আঁধারের আলো পর্ব-০৪

0
1605

#আঁধারের_আলো
#পর্ব_৪
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat

বাবার বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আলো। নিজের সাথে করে আনা ট্রলি ব্যাগ টা বাহিরে রেখে হাতে খবরের কাগজে মোড়ানো একটা বক্স নিয়ে প্রবেশ করলো। আলোকে এখানে দেখে ওর মা ও ভাইয়ের বউ এগিয়ে এলো।
এই সেই আলো যার চোখের নিচে কালি।অনেকটা ফুলে গেছে অনেক।এই ফুলা মোটা নয়।অতিরিক্ত পরিশ্রম এ ফলে এমন অবস্থা হয়ে গেছে। কেমন ফ্যাকাসে লাগছে দেখতে। নিজের মলিন চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আলোকে দেখে ওর মা জিজ্ঞেস করলো,

মাঃআলো তুই এই সময় এখানে।আর এতো বড় ব্যাগ নিয়ে এসেছিস কেন?

দাদীঃ কেন আবার আমার নাতীর থিকা টাকা নিয়া পেট ভরে নাই তাই আবার আইসে টাকা নিতো।

আলো দাদীর দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো। সাথে তার ভাইয়ে শাশুড়ী কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আলো তার কাছে গেলো।

আলোঃ চাচী টাকাটা দিন।

ভাইয়ের বউঃ কিসের টাকা আপু(অবাক হয়ে)
সবাই অবাক বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে

আলো সেদিকে কান না দিয়ে এবার একটু জোরে বলল
আলোঃটাকা গুলো দিন।

আলোর ভাই এর শাশুড়ী রুমে গিয়ে টাকা এনে আলোর হাতে দিলো।

আলোঃ আমি এখানে টাকা নিতে আসিনি। ওইদিন আমি টাকার জন্য পাঠায়নি যার কাছে বিয়ে দিয়েছেন সে আমায় না বলে টাকা নিতে চলে আসে। যাইহোক টাকা আমি ওইদিনের পরের দিনই ফেরত দিয়ে গিয়েছি। আকরামের(আলোর ভাই) শাশুড়ী আমায় বাসায় যেতে মানা করায় তার কাছেই বাহিরে থেকে টাকা দিয়ে চলে গিয়েছি। ফাতেমা(আকরামের বউ) এই নেও টাকা আকরাম আসলে ওকে দিয়ে দিবা। আর বলবা আমি টাকা চাইনি। আমার টাকার প্রয়োজন নেই।

ফাতেমাঃ মা আপু টাকা দিয়েছে বলেননি কেনো। আর আপুকে বাসায় আনেননি কেনো।

ফাতেমার মা আমতা আমতা করে বলল
ফাতেমার মাঃআসলে আমার মনে ছিলো না। আর

আর কিছু বলার আগেই আলো তাকে থামিয়ে বলা শুরু করলো।
আলোঃ আমি আজকে এখানে কিছু কথা বলার জন্য এসেছি যা গত ১২ বছরে বাবা মারা যাওয়ার পর বলা হয়নি।

দাদীঃ কি বলতে আইসো তুমি। কয়দিন পর পর দৌড় দিয়া আইসা তামাশা করো।

আলোঃ দাদীমা আমার বিয়ে ২ বছর হয়েছে এই দুই বছরে ৫ বারও আমি এই বাড়িতে আসিনি। তাহলে কিভাবে বলেন যে দুইদিন পর পর এসেছি। আচ্ছা আমায় আপনি দেখতে পারেননা কেন। আমি মেয়ে বলে৷ আপনাকে একটা প্রশ্ন করি।আপনি যখন জন্ম নিয়েছেন তখন কি ছেলে হয়ে জন্ম নিয়েছেন নাকি মেয়ে হয়ে?
বলেই একটু দম নিলো। কান্না পাচ্ছে খুব। এই প্রথম আলো মনে চাপা কথা গুলো বলছে। আর বলতেই হবে। আজ না বললে কখনোই বলা হবে না।

আলোর দাদী চুপ হয়ে আছে। তার চুপ থাকায় আলো আবার বলা শুরু করলো।

আলোঃ আপনি আগের যুগে মেয়ে হয়ে ভালো ভাবে থেকেছেন খেয়েছেন ভালো জায়গায় বিয়ে করে বাচ্চা জন্ম দিয়ে নাতী নাতনি দেখে। নাতীর ঘরে পতি দেখতে যাচ্ছেন। কই আপনার মা দাদীরা তোহ আপনাকে ঠিকই ভালো লালন পালন করেছে। তাহলে আমি এই যুগে হয়ে শিক্ষিত সমাজে থেকে আমার প্রাপ্য অধিকার ভালোবাসা থেকে কেন বঞ্চিত হবো। কেন ছেলে মেয়েকে আলাদা চোখে দেখতে হবে। আশেপাশে কতো মানুষ দেখলাম কই তারাও তোহ কন্যা সন্তানকে ঠিকউ লালন পালন করছে। তারা পার্থক্য করছে না কেন। আছে কি উত্তর কারো কাছে। দাদী আপনিই বলেন আপনি মেয়ে হয়ে সসম্মানে বাচতে পারলে আমি মেয়ে হয়ে পারবো না কেন। নাকি আপনি মেয়ে হওয়া আর আমি মেয়ে হওয়ার মাঝেও তফাৎ আছে।

আলোর গাল বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে বার বার মুছে ফেলছে। কথা গুলো গলায় আটকে যাচ্ছে। কিন্তু আজ থামবে না।আজ যে বলতেই হবে।সবাই চুপ হয়ে আছে। আলোর মা ও ভাইয়ের বউ কাদছে।

আলোঃ আমাকে আপনারা সব সময় টিস্যুর মতো ব্যবহার করেছেন। বাবার এক্সিডেন্টে মারা গেছে তা কি আমার দোষ। সব সময় সব কিছুর জন্য আমাকে দোষ দেওয়া হয়েছে । আমাকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজের লোকের মতো কাটানো হয়েছে কারন বংশের ছেলেকে লালন পালন করতে হবে তাই। থাকা খাওয়া পোশাক সব দিক দিয়ে আমি বঞ্চিত ছিলাম। আমার কষ্টে টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে আমাকেই কথা শোনানো হতো। আর একবারও কি আমায় দেখতে চেয়েছেন আমি ওইবাড়িতে বেচে আছি নাকি মরে গিয়েছি।ওই বাড়িতে কেমন আছি একবারও খোজ নেননি। আরে একবারো দেখতেও জাননি আর না আমায় কখনো বলেছে এইবাড়িতে আসতে। কখনো ফোন দিয়ে দুইমিনিট কথা বলে জিজ্ঞেসও করেননি যে আলো কেমন আছো। আমি নিজে থেকে বেহায়ার মতো ফোন দিতাম আর আপনাদের কথা শুনতাম।আচ্ছা বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন ব্যস দায়িত্ব শেষ। আপনাদের মাঝে দায়িত্ববোধ নামক জিনিসটা মরে গিয়েছে। আর সব চেয়ে বড় কথা জীবনে একটা জিনিস চেয়েছিলাম। আঁধারকে বিয়ে করার কথা সেখানেও আমাকে শাস্তি হিসেবে একজন অমানবিক পুরুষ এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কেন এইবাড়ির ছেলে যদি তার পছন্দের মানুষকে জীবন সঙ্গী বানাতে পারে তাহলে মেয়েটি কেন পারবে না।কেন?

আলো কান্নার ভেঙে পড়লো কতো বছর পর কাদছে জানা নেই তার। বিয়ের সময় বিদায়েও কাদেনি সে। ফাতেমা আলোর পাশে এসে দাড়ালো কি বলে শান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না। আলো মাও কাদছে।

হুট করে আলোর দাদী এমন কিছু বলল যার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলো না।

দাদীঃও এই কথা এবার বুঝছি তোমার নাগর বুঝি আইসা পড়ছে তাই না।তার সাথে যাওয়ার জন্য এত কথা। আমাগো মান সম্মান ডুবানোর জন্য এই রাস্তা। তোরে তোহ জন্মের সময়ই মাইরা ফালানো উচিত ছিলো।

আলোর মা ঃমা আপনি এইগুলো কি বলছেন। চুপ করুন দয়া করে। আজ কিছু বলবেন না।
আলো কান্নার মাঝেই হেসে দিলো সবাই অবাক হলো

আলোঃসত্যি দাদী আপনি আর আপনার মানসিকতা কখনোই বদলাবে না। যাক আমি কাউকে কোনো কৈফত দিতে আসিনি। যেই কাজে এসেছি তাই করি।

চোখের জল মুছে ফাতেমার হাতে খবরের কাগজে মুড়ানো বক্সটা দিলো।

আলোঃ তুমি খুব মিষ্টি মেয়ে ফাতেমা। আমার ভাইয়ে খেয়েল রেখো।আর হ্যা তোমার যদি মেয়ে হয় তাহলে দয়া করে এইবাড়িতে এদের কারো ছায়া তোমার মেয়ের উপর পড়তে দিও না। জীবনটা অভিশপ্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ যেনো তোমায় কন্যা সন্তান না দেয়। আর এই বক্সটা আকরামকে দিয়ে দিও। তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে তুমি এই বক্সটা খুলবে না। কারো কথায়ও খোলবে না প্লিজ(ফাতেমার মায়ের দিকে তাকিয়ে) আমি চাই বক্স আকরাম খুলুক। নিজের খেয়াল রেখো ভালো থেকো।

আলো কথা শেষ করে বাহিরের দিকে পা বাড়ালো।
ফাতেমাঃআপু আপনার ভাই আসার পরই যেতেন। নিজ হাতে দিতেন বক্সটা।

আলো মুচকি হাসলো
আলোঃআমার যে সময় নেই ফাতেমা। তুমিই দিয়ে দিও এটার জন্যই এসেছিলাম।

আলোর মা আলো হাত ধরে ওকে জড়িয়ে ধরে কাদছ। আলো কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
আলোঃআমায় ছাড়ুন।যেতে দিন যেতে হবে।

আলোর মাঃ মা গো আমারে মাফ করে দেও। আমি কোনো দিন তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করি নাই। মায়ের (শাশুড়ীর) সাথে থাকতে থাকতে তার মতোই হয়ে গিয়েছি। তুমি আমার মাফ করে দেও।

আলোঃ মাফ করার কিছুই নেই। আর জন্ম দিলেই কি মা হওয়া যায় নাকি। আপনাকে আমি তুমি থেকে আপনি কেন ডাকি জানেন। কারন আমার কাছে আপনজন যখন পর হয়ে যায় তখন তাকে আপনি বলে ডেকে থাকি। আপনাকে ঠিক মা বলে কবে ডেকেছি বলতে পারবেন। পারবেন না।

আলোর মা চুপ হয়ে কথা গুলো শুনে ভাবতে লাগলো।

আলো সবার দিকে চেয়ে বলল
আলোঃআশা করি আমার চেহারা যেনো আপনাদের না দেখা লাগে।

এর মাঝে ফাতেমা আকরামকে মেসেজ করে আসতে বলে। কেন যেনো আজ তার ভয় করছে।

আলো কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাহিরে চলে এলো। দ্রুত পায়ে একটা অটোতে উঠে বাস স্টান্ডের দিকে যাচ্ছে।

চলে যাচ্ছে দুই পরিবার থেকে বহু দূর। গার্লস গ্রুপ থেকে এক আপুর সাথে তার পরিচয় হয়৷ তার কষ্টের কাহিনি শুনে আপু তার কাছে চলে আসতে বলে। ওই আপু একা থাকে। আলো তার ফোন নাম্বার নিয়ে রাখে সময়ে কাজে লাগবে তাই। আজ সকালে শাওনের বলা কথা গুলোর পর সিদ্ধান্ত নেই চলে যাবে বহু দুর। অনেক আপু তাকে সাহস দেয়। নিজের জন্য লড়াই করার শক্তি দেয় যার ফল আজ। সেই আপু ঠিকানা দিয়ে দিয়েছে।আলো সেই ঠিকানায় রওনা হয়েছে।

শাওনদের বাড়িতে শাওনের মা শাওনকে বকছে।

শাওনের মাঃ তোর বউ স্বর্নের চেইন লইয়া গেছে গা।আমারে জিগায়ও নাই। তুই কিছু কস না তাই মাথায় উঠছে। এমনে এতো কাম ফালাইয়া বাপের বাড়ি গিয়া মরছে। চেইন আমার কাছে রাখছি হারায় যাইবো গা তাই। বিয়ে মধ্যে বাপের বাড়ি থিক্কা সুতার সমান চিকুন চেইন আনছিলো সেইটাও লইয়া গেলো। পোড়া কপাল আমার।

রুপাঃ থাক খালা শাওন ভাই আপনেরে নতুন দেইখা চেইন আইনা দিবোনে।

শাওন কিছু না বলে রুমে চলে গেল।
আলমারি খুলে দেখলো পুরনো কাপর চোপড় পড়ে আছে। আর শাড়ি( বিয়ে মধ্যে উপহার পেয়েছিলো সেইসব শাড়ি) কিছু নতুন থ্রিপিস যেগুলো কোনো ভালো দিনে পড়তো ওইগুলো নিয়ে বাকি সব রাখা। খালি বিয়ের শাড়ি পড়ে আছে।

শাওন ভাবছে চেইন নিয়ে গেল। বিয়ে দুই বছরে মা সেই যে চেইন নিয়েছে কত চাওয়ার পরও দেয় নাই। আর আজ নিজে থেকে নিয়ে গেছে।ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে। শাওন তারতারি তার ড্রয়ার দেখলো যেখানে টাকা রাখে। সেটা খুলে দেখলো না টাকা যেখানে ছিলো সেখানেই আছে। কিছুক্ষন গুনে নিলো সব ঠিক। বিয়ের সময় একটা ট্রলি কিনেছিলো ওটা নেই। শাওন এইসব ভেবে কুল পাচ্ছেনা। ভাবলো অনেকদিন পর বাবার বাড়ি থাকতে গিয়েছে তাই এইভাবে গেলো।কখনো তোহ কিছু কিনে দেয় নাই তাই সব নিয়ে গেছে যাতে কেউ বলতে না পারে সে কিছু দেয় না বউকে। যাক বুদ্ধিমতি আছে।
শাওন গান গাইতে গাইতে চলে গেলো।

ওইদিকে
আধার নিজের দোকান চালু করে দিয়েছে। একজন কর্মচারীও রেখেছে। আঁধার দোকানে বসে নিজের মানি ব্যাগে রাখা সাদাকালো ছবির উপরে হাত ভুলাচ্ছে। ছবিতে একটি বাচ্চা মেয়ে গোমড়া মুখ করা ছবি। এই ছবিটি আর কারো নয় আলোর। তখন তারা 4 এ পরতো কোনো কারনে ছবি তুলতে হবে। ছবি তুলে আলো দেখলো তার ছবি সুন্দর হয়নি। মাথায় তেল চুবচুব করছে। ছবিটা বাকা উঠেছে তাই রাগ করে ফেলে দিয়েছিলো। আঁধার সেটা কুড়িয়ে নিজের কাছে সযত্নে রেখে দেয়। এতো বছর ধরে নিজের কাছেই আছে। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকে। রাতে ছবির সাথে কথা বলে। আরো কতো কি।

আঁধার হাসছে আর মনে মনে বলছে।
আঁধারঃ আমার দুই মাসের বড় আলো। খুব তোহ জোড় গলায় বলেছিলো তুমি শুধু আঁধারের আলো। কিন্ত আজ কি হলো আঁধারের আলো যে অন্য কারো হয়ে গেলো। তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই। শুধু শেষ একটাই ইচ্ছা এই ২৬ বছরের নারী আলো কেমন দেখতে তাই দেখতে চাই।

আলো বাস থেকে নেমে একজনকে খুজছে। কিছুক্ষনপর একজন মেয়ে আসলো আলো তার সাথে কথা বলল
এরপর দুজন চলে গেলো। মানুষ বড়ই অদ্ভুত তাই না সামান্য কষ্টের কথা শুনে সাহায্য করার জন্য চলে এলো আপু। আর কাছের মানুষের কাছ থেকে শত কষ্ট পেয়েও একটুখানি সুখের আশায় ছিলাম। আজ কেন যেন মনে হচ্ছে আপনের চেয়ে পর ভালো। সামনের দিন গুলো কিভাবে কাটবে জানি না।
লেখনীতেঃInsia Ahmed Hayat
আলো আর মেয়েটি একটি ফ্লাটে আসলো।

মেয়েটিঃ আলো তুমি বসো আমি তোমার জন্য শরবত নিয়ে আসি।

আলো চারদিক দেখছে অনেকটা গুছানো ঘর। এতো বড় ফ্ল্যাট এ উনি একা থাকে
মেয়েটিঃ কি দেখছো।(শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল)

আলোঃ মনিরা আপু এতো বড় বাড়িতে তুমি একা থাকো।

মনিরাঃ একসময় বর আর আমি থাকতাম এখন শুধু আমি।

আলোঃ আপু কিছু মনে না করলে একটা কথা।

মনিরাঃ একটা নয় ১০০ টা বলো। আগে ফ্রেশ হয়ে নেও কিছু তোহ খাওনি সকাল থেকে চলো আমরা খেয়ে সারাদিন গল্প করবো।

আলোর চোখ ছলছল করছে। চিনা নাই জানা নাই একটা মেয়েকে থাকতে দিচ্ছে খেতে দিচ্ছে।

মনিরাঃ অফফো চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে ফেলো। এই জল যেনো গড়িয়ে না পড়ে ঠিক আছে। আর চিন্তা করার কোনো কারন নেই আমি তোমার পাশে আছি। আমাকে বড় বোন ভাবতে পারো

★★
আলো ও মনিরা বসে বসে কথা বলছে।

মনিরাঃ ছোট বেলায় আমার বাবা মারা যায় মা কষ্ট করে বড় করে আর লালন পালন করতে থাকেকিন্তু হঠাৎ মাও মারা যায়। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না এরপর আমার একজনের সাথে পরিচয় বয়সে আমার অনেক বড়। একদিন সে আমায় বিয়ের প্রস্তাব দেয় উপায় না পেয়ে রাজি হয়ে যাই। লোকটা আমায় বড্ড ভালোবাসতো। আমাকে পড়াশোনা করিয়ে এখানে আনার পেছনে তারই অবদান। আজ আমি ভালো জব করি এই ফ্লাটের মালিক আমি ভালোই চলছে দিনকাল।

আলোঃ উনি কোথায় এখন।

মনিরাঃ উনিও আমায় ছেড়ে একা করে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে। যাক তুমি চিন্তা করো না তোমার জন্যও আমি কিছু না কিছু করবো।নিজের পায়ে দাড়াতে হবে। তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে আমি তোমার সঙ্গ দিবো। তোহ এখন তুমি কি চাও।

আলো হালকা ভেবে বলল
আলোঃ ডিভোর্স

অন্যদিকে আকরাম বাসায় এসে সব কিছু শুনে চুপ হয়ে আছ। ওর আসতে দেরি হয়েছে না হয় আজ ওর বোন ওর সাথে থাকতো।
বোনের দেওয়া বক্সটা খুলতে বড্ড ভয় করছে। কয়েকবার কল করেছে কিন্ত ফোন বন্ধ। শাওনকেও কল দিয়েছে সেখানেও নেই। তার বোনের কিছু হলো না। সাত পাচ না ভেবে বক্সটা খুললো।

বক্সের ভেতরে ছোট ছোট বাচ্চা মেয়ের দুইটা জামা। যা দেখে আকরাম অবাক এটা তোহ তার বোনের ছোট বেলার জামা যেটা। যখন আকরাম ছোট ছিলো হুটহাট করেই আলোর জামা পড়ে ফেলতো। আকরামের এই জামা নাকি খুব পছন্দের অনেক ঝগড়া হতো এরপর আকরামের মা জামাটা আলমারিতে রেখে দেয় বের করেনি আর। আকরাম ভেবেছিলো ফেলে দিয়েছে এটা কিভাবে আলোর কাছে ছিলো। জামা গুলো বড় ছিলো এখন দেখে মনে হচ্ছে আলো কেটে হালকা ছোট করে ১ বছরের বাচ্চার সাইজ বানিয়ে একটু ডিজাইন করে দিয়েছে। এরপরও আকরামে চিনতে ভুল হয়নি যে এটা আলোর জামা।

বক্সে জামার সাথে একটা ছোট বক্স আর তার পাশেই সাদা কাগজ হয়তো চিঠি।

ছোট বক্সটা খুলে দেখলো বক্সে ছোট ছোট রিং কানের দুল।

আকরাম চিঠিটা হাতে নিলো পড়তে বেশ ভয় করছে। চিঠিটা সাহস করে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো। সবাইকে চিৎকার করে বলছে।

আমার বোন চলে গিয়েছে।কোথায় খুজবো তাকে।আমার বোনের সাথেই এমন কেনো হলো।

চিঠিতে কি লেখা কেউ জানে না। ফাতেমাকেও ধরতে দিচ্ছে না চিঠি।

আলো চলে যাওয়ার ৭ দিন হয়ে গেলো। আকরাম রোজ চিঠিটা পরে আর কাদে। অনেক জায়গায় খুজেছে নিজের বোনকে। আকরাম তার মা, শাশুড়ী আর দাদীর সাথে একেবারেই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। ফাতেমার সাথে কথা বলে আর সে চায় তার যেনো মেয়েই হয় এই অবস্থায় ফাতেমার অনেক খেয়াল রাখছে আকরাম। শাওনের বাসায় গিয়েও শাসিয়ে এসেছে সবাইকেল।

শাওন চিন্তায় পড়ে গেলো আলো হঠাৎ কোথায় চলে গেলো।

দুইদিন পর শাওনের দুই বোন এসেছে। শাওনদের বাসায় এসেই রুপাকে রুম থেকে বের করে ৪,৫ টা চড় বসিয়ে দিয়েছে দুই বোন মিলে। ওদের এমন কাজে সবাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। দুই বোন প্রচুর রেগে আছে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে