আঁধার পর্ব-১২

0
2009

আঁধার

১২.

” রান্না ভালো হয়নি? ” প্রশ্নটা না করে পারলাম না।

” হ্যাঁ, ভালো হয়েছে। আমি নিজেও এতো ভালো রান্না করতে পারিনা। বিয়ের আগে হায়েস্ট চা বানিয়ে খেতাম। ” খিচুড়ির এক লোকমা মুখে পুরে নিলো ঠিকই কিন্তু চাবানোর ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে খাওয়ার ইচ্ছা নাই।

” তাহলে খাচ্ছো না কেনো? ”

” মুখ তিতা হয়ে আছে। গতকালের জ্বরের কারণেই। ”

” জ্বর এখনো যায়নি? ভোররাতে তো মনে হলো জ্বর ছুটে গেছে। ”

” জ্বর নাই কিন্তু ছাপ রেখে গেছে। জার্নি করলে বাড়বে। আমি এখানে একা থাকতে পারবো। আপনি নিশ্চিন্তে ঢাকা যেতে পারেন। ”

” না, এখানে রাখা যাবেনা। তুমি কষ্ট হলেও খাবারটা খাও। পেট ভরে খেয়ে নাপা খেলে শরীর ভালো লাগবে। ”

” ঠিকাছে। ”

মিলাকে ভাঙ্গার বাসে উঠিয়ে দিয়ে আমি ঢাকার বাসে উঠলাম। সে তো আর ছয় সাত বছরের বাচ্চা না যে আমাকে কোলে করে দিয়ে আসতে হবে। সারদায় পড়ার সময় তো একা একাই যাওয়া আসা করেছে। এখন আমি তার স্বামী বলে কি কোলে করে দিয়ে আসবো নাকি! বাসে উঠায় দেয়ার সময় সে মুখ ভার করে রেখেছিল।
হাতে দুই হাজার টাকা দেয়ার সময় বলল, ” এতো টাকা লাগবেনা৷ আপনি শুধু বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য দুশো টাকা দেন। ”

” তোমার হাত খরচ লাগবেনা? ”

” না, আমার হাত খরচ লাগেনা। ”

দুই হাজার টাকা ফেরত নিয়ে একশো টাকার দুটো নোট হাতে ধরিয়ে দিলাম। সে টাকাটা হাতের মুঠোয় নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। আমি আর কথা না বাড়িয়ে আমার উদ্দেশ্যে চলে এলাম। এই মেয়ের কিছুক্ষণ পরপর ভাব বাড়ে। এর ভাবের দাম দেয়ার সময় আমার নেই। এরমধ্যেই কয়েকবার ফোন এসে গেছে। রিসিভ করতে পারিনি মিলার জন্য। দেখা যাবে এই মেয়ে সন্দেহ করে বসেছে। যতদিন সাথে আছি ততদিন বুঝতে দেয়া যাবেনা। স্বামীকে মেয়েরা ভালো না বাসলেও তার অন্য নারীর প্রতি আকর্ষণ, ভালোবাসাটা পছন্দ করে না। তারা চায় স্বামীর উপর একা তার অধিকার থাকবে। বাসে উঠে কল ব্যাক করলাম। আমার আসার উপলক্ষে সে নিজ হাতে আমার পছন্দের পোলাও, রোস্ট, খাসির রেজালা রান্না করছে৷ এমনিতে সে রান্নাঘরে পা ফালায় না। শুনেই মন ভালো হয়ে গেল। এতক্ষণ অসহ্যকর যন্ত্রণা হচ্ছিল বুকের কোনো এক পাশে। এখন সেই যন্ত্রণাও হাওয়া হয়ে গেছে। এসি বাসের সিটে আরামে ঘুমিয়ে পড়লাম৷ রাতের ঘুম না হওয়াও একটা কারণ। ঘুম ভাঙলো কন্ডাক্টরের ডাকে।
” ভাই গাবতলী চলে আসছি। ”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

” ওহ, আসলে ঘুমায় পড়ছিলাম । ”

আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম সবাই নেমে পড়ছে। বাস থেকে নেমে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে পড়লাম। উবারের জন্য ফোন করতে হবে। মোবাইল বের করে হাতে নেয়ার সময় মনে হলো মিলাকে একবার ফোন করি। একা একা পৌঁছাতে সমস্যা হয়েছে কিনা জানা দরকার। তার উপর দেখে মনে হচ্ছিল জ্বর বেড়েছে। কিন্তু আমি তুলিনি জ্বরের কথাটা। উবারে ফোন দেয়ার আগে কাঙ্ক্ষিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল, ” বাসস্ট্যান্ডে? ”

” হ্যাঁ, এখন উবারের জন্য ফোন করতে যাচ্ছিলাম। ”

” তুমি ওখানে অপেক্ষা করো। আমি উবারে ফোন দিয়ে গাবতলী আসতে বলছি। ”

” তুমি কীভাবে জানলা আমি এখন এসে পৌঁছাবো। ”

” তুমি বাসে উঠার পরে টাইম হিসাব করেই কাজটা করেছি। ফরিদপুর থেকে ঢাকা আসতে মিনিমাম তিন ঘণ্টা লাগে। যে বাসে আসছো সেটায় তো দেরি হবার কথা না। ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” জ্যামও তো থাকতে পারতো। ” এই মেয়েটা আমার এতো খেয়াল রাখে!

” আমি গোল্ডেন লাইনে ফোন করেছিলাম। তারা বলল আজকে কোনো জ্যাম নেই ঘাটে। ”

” আমাকেও তো ফোন করতে পারতে। ”

” তোমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছি। তুমি রিসিভ করোনি। তাই ভাবলাম হয়তোবা তুমি বাসে ঘুমিয়ে পড়েছ। তোমার তো জার্নিতে ঘুমানোর অভ্যাস আছে। ”

” সরি ”

” হয়েছে আর ফর্মালিটি করতে হবেনা। ”

” এখন জ্যামে না পড়লে হয়। ”

” হ্যাঁ, খুব ক্লান্ত লাগছে তাই না? ”

” হ্যাঁ, খুব বেশি। কখন যে তোমার কাছে যাবো! ”

” ধৈর্য্য ধরো রাসেল। ”

” হ্যাঁ, তাছাড়া আর কী-বা করার! ”

( মিলা )

ভাঙ্গায় এসে বাস থামলো। এতো করে বললাম রাসেলকে। উনি কথা শুনলেন না। আবার সেই জেলখানায় আটক থাকতে হবে। শরীরও খুব একটা ভালো লাগতেছে না। বাসের ধোয়ায়, গাড়ির হর্ণের শব্দে গা গোলাচ্ছে। শাড়ীর আঁচল দিয়ে নাক ঢেকেও কাজ হচ্ছেনা। বাস থেকে নামার পরে মনে হচ্ছিল এখনই পরে যাবো। এখান থেকে দশ কিলোমিটার পথ পার করে পুলিয়া বাজার। পুলিয়া থেকে আবার চন্দ্র বাজার। এই শরীরে চরম ভ্যাজাল মনে হচ্ছে। কোনোমতে পুলিয়া বাজার পৌঁছে গেলেই হবে।
পেছন থেকে বড় চাচার কণ্ঠ শোনা গেল।

” কীরে মিলু! ”

আমি পেছন ফিরলাম৷ সালাম দিয়ে বললাম, ” এইতো চাচা বাসায় আসলাম বেড়াতে। ”

আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজলেন মনে হয়। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ” জামাই আসে নাই? ”
রাসেলকে খুঁজছিলেন এর অর্থ।
” না, ওর ঢাকায় জরুরী কাজ আছে। তাই ও আসেনি। ”

” তাই বলে নতুন বউকে একা একা পাঠিয়ে দিবে? তাও আমাদের বাড়ির মেয়েকে! ”

” না না, সে আমাকে দিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই রাজি হইনি। তার আবার দেরি হয়ে যাবে। ঢাকার পথে যদি আবার জ্যামে পড়ে। তাই আমি জোর করে একা এসেছি। ” এতো সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারবো ভাবিনি। মাথা কেমন ভো ভো করে ঘুরছে এখন। রাসেল একবারও বলেনি আমাকে দিয়ে যাওয়ার কথা।

” কীরে মিলু তোর শরীর খারাপ নাকি? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? ” চাচা আমার দিকে এগিয়ে এসে হাত শক্ত করে ধরে বললেন।

” গা গোলাচ্ছে আর মাথা ঘুরতেছে চাচা। ”

” হায় আল্লাহ। আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। আমার আজকে এই বাজারে আসার কথা না। কিন্তু ঘরেও মন টিকতেছিল না। তাই এখানে এসে একাই ঘুরঘুর করতেছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমত। তা নাহলে এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাসায় যাইতি কীভাবে? ”

চাচা রিক্সা আনলেন ডেকে। তারপর রিক্সায় উঠার পরে আর কিছু মনে নাই। চাচার ঘাড়ে মাথা দিয়ে আধোঘুম জাগরণে বাসায় পৌঁছালাম। আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাবা চাচারা তিন ভাই আর দুই বোন। বাসার সামনে এসে নামার সময় উপর হয়ে পড়ে গেলাম। এতো বড় মেয়ে যদি এভাবে হুড়মুড় করে পড়ে তখন বড্ড বেমানান লাগে। কিন্তু আমার এদিকে হুশ নাই। আমার শরীর ঠান্ডায় কাঁপতেছে। মনে হয় জ্বর আসবে।
বড় চাচী আর মা এসে আমাকে বাড়ির মধ্যে নিয়ে গেলেন৷ মা আমাকে আমার রুমে নিয়ে শাড়ী পালটে দিলেন। ওয়ারড্রবে আমার আগের জামাকাপড় থেকে একটা থ্রিপিস এনে পড়িয়ে দিলেন৷ আমি কোনোরকমে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম৷ রিক্সা থেকে নামার সময় পড়ে যাওয়াতে শরীরে ধুলাবালি লেগেছিল। তাই হাত মুখ ধোয়া। তা নাহলে পানির কাছে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
ঘোরের মধ্যে ডুবে গেলাম। আশেপাশে অনেক হৈচৈ চলছে। মা, চাচী, চাচা, বাবা সবার কণ্ঠ কানে আসতেছে। বাসার বাচ্চাদেরও কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছি। আমার প্রচণ্ড শীত লাগতেছে। গত রাতের মতো। কাঁথায় কাজ হচ্ছেনা।
আমার কম্বল লাগবে। অস্ফুটস্বরে মা’কে উদ্দেশ্য করে বললাম, ” মা, আমার কম্বলটা আনো। খুব ঠান্ডা লাগতেছে মা। ”

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে