#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা
৩৬.
নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ এক কঠিন ঝড়ে পরিস্থিতি স্তব্ধ। সকলে যেন বুঝে উঠতে পারছে না এই জায়গায় কিছু ক্ষণের মাঝে কি ঘটে গেল!নন্দার রীতিমতো হাত পা কাঁপছে। শেখর ঘোষের নিথর দেহটা পড়ে আছে আরাম কেদারায় ভীষণ অযত্নে, অবহেলায়। ললিতার চোখে-মুখে নির্লিপ্ততা। শতাব্দও কিংকর্তব্যবিমুঢ়। হুট করে এমন একটা কান্ড হতে পারে এটা যেন কারো ধারণার মধ্যেই ছিল না। সব তো স্বাভাবিকই ছিল। সাধারণ কথা কাটাকাটি। সাধারণ কথা কাটাকাটির মাঝেই এত ভয়ঙ্কর একটা কাজ হয়ে গেল? ললিতার মত মেয়ে এমন কাজ করতে পারল? যে বাবা হাসি হাসি মুখে মেয়ের সাথে কথা বলছিলেন, এত বাক-বিতন্ডার পরও কিছু বলেনি মেয়েকে, সে বাবাকে খুন করতে ললিতার একবারও কি বুক কাঁপলো না!
শতাব্দ অস্ফুটস্বরে বলল, “এখন এখান থেকে বের হতে হবে ললিতা। এক মুহূর্ত এখানে দাঁড়ানো উচিত হবে না।”
ললিতার কাজের থেকেও শতাব্দের কথা নন্দাকে বেশি অবাক করে দিল। ললিতা যে একটা এমন ভয়ঙ্কর কাজ করে ফেলেছে তার জন্য শতাব্দ একটা কথাও বললোনা বরং চেষ্টা করছে এই জায়গা থেকে যাওয়ার! এত কিছু হয়ে গেল কোন শোক-তাপ দেখা গেল না তাদের মাঝে, তবে কি তারা এসব ভেবে এখানে এসেছিল? কেবল নন্দাই জানত না ব্যাপারটা! নন্দার ভাবনার মাঝেই ললিতার কণ্ঠস্বর পাওয়া গেলো,
“শতাব্দ, তুই নন্দাকে নিয়ে বাহিরে যা। আমি আসছি।”
“আসছি মানে? কোথায় যাবি তুই?”
“জমির ওই কাগজ গুলো যদি আমরা আমাদের কাছে নিয়ে যাই তাহলে হয়তো মানুষ গুলোকে জামাটি ছাড়তে হবে না।”
“তোর যাওয়ার দরকার নেই। তুই আমাকে বল কোথায় আছে সেগুলো আমি নিয়ে আসছি।”
নন্দা কেবল চুপচাপ করে শুনে গেল সবটা। একজন মানুষ দেশ সেবায় কতটা ব্রত হলে নিজের বাবাকে এভাবে মেরে ফেলতে দু’বারও ভাবে না! মেরে ফেলার পর অনুশোচনাও জাগে না! নন্দর ভাবনার মাঝেই একে কতগুলো কাগজ নিয়ে আসলো। শতাব্দ ও ললিতার মাঝে প্রচুর ব্যস্ততা থাকলেও নন্দা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। একটু আগে যে মানুষটার সাথে সে কথা বলল, সে মানুষটাই কিনা এখন তার সামনে নিথর হয়ে পড়ে আছে! ললিতা বলল,
“চল নন্দা বের হতে হবে। কোম্পানির কেউ আমাদের দেখে ফেললে ঘোর বিপদ হয়ে যাবে। বিভিন্ন সাহেবদের আনাগোনা থেকে বাড়িতে।”
নন্দা অস্ফুটস্বরে বলল, “মানুষটার লা শ কি তাহলে এভাবেই থাকবে? কতক্ষণ এমন লা শ পড়ে থাকবে? লা শ একা ফেলে রাখাও তো ভালো না।”
“কুসংস্কারের কথা বলিস না তো, নন্দা। এখন এসব বলার সময় নেই। না এখন আবেগ দেখানোর সময়। দ্রুত বের হতে হবে।”
”তোমরা বের হও, আমি নাহয় থাকছি উনার সাথে। মানুষটাকে একা ফেলে যেতে পারবো না। এক মুহূর্তের জন্য হলেও সে আমাকে খুব আপন মানুষের মতো অনুভব করিছে, ভালো আচরণ করেছে। সে কৃতজ্ঞতা ভুলে তো চলে যেতে পারি না।”
নন্দার কথায় হাসলো ললিতা। এবার তার বাম চোখের কোনায় চিকচিক করল কিছু অশ্রুবিন্দু। শক্ত থাকার পরও তার অশ্রুবিন্দুরা যেন তার কথা শুনল না, তার সাথে করলে চরম বেইমানি যেমন বেইমানি সে করেছে নিজের বাবার সাথে। যতই হোক, বাবার মৃত্যু কি সন্তান মানতে পারে? তাও যদি হয় নিজের হাতে!
নন্দার হতভম্ব ভঙ্গিতে বুঝাই যাচ্ছে সে যে নিজের মধ্যে নেই। ধীরে ধীরে ললিতাও যেন ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছিল। শতাব্দ দিকশূন্য হয়ে দু’জনের হাত ধরে টেনে বেরিয়ে গেল বাড়িটা থেকে। নন্দা তবুও ঘাড় ঘুরিয়ে পিছে ফেলে আসা শেখর ঘোষের দিকে তাকিয়ে রইলো। লোকটার চোখের পাতা মেলা। মনে হচ্ছে সুস্থ, সবল মানুষ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে পৃথিবী। নন্দার খুব পরিচিত মনে হলো এই মুখমন্ডল। মনে হলো বহুদিন আগ থেকে সে এই মুখমন্ডলের মানুষকে চেনে অথচ আজকেই শেখর ঘোষের সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ হলো। কেন এত পরিচিত ঠেকছে তাহলে!
শতাব্দ, ললিতা কিছুটা আগেই ছিল। পেছনে পরে গেল নন্দা। তারা গেইট থেকে বের হতেই সাহেবী একটা গাড়ি সেখানে উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজিয়ে প্রবেশ করল।
_
আজ নন্দার বাড়িতে ফিরতে অনেক সময় লেগে গেল। চারপাশে তখন গোধূলি বিদায় নিয়েছে। কাকের অসহ্যকর হাঁক খর আশেপাশে শোনা যাচ্ছে না। উত্তপ্ত প্রকৃতি এখন প্রায় শীতল। বিরাট বিরাট তালগাছ মৃদুমন্দ বাতাসে যেন নাচছে আহ্লাদে। নন্দার চোখ জ্বালা করছে, মাথাটাও ধরে এসেছে প্রায়, ভারী একটা যন্ত্রণার আভাস মাথা জুড়ে। সে ক্লান্তভঙ্গিতে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। চারপাশে তখন কৃত্রিম আলোর ঘনঘটা।
নন্দা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই দেখল বসার জায়গাটাতে বসে আছে স্টিফেন। তার পড়ণে বাহিরের পোশাক। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বারবার প্রহর গুনছে বোধ হয়। তার কপাল জুড়ে ঘামের আভাস। হয়তো কিছুর অপেক্ষা করছে।
নন্দা ভ্রু কুঁচকালো। মৃদুস্বরে ডাকলো,
“কি হয়েছে?”
স্টিফেন সাথে সাথে চমকে গেল। উঠে গেল তৎক্ষণাৎ। পাশ ফিরে তাকাতেই নন্দাকে দৃষ্টিগোচর হলো তার। মুহূর্তে সে বাতাসের বেগে নন্দার দিকে এগিয়ে এলো, ব্যস্ত কণ্ঠে বারংবার শুধালো,
“সারাটি দিন কোথায় ছিলে, সানশাইন? তোমার কলেজ ছুটি হইয়াছে সেই দুপুর বেলা তারপর আমি এই বিকেল অব্দি তোমার কলেজে তোমাকে খুঁজিয়াছি।”
নন্দা চমকালো, বিস্মিত ভঙ্গিতে বলল, “আমার কলেজ গিয়েছিলেন আপনি?”
“শহরে আমার কাজ ছিল বিধায় আমি গিয়াছিলাম। ভাবলাম, তোমার কলেজ থেকে তোমাকে সাথে নিয়ে ফেরা যাক। অথচ তোমার কলেজ যাওয়ার পর জানিতে পারিলাম তুমি নাকি কলেজে নাই। কোথায় ছিলা, সানশাইন? চিন্তা হইয়াছিল খুব।”
নন্দা আমতা আমতা করে উত্তর দিল,
“আ আসলে ললিতা আছে না, ওদের সাথে গিয়েছিলাম।”
এতোটুকু কথা বলতেই নন্দার ঘাম ছুটে গেল। যেন শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। বারবার ভেসে উঠছে দুপুর বেলার দৃশ্য গুলো। কেমন করে হাস্যজ্জল মানুষটা নিমিষেই প্রাণ হারালো! নন্দার অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তেজনাটা দৃষ্টিগোচর হয় স্টিফেনেরও। সেখানে কপাল ভাঁজ করল, নন্দার বাহু ধরে শুধাল,
“কিছু কি হইয়াছে? এমন কাঁপিতেছ কেন?”
নন্দা বামে-ডানে মাথা নাড়াল। ঘটনাটা ভুলে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালালো। স্টিফেন নন্দার হাতের বই গুলো সাবধানে নিয়ে টেবিলের উপর রাখল। বাড়ির গৃহ ভৃত্যদের ডেকে জল নিয়ে আসার নির্দেশ দিল। শাড়ির আঁচল আটকানো পিনটাও খুলে দিল। উপরে ঠান্ডা বাতাস প্রদানকারী তিন পাখা ওয়ালা যন্ত্রটা চলা স্বত্বেও সে কোথা থেকে যেন একটি হাত পাখা খুঁজে আনল। ব্যস্ত হাতে বাতাস দিতে আরম্ভ করল নিজের স্ত্রীকে। নন্দা চুপচাপ সবটা দৃশ্যই পর্যবেক্ষণ করছিল। মানুষটার কী যত্ন তার প্রতি! মুগ্ধতায় চোখ বুজে এলো নন্দার। মুহূর্তেই চোখের সামনে ভেসে উঠল ললিতার সেই হিংস্র মুখ এবং হাতে বন্দুক ধরার রূপটা। কেবল তার বাবা কোম্পানির হয়ে কাজ করে বলে মেয়েটা নিজের বাবাকে খু ন করতে দু’বার ভাবল না অথচ স্টিফেন তো নিজেই ব্রিটিশদের দলের। স্টিফেনকে কী ছেড়ে দিবে ওরা?
কথাটা মাথায় আসতেই নন্দার মন ভীত হলো। সে জড়িয়ে ধরলো স্টিফেনের কোমড় শক্ত হাতে। অনবরত বলতে লাগল,
“কিছু হবে না আপনার, কিছু হবে না।”
স্টিফেন কেবল আহম্মক হয়ে তাকিয়ে রইলো। যে মেয়ে তাকে পছন্দ করেনা সে মেয়েই কি-না নিজ ইচ্ছায় তাকে জড়িয়ে ধরেছে এবং বিড়বিড় করে কিছু বলছে!
স্টিফেন ও নন্দার এই ব্যাক্তিগত মুহূর্তেই প্রবেশ করল অ্যালেন। আকস্মিক এই দৃশ্যে সেও কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেল। ফিরে যেতে চেয়েও ফিরতে পারল না। অপলক তাকিয়ে রইলো সে দিকে। আপনমনে ভাবল, এই মুহূর্তটা তার হলে খুব কী বেশি ক্ষতি হয়ে যেত? নিজের ভাবনায় নিজেই ছি: ছি: করে উঠে অ্যালেন। নন্দা পবিত্র। তাকে নিয়ে এমন ভাবনা শোভনীয় না। কিন্তু ভালোবাসার জায়গায় যে সবই ঠিক সে কথা মস্তিষ্ক স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বার বার।
#চলবে…..
#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা
[৩৭]
হেমন্তের বিদায় বার্তা প্রকৃতি জুড়ে। এলোমেলো কুয়াশার জয়ধ্বনি বুঝিয়ে দিচ্ছে শীত এলো বলে। কৃষ্ণচূড়ার গাছে এখন আর বড়ো বড়ো লাল ফুল ফুটছে না। সেই অবধারিত কাজের বোধহয় বিশ্রাম কাল শুরু হয়েছে। শস্য হীন মাঠকে এখন আর উচ্ছ্বল প্রেমিকা মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ইতিহাসের বিধ্বস্ত ট্রয় নগরী। ভরা যৌবনা দিঘির জলেও তরঙ্গের তেমন দেখা নেই। চারপাশে সব কেমন নেই নেই অনুভূতি। তবে লুকিয়ে চুরিয়ে এই নেই প্রকৃতিতে শাসন-শোষন এবং বিদ্রোহের এক গমগমে ভাব বিরাজিত। নিবিড় ভাবেই সেই কার্য গুলো পরিচালিত হচ্ছে। নন্দার ভেতরেও হাজারো বিষন্নতা ঠেলে এসবে সুক্ষ্ম লক্ষণ পরিলক্ষিত।
অ্যালেন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে তাদের বিশাল ছাঁদের উপর। কোথাও যেন মন খারাপের রেষ উপস্থিত। তন্মধ্যে ছাঁদে উপস্থিত হলো নন্দা। বেশ চপল পায়ে উপস্থিত হওয়াতেই তার উপস্থিতি টের পেল অ্যালেন। ঘাড় ঘুরিয়ে নন্দাকে দেখতেই সে স্বভাবতই মাথা নুয়ানো। নন্দার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা থেকেই যে সে এ কাজটি করে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হুট করে কারো ব্যাক্তিগত একাকীত্বে প্রবেশ করে ফেলেছে ভেবে অস্বস্তি হলো নন্দারও। সে ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“ঠাকুরপো, আপনি এখানে! জানতাম না তো। আপনি থাকুন তাহলে। কিছু প্রয়োজন হলে বলবেন, আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
“বৌঠান, আপনার সাথে কী আমি কিছু কথা বলিতে পারি?”
অ্যালেনের প্রশ্নের মাঝেই ইচ্ছে প্রকাশ। কথাটা অত্যন্ত জরুরি না হলে যে লোকটা এভাবে বলতো না তাও নন্দার ঢের জানা। তাই সে সম্মতি জানাল, বিনীত কণ্ঠেই বলল,
“অবশ্যই। বলুন না, ঠাকুরপো। কী বলতে চান?”
নন্দার শুনতে চাওয়ার প্রশ্রয় অ্যালেনের মনে সাহস জাগাল। সে কতক্ষণ ইতস্তত করে অতঃপর বলল,
“আপনি স্টিফেনকে নিয়া একটু ভাবিবেন, বৌঠান। তাকে নিয়া ভাবিবার লোকের বড়ো অভাব।”
নন্দা ঠিক ধরতে পারলে না অ্যালের সাধারণ বাক্যের ভেতরে থাকা অন্তর্নিহিত অর্থটা। শুধাল,
“কেমন ভাবনার কথা বলছেন, ঠাকুরপো?”
“যেমন ভাবনায় ও ভালো থাকিবে। স্টিফেনকে আমি বরাবরই অনুভূতিশূন্য ভাবিয়া ছিলাম। কিন্তু আপনাকে দেখার পর বুঝিলাম ছেলেটার অনুভূতি আছে। তাও আবার যেমন-তেমন অনুভূতি না, খুব ভালোবাসিতে চাহিবার মতন অনুভূতি। সেই অনুভূতির ক্ষতিসাধন করিবেন না, বৌঠান। প্রথমে ক্ষমা চাহিয়া নিচ্ছি আমার এমন ক্ষমা অযোগ্য অপরাধের জন্য। কী করিব বলেন? স্টিফেনকে আমি বড়ো ভালোবাসি। কিন্তু আজকাল আমার মনে হইতেছে স্টিফেনের বড়ো কোনো ক্ষতি হইতে পারে আর সেটা কেবল আপনার জন্য। তাই আপনি যদি কৃপা করিয়া সাবধান হোন তাহলে বড়োই কৃতজ্ঞ হইবো, বৌঠান।”
অ্যালেনের কথায় চমকালো নন্দা। ক্ষানিক থমকালোও। হতভম্ব কণ্ঠে বলল,
“আমার জন্য উনার ক্ষতি হবে? কী ক্ষতি?”
“আপনি গ্রামবাসীর হইয়ে প্রস্তাব রাখিয়াছেন কর দিতে পারিবেন না এই মাসের। একমাত্র আপনি কথাটি বলিয়াছেন বলিয়া স্টিফেন এক কথায় রাজি হইয়া গিয়াছে কিন্তু আপনি কী জানেন এর জন্য তাকে কতটা ভুগিতে হইবে? কোম্পানি বার বার তাকে চাপ দিচ্ছে কর সংগ্রহ করিবার জন্য। আপনি ভালো করিয়াই জানেন, বনে থেকে বাঘের সহিত বিবাদ করিয়া বাঁচা সহজ হইবে না। স্টিফেন আপনাকে বড়ো ভালোবাসে। অন্ততপক্ষে সে ভালোবাসাকে সম্মান করিয়া তাকে নিয়া ভাবিবেন।”
অ্যালেন সবটুকু কথা বড়ো শ্রদ্ধার সাথে মাথা নিচু করে বলেই বিদায় নিয়েছে। নন্দার অবস্থা এখনো স্থির। গত পরশুই সে গ্রামবাসীর হয়ে প্রস্তাব রেখেছিল যে এবার কর দিতে পারবে না কারণ গ্রামবাসীর ফসলের জমি বৃষ্টিতে হাবুডুবু খেয়েছিল যার জন্য অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সে তো একবারও ভেবে দেখেনি স্টিফেনের উপরেও তো কত মানুষ আছে। এতে সমস্যা তো স্টিফেনেরই বেশি হবে। অ্যালেন কী সেজন্যই তাকে কয়েকদিন যাবত এড়িয়ে যাচ্ছিল রুষ্ট চোখে! কিন্তু সে করবে টা কী? গ্রামের দায়িত্ব তার উপর। দেশের ভালোর দায়িত্বও তার উপর। আবার সংসারও তার। কোনটা রক্ষা করা তবে ধর্ম হবে?
_
“দেখেছো ভাই নন্দা, তোমার স্বামী কি-না শেষমেশ আমার কাছে এসে আবদার করল তার মিষ্টান্ন খেতে ইচ্ছে করছে! কী করি বলো! ঝটপট হেঁশেলে গিয়ে নিজের হাতে মিষ্টান্ন রেঁধে আনলাম। সে এলে মনে করে দিও তো তাকে। আমার মনে থাকে কি না থাকে।”
নন্দা স্নাগার থেকে বেরুতেই বিহারিণী পর পর কথার ঝুলি খুলে বসল। যেন সে অপেক্ষাতেই ছিল কতক্ষণে সব কথা উগড়ে ফেলতে পারবে। নন্দা ভ্রু কুঁচকালো। অবাক কণ্ঠে বলল,
“তোমার কাছে মিষ্টান্ন চেয়েছে!”
“তাই তো চাইলো। বলল খেতে ইচ্ছে করছে। তুমি তো কলেজ গিয়েছিলে তাই আমাকে বলল।”
নন্দার শরীর ক্লান্ত। সে ক্লান্ত চোখেই বিহারিণীর দিকে চাইল। বিহারিণীর ঠোঁটে হাসির ছাঁপ। মিষ্টি হাসছে মেয়েটা। বেশ সুন্দর একটা মেয়ে। আচ্ছা, তাকে এতদিন এই বাড়িতে জায়গা দিয়েছিল স্টিফেনরা, তাদের কী একবারও ভুল করে এই নারীর প্রতি মন ঝুঁকেনি? লোকে তো বলে- পুরুষ মানুষ নারী পেলে নিজেদেরও ভুলে যায় অথচ এত সুন্দর একটা নারীকে পেয়েও একবার তাদের মাথা ঘুরেনি? নন্দা নিজের ভাবনাতেই নিজে অবাক হলো। তার ভাবনা গুলে কেমন সেকেলে, আটপৌরে লাগল নিজের কাছেই। এসব ভাবনা সেই মানুষ গুলোকে নিয়ে ভাবা বড়োই বেমানান ঠেকল।
নন্দার ভাবনার মাঝেই বিহারিণী হাসল। কিছুটা ঠাট্টা করে বলল,
“স্বামীর সোহাগে আজকাল বড়ো সুন্দরী হয়ে যাচ্ছ বোধকরি, অলকানন্দা!”
নন্দা চমকে গেল এমন একটা বিশ্রী ঠাট্টায়। স্তম্ভিত, থমথমে হয়ে গেলো তার মুখ। লজ্জায় চোখ বুঝে আসতে চাইল। বিহারিণীর মতন মানুষ এমন একটা ঠাট্টা কীভাবে করল! নন্দা কঠিন কথা বলতে গিয়েও মায়া হরিণীর মতন আঁখি যুগল দেখে থেমে গেল। যেন দুটো টলমল করা ভরা দিঘি। এই চোখের মায়ায় লেপ্টে গেলে আর কিছু বলা সম্ভব না। নন্দাও পারল না তাই কিছু বলতে।
তন্মধ্যে স্টিফেন এসে উপস্থিত হলো। হাসি-ঠাট্টার সমাপ্তি ঘটিয়ে বিহারিণী বেরিয়ে গেল সাথে সাথেই। নন্দার চোখ-মুখে একটা হতভম্ব ভাব। স্টিফেন ভ্রু দুটো কুঞ্চিত করল,
“এমন অবাক হইয়া আছো যে!”
নন্দা চোখ ফিরিয়ে স্টিফেনের দিকে তাকাল। লোকটারও ক্লান্ত, পাংশুটে মুখ তবে ঠোঁটে লেপটানো মিষ্টি হাসি। সেই হাসির দিকে তাকিয়েই নন্দার বুক কাঁপল। গতকালকের বলা অ্যালেনের কথা বার বার প্রতিধ্বনিত হলো। তন্মধ্যে আজ সকালেই কলেজ যাওয়ার পর তাদের দলের বড়ো মেম্বার দীপকদা তার স্বামীর সম্পর্কে আজ বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। নন্দার আজকাল মানুষ গুলোকে ভয় লাগে। সেদিন ললিতা কীভাবে নিজের বাবাকে মে রে ফেলল! যদিও পরে নন্দা জানতে পেরেছে এটা দীপকদারই নির্দেশ ছিল। এমন একটা ভয়াবহ কাজ করেও যারা নির্লিপ্ত থাকতে পারে তারা তো যা-কিছু করার ক্ষমতা রাখে। নন্দার ভয় হচ্ছে৷ সত্যিই অ্যালেনের ভাষ্যমতে নন্দা’ই কী স্টিফেনের বড়ো ক্ষতিটা করবে!
স্টিফেন নন্দার কাছে এলো, মেয়েটার ঘোরগ্রস্ত হাবভাব দেখে বাহু ক্ষানিকটা ঝাঁকিয়ে বলল,
“কী হইয়াছে? তোমাকে চিন্তিত দেখাইতেছে!”
নন্দা স্টিফেনের কৌতূহলী মুখশ্রীর দিকে চাইল। বলল,
“আপনি বিহারিণী দিদির কাছে মিষ্টান্ন খেতে চেয়েছেন?”
প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে নিজেই থতমত খেল সে। না চাইতেও এই প্রশ্নটা বেরিয়ে গিয়েছে। নারীর মন, এত সহজে শখের পুরুষের উপর কী নির্লিপ্ত হতে পারে? কোথাও একটা গোপন টান তো থাকেই। নারী যে নিজের শখের পুরুষের ছায়ার কাছেও অন্য কোনো নারীর গন্ধ সইতে পারে না।
স্টিফেন ভারী চমকাল। জবাব দিল, “নো। আমি তো কখনোই মিষ্টান্ন খাই না। কেমন মিষ্টি মিষ্টি স্বাদ! আই ডোন্ট লাইক ইট।”
নন্দার চোখ ছোটো ছোটো হয়ে এলো। বিহারিণী কী তবে মিথ্যা বলল?
_
ঝড়ো আবহাওয়ায় উন্মাদ প্রকৃতি। ভয়ঙ্কর শব্দে ডেকে উঠছে আকাশ। নন্দার সকালটা যেন মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। এ কেমন নির্মম দৃশ্য দেখতে হলো তাকে? স্টিফেন আর বিহারিণী এতটা কাছাকাছি! নন্দার বুকে তীব্র যন্ত্রণা। এ দৃশ্য দেখার আগে মৃত্যু হলো না কেন?
#চলবে…..
#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা
[৩৮]
মন খারাপের দু’মুঠো মেঘ এসে ভরিয়ে দিয়েছে নব্য সুখের বারান্দা। হৃদয়ে থাকা সুখের প্রাচীর এখন প্রায় ধ্বংসাবশেষ বাকি। সদ্য ফোঁটা প্রেমের পদ্মও তুমুল ঢেউয়ে দিকভ্রান্ত। অম্বরের আস্তরণে বিষাদ নেমেছে ধরায়। সেই দিকভ্রান্ত, ধ্বংসাবশেষ, বিষাদ সম্বল করেই নন্দার ভালো থাকার চেষ্টা। ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে সে। শাড়ির প্রান্ত ভাগ উড়ছে বাতাসের তালে তালে।
“এত রাতে ছাঁদে কী করিতেছ, সানশাইন?”
পরিচিত থমথমে পুরুষালী কণ্ঠে নন্দা খানিক চমকালো অতঃপর নিবিড় স্বরে বলল,
“তেমন কিছুই না। চাঁদ দেখছি।”
“অথচ আজ আকাশে মেঘ করিয়াছে। হয়তো বৃষ্টি হইবে। চাঁদ কোথায় দেখিতেছো? নাকি নিজেকে দেখিয়া ভুল করিয়া চাঁদের সাথে গুলিয়ে ফেলিয়াছো? তুমিও তো চাঁদের থেকে কম নও।”
স্টিফেনের কণ্ঠে ঠাট্টার ছাঁপ অথচ নন্দা নিশ্চুপ। তার চোখে বার বার ভেসে বেড়াচ্ছে কিছুক্ষণ আগের সেই নির্মম দৃশ্য। যেই দৃশ্যে একজনের চোখে সে ভালোবাসার নরম চিহ্ন দেখতে পেয়েছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। নন্দা সবসময়ই পাথরকেও হার মানায় তার হৃদয়ের কাঠিন্যতা দিয়ে। আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না। মনের বিশাল তান্ডব মনেই চেপে সে মুচকি হাসল। বলল,
“সব ছেড়ে আমাকেই কেন ভালবাসেন?”
স্টিফেন খানিক অবাক হলো। ভালোবাসা-বাসির নামতা কখনোই নন্দার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়নি। তবে আজ কেন? স্টিফেনের ভ্রু কুঞ্চিত হওয়ার দৃশ্যও দৃষ্টিগোচর হলো নন্দার। সে হাসল,
“প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না বুঝি?”
“তুমি বলো তো, সব ছাড়িয়া ঐ আকাশের নাম কেন আকাশ রাখা হইল?”
নন্দা স্তম্ভিত নয়নে চাইল,
“এটা প্রশ্ন হলো?”
“তোমারটা প্রশ্ন হইলে, আমারটা হইবে না কেন?”
“আপনার প্রশ্নের কোনো বিশ্লেষণ নেই।”
“তোমার প্রশ্নেরও তবে বিশেষত্ব নেই। ভালোবাসার ক্ষেত্রে সকল প্রশ্নই বেমানান। যদি প্রশ্ন মানানসই হয় তবে সে ভালোবাসার জলাঞ্জলি হোক। আমি যে অত ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ করে ভালোবাসি নাই, সানশাইন। তাই বলিয়া কী তুমি আমাকে ব্যর্থ প্রেমিক ঘোষিত করিবে?”
“বাহ্! প্রেম বাক্য তো ভালো জানেন!”
“জানিবো না কেন? প্রেমে পড়িয়াছি আর প্রেম বাক্য জানিব না, তা কেমন করিয়া হয়?”
নন্দা হাসল। খুব করে চেয়েও সে তাচ্ছিল্য করতে পারল না। যে এত ভালবাসতে পারে তার প্রতি তাচ্ছিল্যটা বড্ড বেমানান। তাই চেয়েও সে তাচ্ছিল্য করল না। কেবল বুক ভোরে বেরিয়ে এলো হতাশার দীর্ঘশ্বাস।
“তোমরা কি করছ?”
ভালোবাসার আদান-প্রদান করা দুইজন মানুষের মধ্যিখানে তৃতীয় মানুষের কন্ঠটা সবসময়ই বড়ো খসখসে ঠেকে। আজও ঠেকলো। মেয়েলী রিনরিনে কণ্ঠ। স্টিফেন এবং অলকানন্দা ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার পানে চাইল। বিহারিনীর হাস্যজ্জবল মুখটা তাদের দৃষ্টিগোচর হল। গাঢ় অন্ধকারে মেয়েটার মুখটা যেন চাঁদের ন্যায় ঝলমল করছে। নন্দা সেদিকে আড় চোখে চেয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। থমথমে কণ্ঠে বললো,
“স্বামী স্ত্রী একসাথে থাকা মানেই অনেক ব্যক্তিগত কথা বলা, ব্যাক্তিগত কাজ করা। সেটা জিজ্ঞেস করা মোটেও বুদ্ধিমতীর লক্ষণ নয়।”
নন্দা ভেবেছিল তার এমন একটা কথার পর বিহারিণী কপাল কুঁচকাবে, মন খারাপ করবে কিংবা কেঁদেও দিবে। কিন্তু তার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে বিহারিণী হেসে উঠল। কাছে আসতে আসতে বলল,
“আমি তো বুদ্ধিমতী নই, নন্দা।”
বিহারিণীর ঠোঁটে বিশ্ব জয়ের হাসি। নন্দা কিংকর্তব্যবিমুঢ়। এই বিহারিণীর মুখমন্ডলে কুটিলতা বিরাজমান। আগের মত নিষ্পাপ নিষ্পাপ লাগছে না তাকে। কেমন যেন অচেনা মুখমন্ডল! অপরিচিত মানুষ। যে মানুষ কেবল ধ্বংস আনতে জানে। নন্দার ভাবনার মাঝে ভেসে এলো স্টিফেনের কঠোর কণ্ঠ,
“পাগল কখনো নিজেকে পাগল দাবী করিবে না সেটাই স্বাভাবিক।”
নন্দা এই কঠোর কণ্ঠ চেনে। স্টিফেন সবসময় বাহিরের মানুষের সাথে এভাবেই কথা বলে। সবটা কেমন গোলমেলে লাগল নন্দার। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিছুই যেন বোধগম্য নয় তার।
“ভুল সময়েই এলাম বোধহয়। নাহয় সাহেব এত রেগে কথা বলতো না।”
“আমি তো কখনোই আপনার সাথে ভালো করেও কথা বলিনি। তবে এমন কথার কারণ কী?”
স্টিফেন বিরক্ত যে তা ঢের বুঝা গেল। বিহারিণীও নত মস্তকে বেরিয়ে গেল বিনা বাক্যব্যয়ে। নন্দা ভাবছে, কিন্তু ভাবনার কোনো কূল কিনারা মিলছে না। যার এত কাছাকাছি আসা যায়, যাকে জড়িয়ে ধরা যায়, তার সাথে এত রুক্ষ স্বরে আদৌও কথা বলা যায়! নন্দার ভাবনার মাঝে কোমরে অনুভব করল শীতল ছোঁয়া৷ পুরুষালী হাতের আদুরে ছোঁয়া। যে স্পর্শে কোনো ছলচাতুরী নেই, অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। নন্দার নারী স্বত্তাও উন্মাদ হলো। এই প্রথম কাছে আসার গল্প হলো ভালোবাসার। এই প্রথম চন্দ্র বিহীন অন্তরিক্ষ লিখল কেবল আর কেবল মাত্র ভালোবাসার কাব্য। স্টিফেন ফিসফিস করে বলল,
“আমার সবটুকু খারাপ থাকিবার জীবনে তুমি আমার সর্বশ্রেষ্ঠ ভালো থাকা। মৃত্যুও যদি তুমি হও আমি সেচ্ছায় শ্মশানে যাইতে প্রস্তুত। অমৃত যদি তুমি হও তবে আমি পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করিতে রাজি। সবকিছুর বিনিময়ে কেবল ভালোবাসিলেই হইবে।”
নন্দা কী কাঁদল? কাঁদল বোধহয়। মুক্তোর দানার মতন অশ্রু গড়িয়ে পড়ল তার চক্ষুর আঁধার থেকে। এত ভালোবাসার পৃথিবীতেও নন্দার কেন একা একা লাগে? তবে কী সে ভালোবাসতে বড়ো দেরি করে ফেলছে?
_
কলকাতার শহরে নন্দার ব্যস্ত পদচারণ। মুমিনুল মাস্টারমশাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। মানুষটা শহুরে একটি পাঠশালায় পড়াচ্ছেন আজকাল। এটার ব্যবস্থাও স্টিফেন করে দিয়েছে। মাস্টারমশাই আজ নন্দাকে দেখে প্রায় কেঁদেই দিয়েছেন। বারংবার নন্দার সৌভাগ্যে যেন নজর না লাগে তাই প্রার্থনা করেছেন। মাস্টারমশাই তো মানুষ চিনতে ভুল করেন না। তবে কী কোথাও একটা খামতি রয়ে গেছে? স্টিফেনের মতন মানুষকেও মাস্টারমশাই আশীর্বাদ করেছেন। নন্দাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে নন্দার অভিশপ্ত জীবনে স্টিফেন আশীর্বাদ। তবে….. এই তবের আর অন্ত খুঁজে পায় না নন্দা। কোথায় গেলে মিলবে উত্তর! কার কাছে গেলে পাবে সে সব উত্তর?
ব্যস্ত পা থেমে গেল পরিচিত কোনো মুখের আদল দেখতে পেতেই। নন্দা বার কয়েক পলক ঝাপটিয়ে বুঝার চেষ্টা করল তার দৃষ্টি কী ভুল দেখছে না সঠিক! যখন বুঝল তার দৃষ্টি সঠিক দেখছে, নন্দা আর এক মুহূর্তও দেরি করল না। ছুটে গেল পরিচিত মানুষটার দিকে। নন্দাকে দেখে সে মানুষটাও হতবাক। নন্দার দুরু দুরু কাঁপছে বুক। বহু কষ্টে শুধাল,
“একটি সংসার ভেঙে ভালো থাকা যায় কীভাবে, বলবে?”
অপরিচিত রাস্তায় পরিচিত কণ্ঠ পেয়ে সে মানুষও ভড়কালো। তাও আবার এমন প্রশ্ন! নন্দা এদিক-ওদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল কেউ শুনেছে কি-না এমন সত্য কথাটুকু। যখন দেখল কলকাতার এই ব্যস্ত রাস্তায় এমন সত্যি কথাও শোনার মতন কারো সময় নেই, তখন সে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। ততক্ষণে সামনের মানুষটা কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলল,
“এটা আবার কেমন কথা?”
“ভুল কিছু কী বলেছি? তরঙ্গিণী দেবীর প্রেমের তরঙ্গে একে একে ভেসে যাচ্ছে সকল সংসার। আমি বলবো না সেটা?”
তরঙ্গিণী ভ্যাবাচেকা খেল। নন্দার চোখ-মুখ শক্ত। কঠিন গলার স্বর। বলল,
“সংসার কেমন কাটছে?”
“তোমার সংসার তো দিব্যি কাটছে, নন্দা। তবে এমন প্রশ্ন কেন?”
নন্দা এবার পূর্ণদৃষ্টিতে তাকাল। নাহ্, তরঙ্গিণীর কোথাও তো শঙ্খ-সিঁদুরের চিহ্ন নেই। তবে যে মানুষ বলল সে প্রসাদের সাথে পালিয়েছে! নন্দার এলোমেলো মুখশ্রীর দিকে তাকাল তরঙ্গিণী। জিজ্ঞেস করল,
“এমন কথা বলছ কেন?”
#চলবে