আঁধার পর্ব-৩২

0
1496

আঁধার

৩২.

” আপনার ছুটি তো দেরি আছে? ” শামীম আহসানকে প্রশ্নটা করলাম। উনাকে বাসায় দাওয়াত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ হবে দাঁড়িয়েছে। এই অসময়ে ছুটিটা উনার জন্যই পাওয়া। আমি ছুটি নিচ্ছি ভিন্ন একটি কারণে। ওশানের জন্মদিন বাহানা মাত্র। আর কারণটা শামীম ভাই আন্দাজ করতে পেরেছেন। কিন্তু উনি চাচ্ছেন আমি নিজ থেকে বলি।

” হ্যাঁ, আপনি গেলে আমি একা হয়ে যাবো। তারপরও কী আর করার! ” হতাশ ভঙ্গিতে বললেন।

” আপনি তো জানেনই কী কারণে যাচ্ছি। আর কতদিন এভাবে চলবে বলেন? একটু আগেও একটা প্ল্যান করে বসলাম। কিন্তু… ” আর বলার সাহস পেলাম না।

” আপসেট হবেন না। হিউম্যান লাইফ ঝামেলা ছাড়া হয়ই না৷ এই দুনিয়ায় যেমন বিভিন্ন ফ্লেভারের ফুড পাওয়া যায়। তেমনই ঝামেলা গুলোও হয় বিভিন্ন ফ্লেভারের। ”

” কী ভুল করেছিলাম আল্লাহ ভালো জানেন। ”

” আপনার সেই শালার সাথেই কি এখনো এফেয়ার চলে? ”

” শালা তো বিয়ে করেছে। তবে সে কয়েক দিন আগেই বাসায় এসেছিল। ”

” তার বউকে সব জানিয়ে দেন তাহলেই তো হয়। ”

” না, এই ধরনের সম্পর্কে যারা থাকে তাদের সাথে এভাবে কাজ করতে হয়না। এই কাজ করেই তো মূল ভুলটা করে বসে মানুষ। আর ওর তো একা রাসেলের সাথে সম্পর্ক না। ওর তো তারিখ পরিবর্তন এর মতো পুরুষ পরিবর্তন হয় নিয়মিত। ”

” ভাবীকে দেখলে তো মনেই হয়না। বংশ ভালো, শিক্ষাগত যোগ্যতা সবদিক থেকেই সে ভালো। উনি এই ধরনের চক্রে কীভাবে জড়ালেন বুঝিনা। ”

” ওর স্বভাব আগে থেকেই ভালো ছিলো না। রাসেলের ব্যাপারটা শুধু জানতাম। বিয়ের আগে তার এই খালাতো ভাই নাকি জোর করে তার সাথে সম্পর্ক করেছিল। সে বাঁচতে চায় এসব থেকে। আমি তখন তার প্রেমে অন্ধ। সে যা বলে তাই করি। আমিও তাকে বিশ্বাস করে বিয়েটা করে নিলাম। ”

” আপনি তো তাও বিশ্বাস করতেন না। আমিই তো আপনাকে ফাইভ স্টার হোটেলের ভিডিও দেখালাম। যার সাথে গিয়েছিল তার সাথেও কথা বলায় দিলাম। তারপর আপনি স্পাই লাগিয়ে সব প্রমাণ জোগাড় করলেন। এমনকি এখনো আপনার স্পাই ছবি, ভিডিও সবই পাঠায়। ”

” অবাক হয়ে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। নিজের স্ত্রী অন্যের বেডে… আল্লাহ মাফ করুক আমাকে। ” চোখ বন্ধ করে কালো আকাশের দিকে মুখ উঁচু করে রাখলাম।

” ভাই, সাহস রাখুন। আপনি তো আর ঠকান নাই। ”

” শুধু আপনি পাশে থাকবেন আর আল্লাহ তো আছেনই। আমি আমার ওশানকে নিয়ে শুধু নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারলেই হলো। ”

” তবে একটু সাবধানে। ভাবীর গায়ে হাত দিয়েন না ভুলে। জানেনই তো ফেমিনিস্টরা কী করতে পারে? তিল কে তাল বানিয়ে আপনাকেই ক্রিমিনাল বানিয়ে তারা ভিক্টিম সাজবে। আপনার ক্যারিয়ার থেকে শুরু করে সবকিছু শেষ করে দিবে। ”

” অবশ্যই সাবধানে করবো ভাই। সাবধানে করবো বলেই তো এক বছর যাবত অপেক্ষা করে আছি। ভেবেছিলাম বিয়ের আগে একটা দুইটা সম্পর্ক থাকেই। বিয়ের পরে শুধরে গেলেই হয়। কিন্তু রাকা তো শুধরাচ্ছেই না। উল্টো আমার টাকাগুলো উড়িয়ে তার বিলাসিতা পূরণ করছে। আমি মাদ্রাসার এতিম কয়েকটা বাচ্চার জন্য টাকা পাঠাই। ও সেই টাকাও দেয়না। মানে কী যে অবস্থা আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না। ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham

” আমার মা একটা কথা বলতেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে মানুষ চেনা। ”

” রাসেলকে একটা শিক্ষা আমার দিতেই হবে। ছেলেটা হচ্ছে রাকার লাইফলাইন। ” ক্রুর হাসি মুখে এনে কথাটা বললাম।

” সেটা তো করবেনই। ” শামীম আহসান আরেকটা সিগারেট হাতে নিয়ে বললেন।

( রাকা )

ক্লাইমেক্সে এসে সৌমিক থেমে গেল। ফাক দিজ শিট! সৌমিকের মোবাইলে ফোন এসেছে। তার প্রেয়সীর ফোন কল হবে। তা নাহলে ক্লাইমেক্সে এসে কেউ থেমে যায়? হাস্যকর ব্যাপার! রাসেলকে আর ফোন দেয়া হয়নি। ফোন দিয়ে দেখি। নাম্বার ব্লকলিস্ট থেকে খুলেছে কিনা! সৌমিকের কথা শেষ হতে হতে আমার কাজটা শেষ করে ফেলতে হবে। রাসেলের নাম্বারে ডায়াল করলাম। জানতাম ব্লক লিস্টেই রাখবে। তবে নো টেনশন। রাসেল আমারই থাকবে। সে কোথার কোন মিলা আসলেই বা কী!

*****

বাসায় ফিরলাম সকাল ন’টায়। ওশান তখনও ঘুমাচ্ছে। আমি ফ্রেশ হয়ে ওকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলাম। বেবিসিটারকে ফোন করে আসতে বলেছি একটু আগে প্রতিদিনের তুলনায়। আমি আমার বড় ব্যাগটাতে ওশানের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর আমার কিছু জিনিস গুছিয়ে নিলাম। ওশানকে রানু সকালের খাবার খাওয়াচ্ছে। এই ফাঁকে ফোন করে বাসের দুটো সিট বুক করালাম। মাহমুদের সাথে সকালেই কথা হয়েছে। লতা নাস্তা বানিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। নাস্তা খাওয়ার সময়ই বলে দিলাম আমাদের জন্য দুপুরে রান্না করতে হবেনা। আগামীকাল চলে আসবো।
ওশানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হতে এগারোটার বেশি বেজে গেল। রাস্তায় আর ফেরিঘাটে জ্যামে না পড়লেই হয়। ওশান জিজ্ঞেস করল, ” আম্মু আমলা কোথায় যাচ্ছি? ”

” সারপ্রাইজ আব্বু তাই বলা যাবেনা। ”

” কী সালপাইজ দিবা আম্মু? ”

” বলে দিলে কি সারপ্রাইজ থাকবে? ”

” বাবাকে বলেছি এবাল আমার জন্য লিমোট গালি আনতে। ”

” রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি তো বাসায় আছে তোমার। ”

” আমাল জন্য না। ”

” তাহলে কার জন্য শুনি আব্বু? ”

” নিতুনেল জন্য। ” নিতু খুব সম্ভব নিচতলার কাজের বুয়ার মেয়ের নাম।

( মিলা )

বারান্দায় দাড়ালে স্পষ্টভাবে পুরো জায়গাটা দেখা যায়। নিচে তাকালে গাড়ির ছুটে চলা আর উপরে তাকালে পাখির ছুটে চলা। রাস্তা দিয়ে ফুল গাছের ভ্যান যাচ্ছে। বারান্দাটা পুরো ফাঁকা। একটা রকিং চেয়ার বাদে কিচ্ছু নেই। কয়েকটা ফুল গাছ হলে মন্দ হয়না। বারান্দা থেকে গলা ছেড়ে থামতে বললাম। লোকটা মনে হয় আগে থেকেই বিল্ডিংয়ের উপরের দিকে তাকিয়ে ছিল। তা নাহলে এই কোলাহলে শুনতে পাওয়ার কথা না। আমি দ্রুত নিচে নেমে এলাম৷ ছোট্ট একটা লাল গোলাপের গাছ আর ঘাসফুলের একটা ছোট্ট টব নিলাম। তারপর টাকা বুঝিয়ে দিয়ে চলে এলাম। ঘর সাজানোর অনেক কিছুই এখনো কেনা বাকি আছে। নাইন্টি নাইনে যেতে হবে। ওখানে খুজলে সাধ্যের মধ্যে ভালো কিছু পেতেও পারি। আর বারান্দায় উইং চার্ম ঝুলাবো অনেক গুলো। ১০-১২ টা হলে ভালো হবে। হালকা বাতাসে সবগুলো একসাথে মিলে সুন্দর শব্দ তৈরি করবে। আর রাসেল গভীর রাতে রকিং চেয়ারে সিগারেট হাতে নিয়ে সেই শব্দ শুনবে।

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে