আঁধার পর্ব- ১১

0
1869

আঁধার

১১.

” তুমি ঠিক এভাবে নিয়ম করে হাসলে আমি তোমার প্রেমে পড়তে বাধ্য হবো। ” মুখ ফসকে কথাটা টুক করে বের হয়ে গেল। সাথে সাথে মিলা চোখ নামিয়ে আবার হাসলো। এই হাসি ঠিক অন্যরকম। লাজুক ভঙ্গিতে হাসি যেটাকে বলে।
” তোমার হাসি খুব সুন্দর। তোমার থেকেও সুন্দর। তুমি এইজন্যই কম হাসো। তুমি চাওনা কেউ তোমার সৌন্দর্য দেখুক আর মুগ্ধ হোক। তাই না মিলা? ” মিলা আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল আর চোখ নামিয়ে হাসছিল। আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য মিলা ঠোঁট ফাঁক করলো। আমার ভেতরে কিছু একটা বয়ে গেল। মাতাল হাওয়া বয়ে গেল না তো? কোনোকিছু না ভেবেই মিলার ঠোঁট দখল করলাম। মিলা ছাড়ানোর চেষ্টাও করলো না। সাবলেট বাসায় এভাবে খোলামেলা রোমান্স করাটা চরম বোকামি। কিন্তু আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। কেউ দেখে ফেললেও ঝামেলার কিছু হবেনা৷ কারণ আমরা স্বামী – স্ত্রী। প্রেমিক – প্রেমিকা নই যে বদনাম হয়ে যাবে।
ট্রাউজারের পকেটে মোবাইল ভাইব্রেশনের কারণে কাঁপছে। মিলাকে ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে নাম্বার দেখে সতর্ক হলাম। মিলা এখনো হাঁপাচ্ছে!
কপালে চুমু দিয়ে বললাম, ” যাও ব্যাগ গুছিয়ে রাখো। আমি রান্না করেই আসতেছি। ”
মোবাইল হাতের মুঠোয় এমনভাবে ধরে রাখলাম যেন নাম্বারটা ওর চোখে না পড়ে।

” কেউ ফোন করেছিল? ”

” হ্যাঁ, স্কুল থেকে। রায়ান ভাইকে বলা হয়নি যে, আমি ছুটি নিয়েছি। ”

” রায়ান ভাই কি আপনার কলিগ? ”

” হ্যাঁ ” মিলার চোখে মুখে মুগ্ধতা। চোখের চাহনিতে মাদকতা। বিয়ের পরে এই প্রথম ওর চোখে মুখে মুগ্ধতা, মাদকতা দেখলাম। কিন্তু এই মাদকতা ছড়িয়ে দেয়ার আগেই…

” ওহ ” মিলা নিঃশব্দে রুমে চলে গেল। আমি ওর চলে যাওয়া দেখলাম। এই মেয়ের প্রতি তো আমার মায়া আসার কথা না। আমি একজনকে আজীবন ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা করেছি। তার আর আমার মাঝে অন্য কারো আসার ক্ষমতা নাই। এই সাহস আমার নিজেরও নেই।
চুলায় খিচুড়ি চড়িয়ে দিয়ে কল ব্যাক করলাম। ওপাশ থেকে ন্যাকা কণ্ঠে বলল, ” মনে হয় বউয়ের সাথে ব্যস্ত ছিলে? ”

” না, রান্নাবান্না করছিলাম। ”

” নবাবজাদী কি হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে বসে থাকে নাকি? ”

” না, ও অসুস্থ তাই আমিই করতে দেইনি। ”
” আজকাল বউয়ের জন্য দরদ উথলায় পড়তেছে মনে হচ্ছে! ”

” না। অসুস্থ অবস্থায় কী না কী রান্না করবে আর সেই অখাদ্য সকাল সকাল গিলে মেজাজ খারাপ করতে চাই না। ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” একটা রান্নার লোক রেখে দিও। ওই পাগল ছাগলের হাতের রান্না খাওয়ার প্রয়োজনও নেই। ”

” আমার বেতন এতো না। ”

” আমি দিব। তুমি ঢাকা থেকে ফিরে এসে লোক রাখবা। আমি চাইনা ওই মেয়ের হাতের কিছু খাও। ”

