#গল্পঃ অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী
#লেখনিতেঃ তানজিলা খাতুন তানু
#পার্টঃ সূচনা পর্ব
— ওই শুনেছিস তোর বর পালিয়ে গেছে।
কথাটা শুনেই সুতপার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। সুতপা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাওমাও করে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলোঃ এবার আমার কি হবে, আমাকে কে বিয়ে করবে। আমি লগ্নভ্রস্টা হবো এটা হতে পারে না আমি এই অন্যায় মেনে নেবো না।
– ওই শান্ত হ,কি আর করবি বল।
সুতপা আরো জোরে জোরে কাদতে শুরু করলো।
মেয়েটা কোনো উপায় না পেয়ে তাড়াতাড়ি করে নীচে নেমে গেলো কাউকে ডাকতে।যদি সুতপা সুইসাইড করে ফেলে তখন কি হবে?
মেয়েটা বেড়িয়ে যেতেই সুতপা একবার এদিক- ওদিকে তাকিয়ে নাচতে চালু করলো।
সুতপাঃ এ্যা কি মজা বিয়ে হবে না। কি মজা।
____________
সুতপা বাবা-মায়ের বড়ো মেয়ে। অর্নাস থার্ড ইয়ার শেষ করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলো। দুইবোন আর বাবা-মা কে নিয়ে ওর পরিবার। সুতপা দেখতে সুন্দরী। সুতপার কারোর সাথে রিলেশন করেনা। তাই বিয়ে না করার কোনো কারন ছিলো না। কিন্তু ওহ এখন বিয়ে করতে চাইছিলো না তাই বর পালিয়েছে শুনে বেজায় খুশি।
_______________
ওদিকে…..
সুতপার মাঃ এবার আমার মেয়ের কি হবে?
অর্ধের মা্ঃ এই বিয়ে হবেই। আর আমার ছেলের সাথে হবে।
কথাটা শান্ত গলায় বলা হলেও চারিদিকটা শান্ত থাকলো না। বিয়ের বাড়ির বাড়ি ভর্তি লোকজন সকলেই হইচই করতে চালু করলো। কনে পক্ষের সকলেও অবাক।
অর্ধঃ মা,কি বলছো এসব তুমি?
মাঃ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে চলো।
অর্ধেন্দুকে টেনে নিয়ে চলে গেলো ওর মা। সকলের মাঝেই চাপা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সবাই নিজেদের মতো ফিসফিস করছে।
অর্ধঃ মা বোঝার চেষ্টা করো আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করবো না আমার ভালো লাগে না ওকে।
মাঃ তবে কাকে ভালো লাগে তোমার।
অর্ধ চুপ করে যায়।
মাঃ আমি কিছু জানি না আমার মাথার দিব্যি তূই এই বিয়েটা করবি।
অর্ধঃ মা না এটা করো না।
মাঃ দ্যাখ আমি কিন্তু এককথার মানুষ,যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোর সাথে বিয়ে হবে তো হবেই।
অর্ধ আর কিছু বললো না আর কিছু বলেও লাভ নেয়,ওর মা কিছুতেই নিজের ডিসিশান চেঞ্জ করবে না। ওই গুন্ডীকেই বিয়ে করতে হবে। ওর জীবনটাই শেষ। ত্যানা ত্যানা হয়ে গেলো জীবনটা।
অর্ধের মা খুশি খুশি হয়ে সবাইকে বললো বিয়ের জোগাড় করতে।
____________
অর্ধেন্দু বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। একদিদি আর মা বাবাকে নিয়ে ওর পরিবার। অর্ধেন্দু একজন আর্মি অফিসার।সুতপার মা আর অর্ধেন্দুর মা দুজন বন্ধু। মায়ের জেদের কারনে বিয়েতে এসেছিলো আর এসেই ফেঁসে গেলো। সুতপা আর অর্ধেন্দুর একদম দুজনের পড়ে না। দু’জন দু’জনকে সহ্য করতে পারে না। ওদের কখনোই ভালোকরে কথা হয়নি। দুজন দুজনকে সবসময় এড়িয়ে চলতো।
_______________
ওদিকে….
কারোর পায়ের শব্দ পেয়ে সুতপা নাচ থামিয়ে দিয়ে কান্নার নাটক করতে থাকে।
– ওই তোর না একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
সুতপা চোখ বড়বড় করে বললোঃ কি,কার সাথে
– ওই অর্ধেন্দু বলে একটা ছেলের সাথে।
সুতপা অর্ধেন্দুর নাম শুনে আকাশ থেকে পড়লো।ওহ তাড়াতাড়ি করে ওর মায়ের কাছে গেলো।
সুতপাঃ মা এসব কি হচ্ছে।
সুতপার মাঃ তুই এখানে আসলি কেন?
সুতপাঃ কি হয়েছে আমার বর পালিয়ে গেছে আবার অন্য কারোর সাথে বিয়ে ঠিক করেছো মানে কি?
অর্ধেন্দুর মাঃ তুই আমার বউমা হবি।
সুতপাঃ না তোমার ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না।
অর্ধেন্দূর মাঃ কেন?
সুতপাঃ কেন জানি না আমি বিয়ে করবো না কিছুতেই।
সুতপার মাঃ আমি কিছু জানি না। ওই প্রীতি ওকে ঘরে নিয়ে যা।
প্রীতি ওকে নিয়ে চলে যায়।সুতপা কিছু না বলে চলে যায় কারন বিয়ে বাড়িতেও ওর মা ছাড়বে না।
কিছুক্ষন পর…
বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়।( হিন্দু ধর্মের আচার অনুষ্ঠান দিয়ে গল্পটা সাজানো হয়েছে।) সুতপাকে পিড়িতে করে আনা হয়। অর্ধেন্দুর চারদিকে ৭ বার ঘোরানোর পর ওদের এবার শুভদৃস্টির পালা।
সুতপাকে নিজের মুখের উপর দিয়ে পান পাতাটা সরানোর কথা বলা হয়। সুতপা পান পাতাটা সরিয়ে অর্ধেন্দুর দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটলো। অর্ধ তো রেগে বোম।
আসতে আসতে বিয়ের বাকি সমস্ত আচার অনুষ্ঠান শেষ করা হয়। প্রতিটা অনু্ষ্টানেই সুতপা অর্ধেন্দুকে রাগিয়ে দিয়েছে। অর্ধের মনে হচ্ছে ওর মাথা টা ফাটিয়ে দিতে। এই কোন মেয়ে ওর কপালে আসলো।
এবার সর্বশেষ পালা আসে সিঁদুর দানের। অর্ধেন্দু সুতপার কপালে সিঁদুর পড়িয়ে দেয়। অর্ধেন্দু আর সুতপা একসাথে বাঁধা হয়ে গেলো।
বিয়ের অনুষ্ঠান পরে। সকলে মিলে আড্ডা দেবে বলে ঠিক করেছে।
প্রীতিঃ মা আমরা আজকে রাত জাগবো না।
সুতপার মাঃ হ্যা জাগবে কিন্তু আগে ওদের ফ্রেশ হতে দাও একটু অনেক ধকল গেছে ওদের উপর থেকে।
সুতপা আর অর্ধেন্দুকে ফ্রেশ হতে পাঠানো হয়।
অর্ধঃ এই মেয়ে তোমার সাথে আমার কথা আছে?
সুতপাঃ কি বলুন?
অর্ধঃ আমি তোমাকে কখনোই নিজের স্ত্রী হিসাবে মেনে নেবো না।
সুতপাঃ আমি আপনাকে বলেনি মেনে নিতে। আর না বলেছি আমাকে বিয়ে করুন।
অর্ধঃ তুমি বলো আর না বলো কি আর করার। কিন্তু তুমি কখনোই অর্ধের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে উঠতে পারবে না।
সুতপাঃ দরকার নেয় আমার আপনার অর্ধাঙ্গিনী হবার।
সুতপা রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশ রুমে ঢুকে যায়।
পরেরদিন সকালে…….
আজকে সুতপার বিদায়ের পালা। সুতপা যাবার সময় কান্নাকাটি করছে। এতে বেজায় বিরক্ত অর্ধেন্দু। সমস্ত নিয়ম মেনে সুতপাকে বিদায় দেওয়া হয়। অর্ধেন্দুর বাড়িতে সুতপাকে বরন করা হয় তারপর..
পুনম( অর্ধেন্দূর দিদি)ঃ ওই ভাই সুতপাকে কোলে করে ঘরে নিয়ে আয়।
অর্ধঃ না আমি পারবো না।
মাঃ অর্ধ দিদি যেটা বলছে সেটা করো।
অর্ধ আর কিছু না বলে সুতপাকে কোলে তুলে নেয়। সুতপার সবার সামনে একটু লজ্জা লাগছে আবার ভয় লাগছে ওই ছেলে যদি আছাড় মারে ওকে।
অর্ধ ওকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেয়। সমস্ত আচার অনুষ্ঠান শেষ করে। পুনম সুতপাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো।
সুতপা ফ্রেশ হয়ে বের হতেই পুনম বললোঃ ওই সুতপা আমার ভাইকে তোর কেমন লাগে রে।
সুতপাঃ দ্যাখো দি তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে কিন্তু ওই গুন্ডাকে মানে তোমার ভাইকে আমার একটুও ভালো লাগে না। আর দ্যাখো আমার কপালেই আসলো।
পুনমঃ এখন এমন বলছিস তো যেদিন আমার ভাইকে বুঝতে পারবি সেদিন আমার ভাইকে ছাড়া আর কিছুই বুজবি না। কথাটা মনে রাখিস।
সুতপাঃ তোমার ভাইয়ের সাথে আমার জীবনে পড়বে না। আমার আর তোমার ভাইয়ের সবকিছুর মতই আলাদা।
পুনমঃ দেখবি আর আমার কথা টা মনে রাখবি।
পুনম চলে যায়। সুতপা ভাবতে থাকে আগের কথা।অর্ধেন্দুর সাথে ওর দেখা হাতে গোনা কয়েক বার হয়েছে কিন্তু কখনো ভালো করে কথা হয়নি। অর্ধেন্দু একটু শান্তশিস্ট,গম্ভীর স্বভাবের আর সুতপা চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। আর সুতপার গম্ভীর মানুষদের পছন্দ না। আর আজকে সেই গম্ভীর মানুষটাই ওর স্বামী। সুতপার মনে পড়ে যায় অর্ধেন্দুর সাথে ওর প্রথম দেখার কথা….
৩ বছর আগে…
সুতপা অর্ধেন্দুর বাড়িতে খুব একটা যায়নি। আর গেলেও কখনোই অর্ধকে দেখেনি। পুনম একাকার জোড় করেই সুতপা ওদের বাড়িতে এনেছে। পুনমের সাথে সুতপার খুব ভালোই বন্ধুত্ব।
সুতপাঃ আমি তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু আমাকে তোমার ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।
পুনমঃ কেন রে আমার ভাইয়ের সাথে পরিচিত হয়ে কি করবি।
সুতপাঃ দ্যাখো উল্টো পাল্টা ভাববে না। তোমার ভাইয়ের নাম এত শুনেছি যে আমার তাকে দেখে বলার ইচ্ছা আছে আমার মাকে কি জাদু করেছে। কেন আমার মা সবসময় ওর নাম করে?
পুনমঃ কি বলে আন্টি
সুতপাঃ অর্ধ এই করেছে ওই করেছে সেই করেছে।অর্ধ অর্ধ শুনতে শুনতে আমার জীবনটাই বরবাদ।
পুনমঃ আমার ভাইকে দেখে না প্রেমে পড়ে যাস।
সুতপাঃ আমি আর প্রেম কখনোই না। আর ওই লোকের প্রেমে তো নয়ই। আমার জীবনে না থেকেই ত্যানাত্যানা করে দিয়েছে থাকলে কি করবে কপাল জানে।
পুনম হাসলো কিছুই বললো না।
#চলবে….