আঁধার পর্ব-০৫ | মারিয়া কাবির

0
1768

আঁধার

৫.

শাড়ীর আঁচল সরিয়ে বুকের উপর হাত রাখল। সাথে সাথে দরজার কাছে আমিনা ভাবীর উপস্থিতি বুঝতে পারলাম।

” তোমাদের ভাই একটা ছবি ছাড়ছে। তোমরা দেখবা নাকি জিজ্ঞেস করতে বলল। ”

রাসেল শাড়ীর আঁচল আগের স্থানে রেখে দিয়ে মজার স্বরে বললেন, ” আশির দশকের ছবি নাকি? ”
ভাগ্যিস ঘরের লাইট অফ ছিল। তাই ভাবীর চোখে পড়েনি। যাক, এই মূহুর্তে কিছুটা শান্তি পেলাম।
” তাছাড়া কি তার আর কিছু পছন্দ হয়? ” আমিনা ভাবী আক্ষেপ নিয়ে বললেন।

” ভাইকে বলেন আমি আসছি। ”

” ভাবীকেও সাথে নিয়ে আইসেন। আপনার ভাই আবার হৈহল্লা করতে পছন্দ করে। ”

” আপনাদের ভাবীর শরীর খুব একটা ভালো না। সে আসবে না। ” রাসেল কীভাবে বুঝলেন যে, আমার যাওয়ার ইচ্ছা নাই? এই প্রশ্নটা তোলা থাক।

” কী বলেন ভাই? কী হইছে ভাবীর? ” আমিনা ভাবীর কণ্ঠে শঙ্কা প্রকাশ পাচ্ছে। এতো স্বল্প পরিচিত মানুষের জন্য শঙ্কিত হওয়ার কারণ তো আমি খুঁজে পাইনা।

” তেমন কিছুই না ভাবী। বৃষ্টিতে ভিজেছিল তো তাই শরীর ম্যাজম্যাজ করতেছে। ”

” তাহলে ভাবী শুয়ে থাকুক। আপনি চলে আসুন। ” আমিনা ভাবী এই কথা বলেই চলে গেলেন। দরজার কাছে দাঁড়িয়েই কথা বললেন। হয়তোবা পরে বুঝতে পেরেছেন যে, তিনি ভুল সময়ে চলে এসেছেন।

রাসেল আমার বুকের উপরের থাকা শাড়ীর আঁচল ঠিক করে দিলেন।
” এতো নির্বোধ মানুষ আমি কখনো দেখিনি। স্বামী – স্ত্রীর বেডরুমে উঁকি দেয়ার আগেও অনুমতি নিতে হয়। এই বুঝ এদের কখনো আসবেনা। ” রাসেলের কণ্ঠে বিরক্তি।

” আমাদের কি এখানে কোনো ভুল নেই? আমরাও তো নির্বোধের মতো দরজা খোলা রেখে ঘনিষ্ঠ হতে যাচ্ছিলাম। ”

” আমি ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য এখন আসিনি। আমি এসেছিলাম তোমার সাথে ঢাকা যাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু এখানে এসে কী যেন হয়ে গেল। ”

” সে যে কারণেই আসেন না কেনো। আপনার উচিৎ ছিলো দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে বা লক করে রুমে ঢোকা। ”

” তুমি কি এখন আমিনা ভাবীর পক্ষ নিচ্ছ? ” রাসেলকে বিরক্ত মনে হলো।

” না, আমি আপনাকে আপনার নিজের দোষের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। ”

” থ্যাংক ইউ আর আমার তোমাকে মেনটর হিসেবে প্রয়োজন নেই। কারণ একজন অস্বাভাবিক মানুষের উপদেশে আমি উঠতে বসতে পারিনা। ” রাসেল আমার ভেজা চুলে আঙুল চালিয়ে দিয়ে কথাগুলো বলল।

” আমি অস্বাভাবিক মানুষ৷ তাহলে আমার সাথে আছেন কেনো? ” মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। আমার যেহেতু এতো সমস্যা তাহলে আমাকে নিয়ে সে আছে কেনো? তার এতো ঠ্যাকা কীসের?

