ধারাবাহিক গল্প
অমানিশা
পর্ব : ১৯
আয়ানের বড় মামা খায়রুল ইসলাম বেশ চতুর মানুষ। আয়ানের বাবা মা ওনাকে অনেক সমীহ করেন। খায়রুল সাহেব অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন দিন সাতেক হয়। ওখানে ওনার একমাত্র ছেলে পরিবারসহ সেটেলড। দু এক বছর পরপর উনি গিয়ে বেড়িয়ে আসেন। আজ এ বাড়িতে এসেছেন বোনকে দেখতে। আয়ানের বিয়ের কথা চলছে সেই খবর ওদেশে বসেই শুনেছেন। তবে বিয়ে যে একেবারে ঠিকঠাক হয়ে গেছেএটা জানানো হয়নি তাকে এ নিয়ে মনঃক্ষুন্ন হলেন। রাত্রিদের সম্পর্কে তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন। চা খেতে খেতে বোনকে বললেন,
আমাকে তো তোমরা পর করেই দিছো। আমার আর কি বলার আছে। একটাবার বললানা আমারে কেউ। ছেলে বড় হইছে,তোমরাও এখন বুঝদার অনেক। আমার আর কি দরকার!
ভাইজান,আপনি ওখানে ছিলেন তাই জানাতে পারিনি।
এসব অজুহাত দিওনাতো। আজকাল কাউরে কিছু জানাইতে কি পায়ে হেঁটে যাওয়া লাগে নাকি। ইচ্ছা থাকলেই জানানো যেত। এমন বাপ ছাড়া মেয়ের সাথে আমার ভাগ্নের বিয়ে ঠিক করলা। আমি থাকলে কখনো এটা হতো না। ঐ বাড়িতে কি আদর পাবে আয়ান? বাপ নাই, ভাই নাই। মেয়েমানুষ যে বাড়ির দেওয়ানি, সেখানে ভালো কিছু হয়না।
ওরা কিন্তু ভীষণ আন্তরিক। বেশ ভদ্র মেয়েটা। আর মাটাও ভীষণ অমায়িক।
আরে রাখো তোমার আন্তরিক। টাকা ছাড়া আজকাল কিছু হয় না। অবস্থা কেমন তা তো আমি জানছি, মোটামুটি। বাপে তো তেমন সম্পদ রাইখা যায়নাই। ঐ এক একতলা বাড়ি। তাছাড়া মেয়ের ছোট বোন নাকি বড় বোনের প্রেমিকের সাথে পালাইছে। এমন পরিবারে বিয়ে ঠিক করলা কেমনে! আমার ভাইগ্না কি এতোই পানিতে পড়ছে যে এমন মেয়ে ঠিক করছ।
ভাইজান ঐ তো পছন্দ করছে।
এই হলো তোমাদের দোষ। ছেলে পছন্দ করল আর তোমরাও নাচতে নাচতে রাজী হয়ে গেলা। আরে পছন্দ করছে করুক। আরও দুচারটা মেয়ে দেখাইলে ঠিকই ঐ মেয়েকে ভুলে যেত। শোনো, এখনো সময় আছে,আমি আসছি সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার কাছে খুব ভালো একটা মেয়ে আছে। ভীষণ সুন্দর, বড়লোকের একটাই মেয়ে। ভাইগ্না আমার একবার দেখলে পছন্দ করবেই।
আলেয়া একটু ইতস্তত করতে লাগলেন।
কিন্তু এখানে সব কথা ঠিক হয়ে গেছে ভাইজান। এখন অন্য জায়গায় কথা বলা কি ঠিক হবে?
শোনো আলেয়া, বিয়ে হলো সারা জীবনের বিষয়। এখানে দশ কথা হবে। ঠিক হয়েছেতো কি, বিয়েতো আর হয়ে যায়নি। কত বিয়া আসরেই ভাইঙা যায়। এখানে তো শুধু কথা হইছে। আর থাকল ছেলের পছন্দের কথা। তুমি ওরে মেয়েটার ছবি দেখাও,কথা বলনের ব্যবস্থা করো। তবে আমার মনে হয় ছবি দেখলেই কাজ হবে।
খায়রুল সাহেব সাথে নিয়ে আসা কয়েকটা ছবি আলেয়াকে দিলেন।
আলেয়া আর কিছু বলতে পারলেন না। এই ভাইকে ছোট থেকেই জমের মতো ভয় পায় তারা সব ভাই-বোন। আয়ানের আব্বাও ওনার মুখের ওপর কথা বলতে পারেন না। ছোট থাকতেই বাবা মারা যায় আলেয়া বেগমের। তখন এই বড় ভাই ছোট ছোট ভাইবোনদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। বাবার অভাব কখনো বুঝতে দেননি। তাদের আসলে ভুল হয়ে গেছে। ভাইজান আসলে পরে সব ঠিক করতে হতো।
আর তাছাড়া মেয়ের ছবি দেখে আলেয়ার নিজেরো একটু একটু পছন্দ হলো। খুব সুন্দর এই মেয়েটা। আয়ানের সাথে খুব মানাবে। রাত্রির থেকেও সুন্দর।
বড়ভাই বললেও আয়ানকে কিছুই বলেননি আলেয়া। আয়ানের বাবাকে বলতেই বললেন,
দেখো তোমরা যা ভালো বোঝো। ভাইজান মুরুব্বি মানুষ। ওনার কথাও তো ফেলতে পারবে না। কিন্তু তোমার ছেলের দিকটাও ভাবো।
এইভাবে জলে নামব কিন্তু গা ভেজাবো না টাইপ একটা মত দিয়ে গা বাঁচালেন লোকটা। আলেয়া বুঝলেন না কি করবেন। এমন যখন অবস্থা তখন একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসল ওনার ফোনে। একটা পুরুষ কন্ঠ সালাম দিল।
আসসালামুয়ালাইকুম।
ওয়ালাইকুমুস সালাম।
আপনি আয়ানের আম্মা?
জ্বি। আপনি আমাকে চিনবেন না। আর চেনার তেমন দরকার নেই। আমি আপনার ছেলের হবু বৌ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। ঐ মেয়ের সাথে ছেলেকে বিয়ে দেবেন না দয়া করে।
আপনি কে? এসব আজেবাজে কথা কেনো বলছেন।
আজেবাজে না, সত্যি বলছি। এই মেয়ের চরিত্র ভালো না। নানারকম পুরুষের সাথে ওঠাবসা। ভালো মতো খোঁজ নিলেই বুঝবেন। আপনাদের ভালোর জন্যই বলছি। বাকিটা আপনাদের ইচ্ছা। রাখছি, ভালো থাকবেন।
এটুকু বলেই কল কেটে দিলো লোকটা। আলেয়ার মনে হলো সত্যি হয়তো মেয়েটার সমস্যা আছে। আগেও বিয়ে ভেঙে গেছে। তার ভাইজান ঠিকই বলেছেন। তিনি ঠিক করলেন আয়ানকে কল করে সবকিছু বুঝিয়ে বলবেন।
আয়ানের ট্রেনিং চলছিল। এমন সময় ফোন আসল মায়ের। ভাইব্রেশন মুডে ছিলো ফোন। আয়ান কেটে দিলো। একটু পর আবার ফোন দিলো আলেয়া।
আয়ান বুঝল যে জরুরি কিছু হয়তো।
ও বাইরে এসে কল রিসিভ করল।
হ্যালো, আম্মা বলো।
একটু জরুরি কথা ছিলো।
হুম শুনছি। কিন্তু একটু জলদি বলো। ট্রেনিং চলছে।
আচ্ছা থাক তবে,রাতে কল দিস।
কি হয়েছে আম্মা?
পরে বলব।
আম্মা ঠুসঠাস করে কথা বলে। এমন আমতা আমতা করে না কখনো।
আয়ান একটু চিন্তায় পড়ল।
ট্রেনিং শেষে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়েই মাকে কল দিলো।
হ্যালো আম্মা কি হয়েছে বলোতো। কি বলতে চেয়েছিলে তখন?
তুই রাগ করবি নাতো।
আহা বলোই না। রাগ করব কেনো!
আসলে বাবা বলছিলাম কি রাত্রিকে বিয়ে কি করতেই হবে?
মানে কি!
না মানে,ঐ মেয়ের নিশ্চিত কিছু ঝামেলা আছে। উলটা পালটা কল আসছে আজ।
কে কি বলেছে?
আমিতো জানি না কে। তবে একটা নাম্বার থেকে কল করে অনেক কিছু বলল।
কি বলেছে সেটা বলো।
এই যে মেয়েটা ভালো না। ছেলেদের সাথে ওঠাবসা এসব।
তো? কেউ একজন বলল আর তোমরা বিশ্বাস করলে!
শুধু আমরা না,ওর বোন নিজেও নাকি আয়রাকে কিসব বলেছিল।
এসব ভুল মা। রাত্রি কে আমি ভালো করেই চিনি। তুমি এসব কথায় কান দিও না।
আমি বলছি কি তোর মামা আর একটা মেয়ের কথা বলছিলেন। ওকে দেখ। তোর ভালো লাগতেও পারে।
এসব কি বলছো আম্মা। একজনের সাথে সব ঠিক হয়ে আছে আর তুমি আমাকে অন্য একটা মেয়ে দেখতে বলছো!
না মানে এমনতো কত হয় আজকাল। ঠিক হলেইতো আর বিয়ে হয়ে গেলো না।
আজকাল তো আরো অনেক কিছু হয়। বিয়ের পরপর তালাক হয়। তুমি কি পরে বলবে ওটাও স্বাভাবিক? কিছু হলে বলবে বৌকে তালাক দিয়ে দে।
না বাবা,মা হয়ে এমন কেনো চাইব।
তোমার কাছে আমি এমন কথা আশা করিনি মা। আচ্ছা রাখছি।
আয়ানের মা কিছু বলতে গিয়েও পারলেন না। আয়ান তার আগেই ফোন কেটে দিল।
উনি ভীষণভাবে লজ্জায় পড়লেন। ভাইয়ের কথায় তিনি প্রভাবিত হয়ে এসব বলেছেন ছেলেকে। আর তার ওপর ফোনটা আসায় মাথাটা আরো গোলমাল হয়ে গেছে। এমন করাটা ঠিক হয়নি। তার নিজের বিয়ে নিয়েও কম ঝামেলা হয়নি। উড়ো চিঠি পাঠিয়ে বিয়ে ভাঙতি দিতো। তিনি নিজেই এসব ফেস করে এখন আবার অন্য একজনের বেলায় এভাবে ভাবলেন কিভাবে। দরকার হলে ছেলের কাছে সরি বলবেন। জোড়া যেখানে আছে সেখানেই বিয়ে হবে। কথায় আছে,
জন্ম, মৃত্যু,বিয়ে,
এই তিন বিধাতাকে নিয়ে।
বিধাতা যদি চান তো তিনি আটকানোর কে। আল্লাহ ভরসা।
আলেয়া ছেলেকে কল দিলেন পরদিন।
আম্মা বলো।
বাবা আমি সরি। তোর মামার কথা শুনে আমি উলটা পালটা বলেছি। তুইতো জানিস তোর মামা কেমন মানুষ। ওনাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেছি তাই ভীষণ রেগে আছেন। তাই উনার কথা ফেলতে পারিনি। আর তারপর আবার ঐ অজানা লোকের কলটা আসল। আমাকে ভুল বুঝিস না আব্বু।
ঠিক আছে আম্মু,সরি হতে হবে না।আচ্ছা নাম্বারটা কি আছে যেটা থেকে কল এসেছিল।
হুম আছে।
আমাকে পাঠিয়ে দিও তো।
আচ্ছা দেব।
আয়ান জানে তার এই বড় মামাকে মা বাবা দুজনেই ভীষণ সমীহ করে চলে। ওর বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হবার সময় মামা বিদেশে ছিলেন। ওনার বড় ছেলের ওখানে। আরো পরে আসবার কথা ছিল কিন্তু পরে আগেভাগেই চলে এসেছেন। ওনার ব্যবসায় কি একটা ঝামেলা হয়েছে তাই।
আয়ান বলল,
একটা কথা বলতে চাই আম্মু।
বল বাবা।
আমি আকদটা সেরে ফেলতে চাই।
আবার আকদ্ কেনো,একেবারেই তো বিয়ে পড়িয়ে উঠিয়ে আনব।
না আম্মু, কখন কি ঝামেলা হয়। এবার এসেই আকদ্ করে রাখব। অনুষ্ঠান পরে হবে। তুমি রাত্রির মা আন্টির সাথে কথা বলে রাখো।
আচ্ছা ঠিক আছে।
আর মামাকে নিয়ে টেনশন করোনা। আমি এসে ওনাকে বুঝিয়ে বলব।
আলেয়া ভারমুক্ত হলেন। উনি নাজমাকে কল দিয়ে ছেলের ইচ্ছে জানালেন। নাজমা খুশিমনে রাজী হলেন।
আয়ান সারাদিন ট্রেনিং নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রাতে ফ্রি হয়ে রাত্রিকে কল দেয়। রাত্রি আয়ানের ফোন কলের অপেক্ষায় থাকে। আয়ানের নামটা মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠে যখন ভীষণ ভালো লাগায় ভরে যায় ওর মন।
আজ আয়ান কল করল একটু বেশি রাতে।
এই যে মিসেস আয়ান। কেমন আছেন?
ভালো। আপনি?
ভালো নাই।
কেনো,কি হয়েছে?
আপনাকে ছেড়ে একটা মুহূর্ত থাকতে ইচ্ছে করছে না আর।
যাহ্! আপনার শুধু দুষ্টামি।
দুষ্টুমি না রাত, সত্যি বলছি। তোমাকে খুব জলদি নিজের করতে চাই। আমি এই শুক্রবার এসে আকদ্ করে ফেললে তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?
কিন্তু বিয়ের তো তারিখ ঠিক করাই আছে। আকদ্ করাটা কি খুব জরুরি?
হুম জরুরি। আমার এভাবে দূরে এসে থাকতে হচ্ছে। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় করছে।
কি যে পাগলামি করেন আপনি।
উহু, এখনো পাগলামি করিনি। ওটা করব বিয়ের পর। সামলাতে পারবে তো?
রাত্রি ফোনের এপাশে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
শোনো ফাজলামো না আর। সত্যি আকদ্ করে ফেলতে চাই। মাকে বলেছি আন্টির সাথে কথা বলতে। এখন তুমি বলো তোমার কোনো সমস্যা নাই তো?
রাত্রি একটু ভেবে বলল,
না সমস্যা নেই।
এইতো গুড গার্ল। শোনো আম্মু আর আয়রাসহ গিয়ে শপিং করে ফেলো। আমার তো সময় কম। এবার সময় দিতে পারবো না। কিন্তু অনুষ্ঠান যখন হবে তখন একসাথে সব কেনাকাটা করব দু’জন।
ঠিক আছে।
সাব্বিরের ঐ ঘটনার পর গোধূলি বাবার বাসায় যাওয়া কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। সামনে রাত্রিপার বিয়ে। ঐ বাসায় এখন সেই আয়োজন চলছে টুকটাক।
একদিন নাজমা ফোন দিলেন গোধূলী কে।
শোন একবার আসতে পারবি কাল?
কেনো?
এমনিতেই। কয়দিন হয় আসছিস না। কাল এখানে এসে সারাদিন থেকে যাস।
গোধূলি না বলতে চেয়েও বললো না। আপার বিয়ের খবরাখবর নিতে ইচ্ছে করছে। মা নিশ্চয়ই অনেক ধুমধাম করার প্লান করছে। এসব বিষয়ে জানতে ইচ্ছে করছে। ও বলল,
আচ্ছা দেখি।
পরদিন গোধূলি বাসায় গিয়ে দেখল রাত্রির বিয়ের শপিং হয়ে গেছে। ওরা বেশ দামী দামী জিনিস কিনে দিয়েছে। তবে বেশি কিছু দেয়নি। গোধূলি খুশি হলো মনে মনে। এই না বলে বড় চাকরি করে ছেলে। মনেতো হচ্ছে কিপটা।
ও মাকে বলল,
তোমার মেয়ের এসব জিনিস দেখতে ডেকেছ? বিয়েতো দেরি আছে। এখুনি শপিং করল? আর মাত্র এই কটা জিনিস দিলো তোমার বড়লোক জামাই।
এসব বিয়ের না। আকদের জন্য।
আকদ আবার কবে? বিয়ের না ডেট হলো। বিয়ে কি পেছাবে নাকি।
নাহ,বিয়ে ঐ সময়েই হবে। আয়ান এই শুক্রবার এসে আকদ্ করিয়ে রাখতে চায়।
গোধূলি ভেতরে ভেতরে তেতে উঠল। শুধু আকদেই এতো সুন্দর আর দামি জিনিস দিয়েছে।
হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো ওর। সাব্বির এ পর্যন্ত ওকে ভালো কিছু কিনে দেয়নি কখনো। অথচ এমন না যে ও চাকরি করে না। মোটামুটি ভালো বেতন পায়। বাবার সংসারে বাজার সদাই তেমন করতে হয় না। সংসার তার শশুর চালায়। অথচ সাব্বির কখনো ওর হাতে টাকা পয়সা দেয় না। আরো গোধূলী বাবার বাড়ি থেকে চলে আসার সময় যেই টাকাটা নিয়ে এসেছিল ওটা নিয়ে নিয়েছে। সেদিন গলার হারটাও ওখানে দিতে হলো।
ও ঠিক করল জলদি সাব্বিরকে হার বানিয়ে দিতে বলবে।
মাকে গোধূলী বলল,
আপাটা এতো লাজশরমহীন কিভাবে হলো। তোমার মেয়ের কি সহ্য হচ্ছে না। বিয়ে করতে এতো উতলা হলো কেনো হঠাৎ!
এসব কি কথা গোধূলী! ছেলে চাইছে । রাত্রি কিছু বলেনি।
তুমি বোকাই থেকে যাবা আম্মা। তোমার মেয়েই ওর জামাইকে দিয়ে বলাচ্ছে এটা বোঝো না।
এতো কিছু বোঝার দরকার নাই। বিয়েই তো করতে চাইছে। সমস্যা তো নাই।
হুম। সেটাই। তোমরা যেটা ভালো বোঝো করো।
নাজমা দুটো ব্যাগ এনে রাখলেন বিছানায়।
এগুলো তোদের জন্য।
রাত্রির দামি দামি শপিং দেখে গোধূলীর ইচ্ছা করছে সব ছুঁড়ে ফেলে দিতে। ঢং করে আবার ওদের জন্য কিনেছে। নাজমা বললেন,
তোর জন্য এই শাড়িটা নিয়েছি আর সাব্বিরের জন্য এই কমপ্লিট এর কাপড়।
গোধূলির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ও বলে উঠল,
আমরা কি ফকির নাকি যে এগুলো দিতে হবে। এসব আছে ওর।
এমা এ আবার কেমন কথা। ফকির হতে যাবি কেনো। সবার জন্যই তো কেনাকাটা করা হয়েছে। তোর শশুড় শাশুড়ির জন্য ও তো নেয়া হয়েছে।
আমাদের কিছু দেয়া লাগবে না তোমার বড় মেয়ে আর ওর জামাইকেই দাও। আর বিয়েতে আমি আসতে পারব কিনা ঠিক নাই।
তোর একমাত্র বোনের বিয়ে আর তুই থাকবি না! এসব নিয়ে কথা হবে। সবাই কি ভাববে তোরা না থাকলে।
কথা আমি থাকলেও হবে মা। বরং বেশিই হবে। আর তাছাড়া শুধু কথা হবে বলে আমাকে থাকতে বলছো তুমি? আমাকে যে ও বাড়িতে কথা শুনতে হয়। আমার ভাগের জমিটাও তো দিচ্ছো না। আপার বিয়েতে কত খরচ করছো। আমার বিয়েতে তো এসব লাগেনি। এখন অনলাইনে ঘরে বসে কতরকম ব্যবসা করা যায়। আমিও কিছু করতে চাই। আমার হক আমাকে দিয়ে দাও। আমি আর কখনো আসবো না বিরক্ত করতে। কেউ তাহলে আর কোনো কথা বলতেও পারবে না।
কিছু করতে চাইলে পড়াশোনা কর। এখন তোর পড়ালেখা করার বয়স।
আমার ভালো লাগে না পড়তে।
তুই যাই বলিস,জমি আমি বিক্রি করতে দেবো না। ওনার কষ্টের টাকায় কেনা সম্পত্তি। আমি মরে গেলে পর যা খুশি করিস।
গোধূলির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। বাড়ি থেকে চলে এলো ও।
আয়ানের ফোনে ট্রু কলার আছে। ও মার পাঠানো ঐ অচেনা নাম্বারটায় কল করে একটু অবাক হলো। ট্রু কলারে ঐ নাম্বার ডায়াল করলে সাব্বির নামটা আসছে।
(চলবে)