ধারাবাহিক গল্প
অমানিশা
পর্ব : ১৭
রাত্রির বিয়ের খবর শুনে কাছের কয়জন কলিগ ধরল ওকে ট্রিট দিতে হবে। শিমু আপা বললেন,
এতো বড় একটা সুখবর ট্রিট কিন্তু দিতে হবে।
আচ্ছা আপা ছুটির পর চলেন। খাওয়াব আপনাদের।
হুম, বনানীর দিকে একটা দোকানে ভালো বিরিয়ানি পাওয়া যায়। ওখানে যাব।
ছুটির পর ওরা চারজন গেলো ঐ দোকানে।
দোকান বলতে অত ভীড় নেই। দোতলা একটা রেস্টুরেন্ট। বেশ ছিমছাম, নিরিবিলি। রাত্রি দেখল অনেক স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে। একপাশে কয়েকটা টেবিলের পাশে ফলস পার্টিশন দিয়ে একটু আড়াল করা হয়েছে। যদিও ততটা আড়াল হয়নি তাতে।
ওরা হাত ধুয়ে এসে একটা কোনার টেবিলে বসল। শিমু আপা অর্ডার করলেন। সবাই আয়ানের খবর জানতে চাইল। রাত্রি আয়ানের কথা বলল। এখানেও লজ্জায় লাল হয়ে গেল ওর গাল।
হঠাৎ একটু দূরে একটা টেবিলে চোখ আটকে গেল রাত্রির। মূহুর্তে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো ওর। একটা অল্পবয়সী মেয়ের সাথে একদম গায়ে গা লাগিয়ে বসে আছে সাব্বির। একটা হাত মেয়েটার কাঁধে রাখা। অন্য হাত মেয়েটার বুকে ঘুরছে। মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে। আর মাঝে মাঝে চুমু খাচ্ছে সাব্বিরের ঠোঁটে। রাত্রির মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। এটা সাব্বিরই তো। এই মেয়ের সাথে এখানে কি করছে ও!
আর এমন দিনে দুপুরে এই ছেলে এসব কি করছে। লোকজনতো দেখছে। কি নির্লজ্জ ছেলে।
গোধূলি কি জানে সাব্বিরের এসব বিষয়ে? কেমন করেই বা জানবে। এসব কি কেউ বলেকয়ে করে? ঘরে বৌ রেখে বাইরে এসব করছে সাব্বির নামের মুখোশধারী এই ছেলে।
ওর ইচ্ছে করলো সামনে গিয়ে হাতেনাতে ধরতে। কিন্তু রাত্রি শেষ পর্যন্ত সাহস করতে পারলো না ওদের সামনে দাঁড়ানোর। এতো নোংরামি করছে ওরা যে ওর রুচি হলো না ওখানে গিয়ে সাব্বিরকে কিছু বলার। আর তাছাড়া সাথে আসা কলিগদের সামনে সিনক্রিয়েট করাটা ঠিক হবে না। সাব্বির এতোটাই বুঁদ হয়ে আছে যে একবারও এদিকে তাকায়নি। রাত্রি একবার ভাবল মোবাইলে ছবি তুলবে। কিন্তু কলিগদের জন্য মোবাইল বের করে ছবিও নিতে পারলো না।
রাত্রি খেয়াল করল ঐ টেবিলেও বিরিয়ানি সার্ভ করল ওয়েটার।
গোধূলির কথা ভেবে ভীষণ খারাপ লাগছে রাত্রির। মেয়েটার ভাগ্যে এমন একটা ছেলে জুটল শেষে। বিয়ে করেছে বলে মা বাবা রাগ করেছিল, কতজন কত কথা বলেছে। কিন্তু এখনতো সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। গোধূলি একটু অদ্ভুত আচরণ করছে বটে। কিন্তু ছোট মানুষ না বুঝেই এমন করছে। ভেবেছিল সময় গেলে সব স্বাভাবিক হবে। কত আর বয়স ওর। এইতো সেদিন পুতুলের মতো একটা মেয়েকে কোলে নিয়েছিল রাত্রি। এমনি নিলে যদি ফেলে দেয় সেজন্য খাটের মাঝে বসত তারপর মা গোধূলীকে ওর কোলে দিতো। ওর নামের সাথে মিল রেখেই পুতুলটার নাম রাখা হলো গোধূলী। সেই মেয়েটা যত ভুল করুক না কেনো ওরইতো বোন। কিন্তু এই ছেলে এভাবে তার বোনের সাথে প্রতারণা করছে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। গোধূলির তো বয়স কম কিন্তু সাব্বির তো প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে। গোধূলির ভুল করার পেছনে ওর ভূমিকাই বেশি। এখন আবার মেয়েটাকে ঠকাচ্ছে এই ছেলে। আজ ফিরেই গোধূলীকে সব জানাবে ও। এর কবল থেকে বের করে আনতে হবে ওর ছোট বোনটাকে।
তেমন কিছুই খেতে পারলো না রাত্রি। যদিও রাত্রির ট্রিট দেবার কথা কিন্তু বিল দিলো শিমু আপা । আসলে ওরা আগেই প্লান করেছিল যে ওরা রাত্রিকে খাওয়াবে। এই তিনজন রাত্রিকে খুব পছন্দ করে।
রাত্রি বিল দিতে চাইল কিন্তু শিমু আপা বলে উঠলেন,
কি করো,একদম না। আমি দিচ্ছি।
কিন্তু ট্রিটতো আমার দেবার কথা।
আরে ওটা মজা করে বলেছি। তোমার বিয়েতে তো যাবোই। তখন কবজি ডুবিয়ে খেয়ে আসব।
রাত্রি আর কথা বাড়ালো না। ওর মনটাই একদম খারাপ হয়ে গেছে।
রাত্রি ফিরে দেখল গোধূলি এসেছে। রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বেশ জোরে কথা বলছে।
আম্মা কি রান্না করছো।
রুই মাছ।
খালি রুই মাছ? আজ তোমার জামাই আসবে। ওতো মাছ খেতে পছন্দ করেনা। মুরগী রাধতা।
ফ্রিজে মুরগি নাই।
মুরগি নাই আনতা।
আচ্ছা কাল আনব।
আজ কি দিয়ে খাবে?
একটা ডিম তেলানি করে দেব।
শুধু ডিম দিয়ে জামাইরে খেতে দিবা।আমার জামাই দেখে এমন হেলাফেলা করতেছো। আপার বেলায় ঠিকই পোলাও কোর্মা রাধতা।
সবসময় উলটা পালটা বকিস কেনো। তোর আপারতো বিয়েই হয়নি এখনও আর তুই তুলনা করতেছিস।
বিয় তো হবে। তখন ঠিকই করবা। আপাওতো পছন্দ করেই বিয়ে করছে। ওর বেলায় সাত খুন মাফ। ওকে দেখতে আসল তাতেই কত আয়োজন করলা।
আহ গোধূলী। থামবি তুই?
কি থামতে বলছো। আমার জামাইয়ের কোনো দাম আছে এ বাড়িতে? কেউতো একবেলাও ভালো মন্দ খাওয়াওনি। এসব নিয়ে তো কথা শুনতে হয় আমাকে।
তুমি নিজেই পছন্দ করে একা বিয়ে করেছো। এখন এসব বলতে আসবা না।
বিয়ে করেছি বলেকি আর কোনো অধিকার নাই নাকি। জামাইয়ের আদর কি সে পাইছে? ঠিকমতো কেউ কথাই বলে না। তুমি এখুনি বাজার করে আনো। পোলাও রোস্ট করো। সাব্বির আসবে সন্ধ্যায়।
নাজমা অবাক হলেন গোধূলীর কথায়। এই মেয়েটা বোনকে দিনে দিনে শত্রু বানিয়ে ফেলছে। সবসময় বড় বোনকে ছোট করার চেষ্টা। নিজে যে এই বয়সে এত বড় ভুল করেছে তার জন্য কোনো অনুতাপ নেই। বাপের জন্য দোয়া কালাম তো দূর সবসময় জামাই জামাই করে অস্থির। নিলাজ মেয়ে একটা। তবে কঠিন কথা শোনাতে গিয়েও থেমে গেলেন। তার স্বামীর শেষ ইচ্ছার কথা মনে পড়ে গেলো। তিনি চেয়েছিলেন তার মেয়েরা যেন ভালো থাকে। গোধূলিকে ফিরিয়ে আনতে বলেছিলেন উনি। নাজমা টাকা বের করলেন। পাশেই একটা ছোট বাজার বসে। ওখান থেকে মুরগী আনবেন। ঘরে পোলাও এর চাল আছে। এসে রান্না বসিয়ে দেবেন
রাত্রি ফ্রেশ হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে বলল,
আম্মা কোথায় যাও এখন?
বাজারে যাই।
আমাকে কল দিতে পারতা। আমি নিয়ে আসতাম।
তুই স্কুল করে ক্লান্ত হয়ে আসিস। সমস্যা নাই। বাজারতো এখানেই। আমি আসতেছি এখুনি।
আচ্ছা, দেখেশুনে যাও।
নাজমা বেরিয়ে গেলেন।
রাত্রি গোধূলীকে বলল,
অযথাই আম্মাকে বাজারে পাঠালি। তোর জামাই তার জি এফের সাথে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছে। আজ এখানে আসবে কি না ঠিক নাই।
গোধূলি ফুঁসে উঠল বোনের কথায়।
কিসব বলছিস?
হুম,কল দিয়ে দেখ। অবশ্য রিসিভ করবে কিনা সন্দেহ আছে।
গোধূলি সাব্বিরকে কল করল। তিনবার রিং হতে কেটে দিলো সাব্বির।
ধরলো নাতো। হয়তো ধরতে পারছে না। সে এখন প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করছে।
আপা,অযথা বানিয়ে কথা বলবি না। কোন সাহসে আমার বরের নামে এসব বলিস তুই!
আমি নিজে দেখেছি তাই বলছি। আজ আমার কলিগদের সাথে বনানীতে গেছিলাম। ওখানে পাশের টেবিলে তোর সাব্বিরকে একটা মেয়ের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছি।
নতুন নাটক। আমাকে অপমান করতে, আমার বরকে খারাপ প্রমাণ করতে চাইছিস আপা তুই।
তোর কি মনে হয় না একটু বেশি বেশি করতেছিস। নিজের সংসারের খোঁজ কিছু না রেখে সবসময় এ বাসায় এসে অশান্তি করছিস। আমার নামে আজেবাজে বলছিস।
এই বাসায় আসবো না মানে? দরকার হলে এখানে থাকব।
এখানেই যদি থাকবি তাহলে পালিয়ে গিয়েছিলি কেনো? তোর জন্য বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এই বাসায় আসবি হাজার বার। কিন্তু নিজের বরকে এতো অন্ধের মতো বিশ্বাস করে তারজন্য অযথা এখানে অশান্তি করতে আসবি না। ও ভালো ছেলে না গোধূলী। এখনো সময় আছে, সাবধান হয়ে যা আপু।
তোর কাছে কি প্রমাণ আছে?
আমার কাছে প্রমাণ নাই কিন্তু আমি বোন হয়ে তোকে মিথ্যা বলবো না। তোর ভালো চাই আমি।
প্রমাণ ছাড়া আমার বরের নামে উলটা পালটা বললেই আমি বিশ্বাস করব নাকি? আসলে সব তোর আর আয়ানের ষড়যন্ত্র। তোরা চাসনা আমরা এখানে আসি।
তুই ভুল বুঝছিস। আমি চাইনা তোকে কেউ ঠকাক। তাও আবার তোর স্বামী। তুই চোখকান খোলা রাখ। সব সত্যি বেরিয়ে আসবে। আমি তোর পাশে আছি।
পাশে থাকতে হবে না। আমি জানি সাব্বির অমন ছেলে না। এসব বলে তুই আমাদের মাঝে দাম্পত্য কলহ তৈরি করতে চাস। সাব্বির তোকে দেখতে এসে আমাকে বিয়ে করেছে তাই সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে চাস। তোরতো আয়ানের সাথে সম্পর্ক তবুও কেনো আমার স্বামীর দিকে চোখ তোর। কত ছেলে লাগে আপা তোর।
এই কথায় রাত্রির ভীষণ রাগ লাগল। ঠাস করে গোধূলীকে চড় বসিয়ে দিল।
গোধূলি হকচকিয়ে গেল আপার এমন আচরণে। আপাকে এতো রাগতে সে দেখেনি কখনো। গোধূলি হনহন করে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।
নাজমা মুরগি কিনে ফিরে এসে দেখলেন রাত্রি বসে বসে কাঁদছে।
উনি বললেন,
গোধূলি কোথায়? কি হয়েছে মা?
চলে গেছে।
নাজমা বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকলেন।
আপাকে যত হিংসাই করুক সাব্বিরকে নিয়ে যা বলেছে তা মনের মধ্যে ঘুরপাক করতে থাকল। আপা কখনো কারো সম্পর্কে এমন কথা বলে না। নিশ্চয়ই কিছু একটা গোলমাল আছে। কিন্তু সাব্বিরের আচরণে কখনো এমন কিছু মনে হয়নি। ওকে আদর করার সময় যেভাবে পাগল হয়ে যায় গোধূলীর জন্য তাতে মনে হয় না অন্য কারো সাথে কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে। হয়তো ভুল কিছু দেখেছে আপা। আর সত্যি কি এমন কিছু দেখেছে কি না তাতেও সন্দেহ আছে। আজ সাব্বির আসলে জিজ্ঞেস করবে ও।
সাব্বির ফিরল রাত করে।
এতো রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলেন?
সাব্বির একটু অবাক হলো গোধূলীর প্রশ্নে। ও সাধারণত কৈফিয়ত চায় না। কিন্তু আজ কন্ঠটা একটু অন্যরকম শোনাচ্ছে।
জেরা করছো মনে হচ্ছে?
না জেরা করব কেনো! এমনিতেই জানতে চাইছিলাম।
আজ হঠাৎ নওমি ওর অফিসের কাছে এসে কল দিলো নেমে আসতে। বেশ ক’দিন থেকেই ও বাসায় যাওয়া হয়নি। নওমি ভীষণ অস্থির। যখন মন যা বলে সেটা করবেই। বেশ কয়বার কল দিয়েছিল কিন্তু সাব্বির রিসিভ করেনি তাই একেবারে অফিসে চলে এসেছে। সাব্বির ওকে দেখে একটু বিরক্ত হলো। বলল,
একেবারে অফিসে চলে এলে? কেউ দেখলে কি ভাববে?
আমিতো কল দিলাম। ধরলে না যে। আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো। কেউ দেখলে বলবা তোমার বোন,হিহিহি।
আচ্ছা চলো, এখানে থাকা ঠিক হচ্ছে না।
ওরা বনানীর দিকে এলো। নওমি বলল,
আসলে তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে খুব। চলো বাসায় যাই।
সাব্বিরের ভালো লাগল এই কথা শুনে। বিরক্তভাব কেটে গেল ওর। বলল,
এখুনি? রাতে যাবো।
তাহলে এতোটা সময় কি করব? আমি কিন্তু তোমাকে না নিয়ে ফিরবো না।
এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে সন্ধ্যা হলে বাসায় ঢুকব।
আচ্ছা।
রেস্টুরেন্টে খেয়ে সিনেমা হলে ঢুকল দু’জন। একটা ছবি চলছে, নাম ‘প্রেমের প্রতিদান’।
এসব ছবি দেখার কোনো আগ্রহ নেই ওদের। তবে হলে সাধারণত পরিচিত কেউ থাকবে না। আঁধারে কিছুটা প্রাইভেসি পাওয়া যাবে। পুরোটা সময় নওমি ভীষণ পাগলামি করল। এখানে সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরল দুইজন। যদিও আলাদা আলাদা ভাবে বাসায় গেল ওরা। তারপর সোজা চিলেকোঠায় উঠে উদ্দাম সময় কাটিয়ে ফিরল সাব্বির।
গোধূলী কি কোনোভাবে জানতে পেরেছে কিছু? যদিও এই মেয়েকে ভয় পায়না ও কিন্তু এই মুহূর্তে অযথা অশান্তিও চায় না। যখন সময় হবে তখন এভাবে প্রশ্ন করার সাহস পেতে দেবেনা বৌকে।
নরম করে গোধূলিকে বলল,
এক কলিগ অসুস্থ। ওনাকে দেখতে গেছিলাম। এজন্যই দেরি হলো। কেনো কিছু হয়েছে?
সত্যি বলছেন তো? আমাকে ছুঁয়ে বলুন।
সাব্বির বুঝল কেউ কিছু হয়তো বলেছে গোধূলীকে। কেউ কি দেখে ফেলেছে ওদের আজ।
সাব্বির গোধূলীর মাথা ছুঁয়ে বলল,
তোমাকে মিথ্যে বললে যেন আমার মরণ হয় ট্রাকের নিচে পড়ে।
গোধূলি বলল,
এসব কি বলেন! এমন যেন কখনো না হয়।
কেউ কিছু বলেছে?
হুম,আপা নাকি আপনাকে কোন একটা মেয়ের সাথে দেখেছে।
সাব্বির একটু ধাক্কা খেলো। রাত্রি আবার কোথায় দেখল ওকে।
কিন্তু সেটা গোধূলীকে বুঝতে না দিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
এখন তাহলে এসব শুরু করেছে তোমার বোন। যেই বুঝেছে তুমি তোমার অধিকার ছাড়বে না অমনি মানসিক অত্যাচার করছে তোমার ওপর। যেন তুমি আর আমি নিজেদের ভেতর অশান্তি করি আর সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকি।
কি জানি,হবে হয়তো।
মানে কি,তুমিও কি আমাকে অবিশ্বাস করছো জান? আরে পাগল আমার এতো হট একটা বৌ থাকতে আমি কেনো অন্য কোথাও মরতে যাব পাগলি।
সাব্বির গোধূলীকে কাছে টেনে নিলো। ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে একটানে ওর টপস খুলে ফেলল। গোধূলি ডুবে গেল,ভুলে গেল সবকিছু সাব্বিরের পাগলামিতে।
এর মাঝেই একদিন সাব্বির গোধূলীকে বলল,
চাকরি আর পোষাচ্ছে না বুঝলা?
একটা ব্যবসা করার আইডিয়া পেয়েছি। আমার এক বন্ধু বিদেশ থেকে মোবাইল পার্টস এনে এখানে বিক্রি করে। বেশ লাভজনক ব্যবসা।
আপনি ব্যবসা করবেন?
হুম করতে চাইছি কিন্তু পুঁজি তো নাই তেমন। আমার অল্প কিছু টাকা জমানো আছে। কিন্তু আরো কিছু লাগবে।
তাহলে।
আমি বলি কি তোমার তো ঐ বাসায় ভাগ আছে। বাসাটা যদি ডেভলপারকে দেয়া যায় বেশ কিছু টাকা পাওয়া যেত। আবার ফ্লাট পাবা দুটো করে।
তাই!
হুম আমার এক বন্ধুর এপার্টমেন্ট ব্যবসার সাথে জড়িত।
কিন্তু বাসায় কি রাজী হবে?
হবে না কেনো। তুমি সোজা বলে দিবা নাহলে তোমার ভাগ তুমি বিক্রি করতে চাও। তাহলেই রাজী হবে।
কিন্তু ব্যবসায় যদি লাভ না হয়?
আরে ভয় কি। সব টাকাতো আর ব্যবসায় লাগাবো না। আর তোমার নামেই থাকবে সব। ব্যবসার অংশও তোমার নামেই হবে।
একবার ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেলে তখন দুহাতে টাকা খরচ করতে পারবে। বিদেশে বেড়াতে যাবে। তোমার নামের ফ্লাট থেকেও টাকা পাবে তুমি।
সব শুনে গোধূলি রাজী হয়ে গেল। পরের দিন মায়ের বাড়িতে এসে কথা তুলল নাজমার কাছে। নাজমা বললেন,
এখুনি এমন কিছু করবো না। আমি মারা গেলে তোরা যা খুশি করিস তখন।
গোধূলি খেপে বলল,
তাহলে আমার ভাগ আমি বিক্রি করে দেব। আমাকে এমনিতেও তোমরা পছন্দ করো না। আপাতো রীতিমতো ষড়যন্ত্র করছে আমাকে তাড়াতে। আমি আলাদা হয়ে যাব। আমার ভাগ বুঝিয়ে দাও আর তোমাদের সাথে নাই আমি। বাসার সামনের ফাঁকা অংশটা বিক্রি করে দেব আমি। আর গ্রামের জমিও বুঝায় দিবা।
নাজমা ভীষণ মনক্ষুণ্ণ হলেন। সামনে যে গোধূলী ঝামেলা করবে সেটা পরিস্কার বুঝলেন উনি।
আরেকদিন এসে গোধূলী এক লোককে জায়গা দেখাল। নাজমা চিৎকার চেঁচামেচি করলেন। কিন্তু বুঝলেন কোনো লাভ নেই। যেহুতু বাড়িটা তরফদার সাহেবের নামে তাই গোধূলীর হক আছে।
রাত্রির জন্য যেই জুয়েলার্স এ গয়না বানাতে দিয়েছিলেন সেখানে গয়না আনতে গিয়ে দেখলেন,গলার একটা সেট গোধূলী তুলে নিয়ে গেছে। পরিচিত দোকানদার তাই দিয়ে দিয়েছে।
নাজমা সাথেই ফোন দিলেন মেয়েকে,
তুই গয়না নিয়েছিস দোকান থেকে?
হুম।
কেনো?
আমাকেতো কিছু দাওনি বিয়েতে। আপার বিয়েতে কি খালি গলায় যাবো?
তুইতো পালানোর সময় আমার যা ছিলো সব নিয়ে গেছিস।
আরে ওসব পুরোনো গয়নাতে সোনা আছে নাকি। ডিজাইনও একদম সেকেলে।
তোর বোনের বিয়ের গয়না তুই এভাবে নিয়ে যাবি!
তো কি হয়েছে। ওর জন্য আর একটা বানাতে দাও।
বলেই কল কেটে দিলো গোধূলী।
এর কিছুদিন পরের ঘটনা। সাব্বির আবার গেল ঐ ভাড়া বাড়িতে। যথারীতি কিছুক্ষণ পর নওমি উঠে এলো। দুজনেই যখন আদিমতায় মত্ত তখন দরজায় দুমদাম আওয়াজ পড়তে থাকল। ছিটকে সরে পড়ল দু’জন। বাইরে তখন চিৎকার করে বলছে,
দরজা খোল হারামী। লুইচ্চামি করা বের করব আজ।
সাব্বির ঘাবড়ে গেলো। নওমি কাপড় পরে নিয়েছে। বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারলো না। দরজা ভেঙে ফেলবে এমন মনে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত দরজা খুলে দিতেই দু’তিনজন ভেতরে ঢুকে পড়ল। এর মধ্যে একটা লম্বামতো ছেলে,একজন মধ্যবয়সী লোককে চিনতে পারল সাব্বির। এরা এ বাসার ভাড়াটিয়া। আর সাথে দাড়োয়ানকেও দেখা গেল।
কি হচ্ছে কি এখানে।
সাব্বির স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল।
কি হচ্ছে মানে? আপনারা এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছেন কেনো!
কেনো ধাক্কা দেই বোঝো না,মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করতেছো। কয়দিন থেকেই খেয়াল করছি। প্রথম থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল আমার। আজ দেখলেন তো ভাই আমার ভাবনাই ঠিক।
কি সব বলছেন।
কি বলছি মানে। এই মেয়ে এখানে কি করছে? এতো তোর বৌ না।
বাড়িওয়ালার ভাগ্নি।
ও মানে,ও এসেছিল আমার কাছে একটা কাজে।
তাতো দেখতেই পাচ্ছি। এমন কাজ যে দরজা বন্ধ করে করতে হচ্ছে। বাইরে থেকে দুইজনের রাসলীলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। খাটতো মনে হয় ভেঙেই ফেলতা।
এই সময় বাড়িওয়ালা ওপরে এলো।
এসেই তার ভাগ্নিকে চড় বসিয়ে বলল,
বেয়াদ্দব মেয়ে এখুনি নিচে যা।
নওমি সুড়সুড় করে নিচে চলে গেল।
বাড়িওয়ালা ছেলেগুলোকে বলল,
এরে কি করবা করো তোমরা।
লম্বামতো একটা ছেলে বলল,
এই এরে বেঁধে মাইর লাগা। লুইচ্চামি করার মজা বোঝাব আজ।
আমার দোষ নাই। ঐ মেয়ে নিজেই এসেছে এখানে। আমাকে জোর করছে। এভাবে আপনারা আমার সাথে যা তা করতে পারেন না। দেশে আইন আছে। আমার এক বন্ধু পুলিশে আছে। তাকে কল করলে সবকটাকে জেলে ভরবে।
আইন তোমার গো***য় ঢুকায় দিব শালা। ডাক তোর বন্ধুকে। দেখি কি করতে পারে।
সাব্বির ফোন হাতে নিলো। কিন্তু একজন এসে ওর ফোন কেড়ে নিলো। দাড়োয়ান এর মধ্যেই দড়ি এনেছে।
সাব্বিরকে বেঁধে মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে আচ্ছামতো উত্তম মধ্যম দেয়া হলো।
(চলবে)