” বিয়ে করেছি তোমাকে। প্রেম না যে ব্রেকাপ করে হুট করে চলে আসবো। তোমার আমার সম্পর্ক বিয়ের। তার উপর তোমার প্রতি আমার উইকনেস দিন দিন বাড়তেছে। যতবার তোমার সাথে শারীরিকভাবে জড়াই। ততবারই আমার উইকনেসের পরিমাণ বাড়ে। এজন্যই প্রতি রাতে তোমাকে আমি বিরক্ত করি। একটা রাত আমি এই মুহূর্ত মিস করতে পারবো না। আমি চাই উইকনেস বাড়ুক। এতোটা বাড়ুক যেন তোমার চোখ মুখ কুঁচকে থাকাটা উবে যাক। ”

” তাহলে আর দ্বিতীয় বার আমাকে অস্বাভাবিক বলবেন না। ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” আচ্ছা, তুমি আমাকে পছন্দ করো না কেনো? ” রাসেলের এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সাহস আমার নেই।

” ছবি দেখতে যান৷ আমাকে বিরক্ত করবেন না। এমনিতেই আপনি রাতে প্রচুর বিরক্ত করেন। ”

” একদিন আমার জন্য আফসোস করবা৷ তখন তুমি হাজার খুঁজেও আমাকে পাবা না। ”
রাসেল তাচ্ছিল্যের সাথে বলল।

” সিনেমার ডায়লগ ছাড়বেন না। এইধরনের কথার কোনো অর্থ হয়না। একজনের জন্য কখনো জীবন আটকে থাকেনা। ”

” ঠিকই বলেছ। আটকে থাকেনা কিন্তু… ”

” কথা শেষ করুন আর দ্রুত মুভি দেখতে যান। ”
রাসেল কঠিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তারপর ধীরে পায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
আমি দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কিছুই ভালো লাগছেনা। আমার এই জীবন কবে শেষ হবে কে জানে! আত্মহত্যা করেই বসতাম কিন্তু লাভ নাই। সেই অশান্তিই…

ঘুমে চোখ লেগে আসছিল। হাজার চেষ্টা করেও চোখ খোলা রাখতে পারলাম না৷ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। দাওয়াতের কথা মাথায় রেখেও লাভ হলো না। ঘুম ভাঙলো প্রচণ্ড পানি পিপাসায়। উঠে বসতেই বুঝতে পারলাম রাসেলের দুই হাত আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে সময় দেখলাম৷ রাত দুটো!
রাসেল আমাকে ঘুম থেকে কেনো ডেকে তুললো না? আমার যে রাতে না খেলে চলে না! এখন খাবার পাবো কই? দাওয়াত ছিলো বলেই রাতে রান্না করিনি। মুড়ি, বিস্কুটে আমার খিদে মিটবে না। রাসেলকে ছাড়াতে গিয়ে ওর ঘুম ভাঙিয়ে ফেললাম। রাসেল বেডসুইচে চাপ দিয়ে লাইট জ্বালালেন।
বেচারার ঘুম ভাঙানো ঠিক হয়নি।
” কিছু হয়েছে মিলা? ”

” পানি পিপাসা লেগেছে। ”

” তাই বলে আমাকে ধাক্কাধাক্কি করতে হবে? ”

” আমি ধাক্কাধাক্কি করেছি কারণ আপনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলেন। ”

” ওহ আচ্ছা। ওয়ারড্রবের উপরে পানির জগ আর গ্লাস রাখা আছে। ”

” আপনি আমাকে রাতে খাওয়ার জন্য ডাকেননি কেনো? আমার রাতে না খেলে শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। ”

” তোমাকে আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি রাতে। তুমি ঘুমের ঘোরে ছিলে তাই মনে নাই। ”

” কী? ” তাহলে আমার মনে কেনো নাই? এটা কীভাবে সম্ভব?

” হ্যাঁ, বিশ্বাস না হলে সকালে আমিনা ভাবীকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিও। ”

” অদ্ভুত তো! ”

” তাড়াতাড়ি পানি খেয়ে বিছানায় চলে এসো। আমার ঘুম দরকার মিলা। ”

বিছানা থেকে নেমে ওয়ারড্রবের দিকে পা বাড়ালাম। নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। আমার পরনে পেটিকোট আর ব্লাউজ। শাড়ী মেঝেতে পড়ে আছে। দ্রুত পানি খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

” লাইট অফ করে দাও। আলোতে আমার ঘুম আসেনা। ” রাসেল ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললেন।

আমি হাত বাড়িয়ে বেডসুইচে চাপ দিয়ে লাইট অফ করে দিলাম।

চলবে….

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে