#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫০
জিয়ান নয়নার থুতনিতে হাত রেখে বলে, চলে যাবো মানে আমার ছুটিতো শেষ। যেতে হবে না?
“নয়নার মুডঅফ হয়ে গেলো! এটা কেমন কথা এতো তাড়াতাড়ি ছুটি শেষ?
” আমাদের ছুটিতো কম বেবি তবে তোমার সব কাগজ পত্র ঠিক করে তোমাকে পার্মানেন্ট ভাবে আমার সাথে নিয়ে যাবো।
“আপনি তো ককপিটে থকবেন আমি যেয়ে কি করবো!
” নয়নার গাল টেনে বলে, একদিন ফ্লাইট পরেরদিন রেস্ট এভাবেই আমাদের ডিউটি৷ যেদিন রেস্ট সেদিন তোমার আমার দিন।
“কিন্তু।
” কি গো খু্ব মিস করবে বুঝি আমাকে?
“নয়না উঠে দাঁড়ালো মিস করবো তবে একটু। এই চলুন তো ফুচকা খেয়ে আসি।
” আমি তো ফুচকা খাইনা বৌ।
“না খেলে খাবেননা আমি খাবো আপনি দেখবেন।
” আচ্ছা যাবো শর্ত হলো তোমাকে শাড়ি পরে বের হতে হবে।
“আচ্ছা এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসি।
” জিয়ান নয়নার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো,নয়নার এলোমেলো চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে বলে,হটাৎ করে এসে একদম হৃদয় জুড়ে বসে আছো৷ নয়নার কপালে চুমু খেয়ে বলে,ভালোবাসি আমার পিচ্চি বৌটাকে।
“নয়না সরে এসে বলে,আমি মোটেও পিচ্চি না। কয়েকদিন পরে কলেজে ভর্তি হবো। সো পিচ্চি পিচ্চি করবেন না।
” জিয়ান নয়নার ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলে,বড্ড বেশি কখা বলো তুমি। তুমি হলে আমার বাটার মাশরুম।
“দেরি হচ্ছে তো ছাড়ুন আমাকে।
” ইশশ রে নিব্বি বৌ আমার ধরায় আগেই ছোটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করবে মাছের মত।
“নয়না একটু দূরে সরে যেয়ে বলে যাবোই না আপনার সাথে।
” আচ্ছা জান স্যরি এই কানে ধরছি আর বলবো না নিব্বি৷
“নয়না সোফায় বসলো কপট রাগ দেখিয়ে বলল আর একবার বললে,সোজা বাপের বাড়িতে চলে যাবো৷
“আমি থাকতে বাপের বাড়ি! তা হবে না। ঝগড়া হোক মারামারি কা’টাকা’ঠি যাহোক তবুও আমার কাছেই থকতে হবে। এতো কথা না বলে দ্রুত রেডি হও সময় নষ্ট হচ্ছে জান৷
” নয়না উঠে পেটিকোট আর ব্লাউজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। আলমারি থেকে কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি বের করে পরলো। চুলগুলো বিনুনি করে নিলো এরপর খোপা করলো। ম্যাচিং হিজাব পরলো, হাতে রেশমি কাচের চুড়ি৷ পরে বলে চলুন আমি রেডি। একি আপনি ভিডিও করছেন কেনো?
“আমি তোমাকে বড্ড মিস করবো বাটার মাশরুম। তখন একাএকা কি করবো?এসব থেকে মনটাকে শান্ত রাখবো।
” আহাগো ডিয়ার হ্যাসবেন্ড। আপনার যখনই আমার কথা মনে পরবে সোজা কল করবেন মনপ্রাণ ভরে কথা বলবো৷
“জিয়ান উঠে এসে নিজের চুল ঠিক করে নিয়ে বলে,তোমার সাথে কথা বলে এজন্মে মন প্রাণ ভরবে বলে তো আমার মনে হয় না। উল্টো তখন আরো তৃষ্ণা বাড়বে।জিয়ান হুট করে বলল,তোমার হাইট কত?
” পাঁচ ফিট দুই ইঞ্চি।
“জিয়ান নয়নাকে উঁচু করে ধরে বলে,অথচ বর পেয়েছো ছ’ফুটের। কপালে পাপ্পি দাও ডিয়ার ওয়াইফি।
” নয়না বলল,এখন দেয়া যাবেনা৷ এখন পাপ্পি দিলে আপনার কপালে লিপস্টিকের স্ট্যাম্প লেগে যাবে।সো ঝাপ্পি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন বাকিটা পরে হবে৷ নয়না জিয়ানে শার্টের বাটন ঠিক করে দিয়ে বলে,ব্ল্যাক আর কলাপাতা কালার দারুণ মানিয়েছে কিন্তু
“শাড়ী পরলেই মেয়েদের অদ্ভুত রকমের মায়াবতী লাগে! মনে হয় শাড়ী যেনো তোমাদের শোভা বর্ধন করার হাতিয়ার।শাড়ী এমন এক হাতিয়ার যা দিয়ে তোমরা আমাদের মত অবলা ছেলেদের হৃদয় কেড়ে নিতে পারো।
” অনেক বকবক করেছেন মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। এখন চলুন তো তাড়াতাড়ি।
“তবে হাত ধরো। হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাই দু’জনে৷ তুমি আমি আর আমাদের এই পথচলা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হোক।
🌿জাহিন একটা সিগারেট ধরিয়ে দুই আঙুলের ফাঁকে ধরে,মুখ দিয়ে টেনে নিচ্ছে সিগারেটের ধোঁয়া।
“অন্তর জাহিনের হাত থেকে সিগারেটা নিয়ে নিজেও দু’টো টান দিলো।
” জাহিন সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বলে,সিগারেটের মত বৌ ভাগ করা যায় না?
“শা’লা মুখ সামলে কথা বল সিগারেট আর বৌ কি এক!
” আরেহহ এক না আবার একই। দু’টোই নেশার মত কাজ করে।
“তোর কাছে এক মনে হলে তুই আরেকজনের সাথে ভাগাভাগি করিস। আমার বৌ আমার পার্সোনাল প্রপারটি আমি তাকে ভাগ তো দূরে থাক তার দিকে তাকালেও চোখ তুলে ফেলবো।
” হাইপার হচ্ছিস কেনো কথার কথা বললাস ইয়ার৷ আচ্ছা তোর বোনের কি অবস্থা? সুইসাইড করলো কেন?
“ওর অবস্থা বেশি ভালো না জানিনা কি হবে। হটাৎ করে কি এমন হলো সুইসাইড কেন করলো?
” চিন্তা করিস না সুস্থ হয়ে যাবে। সুস্থ হলে জেনে নিস৷
“জানিনা বেঁচে ফিরবে কিনা। আইসিইউ তে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আমার চঞ্চল বোনটা। মৃত্যু আর জীবনের মাঝখানে।আচ্ছা মান্নাতের কেসের তদন্ত কতদূর এগোলো? তোকে দেখলাম মন্ত্রীর সাথে কথা বলতে?
” এই তো আগাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি সব দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করবো।কথা বলতে বলতে জাহিন আরেকটা সিগারেট ধরালো।
“কি হয়েছে তোর? তুই তো কোন কিছু নিয়ে টেনশনে না থাকলে এতো সিগারেট খাস না।
” সিগারেটের পাওয়ার হলো ধোঁয়ার সাথে সব কষ্ট উড়িয়ে দিতে পারে৷ তবে জানিস ভালোবাসাও কিন্তু সিগারেটের চেয়ে কম না৷ আমরা জানি তাতে ক্ষতি তবুও ভালোবেসে ভুল করি৷ ঠিক সিগারেট যারা খায় সবাই জানে এর ক্ষতিকারক দিক।
“তোর কি হলো হঠাৎ? তুই ভালোবাসার কথা বলছিস? প্রেমে ট্রেমে পরিস নি তো?
” উঁহু জাহিন চৌধুরীর লাইফে প্রেম নিষিদ্ধ। তুই কেনো ডাকলি আমাকে?
“জাহিন আমি রিতুর সুইসাইডের মত ডিসিশন নেয়ার কারন জানতে চাই। আমার বোন মাত্র কলেজে পড়ে সে কেনো এতো বড় একটা পদক্ষেপ নিবে? এরজন্য তোর সাহায্য চাই।
” আচ্ছা টেনশন করিস না রিতু ঠিক হয়ে যাবে। আমি দেখছি বিষয়টা কিভাবে হ্যান্ডেল করা যায়। চল হসপিটালে যাই রিতুকে একবার দেখে আসি৷
“জাহিন আর অন্তর বাইক নিয়ে বের হয়ে গেলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে
🌿অনিকেত চেম্বার থেকে বের হয়ে এতিমখানায় আসলো।
জামাল সাহেবের সাথে দেখা করে বলল,আচ্ছা আঙ্কেল আমাকে এখানে কে রেখে গিয়েছিলো?
” জামাল সাহেব অনিকেতের দিকে তাকিয়ে বলে,এতোদিন পর হঠাৎ এই কথা কেনো বাবা?
“আঙ্কেল আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে৷ কে আমার বাবা, মা তারা কেনই বা আমাকে ফেলে রেখে গেলো? আমার দোষটা কোথায়?
” জামাল সাহেব লাঠি ভর দিয়ে উঠে গেলেন৷ এরপর ফিরে এসে বললো,এক ভদ্র মহিলা তোমার বয়স যখন দু’দিন বা এক সপ্তাহ তখন এখানে রেখে যায়। আমি আর তোমার চাচি দু”জনেই তখন এখানে নতুন। চেহারা ঠিকমতো মনে নেই তবে দেখে মনে হয়েছিলো বড়লোক বাড়ির মেয়ে হবে৷ জিজ্ঞেস করলাম এতো ফুটফুটে বাচ্চাটাকে ফেলে রেখে যাচ্ছেন!
“মেয়েটা কান্না করতে করতে বলল,আমি অভাগা। জানিনা বড় হয়ে এই সন্তান কোনদিন আমাকে ক্ষমা করবে কি না। তবে তাকে বলে দিয়েন তার মা অসহায়। তার মা’কে যেনো ক্ষমা করে দেয়।
” তারপর কোনোদিন আর আমার খোঁজ করতে আসেনি?
“এসেছিলো ছয়মাস পর্যন্ত আসতো। সে তখন ভার্সিটিতে পড়ালেখা করে। এসে এমে তোমাকে খাইয়ে যেতো। মুখ ঢাকা থাকতো শুধু চোখ দুটো দেখতাম। শরিফ স্যারের কাছে টাকাও দিয়েছিলো অনেক৷ তোমারে রাখার জন্য।
” তারপর আর কোনদিন আসেনি?
“নাহহ বাবা আর কোনদিন দেখিনি তাকে এই আঙিনায়। তয় আমার কি মনে হয় জানো?
” কি মনে হয় আঙ্কেল?
“মনে হয় প্রেম ঘটিত জটিলতা আছিলো তোমার মায়ের। বুঝোই তো উঠতি বয়সি মাইয়া আবিয়াইত্তা সমাজ কি হেরে মাইনা নিবো? সবাই কইবো না এই সন্তান কার? মনে হয় হের প্রেমিক হেরে ধোঁকা দিছে এরজন্য তোমারে রাইখা গেছে নিরুপায় হইয়া।
” আমি কি তার নাম জানতে পারি?
“শামসুন্নাহার নাম কইছিলো তোমার চাচির কাছে।আমারেও তিনলাখ টাকা দিয়া কইছিলো তোমার যেনো আদর যত্নে রাখি।
” অনিকেতের পা অবশ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে একবার তার মা”কে জড়িয়ে ধরতে একবার তার কোলে মাথা রাখতে আচ্ছা মায়ের শরীরে গন্ধ কেমন হয়? মায়ের শরীরে নাকি মা মা গন্ধ থাকে আঁচলে থাকে সন্তানের জন্য ভালোবাসা। আমি একবার সেই অনুভূতি পেতে চাই মা৷
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আজকে রিচেক করা হয়নি৷