” আমিও চাইনা। কিন্তু লোক রাখলে সবার চোখে পড়বে। আমি এমনিতেই সাবলেটে থাকি। আমি নিজেই রান্না করে খাবো। ”

” তোমাকে তো বললামই আমার দেয়া ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকো। তোমার জন্যই তো ওই ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। শুধু শুধু খালি পড়ে আছে। ”

” ফ্ল্যাটটা কেনা হয়েছিল তোমার আর আমার সংসারের জন্য। অন্য কারো সাথে সংসার করার জন্য না। আর ওইরকম পাগল নিয়ে তো নাইই। ” ফিসফিস করে কথা বলতে হচ্ছে। কেউ শুনে ফেললে বিপদ। এইসময় কথা না বলেও উপায় নেই। আমার সকাল শুরু হয় তার সাথে কথা বলে। এই মানুষটাকে এতো বেশি ভালোবেসেছি যে, এখনো বাধ্য হয়ে তার সাথে যোগাযোগ রেখেছি। হাজারটা স্মৃতি তার সাথে আমার জড়িয়ে আছে। এইযে একটু আগে মিলার সাথে রান্নাঘরে রোমান্সে ব্যস্ত ছিলাম। ঠিক এই স্বপ্নটা তাকে নিয়েই বোনা হয়েছিল। কিন্তু জীবন এই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি।

” আমি তো ফরিদপুরে এসে তোমার সাথে থাকতে পারিনা। পারলে অবশ্যই ওই ফ্ল্যাটে একটা দিন হলেও থাকতাম। ”

” একটু চেষ্টা করে দেখোতো। আমার এই স্বপ্নটা তো অন্ততপক্ষে পূরণ করতে পারো। ”

” তোমার সবকিছু আমি পূরণ করি। করিনা বলো? ”

” হ্যাঁ, করো কিন্তু এটাও তো আমার স্বপ্ন। ”

” তোমার এটুকু বুঝতে হবে, রাসেল। আমি আমার গণ্ডি থেকে বের হতে পারবো না। ”

” তাহলে আমাকে বিয়ে করতে কেনো বললে? আমি তো বিয়ে বাড়ি থেকে পালানোর ব্যবস্থাও করে ফেলেছিলাম। ”

” বিয়ে না করলে সন্দেহের চোখে পড়তে হতো আমাদের। ”

” আমি পারতেছি না। আমাকে এতো কষ্ট তুমি দিতে পারো না। ”

” বাস কটায়? ”

” এগারোটায়। ”

” তাহলে তো দেরি আছে। ”

” ওকে ভাঙ্গা দিয়ে তারপর ঢাকার বাসে উঠতে হবে। ”

” বেবিসিটিং করা তোমার কেনো লাগবে? ওকে বাসে উঠায় দিলেই হবে। বিয়ে হইছে যে মেয়ের সে একা একা বাড়ি যেতে কেনো পারবেনা? ”

” ও অসুস্থ অনেক। ”

” একবার তো বলছো আমি শুনেছিও। এতবার বলার কিছু তো হয়নাই। ”

” কথা প্রসঙ্গে চলে আসছে তাই। ”

” এখন রাখি। ”

” ওকে, তাহলে দেখা হচ্ছে? ”

” হুম ”

ফোন কেটে দিল ওপাশ থেকে। ঘড়িতে আটটা বাজে কাটায় কাটায়।
রান্না শেষ করে মিলাকে দিয়ে খাবার ঘরে নেয়ালাম। এতো বেশি কেয়ার করা উচিৎ না। একসময় ঘাড়ে উঠে লাফাবে। মিলা ওর প্লেটে খিচুড়ি ঠিকই নিল কিন্তু খেতে পারতেছে না। দুই এক লোকমা নিয়ে তারপর প্লেটে খিচুড়ি নাড়াচাড়া করতে লাগল। আমার এসব দেখার সময় নেই৷ দ্রুত নিজের খাওয়া শেষ করলাম। মিলা আমার খাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকুক যা ইচ্ছা হয় করুক। আমার এসব দেখার সময় নেই।

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে