#অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী
#লেখনিতেঃতানজিলা খাতুন তানু
#পার্টঃ৯(অন্তিম পার্ট)
সুতপার মানুষটার গলাটা খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথাও জেনো শুনেছে কিন্তু কোথায় মনে করতে পারছে না।
সুতপাঃ আপনি কে সত্যি করে বলুন আপনার কন্ঠস্বরটা আমার খুব পরিচিত।
– আমি কে জানতে চাও, আচ্ছা নাও আমি বলছি আমি কে,তোমার শেষ ইচ্ছাটা তো পূরন করি।
সুতপার চোখের বাঁধনটা খুলে দিলো, সুতপা সামনে তাকিয়ে মানুষটাকে দেখে চমকে উঠলো।
সুতপাঃ আপনি?
– হ্যা আমি কেন,আমাকে দেখে অবাক হলে বুঝি।
সুতপাঃ কেন এনেছেন আমাকে এখানে?
– কারনটা জানতে চাও তাহলে শোনো, তুমি বেঁচে থাকলে কখনোই আমার প্ল্যান সাকসেসফুল হবে না।তার জন্য তোমাকে তো মরতেই হবে।
সুতপাঃ কি প্ল্যান
– সেই প্ল্যান যেটা আমি গত ৫ বছর ধরে করে আসছি কিন্তু একটুর জন্য আমার প্ল্যান সাকসেসফুল হয়নি এবার আর সেটা আমি হতে দেবো না।
সুতপাঃ আগেও আপনি সাকসেসফুল হননি আর এবারেও হবেন না।আপনার কাজের শাস্তি আপনি পাবেন।
– কে শাস্তি দেবে আমাকে।
সুতপাঃ সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবেন।আপনার লজ্জা করেনা এতকিছুর পরও আপনি নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করলেন না। সেই অমানুষ থেকেই গেলেন।আর কত মেয়ের জীবন নস্ট করবেন আর কত সংসার ভাঙ্গবেন আপনি কিসের এত লোভ আপনার।
– টাকা। টাকা চাই আমার। ওই পরিবারের সব সম্পত্তি চাই আমার।
সুতপাঃ তারমানে আপনি সম্পত্তির জন্য দির সাথে প্রতারনা করেছেন।
– হ্যা, পুনমকে প্রেমের জালে ফাসিয়েছিলাম ওই জন্যই সবকিছু ঠিক ছিলো কিন্তু বিয়ের দিন সবটা এলোমেলো হয়ে গেলো। ওই মেয়েটা যদি ঠিক সময় না আসতো তাহলে আমার আর পুনমের বিয়ৈটা হয়ে যেতো আর আমি ওই বাড়ির জামাই হয়ে যেতাম।
সুতপাঃ বেঁচে গিয়েছিলো ওই পরিবার আর দি। আপনার সাথে বিয়ে হলে দি মরে যেতো।
– আর এখন এমনিতেই মরছে।
সুতপাঃ হ্যা কস্ট পাই ঠিকই কিন্তু তখন আরো কস্ট পেতো। আপনার আসল রূপটা সহ্য করতে পারতো না।মরে যেতো।
– ভালো হতো, ওহ মরে গেলে অর্ধকে মেরে সবকিছুর মালিক আমি হয়ে যেতাম কিন্তু সেটা হলো না। তাই তোমাকে মরতে হবে।
সুতপার দিকে ছুড়ি নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। তখনি অর্ধ সেখানে চলে আসলো।
অর্ধঃরাকেশ….
অর্ধের চিৎকার শুনে রাকেশ ভয় পেয়ে যায়। অর্ধ রাকেশকে এসে মারতে থাকে।
অর্ধঃ তোকে আমি মেরেই ফেলবো তুই আমার দিদিকে কস্ট দিয়েছিস আর এখন আমার সুতপাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইছিস তোকে তো আমি মেরে ফেলবো।
পুলিশ চলে আসে আর রাকেশকে নিয়ে যায়। অর্ধ সুতপাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। অর্ধের মা কান্নাকাটি করে। অর্ধ সেই দিকে পাত্তা না দিয়ে সোনিয়াকে প্রশ্ন করলোঃ সোনিয়া তুই জানলি কি করে সুতপা কোথায় আছে?
সোনিয়া অর্ধের দিকে তাকিয়ে বললোঃ আজকে আমি আর তোকে বা তোমাদের কাউকে কিছু মিথ্যা কথা বলবো না। আজকে তোমাদের সব সত্যি কথা বলবো।
অর্ধঃকি সত্যি
সোনিয়াঃ আমি রাকেশের নিজের ছোটো বোন।
সকলেই চমকে উঠলো। পুনম এক পা পিছিয়ে গেলো,এতদিন পর রাকেশের নামটা শুনে চমকে উঠলো।
অর্ধঃ কি বলছিস তূই এসব।
সোনিয়াঃ হ্যা ঠিক বলছি,আমি সোনিয়া আমি আমার দাদার কথাতেই ওই কলেজে ভর্তি হয় আর তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করি। দাদা পুনমদিকে ইচ্ছা করে নিজের ফাঁদে ফেলে প্রেমের মিথ্যা নাটক করে এসবের আমি কিছুই জানতাম না। আমাকে দাদা বলেছিলো পুনম দিকে দাদা ভালোবাসে তাই আমি দাদাকে সাহায্য করেছিলাম। কিন্তু বিয়ের দিনের ঘটনায় আমি তোমাদের মতোই অবাক হয়েছিলাম আমার দাদা যে এতটা খারাপ সেটা আমি মানতে পারছিলাম না নিজেকে দোষী মনে হচ্ছিলো তাই তোমাদের সাথে সব যোগাযোগ মুছে দিয়ে আমি বিদেশে চলে যায়।
সোনিয়া কাঁদতে থাকে, সকলেই হতভম্ব হয়ে যায়। সুতপা সোনিয়াকে প্রশ্ন করলোঃ এতদিন পরে ফিরে আসার কারনটা কি?
সোনিয়াঃ হঠাৎ একদিন দাদা আমাকে ফোন করে বললো আমাকে দেশে আসার জন্য।বাবার খুব শরীর খারাপ তাই।আমি সেইজন্য দেশে ফিরে এসে দেখলাম বাবা শয্যাসায়ী কিন্তু দাদা যেই কথাটা বললো তাতে চমকে উঠলাম…
রাকেশঃ তোকে একটা কাজ করতে হবে??
সোনিয়াঃ কি কাজ
রাকেশঃ তোকে অর্ধের জীবনে ফিরতে হবে আর ওকে বিয়ে করতে হবে?
সোনিয়াঃ এসব কি বলছো তুমি অর্ধ শুধু মাত্র আমার বন্ধু।
রাকেশঃ আমি সেসব জানি না তুই আমার কথা মতো কাজ করবি নাহলে
সোনিয়াঃ নাহলে কি আমাকে মেরে ফেলবে তাই তো। আর কতটা নীচে নামবে তুমি।
রাকেশঃ নিচে নামার কি দেখেছিস তুই আমি তোকে কিছু করবো না করবো তো বাবাকে
সোনিয়াঃ দাদা,উনি তোমার ওহ বাবা
রাকেশঃ হ্যা কিন্তু সৎ বাবা।
সোনিয়াঃ তোমার কাছে কি ভালোবাসার কোনো দাম নেয়?
রাকেশঃ না নেয় আমার কাছে শুধুমাত্র টাকার দাম আছে,টাকার।
সোনিয়াঃ আমি শুধু মাত্র আমার বাবাকে বাঁচানোর জন্য এখানে এসেছিলাম আমি অর্ধকে বলতে চেয়েছিলাম যে সুতপার বিপদ রয়েছে কিন্তু বলতে পারিনি। আজকে যখন সুতপা নিখোঁজ হয়ে যায় তখন আমি দাদার মোবাইল ফোন স্ট্রেস করে অর্ধকে বলি তুমি ওখানে আছো। আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও আমি আজকেই বাবাকে নিয়ে এই দেশ ছেড়ে চলে যাবো।
সোনিয়া চলে যায়,সবাই এতদিন রাকেশেকে যতটা ঘৃনা করতো তার থেকে বেশি আজকে থেকে করবে। পুনমের ঘৃনা হচ্ছে নিজের উপর এরকম একটা মানুষকে ভালোবেসেছে ওহ।
রাত্রিবেলা….
অর্ধ চুপচাপ বসে আছে,সুতপা বললোঃ কি হয়েছে আপনার।
অর্ধঃ কিছু না।
সুতপাঃ আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।
অর্ধঃ আমিও কিছু বলতে চাই।
সুতপাঃ আপনি আগে বলুন।
অর্ধঃ ওকে, দ্যাখো সুতপা এতদিন অনেক লুকোচুরি হয়েছে আর নয় আমি আর তোমার আর আমার দূরত্বটা মেনে নিতে পারছি না। আমি আজকে সরাসরি বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
সুতপা অর্ধেন্দুর কথা শুনে চমকে উঠলো।
সুতপাঃ কি বললেন আপনি?
অর্ধঃহ্যা আমি তোমাকে ভালোবাসি আর সেটা তোমাকে দেখার পর থেকেই।
সুতপাঃ পুনমদির ঘরে সেদিন।
অর্ধঃনা
সুতপাঃ তাহলে?
অর্ধঃ দিদি তোমার আর ওর ছবি পোস্ট করেছিলো সেখান থেকেই তোমাকে ভালোলাগে।
সুতপা হা করে তাকিয়ে আছে,ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। ওর মনের মানুষটা ওকে ভালোবাসে ওর আগে থেকে।
অর্ধঃ কি ম্যাডাম হা করে দাঁড়িয়ে থাকবেন।
সুতপা কিছু বলে না।
অর্ধঃ কি হবে তো #অর্ধের_অর্ধাঙ্গিনী
সুতপাঃ হুম হবো।
অধকে জড়িয়ে ধরলো সুতপা। পূর্নতা পেলো আরো একটা ভালোবাসা।
১ বছর পর…..
অর্ধ আর সুতপা একসাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। অর্ধ কাজের চাপে বাড়িতে থাকে না। সুতপার প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন আর কিছু মনে হয়না। কারন ওহ একজন আর্মির ওয়াইফ ওকে তো শক্ত হতেই হবে। সুতপা অর্ধের যোগ্য অর্ধাঙ্গিনী হয়ে উঠেছে। আগলে রেখেছে পরিবারটাকে কোনো ঝড় আসতে দেয়নি। সকলেই সুন্দর জীবন যাপন করছে। পুনম তার পরিবারের সাথে ভালোই আছে। ভুলে গেছে বা ভোলার চেষ্টা করছে রাকেশ কে। সোনিয়া তার বাবাকে নিয়ে বিদেশে চলে গেছে। আর রাকেশ নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত ওই অন্ধকার কুঠুরিতেই করে যাবে সারাজীবন।
সুতপা অর্ধেন্দুর ফোনটা রিসিভ করতে একটা কষ্ঠস্বর ভেসে আসলোঃ কেমন আছো অর্ধাঙ্গিনী।
সুতপার মন খারাপ টা নিমিষেই দূর হয়ে গেলো। অর্ধের মুখে অর্ধাঙ্গিনী ডাকটা শুনলে ওর সব কস্ট,মন খারাপ দূর হয়ে যায়। ডাকটা ওর খুব প্রিয় কিন্তু অর্ধকে বুঝতে দেয়নি। কপাট রাগ নিয়ে বললোঃ কি অর্ধাঙ্গিনী অর্ধাঙ্গিনী করছো অন্যকিছু বলতে পারো না।
অর্ধ হেসে বললোঃ না গো কারন তুমি তো শুধুই #অর্ধের_অর্ধাঙ্গিনী বুঝলে।
সুতপাও হেসে ফেললো অর্ধের এমন কথা শুনে।এভাবেই ওদের সম্পর্কটা বেঁচে থাকুক দোয়া করি।
~ সমাপ্ত ~