আঁধার পর্ব-৩১

0
1355

আঁধার

৩১.

” টিউলিপ? ” খালি গ্লাসটা হাতে রেখে দিলাম।
” জ্বী আপু। ” টিউলিপের হাতে মিস্টার টুইস্ট চিপস। খুব ফেভারিট ওর।
” আজকে ক’জন এসেছে এখানে? ” ম্যান্ডি আমার প্রশ্নের মর্ম বুঝতে পেরে বলল, ” চারজন এসেছে। এগারোটার পরে আরো দুজনের আসার কথা। তোমার কাকে লাগবে? ”
” একজন তো খুব বয়স্ক তাই নাই? ” টিউলিপ জিজ্ঞেস করলো।
” হ্যাঁ, তবে ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে আজকে সব ফ্লেভারের জেন্টেল ম্যান এসেছে। টগবগে অবিবাহিত যুবক, বিবাহিত যুবক, মধ্য বয়সী আর খুব বয়স্ক। ” কথা বলার সময় ম্যান্ডির এক্সপ্রেশন দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে আনম্যারিড যুবকের সাথে আজকে প্ল্যান করেছে। ওর প্ল্যান কি ভেস্তে দেয়া যায়না? আমি যাকে চুজ করবো তাকে দিতে সে একরকম বাধ্য। আর এখানে যারা আসে তারা ক্ষণিকের শান্তি পাওয়ার জন্যই আসে। হোক সেটা এলকোহল বা শরীর।
” টিউলিপ তুই কি বাকি দুজনের জন্য অপেক্ষা করবি নাকি এখনই?” টিউলিপকে উদ্দেশ্য করে ম্যান্ডি প্রশ্নটা করলো।
” না, আজকে আমার মুড নাই। ”
” তাহলে আমার বাসায় আসার কারণ? এলকোহল তো না তাই না? ”
” বাসায় একা একা ভালো লাগছিল না। ভাবলাম এখান থেকে একটু ঘুরে যাই। ” টিউলিপ মিস্টার টুইস্টের প্যাকেট থেকে এক পিস বের করে মুখে দিল।
” রাকা, তোমার কাকে লাগবে? দেখে তো মনে হচ্ছে তোমার এখনই কাউকে খুব বেশি প্রয়োজন। ”
” আমার তো রাসেলকে প্রয়োজন ছিল। ”
” সে তো আর এখানে নেই। আনম্যারিড ছেলেটা তোমার জন্যই কিন্তু আজকে এখানে এসেছে। অনেক দিন যাবত আমাকে রিকুয়েস্ট করছে। ” ম্যান্ডি একটু ঝুঁকে এসে কথাটা জানাল। বাহ দারুণ তো। যার কথাই ভাবছিলাম সে নিজেই ধরা দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
” কতদিন যাবত? এতো সহজে আমি ধরা দিয়ে দিব?” অন্ততপক্ষে দুই তিন মাস তো ঘুরবে এট লিস্ট।
” তাহলে এতো ডিপ্রেসড কেনো তুমি? রাসেল তোমাকে রিজেক্ট তো একবার করলো না। তারপরও তুমি রাসেল রাসেল করে মরে যাচ্ছ। ”
” রাসেল আমার টেম্পোরারি কোনো সেক্স পার্টনার হলে তো পাত্তাই দিতাম না। আই লাভ হিম টু মাচ। ”
” তাহলে বিয়েটা কেনো করেছিলে? নিষেধ করেছিলাম না? মাহমুদের সাথেও তো তোমার লাভ ম্যারেজ। ”
” বুঝিনি, ভেবেছিলাম ছোট বেলার ফালতু আবেগ ছাড়া কিছু না। মাহমুদের টাকাপয়সা, যোগ্যতা, স্মার্টনেস রাসেলের চেয়ে হাজার গুণে বেশি ছিলো। তাই তাকে বিয়ে করলাম। বড় খালু বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। বাপিকে দিয়ে না করিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু রাসেল বিশ্বাস করেনি যে,আমি বিয়েতে রাজি। ”
” বিয়ের পরে বুঝতে পেরেছ যে রাসেলকেই লাগবে? ” ম্যান্ডি কীভাবে যেন কথাটা বলল।
” হ্যাঁ, তখন ওকে বাগে আনা অনেক কষ্টের হয়ে গেছিল। ”
” তো এখন তাকে ডাকবো? ”
” ছেলেটার নাম কী? ” নাম তো জানা দরকার। বিশেষ মুহূর্তে তার নাম না বললে তো খেলাই জমবে না। রাসেলকে তো আমি নিয়েই ছাড়বো। সেটা যত কষ্টেরই হোক না কেন! টাকা থাকলে বাঘের দাঁতও পাওয়া যায়। সেখানে রাসেলের তো দুই টাকারও দাম নাই। ওর জন্য আমি ওশানকে জারজ বানিয়ে রেখেছি। ওশান যে আসলে কার আমিও শিওর জানিনা৷ ওশানকে কন্সিভ করার আগে আমার মোট চারজনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। চারজনের কোন জন যে আসলে ওশানের স্পার্ম ডোনার তা আমিও জানিনা। অনেকে বলে মায়েরা নাকি সন্তানের পিতাকে চিনে। কই আমি তো চিনি না! বেচারা ওশান নিজের আসল পিতা কে সেটাও কোনোদিন জানবে না।
” সৌমিক, দেখতে খুব সুন্দর। ম্যান যাকে বলে। ”
” তাকে ডাকো এখানে। আর তোমরা এখান থেকে গুড বাই নিয়ে ফেল। ”
” বাসায় যাবেন না? ” টিউলিপ জিজ্ঞেস করল।
” না, আজকে ভালো লাগছেনা। ”
” ভাইয়া যদি জানতে পারে? ” আমি টিউলিপের অকারণে ভয় পাওয়া দেখে হাসতে বাধ্য হলাম।
” কে জানাবে? আর যে জানাবে তার চাকরি নট হবে। মাহমুদকে তো আমি সামলাতেই পারবো। মাহমুদ আমার পাগল। আসলে জানো তো এই পৃথিবী সুন্দরের পূজারী। সবাই চায় সুন্দরকে নিজের বশে রাখতে। ”

টিউলিপ আর কিছু বলল না। ম্যান্ডি ও টিউলিপ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সৌমিক ছেলেটা আসলো। আসলেই সুন্দর আর ম্যানলি একটা মুড আছে তার মধ্যে। আমাকে দেখে সুন্দর করে হেসে দরজা আটকে দিল। আমার সামনে বসে হাসি মুখে বলল, ” একটু বেশি ড্রিংক করা হলো না? ”
” মাঝেমধ্যে একটু বেশিই প্রয়োজন হয়। তোমার বুঝি ড্রিংক করা পছন্দ না? ”
” আসলে ও পছন্দ করে না। তাই এড়িয়ে যাই। ”
” ও টা কে শুনি?” আমার প্রশ্ন শুনে সৌমিক চওড়া হাসি দিল।
” প্রেয়সী ”
” প্রেয়সীকে রেখে আমার কাছে কেনো শুনি?”
” সে বিয়ের আগে আমাকে হাত বাদে কোথাও টাচ করতে দেয়না৷ আমার ফিজিক্যাল নিড সে পূরণ করতে পারবে না। বেশি জোর করলে সে ব্রেকাপ করে। যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ”
” এজন্য তারই আড়ালে অন্যের সাথে? ”
” আমার দুটোই প্রয়োজন। ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham

” এই নাকি ভালোবাসা প্রেয়সীর প্রতি? ” বিদ্রুপের স্বরে বললাম।
” ভালোবাসা একদিকে ফিজিক্যাল নিড একদিকে। ” সৌমিক আমার পাশে এসে বসল। শুধু বসলই না আমার কোমড়ে একটা হাত চালিয়ে দিল৷ এই ছেলে ঠিকই বলেছে।
” বিয়ে করলেই তো হয়। প্রেয়সীও অনুমতি দিয়ে দেয়। ”
” ফ্যামিলি রাজি হচ্ছে না। ও অতোটা সুন্দর না তো। মা বেঁকে বসেছেন। তার কথা হচ্ছে, আমার পাশে ডানাকাটা পরী মানায়। ”
” তাহলে ভালোবাসলে কী দেখে? মেয়ে গায়েও হাত দিতে দেয়না আবার চেহারাও ভালো না। বাপের ব্যাংক ব্যালেন্স কি পাহাড় সমান? ”
” না কিচ্ছু না। সে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাবা ছাড়া এক মেয়ে। কেনো যেন ভালোবেসে ফেললাম। বুঝতেই পারিনি৷ কতবার ছাড়ার চেষ্টা করেছি, পারিনি। এক দিন কথা না হলে আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগে। ”
” তাহলে তোমার আমার কাছে আসা ঠিক হয়নি। ”
” আপনার কাছে না আসলেও আমি অন্য কারো কাছে অবশ্যই যেতাম৷ তবে আপনার জন্য আমার মন উতলা হয়ে আছে৷ আপনি আফ্রোদিতির মতো সুন্দরী। ”
” ফ্লার্ট করা বন্ধ করো। আমি এমনিতেই তোমার সাথে ইনটিমেট হতে রাজি। ”
” আফ্রোদিতিকে এতো ইজিলি পাবো ভাবিনি। ”
” তোমাকে আমি আরো কয়েক মাস চাই। তারপর তোমাকে ছেড়ে দিব। ”
” জ্যাকপট পেয়ে গেলাম মনে হয়। ”
” তো শুরু করা যাক। ”

( মাহমুদ )

” আপনার এতো তাড়াতাড়ি ছুটি নেয়ার প্রয়োজন কেনো হলো? ” শামীম আহসান সিগারেটে শেষ টান দিয়ে প্রশ্নটা করলেন৷
” ওশানের জন্মদিন সামনে। আর আমার ছুটি জমে ছিল। ”
” ফ্যামিলি, ফ্রেন্ডস ছাড়া লাইফটা হেল বুঝছেন। ”
” হ্যাঁ, লাভ ম্যারেজ আমার। ওয়াইফ আর বাচ্চার জন্য মন অস্থির হয়ে থাকে। মা একজন সারাদিন আমার নামে জপ করেন। ” দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসল।
” লাভ ম্যারেজ বলেন আর এরেঞ্জ ম্যারেজ বউতো বউই। ”
” তা ঠিক ”
” ভাবীকে জানিয়েছেন নাকি সারপ্রাইজ দিবেন? ”
” সারপ্রাইজ দিব। একটা মেয়ে বাচ্চার আমার খুব শখ জানেন তো। তাই ভাবলাম এবার একটা বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করবো। ওশান তো বড় হয়েই যাচ্ছে। ”
” আমার আছে দুইটা ডল। বাসায় গেলে কোলই ছাড়ে না। ওদের মধ্যে মারামারি লেগে যায় কে আগে বাবার কোলে উঠবে। ”

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে