আঁধার
২০.
” তোমার মা আর বোনেরা ব্যাপারটা জানে। তোমাকে বলতে আমিই নিষেধ করেছিলাম। মুখে আদর্শের গান সবাই গাইতে জানে কিন্তু কাজের বেলায় হাওয়া। দেখা যাইতো তুমি বিয়ের আসর থেকেই পালাইতা। ” বড় দুলাভাইয়ের কথায় ক্ষোভ প্রকাশ পেল। বিয়ের আসর থেকে এমনিতেই পালাতাম। রাকার জন্য পারিনি।
” না, কখনোই পালাতাম না। ” আমার সমস্যা অন্যদিকে। ভার্জিন তো আমিও ছিলাম না। তবে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ডিফারেন্সটা হচ্ছে, ওর কোনো দোষ ছিলো না। কোনো পাপ হয়নি কিন্তু আমার বেলায় আমারই দোষ আর পাপের বোঝা তো আছেই। জীবনে হয়তোবা কোনোদিন ভুলে ভালো কাজ করেছিলাম। এইজন্যই মিলার মতো মেয়েকে পেয়েছি স্ত্রী হিসেবে। এতো বড় ঘটনা ঘটেছে ওর জীবনে। ও যে এটুকু সুস্থ আছে আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে আমার জীবনের শূন্যতাটা পূরণ কীভাবে হতো?
” ওর রেপ হওয়ার পেছনে দায়ী ওর বড় বোন। ওর বড় বোনের সাথে এক ছেলের সম্পর্ক ছিলো। ছেলে ভালো ছিলোনা। ড্রাগ এডিক্টেড ছিলো তার উপর স্মাগলার। সবকিছু জানার পরে মেশু ব্রেকাপ করে। কিন্তু ছেলে ওর পিছু ছাড়েনা। আমার সাথে ওর বিয়েটা হয় গোপনে। বিয়ের খবর পাওয়ার পরে ওই ছেলে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ওকে তুলে নেয়ার প্ল্যান করে। কিন্তু ওকে তো বিয়ের পরপরই আমি সৌদি আরবে নিয়ে যাই। বাকি থাকে রেশু আর মিলা। রেশু বাসা থেকে খুব একটা বের হতো না। কিন্তু মিলা তো রাত বিরাতে বাসা থেকে বের হয়ে যেত। খোঁজ থাকতো না। তারপর একাই ফেরত আসতো। ওকেই পায় তাই ওকে তুলে নিয়ে যায়। দুইদিনের মাথায় সবার খেয়াল হয়। মিলা দুইদিন ধরে বাসায় আসেনি। তারপর শুরু হয় খোঁজ। আমাদের জানানো হয় কিন্তু আসতে দেরি হবে বলে। আমার এক ফ্রেন্ড ছিলো সি আই ডিতে। ওর সাহায্যে ওকে খুঁজে বের করতে সুবিধা হয়। সাতদিন ওদের কাছে মিলা ছিলো। কিন্তু তিন দিন পালাক্রমে রেপ করার কারণে ওর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। মেরে ফেলার প্ল্যান ছিলো তবে এতো তাড়াতাড়ি না। কয়েক মাস রেখে তারপর ওরা মারতে চেয়েছিল। তাই ওকে ওরা মেডিসিন দিয়ে, খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিল। মিলার বাপ চাচারাও ক্ষমতাশীল মানুষ। তাই দ্রুত খুঁজে পাওয়া গেছিল। ” বড় দুলাভাই থামলেন৷ আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ওর এই দুরবস্থার কথা শুনে।
” ওর তখন বয়স কত ছিল? ”
” এগারো। আল্লাহর রহমত যে, ও প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়নি। তাহলে তো সেই বোঝা আজীবন বয়ে বেড়াতে হতো। এমনিতেই ও এখনো সেই ট্রমা থেকে বের হতে পারেনি। তার উপর যদি একটা বাচ্চা হতো। তাহলে তো আরো বিপদ।ওকে উদ্ধার করার পরে এখানের হাসপাতালে রাখার সাহস পাইনি। জান নিয়ে টানাটানি লেগে গেছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয় মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল। তারপর আমার বাসায় রেখেছিলাম। সাইকোলজিস্ট দেখানোর চেষ্টা করেছিলাম। ও ঢাকা থেকে পালিয়ে এখানে চলে আসে। তারপর শ্বাশুড়ি আর ওকে ঢাকা পাঠাননি। ”
” ও বেঁচে আছে তাই তো অবাক করার মতো। ” আমার বলার মতো কোনো শব্দ আমি পাচ্ছি না।
” নিজেকে এখনো ক্ষমা করতে পারিনি। বারবার মনে হয় আমি ওকে সাথে কেনো নিয়ে যাইনি! আমরা কেউই ভাবিনি এই প্ল্যান করতে পারে। এগারো বছরের একটা মেয়েকে… আল্লাহ। ”
” ওই চারজনকে ধরতে পেরেছিলেন? ”
” হ্যাঁ, কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারিনি আমরা। ওদের হাতও অনেক লম্বা। বুঝোনা সফল স্মাগলার। তবে জেলের ভাত কম দিনের হলেও খাওয়াতে পারছি। ”
” মিলা একটা শব্দ আমাকে বলেনি। ”
মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।
বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি
https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” ও তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে না? রাত বিরাতে বাসা থেকে বের হয়ে যায়না? ”
” না তো। কথা না বলতে চাইলে চুপ থাকে কিন্তু খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি। ”
” শারীরিক সম্পর্কে… ” এই ব্যাপারে আমার কথা বলার ইচ্ছা নাই।
” না, না। সে তো আমার সাথে তেমন ভয়াবহ রকমের অদ্ভুত আচরণ করেনি। ”
” তাহলে ভালো। অনেকটা অবাক হলাম। যাইহোক ভালো থাকলেই ভালো। ”
” এখন উঠা দরকার। মিলার শরীর ভালো না খুব একটা। ”
” হ্যাঁ, ডিনারের সময় তো ও আসেনি। ঘরেই খাবার দিয়ে আসছিল। ”
ও খেয়েছে কিনা কে জানে!
*****
মিলার বেডরুমের দরজা ভেজানো। ভেতরে লাইট জ্বালিয়ে রাখা। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখি মিলা মেঝেতে বসে আছে। আমাকে দেখে বলল, ” আড্ডা কেমন হলো? ”
ও হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু ঠিক হাসি হলো কিনা জানি না। দরজা লক করে দিলাম। ওর পাশে এসে বসলাম।
” ভালো। তুমি এখনো জেগে আছ? ” ঘরের কোথায় খাবারের প্লেট আছে কিনা দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু খুঁজে পেলাম না।
” এমনি ”
” রাতে খাওনি? ঘরে না খাবার পাঠানো হয়েছিল? ”
” না ”
” কেনো? ”
” বড় দুলাভাই সব বলে দিয়েছেন? ” মিলার বলার ভঙ্গিতে কেমন খাপছাড়া ভাব। আমি ওর আরো কাছে বসলাম। ও নিজ থেকেই আমার ঘাড়ে মাথা রাখল।
” হ্যাঁ ”
” আমাকে ঘৃণা হচ্ছে না? ” এতো স্বাভাবিক স্বরে কীভাবে ও এতো সিরিয়াস কথা বলছে? আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।
” না তো, ঘৃণা কেনো লাগবে? ” অদ্ভুত তো। ওকে তো আমার উল্টো আরো বেশি ভালো লাগছে।
” আমার শরীরে এর আগেও আরো চারজন পালাক্রমে ভোগ করেছে। আপনার অন্যের ভোগ করা শরীর এখন থেকে ভালো লাগবে? ”
” মিলা, এগুলা কী বলছো? আমার তো এই চিন্তা মাথায় আসেনি। আমি তো বিয়ের রাতেই বুঝতে পারছি যে, তুমি ভার্জিন না। ইভেন মূল কারণও জানা ছিলো না। তখন তো আমার সমস্যা হয়নি। আর আমি তোমাকে একটা বারও এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলিনি। তাহলে এখন কেনো তুলবো? তুমি নিজের ইচ্ছায় তো ভার্জিনিটি হারাও নাই। তাহলে আমি কেনো এসব ভাববো? ”
” জানিনা ”
” মিলা আমার সাথে কথা বলো। আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। ”
” আমাকে সহানুভূতি দেখাবেন না। আমার পছন্দ না। ”
” আমি সহানুভূতি দেখাচ্ছি না৷ তোমার প্রতি আমি উইক হয়ে পড়েছি। সেটা তো তুমি দুপুরেই বুঝতে পারছো। তাহলে এখন কেনো এইভাবে বলছো? ”
” আমার আপনাকে ভালো লাগে। এজন্যই ভয় হচ্ছে। আমার এই বিশ্রী অতীতটা আপনার কাছ থেকে আড়ালে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বড় দুলাভাই দিলেন না৷ ”
” আড়ালে রাখার কী আছে? এটা তো তোমার দোষ ছিলো না। তোমার কোনোকিছুই তো আমাকে বলো না। আল্লাহর রহমত যে আমি তোমাকে ওইভাবে ট্রিট করিনি। ”
” এখন থেকে যতবারই আমার কাছে আসবেন। ততবারই আপনার মনে পড়বে রেপ হওয়ার ঘটনা। ”
” মনে পড়বে না৷ তুমি বেশি ভাবতেছ। ”
” আমার না কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা৷ কিন্তু আপনার সাথে লাগে৷ আমার কখনো এমন মনে হয়নি। কখনো মনে হয়নি কারো সাথে কথা বলার জন্য এতো বেশি আগ্রহ আসবে। আমার কোনো পুরুষের স্পর্শ কখনো ভালো লাগবে, ভাবিনি। এমনকি আজকে বাদে আপনার কোনো স্পর্শ আমার ভালো লাগেনি। ”
” তুমি তো আমাকে বলোনি৷ বললে আমি বুঝতাম। ”
” আপনি বুঝতেন এটাই তো জানতাম না। বড় আপাকে আমি কখনো মাফ করবো না । পণ করেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, পণ ভাঙতে হবে। ”
” কারণটা কি আমি? ” ওর কপালে চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
” হ্যাঁ ”
ওর ডান হাত আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম, ” এখন বলো রাতে খাওনি কেনো? ”
” খেয়েছি তো। ”
” তাহলে ওইসময় উত্তর কেনো দিলা না? ”
” আমি আসলে চিন্তায় ছিলাম। তাই উত্তর দেইনি। ”
” কী চিন্তা আমার মিসেসের এতো শুনি? ”
” আপনাকে হারায় ফেলার চিন্তা। কখনো এমন হয়নি, জানেন? ”
” আমারও কখনো এমন হয়নি। আমার শূন্যতা পূরণ করেছ তুমি। ”
” আপনি এখন ঘুমাবেন? ”
” হ্যাঁ, না ঘুমাইলে সকালে তোমার বড় দুলাভাইয়ের ১৮+ ঠাট্টার স্বীকার হতে হবে। ”
” আপনি ঘুমাইলেও বলবে। যার ঠাট্টা করার স্বভাব সে করবেই। ”
” তুমি তো ভালোই কথা জানো। এতদিন তো মুখে তালা লাগিয়ে বসে ছিলে। ”
” বড় দুলাভাই ফরিদপুরে আমার জন্য একটা ফ্ল্যাট রেখেছেন। সামনে মাসেই আমরা সেখানে উঠবো। ”
” না দরকার নেই। কারো দেয়া জিনিস এভাবে নেয়া ঠিক না। ”
” নেয়া উচিৎ। ”
” কিন্তু কেনো? ”
” আমার বিয়ের গিফট আমি ক্যান ফিরিয়ে দিব?”
” তাই বলে এতো দামী জিনিস? ”
” হ্যাঁ, এরচেয়ে দামী জিনিস তার বউয়ের জন্য আমাকে খোয়াতে হয়েছিল। আমার শান্তি আমি তার ভুলের জন্য হারিয়েছি। আমি এখনো ওই ট্রমায় আছি। পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারিনি। ”
” আল্লাহর রহমতে দ্রুত পারবে। আমি তোমার পাশে আছি। ”
চলবে…
~ Maria Kabir