#অসম্ভবে_অসঙ্গতে
লেখক: নবনীতা শেখ
|পর্ব ৩|
হুট করেই বড়ো আপা আমাকে ডেকে নিয়ে বাড়িভর্তি মানুষের সামনে জিজ্ঞেস করেন,
-“তা ছোট, বিয়ে-শাদির ব্যাপারে চিন্তা কী?”
অবাক হলাম,
-“কীসের বিয়ে?”
ছোট আপা হেসে বলল,
-“আরে অনু, তোর বিয়ের।”
আমি ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বললাম,
-“এখনও ভাবছি না।”
উঠে চলে যেতে লাগলাম, ওমনিই ও-বাড়ির বড়োবৌ জহুরা আমাকে বলে উঠল,
-“লুকিয়ে কাজ নেই, ভাই। এখনও যৌবনেই আছ, একা যে থাকবে না তা আমরা বুঝি। এখন অন্যত্র জড়ালেও তো ক্ষতি নেই। তোমার বিয়ে-শাদি দিলে আমরাও একটু নিশ্চিন্ত হই। চিন্তা তো কম হয় না তোমার জন্য।”
আমি হেসে ফেললাম, সামনের সোফায় বসে জিজ্ঞেস করলাম,
-“তা আমার বিয়ে-শাদির সাথে আপনাদের নিশ্চিন্ত হওয়ার সংযোগ কোন জায়গায়?”
আমার হাসিতে সবার মুখ গুমোট হয়ে উঠল। কেউ যেন কথা এগোনোর সুযোগ পাচ্ছে না। কোনো একটা বিষয় নিয়ে ভাবছে, কথাটা কীভাবে ওঠানো লাগবে তাই যেন ভাবনার আদ্যোপান্ত। এ-সময়ের মধ্যেই আরেকজন বলে উঠল,
-“তুমি আমাদের আপনজন। তাই চাই-না নাম খারাপ হোক। বয়স কম, স্বামী নেই। পরিণতি কী, জানা আছে আমাদের। তাই চাই, বিয়ে করলে করে নাও।”
আমার ভেতর থেকে রাগগুলো আগ্নেয়গিরির ভয়ানক লাভার মতো উথলে উঠতে চাইছে। চোখ বন্ধ করে ফেললাম, মুষ্টিবদ্ধ হলো হাত। মুহিব বলত, রাগ ভালো কিছু না। রাগ মন্দকে ভালো ও ভালোকে পৃথিবীর সবচেয়ে মন্দ কিছুর রূপে প্রদর্শন করায়। রাগ জাগতিক সকল শুদ্ধকে অশুদ্ধ বানিয়ে দেয় ও অশুদ্ধকে আঁকড়ে ধরতে শেখায়। রাগ বিবেক-বুদ্ধির সংহার ঘটায়। যেই ব্যক্তি নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে, গন্তব্য স্বয়ং তার সামনে রাস্তা বানিয়ে দেয় এগোনোর তাগিদে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে চোখ বন্ধ করে দু-তিনবার প্রলম্বিত শ্বাস ফেলা এবং বন্ধরত চোখে এই কিঞ্চিৎ সময়ের মাঝে নিজের সবচেয়ে দূর্বলতম দিকটা ভেবে নেওয়া।
আমি আমার দূর্বলতাকে চিন্তা করলাম, কুহুকে ভাবলাম। এটা তো আমার যুদ্ধ, এখানে লড়াই শারীরিক না, মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে করতে হবে। আশ্চর্যজনকভাবে আমার রাগ নেমে এলো।
অপ্রশস্ত হেসে বললাম,
-“বিয়ে করব না, আপা। আমি আমার আর কুহুর জন্য যথেষ্ট।”
-“এ কথা এখন বলছ, দু-দিন পর ঠিকই বাচ্চাটাকে ছেড়ে চলে যাবে। তখন তো সব এসে আমাদের ঘাড়েই পড়বে।”
এ-পর্যায়ে আমার শক্ত হতে সময় লাগল না,
-“আপনাদের চিন্তা-ভাবনা অত্যন্ত সংকীর্ণ।”
জহুরা আপা বললেন,
-“তোমাকে প্রায়ই একজন ব্যাটালোকের সাথে দেখা যায়, অনু। তুমি অস্বীকার করতে পারবে?”
মূল ঘটনা বুঝতে পারলাম আমি। এরপর আর কিছুতে সম্ভবত কোনো লাভ হতো না। ধরা পড়লে লোকে বহুত কাহিনি বানায়, তাদের ধারণা আমিও বানাব। অথচ আমার ইচ্ছে করছে না নিজের ব্যাখ্যার্থে কিছু বলতে। হতাশাজনক শ্বাস ফেললাম ছোট্ট করে। পরপর তাদেরকে দেখে নিলাম। উঠে চলে যাওয়ার আগে বললাম,
-“আমার সাথে একজন ছেলেমানুষকে দেখে যারা ভেবেই নিয়েছে সম্পর্কটা কোন ধাঁচের, তাদের কাছে এর এক্সপ্লেনেশন দিতে আমার বড়ো আলস্য। তারা নির্বোধ। তারা আগামীকাল আমাকে আমার আপন ভাইয়ের সাথে দেখলেও কথা শোনাতে ছাড়বে না। এমন কথাকে গায়ে বাঁধাচ্ছি না। ধন্যবাদ। আজ অফ ডে, একটু কুহুকে নিয়ে ঘুরতে বেরোব। আপনারা বসুন, আপনাদের বিশেষত্ব নিয়ে সকল অবিশেষ গল্প করুন।”
উঠে রুমে চলে এলাম। মেয়েটা রুমে নেই, সম্ভবত খেলতে বেরিয়েছে। আমি শাড়ির আঁচল ঠিক করে বাড়ি থেকে বেরোলাম। বাড়ির পাশেই একটা ছোট্ট মাঠ আছে, ওখানে ওর বয়সী বাচ্চারা এই সময়ে খেলাধুলো করে। বাচ্চাদের এই বয়সে অন্য বাচ্চাদের সাথে মেশা প্রয়োজন। এতে তারা অল্প বয়সেই একাধিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষদের সংস্পর্শে এসে দুনিয়াদারির অনেকটাই বুঝে যাবে। বাচ্চাদের বিকাশের বয়সে এই মারামারি, ঝগড়াঝাঁটির খুব প্রয়োজন আছে। তারা মুখ থুবড়ে পড়বে, তবেই না একা একা উঠতে শিখবে। একাকি বেড়ে ওঠা মেয়েরা খুব নাজুক হয়, তারা অল্পতেই ভেঙে পড়ে, তারা নিজেকে সামলাতে জানে না। আমি কুহুকে পৃথিবীর সকল সুন্দর-কুৎসিত বিষয়াদির সাথে এই ছোট থেকেই পরিচয় করাতে চাই। মুহিব আমাকে এটা করতে বলেছিল।
সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দেখি কুহু সিঁড়ির নিচে মুখে হাত রেখে বসে আছে। আমি এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে পড়লাম। কুহু খেয়াল করে রেলিং ঘেঁসে সরে গেল। আমিও ওর দিকে চেপে বসলাম। ও ঠোঁট উলটে বসে আছে। চোখ-মুখ ভেজা। আমি আস্তে করে বললাম,
-“মিস কুহেলি, আপনার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?”
বড়ো বুঝদার বাচ্চার মতো কুহু দু’দিকে মাথা নেড়ে নেতিবাচকতা প্রকাশ করল। পর পর ফুঁপিয়ে উঠল। আমি হাত বাড়িয়ে টেনে কোলে বসিয়ে নেওয়ায় কুহু ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার বুকে। শব্দ করে কান্না করতে লাগল। আমি ওর মাথায় হাত বোলাতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর ওর কান্না থেমে এলে আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-“কী হয়েছে, মা?’
কুহু আমার বুকে মুখ লুকিয়ে আছে। কান্নায় শাড়ির বুকের দিকের অংশ ভিজে গেছে। কী সাংঘাতিক কান্না করতে পারে মেয়েটা! মুহিব তো এমন না। নিশ্চয়ই আমিই ছোটবেলায় আমি ছিলাম। মেয়েটা মায়ের স্বভাব পেয়েছে। কুহু অনেকক্ষণ পর বললাম,
-“মামনি, ওরা আমাকে মেরেছে।”
-“ওরা? দেখি কই মেরেছে?”
কুহু দুইহাতের খামচানো অংশগুলো দেখাল, কিছু জায়গায় ছুলে গেছে। এরপর হাঁটু অবধি আকাশি রঙের ফ্রকটা উঁচিয়ে দেখিয়ে বলল,
-“আমি খেলতে গেছিলাম, ওরা আমাকে খেলায় নিচ্ছিল না। বলছিল, আমি পচা মেয়ে, আমার মামনি পচা। ওদের মামনি আমার সাথে মিশতে বারণ করেছে। আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমি কখনও ওদের সাথে খারাপ কিছু করিনি, কখনও বকিনি, মারিনি। আমি কীভাবে পচা মেয়ে হই? আমি ওদেরকে জিজ্ঞেস করায় আমাকে খামচ্চি মেরে ধাক্কা দিয়েছে। মামনি, হাঁটুতে জ্বলছে খুব। ওরা আমাকে আর খেলায় নেবে না।”
এই বলে আবারও মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠল। আমি আঁচলের অংশ দিয়ে ওকে আগলে নিয়ে দু-হাতে আঁকড়ে ধরলাম, ওর মাথায় থুতনি রেখে বললাম,
-“ভালো মেয়েরা কান্না করে না। ভালো মেয়েরা সবসময়, সব পরিস্থিতিতে হাসে। আমার কুহেলি ভালো, তাই-তো?”
কুহু নাক টেনে বলল,
-“হু।”
-“মামনি আপনাকে ভালোবাসে, কুহেলি। আপনি কান্না থামান।”
কুহু বুঝদার বাচ্চাদের মতো কান্না থামাল। আমি ওকে কোলে নিয়েই বাড়ির ভেতর চলে গেলাম। লিভিং রুমে ভাবিদের আড্ডার আসরকে একবার আঁড়চোখে দেখে সরাসরি নিজের রুমে চলে এলাম। কুহুকে বিছানায় বসিয়ে আমি কাবার্ড থেকে ফার্স্ট এইড নিয়ে এলাম। তুলোতে এন্টিসেপ্টিক মিশিয়ে হাঁটুমুড়ে ওর সামনে বসে পড়লাম। ও লক্ষ্মী বাচ্চার মতো হাত এগিয়ে দিলো। আমি স্মিত হেসে বললাম,
-“সামান্য জ্বলবে কিন্তু।”
কুহু দু’দিকে মাথা নাড়ল। আমি আস্তে-ধীরে তুলো চেপে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করলাম। কুহু চোখ খিঁচে ধরল, কিন্তু কান্না করল না। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-“আম্মাজান, ব্যথা পাচ্ছেন?”
-“একটু, মামনি।”
-“আর একটু, হয়ে গেছে প্রায়।”
আমি হাঁটুর দিকটায় পরিষ্কার করে দিলাম। তারপর স্টিকি ব্যান্ডেজ করে দিলাম। কুহুর মুখটা কী শুকিয়ে আছে! আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-“আপনি কি মামনির সাথে ঘুরতে বেরোতে চান, কুহেলি?”
কুহু তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,
-“ইয়েস! কোথায় নিয়ে যাবেন, মামনি?”
-“চলুন, পার্কে যাই। খুব মজা করব দু’জন। আইস্ক্রিম খাব, চকলেটস খাব। হু?”
কুহু দাঁত কেলিয়ে হাসল। আমি একটা সাদা ফ্রক পরিয়ে দিলাম কুহুকে। চুলগুলোয় দু’টো ঝুঁটিও করে দিলাম। এরপর নিজেও শাড়িটা পরিবর্তন করে ওর মতো সাদা আসমানি মিশেলের একটা শাড়ি পরে নিলাম।
তারপর একটা রিকশায় করে নিকটস্থ পার্কে চলে গেলাম। এখানে একটা নদীর শাখা আছে। সেখানটায় ফেলে রাখা এক বেঞ্চে ওকে নিয়ে বসলাম। আশে-পাশে অনেক মানুষ আছে। কুহু চুপটি করে বসে এদিক-ওদিক দেখছে। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করল,
-“আচ্ছা মামনি, বাবাই আবার কবে আসবেন?”
-“বাবাই আসবে না, কুহেলি।”
কুহু বড়ো অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। চোখ-মুখ কুঁচকে, ঠোঁট ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“তা কেন?”
-“কারণ বাবাই মারা গেছে।”
-“মারা গেছে?”
-“হ্যাঁ।”
-“কেউ মারা গেলে আর ফেরে না?”
-“না, ফেরে না।”
-“কেন ফেরে না, মামনি?”
আমি ওর হাত দুটোকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম,
-“কারণ এটা নিয়ম। আমরা দুনিয়াতে এসেছি একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। প্রতিটি মানুষেরই এখানে আসার পেছনে কিছু উদ্দেশ্য থাকে, সেই উদ্দেশ্য পূরণ হলেই মৃত্যু আসে। এরপর আবার ফিরে যেতে হয়। উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গেলে আবার আসবে কেন?”
-“বাবাইয়ের কী উদ্দেশ্য ছিল, মামনি?”
-“সম্ভবত আমাদের দুইজনকে গড়ে তোলা।”
-“বাবাইয়ের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে?”
-“হয়েছে সম্ভবত।”
-“তাহলে আর ফিরবে না?”
-“না।”
-“আচ্ছা।”
কুহু হাত-পা নাড়াতে নাড়াতে আবারও আশে-পাশে দেখতে লাগল। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-“আপনার খারাপ লাগছে না?”
কুহু পুনরায় আমার দিকে তাকাল, ফ্যালফ্যাল চোখে। কীজন্য খারাপ লাগবে, তা হয়তো বুঝতে পারছে না। আমি বোঝানোর তাগিদে বললাম,
-“আপনার বাবা আর ফিরবে না, খারাপ লাগছে না?”
কুহু দু-দিকে মাথা নেড়ে বোঝাল,
-“না, লাগছে না।”
আমি হেসে বললাম,
-“আমারও লাগছে না।”
কারণ মুহিবের শারিরীক মৃত্যু হয়েছে, তার কথা ও তার সকল আদর্শ এখনও বেঁচে আছে। মানুষটা আমাকে এক জীবনে ভালো থাকার সকল সূত্র ভালোভাবে বুঝিয়ে গেছে। আমার খারাপ লাগবে কেন? লাগছে না তো। হয়তো চলতি পথে কয়েকবার কদম নড়বড়ে হবে, হয়তো ক্লান্ত হব, হয়তো গুটিয়ে পড়ব! কিন্তু পরক্ষণেই ভালো থাকার জন্য সর্বোপরি খারাপ মানুষটা আমি হব। আর এটাই হচ্ছে লাইফের সাথে গেইমিং।
কিছুক্ষণ পর হুট করেই খেয়াল করলাম কেউ একজন এগিয়ে এসে ঠিক কুহুর সামনে দাঁড়ালেন। আমি তাকাতেই তিনি কুহুকে বললেন,
-“আপনি? মিস কুহেলি আরশাত?”
কুহু বিজ্ঞদের মতো উপর-নিচ মাথা নেড়ে বলল,
-“ইয়েস!”
আবির অবাক হয়ে বলল,
-“আরে বাপ রে! আপনি সত্যিই কুহেলি আরশাত?”
কুহু আমার দিকে একবার তাকাল, এরপর আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“মামনি বলেছেন, আননৌন কারোর সাথে কথা বলতে নেই।”
আবির হেসে আমাকে বললেন,
-“কুহেলির মামনি, কুহেলিকাকে আমার সাথে কথা বলার জন্য অনুমতি দিয়ে বাধিত করুন।”
আমি কুহুকে বললাম,
-“আচ্ছা।”
আবির উৎসুকভাবে কুহুর ওপাশে বেঞ্চে বসে বলল,
-“সি! পার্মিশন গ্র্যান্টেড।”
কুহু সব-ক’টা দাঁত বের করে হাসল। আবির এবার আমাকে বললেন,
-“আমি কি কুহুকে নিয়ে একটু ঘুরে আসতে পারি? যদি ম্যাডামের অনুমতি থাকে তো!”
-“কই যাবেন?”
-“আপনাকে বলব কেন, অনিন্দা?”
আমি হেসে ফেললাম,
-“ঠিক আছে, যান।”
কুহুকে কোলে তুলে নিলেন আবির। তার পরনে সাদা শার্ট, স্লিভস গোটানো, চোখে গ্লাস। তিনি বললেন,
-“সব ম্যাচিং ম্যাচিং! কী ব্যাপার, কুহেলি? মতলব কী?”
কুহু এতেও হাসল কেবল। আবির ওকে নিয়ে দূরের ওই আইস্ক্রিম পার্লারটিতে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এলেন। প্রথমের সেই হাস্যোজ্জ্বল মুখটা তাঁর কেমন মিইয়ে রয়েছে। হাসছেন না একদমই। আইস্ক্রিম আমার দিকে এগিয়ে দিলে আমি তা হাতে নিয়ে বললাম,
-“কী হয়েছে, আবির ভাই?”
আবির কিছু বললেন না আমাকে আর। পুরোটা সময় কুহুর সাথে কথা বলল কেবল। আমিও আর কিছু বললাম না তাঁকে। সন্ধ্যের দিকে ফেরার সময় কুহুকে অনেকগুলো চকোলেটস নিয়ে দিলেন। এতে আমি বললাম,
-“প্রয়োজন নেই এসবের।”
আবির কঠোরভাবে তখন বললেন,
-“তোমার কোনো কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না, অনিন্দা। কিন্তু বাচ্চা মেয়েটার পড়ে। একরোখা মেয়ে মানুষ তুমি। সেসবের আর কী বুঝবে?”
আমি সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,
-“কীসের প্রয়োজন?”
-“একজন মা নিজেকে তার বাচ্চার জন্য যথেষ্ট মনে করলেও, একজন বাচ্চার জন্য কখনও তা যথেষ্ট নয়। আ সিঙ্গেল মাদার ক্যান নট এফোর্ড দ্যা হোল হ্যাপিনেস অভ আ চাইল্ডস নিড। কুহুর গায়ের প্রতিটি ক্ষত তার প্রমাণ হিসেবে জ্বলজ্বল করছে।”
আমি চুপ রইলাম। কুহু সম্ভবত আবিরকে সব বলে দিয়েছে! আমার আর আজগুবি লজিক দিয়ে তর্ক এগোতে ইচ্ছে করল না। আবির মিথ্যে বলেননি। আমি কুহুকে গোটা পৃথিবী দিতে পারলেও, কখনও একজন বাবা দিতে পারব না। এদিক দিয়ে আমি ব্যর্থ। শেষমেষ বললাম,
-“পৃথিবীতে সবার বাবা থাকা লাগবে এর কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে?”
আবির আরও গম্ভীর হলেন,
-“নিজের আর কুহেলির খেয়াল রেখো, অনিন্দা। তোমাদের লড়াই অনেকদূরের…”
|চলবে|