসেছে।তার উপর তার কোলে মাথা রেখে পড়ছে মায়া।
হঠাৎ মায়া আরিয়ানকে ইশারা করে সে কিছু একটা বলবে।আরিয়ান দ্রুত নিজের মাইক্রোফোন মিউট করে বলে,”হুম বলো’।

—“আপনি চুলে হাত বুলালে আমার ঘুম আসে।তাই বলছি,সেটা বন্ধ করেন।”

আরিয়ান ল্যাপটপের স্ক্রীন থেকে চোখ সরায়না।সেদিকে তাকিয়েই বলে,
—“এরকম খোলা চুলে কোলের উপর শুয়ে থাকলে আমি হাত বুলাবোই।সো,আই কান্ট হেল্প ইউ।”

—“মিটিং কখন শেষ হবে?”

—“অনেকক্ষন পরে শেষ হবে।শুরুই তো হলো এখন।তোমার পড়া শেষ?”

—“না,আমার পড়াও শেষ হবে অনেএএএকক্ষন পরে।”

আরিয়ান ভিডিও অফ করে মায়ার কপালে চুমু খায়।তারপর আবার ভিডিও অন করে মিটিংয়ে মনোযোগ দেয়।

মায়া আর বিরক্ত করেনা।যদিও সে শত চেষ্টা করেও কখনো বিরক্তবোধ করাতে পারেনা আরিয়ানকে।কারণ আরিয়ান কখনো তার উপর বিরক্ত হয়ই না।কেন হয়না?কারণটা সে জানে।খুব ভালো করেই জানে।
ভাবতেই মুচকি হাসি ফুটে উঠে মায়ার ঠোঁটের কোঁণ ঘেঁষে…

~চলবে~

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৮

অনেকদিন পর ভার্সিটিতে যাচ্ছে মায়া।আজকে পরীক্ষা তাই ভার্সিটি না যেয়ে উপায় নাই।বেশ ফুরফুরে লাগছে মনটা।অবশ্য তার তেমন কোন বন্ধু-বান্ধবী নেই।তবুও সবার সাথে কথা হলে দেখা হলে ভালো লাগে।
আরিয়ান একহাতে ড্রাইভ করছে,আর আরেকহাতের মুঠোয় মায়ার হাত আবদ্ধ করে রেখেছে।
হঠাৎ আরিয়ানের ফোন বেজে উঠে।গাড়ির সামনে ফোন রাখা।আরিয়ান মায়ার হাত ছাড়ে না।বলে,
—“দেখোতো কে কল করেছে।”

মায়া ফোনটা হাতে নেয়।দেখে তন্ময় ফোন দিয়েছে।সে ফোনটা আরিয়ানের দিকে এগিয়ে দেয়,
—“তন্ময় ভাইয়া”।

আরিয়ান গাড়ি বাম দিকে টার্ন করতে করতে বলে,
—“রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দাও”।

মায়া তাই করে।বুঝতে পারছে আরিয়ান তার হাত ছাড়বেনা।সে ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে আরিয়ানের সামনে ধরে।ওপাশ থেকে তন্ময় ব্যস্ত গলায় বলে,
—“হ্যালো,ভাই?”
—“হ্যাঁ,বল।”
—“আপনি আসবেন কখন?”
—“বিকালে।”
—“কিহ্?আজকের মিটিংয়ের কথা ভুলে গেলেন?অনেক ইম্পপর্টেন্টতো।আপনি ছাড়া কিভাবে হবে?”
—“কাম ডাউন,তন্ময়।আমি ভুলিনি।ওদের সাথে কথা হয়েছে আমার।আজকে হবেনা মিটিং।ক্যান্সেল করে দিয়েছি।”
—“ওহ্।সেটা আগে বলবেনতো।আমি টেনশনে শেষ।আপনি কোথায় এখন?”
—“মায়ার ভার্সিটিতে।ওর এক্স্যাম আজকে থেকে।”
—“ওহ্,আচ্ছা।রাখি তাহলে?
—“রাখ।”বলতেই ফোন কেটে যায়।
মায়া ফোনটা আবারো আগের জায়গায় রেখে দেয়।গাড়ি থেমে গেছে তার ভার্সিটির সামনে।আরিয়ান তার সিটবেল্ট খুলে দেয়।গালে হাত রেখে বলে,
—“আমি বাইরেই অপেক্ষা করছি।তুমি যাও।ভয় পেয়োনা।ঠিকাছে?”
—“আপনি শুধু শুধু এই তিনঘন্টা এখানে অপেক্ষা করবেন কেন?পরীক্ষা শেষে নিতে আসলেই তো হয়”।
আরিয়ান মুচকি হেসে মায়ার পাশের দরজার লক খুলে দেয়।কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,
—“তোমাকে এখানে একা রেখে আমার অন্যকাজে মন বসবে না।…যাও”

মায়া ঠোঁটে লজ্জামিশ্রিত হাসি এলিয়ে বেরিয়ে যায়।হাত নেড়ে আরিয়ানকে বিদায় জানিয়ে ভেতরে চলে যায়।আরিয়ান স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে সিটে মাথা এলিয়ে দেয়।মায়াকে কোথাও একা ছাড়তেই তার ভয় করে।
যেমন এখনও ইচ্ছা করছে মায়ার পাশের সিটে বসে বসে তাকে পাহারা দিতে।যদিও সে বললে এটারো পারমিশন দিয়ে দেয়া হবে কিন্তু তবুও এমনটা করলে মায়া অসস্তিতে পরীক্ষাই দিতে পারবেনা।হাহ্,একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে আরিয়ানের।
____________

মাথা নিচু করে মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে মায়া।তার পাশে একটা মেয়ে বসেছে।হল এ গার্ড দিচ্ছে একটা
মহিলা টিচার।মায়া অনেকক্ষন ধরেই লক্ষ্য করছে ম্যাডামটা অনেকক্ষন যাবত তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।আবার মাঝে মাঝে নিজের ফোনের দিকে তাকাচ্ছে।অসস্তি হচ্ছে তার।সে তো কোনোরকম দেখাদেখি করছে না তবে এভাবে কি দেখছে ইনি?

কিছুক্ষন পরে ম্যাডামটা হাঁটতে হাঁটতে তার সিটের সামনে এসে দাড়ায়।মায়া চোখ তুলে তাকাতেই তিনি চোখ ছোট ছোট করে চাপা স্বরে বলে,
—“এই মেয়ে,তোমার চেহারাটা আরিয়ান খানের বউয়ের মতো লাগে।তাই না?”

মায়া হকচকিয়ে যায়।থেমে থেমে বলে,
—“জি…জি ম্যাম।”

—“জি মানে?তুমিই উনার বউ?”

মায়া মৃদুভাবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।মহিলাটা যেন খুশিতে লাফিয়ে উঠে।কিন্তু বাহ্যিকভাবে প্রকাশ করেনা।উৎসুক কন্ঠে বলে,
—“তুমি একাই এসেছো?মি.আরিয়ান আসেননি?উনার সাথে দেখা করার অনেক ইচ্ছা আমার”

মায়া সরলমনে অকপটে বলে,
—“এসেছে ম্যাডাম,উনি বাইরে অপেক্ষা করছেন।”

—“ওহ্,গ্রেট।তোমার কোনো হেল্প লাগলে আমাকে বলো হ্যাঁ?আমি কিন্তু এই সাবজেক্ট এর ই প্রফেসর।”

মায়া চোখ বড় বড় করে তাকায়।কিসব বলছে এই মহিলা?পরীক্ষায় কেউ কাউকে এভাবে বলে দেয় নাকি?
তবুও উনার মুখের উপর তো কিছু বলা যায় না।তাই নিচু স্বরেই বলে,
—“না ম্যাম,হেল্প লাগবেনা।”

মহিলাটা চলে যেতেই মায়া হাফ ছেড়ে বাঁচে।পাশের মেয়েটাকে সে জিজ্ঞেস করে,
—“উনি মনে হয় নতুন প্রফেসর।তাইনা?”
—“হ্যাঁ,এই সপ্তাহেই জয়েন করেছে।”
মায়া আবারো লেখায় মনোযোগ দিয়ে বিরবির করে বলে,
—“এজন্যইতো এমন অদ্ভুত কথাবার্তা বলছিলো।আজব!।

বেল পরতেই খাতা দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পরে মায়া।চারতলার কর্ণারের রুমে সিট পরেছিলো তার।আরিয়ান অপেক্ষা করছে ভেবে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতে থাকে সে।দ্বিতীয়তলা পুরোটা খালি।এখানে মনে হয় আজকে কোন পরীক্ষা হয়নি।খালি করিডোর ধরে দ্রুত হাঁটে মায়া।আচমকাই কেউ একজন টান দিয়ে তাকে খালি ক্লাস রুমে নিয়ে যায়।চিৎকার করে উঠে মায়া।এই ফ্লোরে কেউ নেই।বিধায় কারো কানে যায়না তার চিৎকার।জানালা দিয়ে আলো আসছে।আবছা আলোয় রাহাতকে দেখে চমকে উঠে মায়া।রাহাত এখানে কি করছে?তার হাত ছেড়ে দেয় রাহাত।একটু দুরত্ব নিয়ে দাড়ায়।
মায়া গায়ের ওড়না ঠি ক করে ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে,
—“আপনার সমস্যাটা কি?এখানে কি করছেন?দেখুন আপনার কোনো কথা আমি শুনতে চাচ্ছিনা।উনি যেরকমই হোক আমার কোন সমস্যা নেই।অযথা ঝামেলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেননা।”
এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে রাহাতের দিকে তাকায় মায়া।
—“আপনি খুব ভালোবাসেন আরিয়ানকে তাইনা?”

মায়া এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,
—“আপনি কি এসব বলার জন্য এখানে এসেছেন?….আমার যেতে হবে,উনি অপেক্ষা করছেন।সরুন প্লিজ”

—“উওরটা দিন।”

মায়া এবার সরাসরি রাহাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
—“জি।খুব বেশি ভালোবাসি।শুনেছেন?এবার প্লিজ নিজেও যান আর আমাকেও যেতে দিন।”

রাহাত এক কদম এগিয়ে এসে বলে,
—“আমিওতো আপনাকে ভালোবাসি মায়া।”

মায়া থমকে যায়।সে কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পরেনি।কি বলবে বুঝতে পারেনা।রাহাত এগোতে থাকে।

—“দে..দেখুন একদম এগোবেন না।আপনার এসব অহেতুক কথাবার্তা আমার ভালো লাগছেনা।উনি না আপনাকে গুলি করলো ওইদিন,,আপনার হাতে এখনো ব্যান্ডেজ করা তবুও এসব বলার সাহস কেমনে হয়?”

রাহাত তার একপাশের দেয়ালে হাত রেখে বলে,
—“আপনি আমাকে ভয় পান কেন?”

—“কারণ আপনি ভয় পাওয়ার মতোই।”বলে আর একমূহুর্ত সেখানে দাড়ায়না মায়া।রাহাতকে ধাক্কা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসে।পেছন থেকে শুনতে পায় রাহাত বলছে,
—“আরিয়ানকে বলবেননা আমি এখানে এসেছিলাম।ও রেগে যাবে।”
মায়ার কথাগুলো শুনলেও কানে নেয় না।একদৌড়ে নিচে নেমে যায়।

বাইরে বের হতেই আরিয়ানের গাড়ি দেখে এতক্ষনের ভয় কেটে যায়।গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই আরিয়ান দরজা খুলে দিয়ে বলে,
—“আসো ভিতরে আসো।এত দেরি করলে কেন?”

মায়া উওর না দিয়ে ভেতরে ঢুকে বসে।আরিয়ান পানির বোতল এগিয়ে দিতেই তৃপ্তি নিয়ে পানি খায়।

—“এত দেরি হলো কেন?কোন সমস্যা হয়েছিলো?”

মায়া উওর দেবার আগেই জানালায় টোঁকা পরে।আরিয়ান ভ্রু কুচকে গ্লাস নামায়।একজন মোটামোটি ইয়াং মহিলা দাড়িয়ে আছে।আরিয়ান সানগ্লাস নামিয়ে বলে,
—“কে আপনি?এনি প্রবলেম?”
মায়া চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বলে,”ইনি পরীক্ষার গার্ডে ছিল।ভার্সিটির প্রফেসর।”
আরিয়ান মায়ার দিকে তাকায় আবার মহিলার দিকে তাকায়।

—“আপনি জানেন আমি আপনার কত বড় ফ্যান?ভাবতেই পারছিনা আপনাকে সামনাসামনি দেখছি।”

বলে মহিলাটা তার দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ায়।
আরিয়ান হাত মিলায়না অপ্রস্তুত ভাবে হেসে বলে,

—“নাইস টু মিট ইউ।”

মহিলাটা হয়তো একটু অপমানিত বোধ করেন।মুখের হাসিটা নিভে না গেলেও একটু কমে যায়।তবু আগের মতোই উৎকন্ঠিত ভাবে সে বলে,

—“আপনার ওয়াইফকে পরীক্ষায় হেল্প করেছি।বুঝলেন?”

আরিয়ান বিস্মিত নয়নে মায়ার দিকে তাকায়।মায়া মাথা দু দিকে নাড়িয়ে বলে,”উনি সাহায্য করতে চেয়েছিলো,আমি নেইনি।”

আরিয়ান চোখে আবারও সানগ্লাস টা পরে মহিলাটাকে বলে,
—-“এস এ প্রফেসর,আপনার অবশ্যই পরীক্ষায় হেল্প করা উচিত না।সেটা আমার ওয়াইফ হোক আর যেই হোক না কেন।আই হোপ আপনি বুঝতে পারছেন।”

মহিলাটা অপমানে দাঁত কেলিয়ে হাসে।সে হয়তো ভেবেছিলো এটা বললে আরিয়ান তার উপর খুশি হবে।কিন্তু হলো উল্টা।

—“আমাদের একটু তাঁড়া আছে।আল্লাহ হাফেজ।”বলে গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে দেয় আরিয়ান।

মায়া ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে,
—“একদম ঠিক করেছেন।কি অদ্ভুত মহিলা!!”

আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে,
—“পরীক্ষা কেমন হলো?”

মায়া আরিয়ানের বাহুতে মাথা রাখে।চোখ বন্ধ করে বলে,
—“খুব ভালো”।

বেশ কিছুক্ষন গাড়ি চলে।মায়া হঠাৎ করে বলে উঠে,
—“একটা কথা বলি?রাগ করবেন নাতো?”
—“কখনো রাগ করেছি তোমার উপর?”
—“করেছেন।”
আরিয়ান হাসে।এপর্যন্ত দুইবার মায়ার সাথে চিল্লিয়ে কথা বলেছে সে।তাও পরিস্থিতির চাপে।এমনিতে না।

মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে সে বলে,
—“আচ্ছা বলো।রাগ করবোনা।”

—“আজকে রাহাত ভাইয়া এসেছিলো ভার্সিটিতে।”

~চলবে~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে