আঁধার পর্ব-১৮

0
1533

আঁধার

১৮.

” গোসল করেছেন? জার্নি করে এসে গোসল না করে আছেন কীভাবে? ” রাসেল বিছানা থেকে উঠে আমার পড়ার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন।

” গোসল করে রওয়ানা দিয়েছিলাম। ” আমার ইন্টারের বাংলা বই হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করা অবস্থায় উত্তর দিল।

আমি বিছানা থেকে নেমে গায়ের জামা কাপড় ঠিক করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।

” ঢাকায় কী কাজে গেছিলেন? আর উঠেছিলেনও বা কোথায়? ”
প্রশ্ন করার সাথে সাথে উত্তর পেলাম না। বইয়ে মগ্ন হয়ে আছে বোধহয়। উত্তরের আশা বাদ দিয়ে চুল ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এমনিতেই জট পাকানো চুল তার উপর রাসেল আঙুল চালিয়ে দিয়ে আরো জট পাকিয়ে দিয়েছে। বেশ কসরত করতে হচ্ছে জট ছাড়াতে।
” আমার ফ্রেন্ডের সাথে মিলে একটা ব্যবসা করতাম অনার্স পড়া অবস্থায়। জব পাওয়ার পরে আমি আমার অংশটুকু ওর কাছে বিক্রি করে দেই। সেই অংশটুকুর কাগজপত্র নিয়ে নাকি কী ঝামেলা হইছে ওর। তাই আমার যাওয়া। ” রাসেল এখনো বই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হয় কোনো একটা গল্প বা কবিতা পড়ছে।

” আপনার ফ্রেন্ড ওখানেই পারমানেন্টলি থাকে?”

” হ্যাঁ, ওর বাসা মিরপুরে। ” রাসেল আমার দিকে এগিয়ে এলো।

” আমার তিন নাম্বার এক্সের বাসাও মিরপুরে। কিন্তু মিরপুর – ১ না ২ সেটা খেয়াল নেই। ” কেনো এই কথাটা বললাম জানিনা। অনেক দিন পরে কাউকে পেলাম। যার সাথে খোলামেলাভাবে কথা বলা যায়।

” আগে বলবা না তার সাথে দেখা করে আসতাম। আর শুনে আসতাম, তুমি তাকে কতবার ভালোবাসি বলছ। ” কথা বলার টোন মনে হলো চেঞ্জ হয়েছে। কিন্তু কারণটা কী? এই লোকের কি মুড সুইং টুইং আছে টাছে নাকি?

” এই প্রশ্ন করে লাভ হতো না। এসব কি তার মনে টনে আছে নাকি! ভালোবাসি শব্দটা এখন অনেক সস্তা হয়ে গেছে। যারে তারে যখন তখন বলা যায়। আবার যখন তখন সেই মানুষকে লাথিও দেয়া যায়। ”

রাসেল আমার হাত থেকে চিরুনী ফেলে দিয়ে আমাকে কাছে টেনে নিল। তারপর চুলের মধ্যে দিয়ে হাত চালিয়ে দিয়ে বলল, ” তুমিও কি তাই করবে আমার সাথে? ”

” আপনার সাথে এমন কেনো করবো? আপনাকে তো এখনো ভালোবাসি বলিওনি। তাই চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন৷ ”

” কখনো কি বলবে না? না-কি আজীবন ভালোবাসা ছাড়াই আমার সাথেই কাটিয়ে দিবে? ”

” জানিনা ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” তুমি জানোটা কী? ”

” আপনি রেগে যাচ্ছেন – এটুকু জানি৷ কিন্তু জানিনা কেনো রেগে যাচ্ছেন। ”

” তুমি এখনো তোমার এক্সদের কথা ভাবো। তাই না? ”

” এরা একসময় আমার পরিচিত ছিল। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কথা মনে পড়বেই। ”

” ঠিক কীরকম মনে পড়ে, মিলা? কীভাবে তোমাকে তারা স্পর্শ করতে চেয়েছে, কীভাবে তোমাকে কবিতা শুনিয়েছে, কীভাবে তোমার মন ভালো করেছে… এগুলো? ”

” স্পর্শের কথা কখনো মাথায় আসেনা। বাকিগুলো মনে আসে। ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” মিলা, না আমি কবিতা শুনাতে পারবো। না আমি মন ভালো করতে পারবো। কিন্তু আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিবো না। আর কখনো গায়ে হাত দিবো না। ”
আমার আর এক্সদের কথা তোলা যাবেনা।

” হঠাৎ এই ধরনের কথা কেনো বলছেন? আমি তো কোনো নালিশ করিনি। ”

” আমার মনে হলো। আমার যখনই মনে হচ্ছে তোমার সাথে অন্য কারো সম্পর্ক ছিলো। তখনই কেমন অসহ্যকর লাগছে। মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙে ফেলি। তুমি আমাকে বলো, কী করলে তাদের কথা তোমার মাথায় আসবেনা। ”

ভয়াবহ অবস্থা! এই লোক ভয়ংকর রকমের পজেসিভ! আমাকে নিষেধ করতেও হবেনা। আমি নিজ থেকেই করবো না।

” আপনাকে কিছুই করতে হবেনা। শুধুমাত্র আজক যেমন আছেন, ঠিক তেমন থাকলেই হবে। ”

” এটুকুই? ”

” হ্যাঁ, এটুকুই অনেক কিছু আমার কাছে। আমাকে কেউ এরচেয়ে ভালোভাবে ট্রিট করেনি। ”

” তুমি কেনো অসুস্থ বলো তো? ”

” কেনো? আবার কী হলো? ” এই লোকের মতিগতি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

” এইযে তোমার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে পারছি না। ”
মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি আল্লাহ জানেন। বিয়ের পর এই পর্যন্ত গতকাল আর গত পরশুদিন বাদে সে আমাকে এক রাতের জন্যও শান্তি দেয়নি।

” আমি রাতেই সুস্থ হয়ে যাবো। নাহলে আমি হাই পাওয়ার মেডিসিন খাবো৷ আপনি এখন খেতে চলুন৷ আমার মনে হয় আপনার খুব খিদে পেয়েছে। ”

” সকাল থেকে কিচ্ছু খাইনি। ” এই হলো ব্যাপার! অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখলাম। বড় দুলাভাই শেষ মেষ আমার জন্য পাগলই খুঁজে নিয়ে এসেছেন। তবে মন্দ না। মানুষ আমাকেও পাগল বলে।

” তাহলে এখন কথা না বাড়িয়ে খাবেন চলুন। মা পরে আমাকে রাগারাগি করবেন। এমনিতেই বাসায় আমাকে খুব একটা পছন্দ করে না কেউই। ”

” এটা তোমার ভুল, মিলা। তুমি…”

” রাতে আমার ভুল ভাঙাবেন৷ ঠিক আছে? কিন্তু এখন না। ”

রাসেল বাধ্য হয়ে আমার সাথে খাবার রুমে যেতে বাধ্য হলেন। যেহেতু আমাদের যৌথ পরিবার সেহেতু খাবার রুমের খাবার টেবিল বিশাল। একসাথে বিশজন বসতে পারে। আমাদের রুম থেকে বের হতে দেখে ছোট চাচী বললেন, ” যাক, তোমরা শেষ অব্দি বাইর হইয়া আসলা। আমি তো ভাবছিলাম আগামী দুইদিনে দরজাই খুলবা না৷ ”

এই কথা শোনার সাথে সাথে লজ্জায় মনে হচ্ছিলো মাটির সাথে মিশে যাই। রাসেল মাথা নিচু করে ফেললেন। তারপর বললেন, ” মিলা ঘুমায় ছিলো। তাই দেরি হলো। ”

চাচী হাসতে হাসতে বললেন, ” এইসময় আমরাও পার করে আইছি। তাই ওসব বুঝি। ”

বড় চাচী রান্নাঘর থেকে পেয়াজের ডালা নিয়ে এসে উঠানে বসলেন। এতো পেয়াজ কাটার কারণটা কী? মাও এইসময় রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসলেন। আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ” খাবার ঘরের টেবিলে সব সাজানো আছে। মুরগির মাংসটা কেবলই চুলা থেইকা নামাইছি। তাই গরমই আছে। তোমরা খাইয়া আসো। খাবার ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার গরম করা লাগবেনে । পরে আমরা গল্পগুজব করবানি৷ ”

খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন হাত ধোয়ার জন্য উঠতে যাবো তখনই মনে হলো মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। শরীর অনেক উইক। রাসেলকে ব্যাপারটা বুঝতে দেয়া যাবে না।

( রাসেল )

খেতে বসার সাথে সাথে মোবাইলের ভাইব্রেশন শুরু হয়ে গেল৷ মিলার সামনে ফোন বের করাও যাবেনা। কে ফোন করেছে? কী কারণে? ফোন রিসিভ কেনো করছি না? এমন অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এমনিতেই ঢাকা যাওয়া নিয়ে বেশ কয়েকটা মিথ্যা বলা হয়ে গেছে। এতো বেশি মিথ্যা বলাও যায়না। মিলার খাওয়া আমার আগেই হয়ে গেল। চেয়ার ছেড়ে উঠার সময় মনে হলো ও হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো ।

” কিছু হয়েছে? ”

” না, আপনার তো খাওয়া হয়নি। আমি উঠে গেলে আপনার সমস্যা হবে? ”

” না, তোমার শরীর খারাপ লাগলে যেতে পারো। ” ও গেলে ফোন করে বা ম্যাসেজ করে কিছু একটা বুঝ দেয়া যাবে রাকাকে।

” না, শরীর ভালো। মেডিসিন খেতে হবে তো। তাই বললাম। ”

” ঠিকাছে তুমি যাও। আমি খেয়েই আসছি। ”

মিলা চলে যাওয়ার পরে মোবাইল পকেট থেকে বের করলাম। রাকার নাম্বার থেকে এতক্ষণ যাবত ফোন আসছে। এই মেয়েটাও না অবুঝের মতো ব্যবহার করে। জানে যে আমি শ্বশুড়বাড়িতে। তারপরও তার হাজারবার ফোন দিতে হবে। আমি কল ব্যাক করলাম। দুইবার রিং বাজার সাথে সাথে ফোন রিসিভ হলো৷

” হ্যালো ” কণ্ঠস্বর নামিয়ে বললাম।

” তুমি এমন কেনো করতেছ? ” রাকা ফোনের ওপাশ থেকে গলা ছেড়ে চিল্লাচ্ছে মনে হলো৷

” আমি শ্বশুড়বাড়িতে। তুমি বুঝতে চাচ্ছ না কেনো? ”

” তাই বলে আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলা না যে, ঠিকঠাক মতো পৌঁছাতে পেরেছ কিনা? ”

” তোমাকে কীভাবে বুঝাবো আমি? আমি অনেক ঝামেলায় আছি। আমি ফ্রী হয়ে তোমার সাথে কথা বলবো। এখন রাখি। কেউ একজন আসছে। ” কারো পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

” না, তুমি ফোন রাখবা না৷ আমার সাথে এখন তোমাকে কথা বলতেই হবে। ”

” রাখলাম। ” মোবাইল পকেটে রাখার সাথে সাথে শ্বশুড় আব্বা খাবার রুমে ঢুকলেন।

আমার পাশের চেয়ারে বসে বললেন, ” তো, শ্বাশুড়ির রান্না কেমন? ”

” আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভালো। ”

” হ্যাঁ, আমার আম্মাও তার রান্না পছন্দ করতেন৷ ”

” মিলাও প্রশংসা করে। ” পুরাই ডাহা মিথ্যা। মিলার মুখে তার মায়ের কথা খুব কমই শুনেছি।

” বলো কী? মিলা? ” মনে হলো শ্বশুড় মশাই অবাক হলেন।

” সে যাইহোক। তোমাকে যেটা বলার জন্য খাওয়ার সময় বিরক্ত করতে এসেছি। সেটা হচ্ছে, আমার আরো দুই জামাই এই বাড়ি আসার পথে। তোমার আসার কথা শুনে ওরা আসছে। তোমাদের আসার সুযোগ আবার কবে হবে কে জানে। তাই ওরা এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্যই আসতেছে। ”

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে