আঁধার
৯.
মিলা খুব বেশি সুন্দরী না৷ ওর বড় আর মেজো বোন ওর তুলনায় অনেক বেশি সুন্দরী। ওর গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। ওর বোনদের গায়ের রঙ কাঁচা হলুদের মতো। তার উপর তাদের চেহারায় লাবণ্যতা আছে। মিষ্টি করে হাসে তারা। কিন্তু মিলার মধ্যে ওসব কিছুই নেই। ওর ফিগার পারফেক্টও না। পেটে মেদ আছে আর তার ঠোঁট যেন কেমন। তবে চোখ দুটো খুব বেশি সুন্দর৷ পটোলচেরা চোখের চাহনিতে মুগ্ধতা জমাতে পারে এই মেয়ে। সেই চোখে আবার কাজল নেয়ার প্রয়োজন হয়না। ওকে বানানোর সময় স্থায়ীভাবে কাজল পরিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমার কাজল কেনার খরচ তো বেঁচেছে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ওর টোল পড়ে। খুব একটা হাসে না। হাসলেই সেই টোল চোখে পড়ে। সব মিলিয়ে খুব একটা খারাপ না দেখতে সে। বালিশে ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা রেখে একটু আগেও শুয়ে ছিল। মেয়েটা মুখে যতই জ্বালাযন্ত্রণা বলে প্রকাশ করুক না কেনো। কখনো না করে না। অদ্ভুত ম্যাটারিয়াল এই মেয়ে!
” আপনি বসুন আমি খাবার নিয়ে আসতেছি। ” মিলা শাড়ী দিয়ে খুব ভালো করে শরীর ঢেকে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে ওর গতিবিধি খেয়াল করতেছি। ওকে আমার গিনিপিগের মতো মনে হয়। গিনিপিগ যেমন সায়েন্টিস্টদের এক্সপেরিমেন্টের স্বীকার হয়। ও ঠিক তাই হচ্ছে। কিন্তু বেচারি কিছুই বুঝতে পারতেছে না।
কীভাবে স্বামীর সেবাযত্ন করে যাচ্ছে! মায়া হয় খুব বেশি। কিন্তু কিছু করার নেই আমার!
মিলা একেক করে খাবার নিয়ে আসতেছে। আমি কি ওকে সাহায্য করবো? না, করা যাবেনা। বেশি কেয়ার করলে সমস্যা!
বিকালে আমার টিউশনি থাকেনা। মিলাকে মিথ্যা বলেছি। আমার এই সময়টা সেই ন্যাকা বিবির জন্য তুলে রাখা। ইচ্ছা অনিচ্ছা কিছুই সে মানতে চায়না। তারপরও গতকাল জোর করে সময় দেইনি। মিলাকে ঢাল বানিয়ে কথা বলা বন্ধ করেছিলাম। বিকালে তার সাথে বকবক করে বাসায় যখন ফিরলাম তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। দরজা খুললেন আমিনা ভাবী। প্রতিবার মিলা দরজা খুলে।
রুমের দরজা ভেজানো আর লাইট অফ করা। রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে লাইট জ্বালালাম। মিলা বিছানায় এলোমেলোভাবে মরার মতো পড়ে আছে।
কাছে যেতে মন চাচ্ছিল না। যেহেতু আমি তার স্বামী তাই বাধ্য হয়ে এগিয়ে গেলাম। গায়ের রঙ আগের থেকে আরেকটু বেশি ময়লা মনে হচ্ছে। ঠোঁট শুকিয়ে আছে। হাত ধরলাম ডাকার জন্য তখনই বুঝতে পারলাম। কী কারণে সে এভাবে মরার মতো পড়ে আছে। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীর! কপালে হাত দিয়ে দেখলাম একই অবস্থা। পা বরফের মতো ঠান্ডা।
একটা বার ফোন করে বললেই পারতো জ্বর এসেছে। আসার সময় মেডিসিন নিয়ে আসতাম। ড্রয়ার থেকে কাঁথা বের করে গায়ে জড়িয়ে দিলাম। চোখের কোণে পানি শুকিয়ে আছে। এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। মায়া, শব্দটা আনা যাবেনা আমাদের মাঝে।
ব্যাগপত্র রেখে আবার বাসা থেকে বের হলাম। আশেপাশেই ফার্মেসি আছে অনেক। একটা থার্মোমিটার কিনতে হবে। আর ফার্মেসির লোকদের বলে জ্বর কমার মেডিসিন নিতে হবে।
গতকাল বৃষ্টিতে ভেজার জন্যই আজকের এই অবস্থা।
*****
রাতে জ্বরের মধ্যেই খাওয়াতে হলো। খালি পেটে মেডিসিন খাওয়ানো যাবেনা। আর ওর সুস্থতা খুব বেশি দরকার। তা নাহলে আমার আগামীকাল যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। কোনোভাবেই যাওয়া বন্ধ করা যাবেনা।
মশারী টানিয়ে দিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। জীবনের হিসাব নিকাশ এখানে বসে করতে বেশ ভালো লাগে। রকিং চেয়ারের দোলে আর নিকোটিনের ধোয়ায় দারুণ সময় কাটে। বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি আমার। খুব ঝামেলার একটা জীবন! সবকিছুর পেছনে আম্মা দায়ী। দুই রাত আর তিনদিন না খেয়ে আমাকে বিয়ের জন্য রাজি করালেন। বিয়ে করবো না বলেই মেয়েকে দেখতে যাইনি। কিন্তু সেই মেয়েকেই আমার বিয়ে করতেই হলো। তার উপর মেয়ের ক্যারেক্টারের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। বিয়ের রাতেই বুঝতে পারছিলাম। ভার্জিনিটি তো ছিলোই না। আর ক’জনের সাথে শুইছে সেই ধারণা আমি করতেই পারবো না। সাথে মেয়ে আবার পাগল ছাগল। কথাবার্তার ঠিক নাই, চাল চলনে নাই কোনো ছন্দ! এই মেয়ে আহামরি সুন্দরীও না। যে রূপ দেখে ভুলে থাকবো তার অতীত। আছে তার বাপের অঢেল সম্পত্তি! এই একটাই আশা আমার।
চার নাম্বার সিগারেট শেষ করে বিছানায় যখন এলাম। তখন মিলার গোঙানির শব্দ কানে আসলো। আল্লাহ জানেন আজকে রাতে ঘুম হবে কিনা!
ঠকঠক করে কাঁপছে! এখন কম্বল পাবো কই? কম্বল গ্রাম থেকে আনা হয়নি। শীতকাল দেরি আছে তাই। শরীর ওর এখনো অনেক গরম। আর আজকে পড়েছেও গরম অনেক। ফ্যানও ছাড়তে পারতেছি না৷ গরমে আমার ঘাম ছুটছে। মনে হচ্ছে লাথি দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিতে। অনেক কষ্টে ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখলাম।
” পানি, পানি খাবো। ” মিলা অস্ফুটস্বরে বলল।
মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।
বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি
https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
বাল!
আবার বিছানা থেকে নেমে পানি এনে দিলাম। পানির গ্লাস ধরার সময় খেয়াল করলাম ওর হাত কাঁপছে! চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। হাত থেকে পানির গ্লাস ফেলে দেয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই ওর হাতে গ্লাস না দিয়ে বললাম, ” তোমার গ্লাস নিতে হবেনা৷ আমি খাইয়ে দিচ্ছি। ”
ওর মুখের সামনে গ্লাস ধরলাম। সে এক চুমুকে পানিটা খেয়ে নিল। তারপর বিছানায় আবার শুয়ে পড়লো।
” আমাকে বিকালে বললেই পারতা যে জ্বর আসছে। তাহলে ডাক্তার দেখানো যেত। ”
” আমি আপনাকে পুরো বিকাল ভরে ফোন দিয়েছি। কিন্তু আপনার নাম্বার ব্যস্ত ছিল। ”
আমি কথা না বাড়িয়ে মোবাইল চেক করলাম মিলার। ঠিকই বলেছে সে।
বিছানায় গিয়ে ওকে আমার দিকে টানলাম। কাঁথার নিচে গিয়ে ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলাম। প্রচণ্ড গরম এখনই ঘামছি।
তারপরও এটুকু না করলে স্বামী কীভাবে হবো?
চলবে…
~ Maria Kabir