আঁধার পর্ব-৩৬

0
1325

আঁধার

৩৬.

বিকালে এসেও মিলাকে পেলাম না। ও কি ভাঙ্গা চলে গেল? গেলটা কই? বাইরের পোশাক ছেড়ে বিছানায় শুয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু ভালো লাগলো না। পুরো বাসা শূন্য লাগছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা নেই। গতকাল রাকা আসার পর থেকে আমাদের মধ্যে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। পরশুদিনও সে এইসময় আমরা দু’জন বারান্দায় পাটি বিছিয়ে গল্প করছিলাম। আমি দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। আর ও আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আকাশ দেখছিল। আর এখন সে উধাও হয়ে গেছে। বিছানা থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিলাম। মিলার নাম্বারে ফোন দিলাম। রিং বেজে কেটে গেল। বড় দুলাভাইকে ফোন দিব? সে হয়তোবা জানতে পারে। ফোন দিলাম কিন্তু রিসিভ হলো না। মিলা কি বাসায় সব বলে দিয়েছে? বলে দিলে দিবে কিন্তু এভাবে না বলে উধাও হবে কেনো? স্থির থাকতে পারছিনা। বড় দুলাভাই এর নাম্বার থেকে ফোন আসল। রিসিভ করে সালাম দিলাম। সালামের উত্তর দেয়ার পরে জিজ্ঞেস করলেন, ” কেমন আছো? ”

” মিলা দুপুর থেকে বাসায় নাই। ফোন দিচ্ছি কিন্তু রিসিভ করছেনা। এভাবে তো কখনো ও যায় নাই। ”

” ও এমনই। হুটহাট কোনো কিছু না বলেই উধাও হয়। ” বড় দুলাভাই বললেন।

” ফিরে আসে নাকি পুলিশ দিয়ে খুঁজে আনতে হয়? ”

” একাই ফিরে আসে। ” বড় দুলাভাই এর কণ্ঠে শুনে মনে হচ্ছে উনি চিন্তিত অনেক।

” ফিরে আসতে কত দিন লাগে ওর? ”

” পাগল কিন্তু এতো না ও। রাত বাইরে থাকে না। ধরো রাত আটটা বা নয়টার মধ্যে দেখবা হাজির হবে। কিছু জিজ্ঞেস করলে এমন ভান করবে যে, কিছুই করেনি সে। ”

” এমন কতবার করেছে ও? ”

” অগণিত বুঝতে পারছো। ”

” আপনি ওকে একটু ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলবেন বা বড় আপাকে? ”

” তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ও কাউকেই পছন্দ করে না। আমাকে আর ওর বড় আপাকে তো আরো বেশি অপছন্দ করে। ফোন দিলে দেখা যাবে জিদ করে রাতেও বাসায় ফিরল না। ”

” আর কোনো উপায় নেই? ”

” ধৈর্য্য ধরো আর বেশিক্ষণ নেই। ও ফিরে আসবে। তোমার বউকে আটকাতে হবে ভালোবাসা দিয়ে। অন্য কোনোভাবে পারবা না। তোমাদের মধ্যে তো ভালো সম্পর্ক সেদিন দেখে তো তাই মনে হলো। ”

” হুম ” এখানে আমার আসলেই কিছু বলার নেই। গতকালের ঘটনা জানানোর সাহস আমার নেই।

” ওর তো আসলে মাথা ঠিকঠাক নাই। তাই কখন কী করে বসে তারও ঠিক নেই। নিজের যা ভালো মনে হয় করে। কী আর করার বলো। তুমি তো বিয়ের আগেই সবকিছু জানতে। ”

” না আমাকে কেউই কিছুই জানায়নি। ”

” বলো কী? তোমার আম্মা, আব্বা কিচ্ছু বলেনি? ”

” না ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham

” এজন্যই তুমি এতো সহজে বিয়েতে রাজি হয়েছ। জানলে খুঁজে পাওয়া যেত না। যাইহোক তোমাকে এখন এসবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। ”

” হ্যাঁ ”

” আচ্ছা রাখি কেমন? আমার আবার একটু তাড়া আছে। ”

” ঠিকাছে। ”

ঘড়িতে যখন আটটা বাজে তখন মিলা আসলো। দরজা খুলে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। হালকা গোলাপি রঙের জুম শাড়ী পরনে। ঠোঁটে কড়া গোলাপি রঙের লিপস্টিক। হাতে চুড়ি, গলায় নেকলেস, কানে পাথরের ঝুমকা। চুল গুলো ছাড়া। এতো সাজগোজ করে ও কোথাও গিয়েছিল? ভেতরে ঢুকে শোবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল৷ আমি প্রশ্ন না করে পারলাম না।

” কোথায় ছিলে এতক্ষণ? ”

” এখন ক্লান্ত লাগছে অনেক। পরে বলবো। ” মিলা ক্লান্ত ভঙ্গিতে কথাটা বলল।

” ছোট্ট একটা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য রেস্টের প্রয়োজন হয়না। ”
মিলা শোবার ঘরের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ” ছিলাম ফ্রেন্ডের বাসায়। ”

” আমাকে বলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে হয়নি? ”

” আপনি কি রাকা আপুর কাছে যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেছিলেন? ” মিলা কানের দুল খুলতে খুলতে প্রশ্নটা করলো।

” কথা ঘুরাবা না। ”

” আমি কথা ঘুরাচ্ছি না। আপনি তার সাথে সহবাসও করেছেন। তখন তো আমার কাছে পারমিশন নিয়ে করেননি। তাহলে আমি সামান্য আমার ফ্রেন্ডের বাসায় যাওয়ার আগে বলে কেনো যাবো? ”

” আমি বলে গেছিলাম যে ঢাকায় যাচ্ছি। কিন্তু তুমি এভাবে আমাকে না বলে কোথাও যেতে পারো না। অন্ততপক্ষে ফোন তো রিসিভ করবা? আমার তোমার চিন্তায় শান্তি পাচ্ছি না কোথাও। ”

মিলা আমার কাছে এসে কানের কাছে ঠোঁট এনে বলল, ” চিন্তা করবেন না আমি আপনার রাকা না যে, স্বামী রেখে প্রাক্তনের সাথে বিছানায় যাবো। আমার এটুকু জ্ঞান আছে। ”

” তুমি নিজের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছো। ”

” অন্ততপক্ষে প্রাক্তনের বাচ্চা জন্ম দিব না। আমি ধর্ষিতা কুৎসিত চেহারার হতে পারি। কিন্তু চরিত্র ভালো। ”

” তুমি দয়া করে এখন থেকে যাওয়ার আগে আমাকে বলে যাবা, প্লিজ। ”

” আপনি তো যেকোনো সময় চলে যাবেন। রাকা আপু মাইন্ড করবেনা আমি ফোন দিলে? ”
আমার উত্তর দেয়ার মতো কোনো শব্দ নেই।

” আমি গিয়েছিলাম আমার এক ফ্রেন্ডের কাছে। ও একটা শপিং মলে সেলার পদে চাকরি করে। ওর কাছে চাকরির জন্য যাওয়া আরকি। ”

” চাকরি দিয়ে কী করবা? ”

” আপনার যাওয়ার পরে আমার খাবারের টাকা কে দিবে? আমার পেট তো আর আবেগ দিয়ে ভরবে না। কোনো দোকানদারকে গিয়ে যদি বলি, ভাই আবেগ দিলাম এক বস্তা৷ আমাকে এক বস্তা চাল দেন। দিবে বলুন? ”

” না ”

” তাহলে আমাকে টাকা আয় করতে হবেনা? আপনার রাকার মতো তো সুন্দর চামড়া নাই যে বেইচা টাকা কামাবো। তাহলে আর সামান্য পাঁচ হাজার টাকা মাসিক বেতনে সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চাকরি ঠিক করে আসার প্রয়োজন ছিলো না। ”

” তুমি বলতে চাচ্ছো রাকা পতিতাবৃত্তি করে? ”

” সম্ভাবনাও থাকতে পারে। যে বিয়ের পরে স্বামী থাকতেও প্রেমিকের সাথে বিছানায় যায়। যে নিজের সন্তানকে ঘুমের মেডিসিন দিতে পারে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। সে যেকোনো কিছু করতে পারে। ”

” তোমার চাকরি করার প্রয়োজন নেই। ”

” আপনি আপনার চিন্তা করুন। যে বেতন পান তাতে আপনার ফিউচার বউয়ের শুধু পার্লার খরচে চলে যাবে। আর কিছু একটু ভেবে নিবেন। ”

” চাকরি ঠিক করতে এতো সাজগোজ করে যেতে হয়? ”

” এটাকে সাজগোজ বলে? একটু স্মার্ট হয়ে না গেলে এই চাকরি জুটতো না। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি কারো সাথে বিছানায় শুয়ে আসিনি। কারণ আমার পিরিয়ড চলে। ”

” তোমার মাথা ঠিক আছে? ”

” মাথা কীভাবে ঠিক থাকে বলুন? আপনার একটা বাচ্চা আছে, একজন সুন্দরী প্রেয়সী আছে। যে আমারই বাসায় এসে আমাকে শাসিয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে তাদের সাথে নতুন জীবন শুরু করবেন। মাঝখান দিয়ে আমাকে নিয়ে দু’জনে দারুণ খেললেন। তাহলে বলুন আমি শান্ত কীভাবে থাকবো? ”

” আমি তো ইচ্ছা করে যাচ্ছি না। আমি বাধ্য হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ”

” আপনাকে আমি আটকে রাখছি না। অবশ্যই যাবেন। ”

” মিলা? ”

” আর কিছু বলার আছে? আমার ঘুম পাচ্ছে। ”

” চাকরিতে জয়েন কবে থেকে? ”

” কাল থেকে। আপনি যতদিন আছেন ততদিন খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। ”

” আজ রাতেও কি আলাদা রুমে ঘুমাবে? ”

” এক রুমে ঘুমালেও তো লাভ নেই আপনার। যদি এতো প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি অন্য কাউকে নিয়ে আসতে পারেন। আমি কোনো ঝামেলা করবো না। ”

” নিয়ে আসবো মানে? কাকে নিয়ে আসবো? ”

” আপনার যাকে ইচ্ছা আনবেন। ”

” তুমি যাও রেস্ট নাও। ”

” থ্যাংক ইউ। ”

রাকা আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিয়েছে। মিলা আমাকে আটকানোর একটা চেষ্টা অব্দি করছে না। এমনকি একবারও বলেনি, ” আপনি যাবেন না আমাকে ছেড়ে। ”

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে