আঁধার পর্ব-১০

0
1876

আঁধার

১০.

রাতে এক ফোটাও ঘুম হয়নি। গরমে, ঘামে একাকার অবস্থা আমার। কিন্তু মিলা নাক ডেকে ঘুমিয়েছে। শেষ রাতে ঘাম দিয়ে ওর জ্বর ছুটে গেল। তখন ভাবলাম ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু ঘুমাই। সারাদিন ব্যস্ততায় কাটবে। ঘুম না হলে তো সমস্যা। কিন্তু না, ও আমাকে ছাড়লোই না৷ বাধ্য হয়ে না ঘুমিয়ে পুরো রাত কাটাতে হলো। সকালে একাই মিলা আমাকে ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। তারপর চেষ্টা করলাম ঘুমাতে। লাভ হলো না। বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রান্নাঘরে গিয়ে চা বানিয়ে বারান্দায় এসে বসলাম। ডাইনিং টেবিল যেহেতু আমার না। সেহেতু সেখানে বসাটা ঠিক না। শাহেদ ভাই মুখে কিছু না বললেও। মনে মনে ঠিকই বিরক্ত হন। আর আমিনা ভাবীও সূক্ষ্মভাবে খোঁচা দেন। এই ধরনের মেন্টালিটির মানুষের সাথে থাকা যায়না। সেখানে প্রতিদিন তার মুখ দেখা, হেসে হেসে কথা বলা। মুখ গোমড়া করে কথা বলা, কথা না বলাও সম্ভব না। এদিকে অনন্যাকেও মিলা পছন্দ করে না। আমিনা ভাবী বুঝতে পারলে সমস্যা। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হবো তখনই আমিনা ভাবী দরজা ঠেলে তার বেডরুম থেকে বের হয়ে আসলেন।
আমাকে দেখে মুখে হাসি এনে বললেন, ” ভাবী এখনো ঘুম থেকে উঠেন নাই? ”

” না, রাতে জ্বর আসছিল তো। ” উনি জানেন যে জ্বরে মিলার অবস্থা ভালো। তারপরও সকালে না উঠা নিয়ে প্রশ্ন করা লাগবেই তার।

” ভাবীর ভাগ্য কতো ভালো! আপনার ভাই হইলে এতক্ষণ আমাকে বিছানা থেকে নামিয়েই ছাড়তেন। ”

” আমার নিজের কাজ করার অভ্যাস আছে। তাই কাউকে খুব একটা প্রয়োজন হয়না। ” চায়ের কাপে চুমুক দিলাম কথাটা বলে।

” আপনার ভাই বলেন, ঘরের কাজ মেয়েরা করবে। রান্নাঘর মেয়েদের জন্য। পুরুষদের কাজ হইলো ঘরের বাইরে। পুরুষ মানুষ রান্নাঘরে মেয়েদের মতো শাড়ী পরে খুন্তি নাড়লে। মেয়েরা কি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে নাকি? ”

” কিন্তু আমাদের নবী ( স ) তো বলেন অন্যকিছু। ভাই কি মুসলিম না? ”

” কীসব কথা বলেন আপনি? ভাই মুসলিম না হলে কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন? ” আমিনা ভাবী গলা চড়িয়ে বললেন।

” সে নিয়মিত মসজিদে যাওয়া আসা করেন আর এটুকু জানেন না যে, ঘরের স্ত্রীর কাজে মহানবী ( স ) সাহায্য কর‍তেন। আর রান্নাবান্না তো একা মেয়েদের কাজ না। কোথায় লেখা আছে রান্নাঘর মেয়েদের জন্য? হাদিসে নাকি কুরআনে? ” ঠিক সময়ে ঠিক যুক্তি মাথায় আনা অনেক কঠিন ব্যাপার। আজকে এই কঠিন কাজটাই করে বসেছি৷ দেখা যাক উনার কণ্ঠ এখন আকাশে উঠে নাকি নিচে নামে। তবে মনে হচ্ছে কণ্ঠ নিচে নামবে। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলেছেন ।
তারপর কাইকুই করে বললেন,

” না মানে তোমার ভাই ভালো জানেন। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলতে পারবে। আপনি তাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। ”

” আমার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নাই। কারণ আমি সঠিকটাই জানি৷ আপনিই বরং শাহেদ ভাইকে ভালো করে জিজ্ঞেস করবেন। সে যা বলেছেন সেটার কোনো দলিলপত্র আছে কিনা! ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
ঠিক এইসময় মিলা বেডরুম থেকে বের হলো। আমাকে দেখে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল, ” আমি দ্রুত নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি। আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার স্কুলে যাওয়ার আগেই নাস্তা রেডি হয়ে যাবে। ”

” আজকে আমার ঢাকা যাওয়ার কথা। ভুলে গেছ? ”

মিলা উদ্ভ্রান্তের মতো কিছু সময় তাকিয়ে থেকে কিছু একটা বলার জন্য ঠোঁট নাড়লো। কিন্তু কিছুই শুনতে পেলাম না৷ আমিনা ভাবী চাল ধোয়ায় ব্যস্ত!

” তুমি রুমে যাও। ”

” আপনি কখন রওয়ানা দিবেন? ”

” এগারোটায় বাস। ”

” আমি নাস্তা বানাতে পারবো এই সময়ের মধ্যে। ” মিলা রান্নাঘরে ঢোকার জন্য পা বাড়ালো। আমি ওর হাত ধরে বললাম, ” রুমে যাও। তুমি এখনো অসুস্থ আর উইক । হাঁটতে চলতেই কষ্ট হচ্ছে। আমি নিজে রান্না করতে পারবো। ”

” ঠিকাছে ” মিলা রুমে চলে গেল। আমিনা ভাবী চুপ হয়ে আছেন৷ এটাই ভালো। অন্যের সংসারে এতো কথা বলা ঠিক না।
আদা দিয়ে চা বানিয়ে এক কাপ মিলাকে দিয়ে এসে রান্নায় লেগে গেলাম। খিচুড়ি হলে ভালো হতো। কিন্তু খিচুড়ির সাথে কিছু না হলে আবার আমি খেতে পারিনা। আচারও নাই আর গতকালের রাতের তরকারিও নাই। আম্মাকে বলতে হবে আচার পাঠানোর কথা। বেগুন আছে কিন্তু এখন ভাজাভাজির ঝামেলায় যেতে মন চাচ্ছে না৷ ডিম ভাজা যেতে পারে। ফ্রীজে ডিম দেখেছিলাম। মিলাকে আনার আগেই ত্রিশটার মতো ডিম এনে রেখেছিলাম।
ফ্রীজ চেক করে দেখলাম ডিম আছে। খিচুড়ির জন্য সবকিছু গুছিয়ে নিলাম। ততক্ষণে মিলা আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।

” কিছু বলবে? ” অনেক সময় যাবত দাঁড়িয়ে আছে এভাবে। কিছু বলতেছেও না আবার চলেও যাচ্ছে না৷ ঘাড়ের কাছে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে কোনো কাজ করা যায়?

” আপনার ব্যাগ গুছিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম। যদি বলতেন কয়টা কী নিবেন। তাহলে আমার ভালো হতো। ”

” আমি গুছিয়ে নিব। তুমি শুয়ে রেস্ট নাও। তোমার শরীর ভালো না৷ শ্বাশুড়ি আম্মা যদি এই অবস্থায় দেখেন। তাহলে আমাকে মনে মনে গালি দিবেন। ” ভাগ্যিস আশেপাশে আমিনা ভাবী নাই। উনি অনন্যাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

” মনে মনে দিবেন, সামনা-সামনি তো আর না। ”

” যেভাবেই হোক দিবেন। আর তুমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার ঢাকা যাওয়া ক্যান্সেল হয়ে যাবে। ”

” ঢাকা যাওয়াটা খুব জরুরী বুঝি? ”

” হ্যাঁ, জরুরী না হলে টাকা খরচ করে ঢাকা যাবো কেনো? ”

” ওহ আচ্ছা। ”

” আর কিছু বলবা? ”

” না ”

” তাহলে এখন আমার ঘাড়ের উপর থেকে সরে দাঁড়াও। ঘাড়ের উপর এভাবে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে আমি কাজ করতে পারিনা। ”

” আপনি কি আমার উপর বিরক্ত? ”

” না, মোটেও না। তুমি আমার স্ত্রী এবং পাগল ছাগল স্ত্রী। পাগল ছাগলের উপর আর যাইহোক বিরক্ত হওয়া যায়না। ”

” আমি সত্যিই পাগল ছাগল? ”

” হ্যাঁ, তোমাকে মিথ্যা বলার প্রয়োজন আমার নেই । কারণ তুমি আমার প্রেমিকা না যে তোমাকে মিথ্যা কথা বলে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখবো। তুমি স্ত্রী, তোমাকে যা বলার সরাসরি সত্যটা বলতে হবে। ”

” আচ্ছা, তাহলে আমি রুমে গেলাম। আমার ব্যাগ গুছাতে হবে। ”

” যাও আর যাওয়ার সময় কপালে চুমু দিয়ে যাও। এত কাজ করে দিচ্ছি এটুকু পেমেন্ট তুমি করতেই পারো। ”
মিলা আমার কথায় হেসে ফেলল। তারপর কাছে এসে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলল, ” সাথে বোনাস দিলাম, চলবে?

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে