আঁধার
৩৪.
( রাসেল )
” রাসেল তুমি চাচ্ছ আমি আর ওশান সুইসাইড করি? ” রাকা সাপের মতো ফুসে উঠে বলল। ওর কি মাথা খারাপ নাকি? সুইসাইডের কথা বলে কেনো?
” রাকা ফাজলামি করবা না। যথেষ্ট ফাজলামি করছো তুমি। ” মিলা আমার বুকের মধ্যে নির্লিপ্ত হয়ে পড়ে আছে। আমার অসহ্য লাগছে সবকিছু। ওশান সোফায় গভীর ঘুমে।
” আমি ফাজলামো করছি না। ওইযে ওশান ঘুমিয়ে আছে। ও নিজ থেকে ঘুমাচ্ছে না। আমি ওকে ঘুমের মেডিসিন দিয়েছি। একটার অর্ধেকটাতেই সে ঘুমে কাতর। তুমি যদি আমাদের না নাও তাহলে আমরা দুজনেই ঘুমের মেডিসিন খেয়ে সুইসাইড করবো। ” রাকা রাগে গজগজ করতে করতে বলল।
” তুমি এতটুকু বাচ্চাকে ঘুমের মেডিসিন দিছ? তোমার পেটের সন্তান রাকা। তুমি এটা কীভাবে করলে? ” মিলা আমার বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। চোখে পানি টলমল করছে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে।
” বাচ্চার বাবা তাকে নিতে চায়না। বাচ্চার বাবা বিয়ে করে তাকে যদি ভুলে থাকতে পারে। তাহলে আমি কেনো ওকে নিয়ে কষ্ট পাবো? বাপ বউ নিয়ে ফূর্তি করবে আর মা কষ্ট করবে? ” রাকা ওর ব্যাগের দিকে এগিয়ে গেল। ও কি কোনো উইপেন নিয়ে আসছে? ও কি মিলার বা ওশানের কোনো ক্ষতি করবে?
” মিলা, তুমি শোবার ঘরে যাও। ” মিলা আমার কথামতো শোবার ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিল।
” মিলার সামনে লজ্জা লাগছে তাই না? ” রাকা ব্যাগ থেকে চার থেকে পাঁচটা ঔষধের পাতা বের করে আমার চোখের সামনে ধরলো।
” তুমি এখানে কেনো এসেছ? আমার লাইফ শেষ করে দেয়ার জন্য? ”
” আমাদের একসেপ্ট করবা নাকি করবা না? যদি না করো তাহলে এইযে হাতে ঔষধের পাতা দেখছ। ঘুমের মেডিসিন বুঝতে পারতেছ? আমি আর ওশান তোমার ড্রয়িংরুমে বসে খাবো। তারপর বুঝবা খেলা। ” রাকার কথায় আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল।
” তুমি এখন কেনো আমাকে চাচ্ছ? বিয়ে করার আগে মনে ছিলো না? যখন আমি বলেছিলাম, চল পালিয়ে যাই। তখন কই ছিলা তুমি? এখন কেনো আমার সংসার ভাঙতে আসছ? আমি তো বিয়ে করতে চাইনি। তুমিই জোর করে করাইছ। এখন কেনো তুমি আমাকে চাচ্ছ? আমি যাকে বিয়ে করেছি সে একজন মানুষ। ও কোনো রোবট না যে, তুমি যখন যা চাবা তাই করতে ও বা আমি বাধ্য হবো। ”
” তখন বাপির কারণে পারিনি। বাপির মানসম্মান থাকতো না। উনি কথা দিয়ে ফেলেছিলেন। ”
” তাহলে এখন আমার কাছে বাচ্চা নিয়ে চলে আসলে তার মান ইজ্জত যাবে না? নাকি আরো বাড়বে? এখন তো তার মান ইজ্জত আরো বেশি করে যাবে। কারণ তোমার শ্বশুড়বাড়ির লোকেরাও এটা নিয়ে কথা শোনাবে। ”
” আমি এমন একটা প্ল্যান করেছি যেটার কারণে মাহমুদের বাপেরও সাহস হবেনা কিছু বলার। ”
” আমি তোমাদের বার বহন করতে পারবো না। আমার বেতন খুবই কম। ”
” তাহলে এই ফ্ল্যাট কীভাবে কিনলা? ”
” তোমাকে তো বলেছি মিলার দুলাভাইয়ের কাছ থেকে বিয়ের উপহার ছিল। ”
মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।
বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি
https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” ও এজন্য মিলাকে ছাড়তে চাচ্ছ না? তাই তো বলি এই ফাকিং হোরটার কাছে কী এমন পেয়ে গেলা যে আমাদের ভুলে গেছ। ”
” মিলাকে নিয়ে কিছু বলবা না। কথা হচ্ছে আমাদের মধ্যে। ওকে টানবা না। ”
” রাসেল আমি কিন্তু সত্যিই ওশানকে নিয়ে সুইসাইড করবো। এখানেই করবো। ”
” ফাজলামি না করে ওশানকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাও। আমাকে শান্তি দাও নিজেরাও শান্তি পাও। ”
রাকার ফোন বেজে উঠাতে সে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ফোন রিসিভ করে বলল, ” হ্যাঁ মাহমুদ বলো। ”
মাহমুদ ভাই ফোন করেছেন কিন্তু কী বলছেন আমি শুনতে পারছি না। রাকা একটু দূরে সরে গিয়ে কথা বলছে।
” তুমি ঢাকায় আসছ?” রাকাকে হতভম্ব মনে হচ্ছে।
” এতো তাড়াতাড়ি ছুটি? ”
” না না কী বলো? তুমি আসছ আর আমি খুশি হবো না কেন? ”
” এখন কোথায়? ”
” ওশান তো ঘুমিয়ে আছে। বাবার আসার খবর শুনলে ও অনেক খুশি হবে। ”
” তুমি কী খাবে বলো? আমি রান্না করতে বলে দেই। ”
” না না বাইরের খাবার খাওয়া যাবেনা৷ অনেক দিন পরে বাসায় ফিরছ এখন বাসার খাবার খাবে। ”
” ঠিকাছে রাখো। আর সাবধানে আসবে। লাভ ইউ। ”
মোবাইল ব্যাগে রেখে রাকা আমার দিকে ফিরল।
” তুমি এখানে এসে বলছ যে, আমাকে চাই। কিন্তু কেবলই মোবাইলে কী বললে? ” রাকা আসলে আমার সাথে সংসার করতে চায়না। সে আমাকে সংসার করতে দিবে না। আগে যেমন আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে নাচাইছে। এখনো তাই চায়। এজন্যই এই নাটক সে শুরু করেছে।
” মাহমুদকে তো এভাবে টাইট দিব না আমি। আমাদের তোমাকে চাই। আমার সবকিছু প্ল্যান করা আছে। ”
” তুমি মাহমুদ ভাইকে লাভ ইউ বললে। আর বলতেছ আমাকে চাই? অ্যাম আই জোক টু ইউ? ”
” না ” রাকা ওশানকে কোলে নিয়ে আমার খুব কাছে এসে দাঁড়াল।
” তুমি চাও টা কী? ”
” মিলাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করবে৷ আমি মাহমুদকে ডিভোর্স দেয়ার সবকিছু রেডি করে রেখেছি। কিছু পেপার এখনো রেডি না৷ রেডি হলে তোমাকে আমি জানাব। তুমি আমাদের নিতে ঢাকায় চলে আসবে। ”
” যদি না যাই? ” মিলাকে ডিভোর্স দেয়ার কথাও ভাবতে পারিনা।
” আমি আর ওশান সুইসাইড করবো আর একটা সুইসাইড নোট রেখে যাব৷ তারপর তুমি আর মিলা আজীবন জেলের ভাত খাবা। ” রাকা কথাটা বলে হাসল। এই হাসিকে বলে শয়তানের হাসি।
” সবকিছু খুব সহজ তাই না? আমার জীবনটা খুব সস্তা তাই না? যখন যেভাবে চাবা আমি তেমন হয়ে যাব? ”
” অবশ্যই তুমি হতে বাধ্য। তোমার সামনে দুটো পথ খোলা। এক. আমি আর ওশান দুই. স্বামী স্ত্রী দুজন মানুষের মৃত্যুর কারণে জেলে যাবা। মাহমুদকে তো চিনোই। তার প্রিয়তমা স্ত্রী আর বাচ্চার মৃত্যুর প্রতিশোধ না নিয়ে তোমাকে ছাড়বে না। ”
” মা ঠিকই বলতেন তুমি ডাইনি। ”
” বড় খালার ছেলের বউ তো একদিন আমি হবোই। আর ওই ফাকিং হোরটাকে দ্রুত ডিভোর্স দিয়ে দিও। ” আমি রাকার কোল থেকে ওশানকে নিলাম। কপালে চুমু দিয়ে রাকার কোলে দিয়ে দিলাম। রাকা মরুক না বাঁচুক তা দিয়ে আমার কোনো কাজ নেই। ওশানের জন্য এখন মিলাকে ছেড়ে দিতে হবে।
” মাহমুদ ভাই ঢাকায় আসছে? ”
” হ্যাঁ, ভালোই হয়েছে সে এসেছে। একেবারে সব ঝামেলা মেটানো যাবে। ” রাকা হেসে বলল।
রাকা চলে যাবার পরে আমি শোবার ঘরের দরজা নক করলাম। কিন্তু ভেতরে কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না। মিলা ঘরে বসেই সব শুনেছে। আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে দিকটা এভাবে ওর সামনে আসবে ভাবতেও পারিনি। আমি ওকে ভালোবাসি। এই সত্যটা ওকে ভালোভাবে জানাতেও পারিনি। ও এখন আমাকে বিশ্বাস করবে না৷ আমি ওকে ডিভোর্স কীভাবে দিব? বাসায় কী বলবো? মিলার ফ্যামিলিকে কীভাবে বুঝাবো? এদিকে মিলা দরজা খুলছে না৷
” মিলা, এই মিলা প্লিজ দরজা খুলো। আমাকে সবকিছু ব্যাখ্যা করতে দাও। ” ভেতর থেকে কোনো শব্দও কানে আসছে না৷ ও কি আত্মহত্যা করে বসল? হায় আল্লাহ! ওর কিছু হয়ে গেলে আমি কীভাবে থাকবো? দরজা ভাঙার চেষ্টা করবো আর তখনই দরজা খুলে মিলা বের হয়ে আসলো। চোখ মুখ ফুলে গেছে। লাল টকটকে চোখের চাহনিতে বুকের ভেতরে মনে হলো তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। আমি ওকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
” উনি চলে গেছেন? ” মিলা স্বাভাবিক স্বরে প্রশ্নটা করলো।
” হ্যাঁ ”
” আপনি যাবেন কবে? ” আমি মিলার দিকে এগিয়ে গেলাম। ওর হাত ধরে বললাম, ” মিলা, রাকা আমার অতীত। আমি ওর সাথে অবৈধ সম্পর্কে ছিলাম। কিন্তু তোমাকে ভালোবাসার পরে আমি ওর দিক থেকে সরে এসেছি। ”
” কিন্তু এখন তো উনার কাছেই আপনাকে যেতে হবে। আপনার একটা বাচ্চাও আছে। আর আমি পাগলের মতো ভেবে বসে আছি যে, সংসার সাজাবো আপনাকে নিয়ে। ”
” আমি…তুমি এভাবে দরজা আটকে কেনো বসে ছিলে? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবো। ” মিলাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ও আমার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে বলল, ” আমি জন্মের পর থেকে অপমান, অবহেলায় মানুষ হয়েছি। এগারো বছর বয়সে গ্যাং রেপ হয়েছি। তাও একবার না অনেক বার৷ তিনটা দিনের লাগাতার ধর্ষণে ওই বয়সের মেয়ের বেঁচে থাকার কথা না। তারপরও বেঁচে আছি। আর আপনি বলছেন, আমি এতটুকুতেই ভেঙে পড়ে আত্মহত্যা করে বসবো? তাও এমন একজনের জন্য যে নাকি আমাকে কোনোদিন ভালোই বাসেনি? ”
” মিলা তুমি ভুল বুঝতেছ। আমি তোমাকেই ভালোবাসছি। রাকাকে আমি কোনোদিন ভালোবাসতে পারিনি। ভালোবাসলে তো তোমাকে আমি ভালোবাসতাম না। ”
” এখন বলে তো লাভ নেই। ” মিলা শুষ্ক হাসি এনে বলল। তারপর ধীর পায়ে বারান্দার দিকে চলে গেল। রাকা যা চেয়েছিল সেটাই সফলভাবে করে ফেলেছে।
চলবে…
~ Maria Kabir