ধারাবাহিক গল্প
অমানিশা
পর্ব : ১৪
বাড়িতে ফেরার আগেই মায়ের ফোন এলো রাত্রির ফোনে।
হ্যালো মা,বলো।
তুই কোথায় ? এখুনি একটু বাসায় আয়।
কিছু হয়েছে? বাবা ঠিক আছেন তো?
বাবা ঠিক আছে। তুই কি কামরুলের সাথে আছিস? ওখানে আর থাকার দরকার নেই। এখুনি চলে আয়।
কেনো মা? বলবেতো কি হয়েছে!
তোর বাবা বিয়েটা হবে না বলে দিয়েছেন।
কামরুল কি ফোন করেছিল?
না।
আমি এখুনি ফিরছি।
রাত্রি যে আগেই চলে এসেছে এটা বললো না। বাসায় কিছু একটা হয়েছে এটা বুঝল। কামরুল যেহুতু ফোন দেয়নি তাহলে অন্য কোনো ঝামেলা হয়েছে যার জন্য বাবা বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন।
এমনটা হলে যা হয়েছে ভালই হয়েছে। ওকে আর এসব নোংরা কথা বাড়িতে বলতে হবে না। বিয়ে যখন ভেঙেই গেছে তখন আর এসব কিছু বলে পরিস্থিতিকে মুখরোচক করার কিই বা দরকার। মানুষ মাত্রই তিলকে তাল বানাতে পছন্দ করে। এইসব নিয়ে শেষে রাত্রির নামেই উলটা পালটা কথা ছড়াবে। মা হয়তো নিজের ভেবে কাছের মানুষের কাছে বলবেন। তারাই আবার রঙচঙ দিয়ে বলে বেড়াবে।
কামরুলের গাড়ি থেকে নেমে কিছুদূর হাঁটতেই রিকশা পেল রাত্রি। সেটা নিয়ে বড় রাস্তায় উঠে সিএনজি নিয়ে বাড়িতে ফিরল।
বাড়িতে ফিরলে নাজমা কামরুলের খালা কি বলেছেন সেটা জানালেন মেয়েকে। রাত্রি ভেতরে ভেতরে কেমন যেন হালকা অনুভব করল। এই কয়দিন একটা মানসিক চাপ ওকে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছিল। আজ সেটা এক নিমেষে উধাও হয়ে গেল।
রাতে খাবার পর তরফদার সাহেব রাত্রিকে ডাকলেন। নাজমা পাশেই বসে ছিলেন।
উনি রাত্রির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
মন খারাপ করিসনা মা। এই ছেলের পরিবার লোভী। তুই সুখী হতে পারবি না। তোর জন্য অনেক ভালো ছেলে অপেক্ষা করে আছে, দেখিস।
আমার মনখারাপ হয়নি আব্বা। আপনি এটা নিয়ে টেনশন করবেন না। আপনার শরীর খারাপ করবে।
আচ্ছা যা ঘরে যা। কালতো স্কুল আছে তোর। আর অন্য চাকরির কি খবর। পড়াশোনা করছিস তো!
করছি আব্বা। কয়েক জায়গায় এপ্লাই করেছি। পরীক্ষার ডেট হয়নি এখনও।
আচ্ছা মা দোয়া করি তোর মনের ইচ্ছে পূরণ হোক।
রাত্রি চলে গেলে নাজমাকে বললেন,
ছোটরা না জেনে অনেক ভুল করে। কিন্তু বড়রা যদি সেই ভুলকে আঁকড়ে ধরে থাকে তাহলে ভুলের পাকে জীবনটা বরবাদ হয়ে যায়। তুমি গোধূলীকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করো। ওকে পড়াশোনা করতে বলো। আমি থাকি না থাকি আমার দুই মেয়ের ওপর সবসময় তোমার স্নেহের হাত যেন থাকে।
আপনি এসব কি বলতে শুরু করলেন। আপনি কোথায় যাবেন আমাদের ছেড়ে!
আরে পাগল কান্না করছ কেনো। মানুষ এর হায়াত মউতের কথা কি কেউ আগে থেকে বলতে পারে। আমিতো কথার কথা বলছি। আমার দুই মেয়ের কারো যেন মনে না হয় যে বাবা-মার জিদের জন্য তাদের জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। আমাদের যতটা চেষ্টা আমরা তাতে কমতি রাখবো না রাত্রির মা।
আচ্ছা ঠিক আছে। গোধূলির সাথে যোগাযোগ করব আমি। সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি অশুভ চিন্তা করবেন না।
তরফদার সাহেব মারা গেলেন ভোর রাতে, ঘুমের মধ্যে। নাজমা যখন ফজরের নামাজ পড়ে স্বামীর পাশে বসলেন দেখলেন ওনার হাত পা অস্বাভাবিক রকমের ঠান্ডা হয়ে আছে। উনি মৃদু ডাকলেন। শরীর ধরে ঝাঁকালেন। কোনো সাড়া না পেয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।
রাত্রিরে, তোর বাবা আমাদের একা করে চলে গেলেনরে মা।
সকাল হতে হতেই আত্মীয়-স্বজনে বাড়ি ভরে গেলো। রাত্রি কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। নাজমা বেগম যথেষ্ট কান্না করলেও এখন ওযু করে কোরআন শরীফ পড়ছেন। তিনি জানেন যত কান্নাকাটি হবে মূর্দা তত কষ্ট পাবে। তাই নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছেন। তবে চোখের পানি বাঁধ মানছে না। পড়তে পড়তেই আয়াতগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে।
সকাল থেকেই এলাকায় মাইকিং হচ্ছে মৃত্যু সংবাদের। আশেপাশের অনেক পরিচিত অপরিচিত লোকজন এসে শেষদেখা দেখছেন।
নাজমার ভাই ভাতিজারা সব তদারকি করছেন। কবর খোঁড়া,আগত লোকজনের খাওয়া দাওয়া, মাদরাসা হুজুর দিয়ে কোরআন খতম সব কাজ চলছে। বাদ আছর দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নাজমা একফাঁকে তার বোনের ছেলেকে বললেন,
গোধূলিকে কেউ একটা খবর দিস। শেষদেখা দেখে যাবে।
সাব্বির শশুড়ের মারা যাবার খবর পেল অফিসে যাবার আগে আগে। একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল করে একটা ছেলে বলল,
আপনি কি সাব্বির বলছেন?
জ্বি।
আমি গোধূলির কাজিন বলছিলাম। একটা খারাপ খবর আছে। গোধূলির বাবা, আমার খালু আজ ভোররাতে ইন্তেকাল করেছেন। আপনি কি গোধূলীকে নিয়ে আসবেন একটু?
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অবশ্যই আসব। আমি এখুনি নিয়ে আসছি ওকে।
অসুখের খবর লুকালেও মৃত্যুর খবর তো আর লুকানো ঠিক হবে না। সাব্বির গোধূলীকে বলল,
গোধূলি নাশতা করেছ?
হুম করেছি।
তৈরি হয়ে নাও।
এখন কোথায় যাব, আপনার অফিস আছে না?
তোমাদের বাড়িতে যেতে হবে।
আমাদের বাড়িতে কেনো?
এতো কথা বলছো কেনো। জলদি তৈরি হয়ে নাও। গেলেই দেখতে পাবে। ও বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল। তোমার বাবা অসুস্থ।
রাত্রির চোখগুলো ফুলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। সবাই এসে সান্ত্বনা দিচ্ছে আর রাত্রির আরও বেশি কান্না পাচ্ছে। আত্মীয়রা অনেক আফসোস করছে এটা বলে যে আহারে,মেয়েটাকে পাত্রস্থ করে যেতে পারলো না বেচারা। রাত্রির নিজেকে অপরাধী লাগছে। তার বিয়ে ভেঙে যাবার জন্যই বাবা হয়তো চলে গেলেন।
গোধূলি যখন সাব্বিরসহ আসল সবাই কৌতুহলী হয়ে তাকাল। ফিসফিস করে অনেকেই বলল,
এইটা ছোট মেয়েটা না, পালিয়ে যে গেল। আজকেই এলো প্রথম।
বাড়িতে এতো লোকজন দেখেই সন্দেহ হলো গোধূলীর যে খারাপ কিছু একটা হয়েছে। বাবাকে উঠানে খাটিয়াতে দেখেই চিৎকার করে উঠল গোধূলী,
ও বাবা,বাবা, কোথায় গেলে তুমি? এসব কিভাবে হলো?
গোধূলি সারাদিন বাবার বাসায় থাকল। বাবার লাশ যেখানে রাখা আছে তার আশেপাশেই থাকল। মাঝে মাঝে একা একাই ডুকরে কান্না করল। আত্মীয়রা কেউ কেউ ওকে সান্ত্বনা দিলো। সাব্বির মাঝে মাঝে গোধূলির কাছে এসে কিছু সময় বসে থাকে। আবার বাইরে চলে যায়। গোধূলি একবার বলে,
আপনাকে কেউ একটু কিছু খেতে দিয়েছে? আমি বলব?
আরে না,আমি ঠিক আছি। এখন এসব ভাবতে হবে না তোমার।
বাইরে একটু ফাঁকা মতো জায়গায় সামিয়ানা টানিয়ে বসার চেয়ার দেয়া হয়েছে। আত্মীয় শুভাকাঙ্ক্ষী যারা এসেছেন এখানে বসে আছেন অনেকে। সাব্বির সবার মাঝেই বসে রইল। এখানে বেশিরভাগ লোকজন তাকে চেনেনা। অনেকেই তার সামনেই বলতে লাগল,
ছোট মেয়েটা এমন একটা কান্ড করল যে বাবাটা সহ্য করতে না পেরে শয্যাশায়ী হলো। শেষ পর্যন্ত মারাই গেল। এমন সন্তান থাকার থেকে নিঃসন্তান থাকা অনেক ভালো।
কেউ কেউ আবার বলল,
শুনলাম মেয়েটা যে পালিয়ে গেছিল এসেছে আজ। এখন কান্নার নাটক করছে। ওরজন্যই তো লোকটা মারা গেল।
সাব্বির চুপচাপ সব শুনল। সবাই গোধূলিকে দায়ী করছে এই মৃত্যুর জন্য।
একটু পরেই সেই ঘটক যে সাব্বিরের বিয়ের প্রস্তাব এনেছিল তার সাথে দেখা হলো। কথায় কথায় রাত্রির বিয়ে ভাঙার ঘটনা জানাল সাব্বিরকে।
বাড়ির ভেতরে তরফদার সাহেবের আত্মীয় স্বজন প্রায় সবাই এসেছে। নিজের লোক বলতে ছোট দুই বোন আর ভাই একজন। সবথেকে ছোট যে বোন মিতা, সে গোধূলীকে দেখেই রেগে গেল।
ওর সামনেই বলতে থাকল,
এই অলক্ষী মেয়ে আমার ভাইটাকে খেল। এখন আবার কেনো এসেছে বাপকে দেখতে। ও খুনী। ওকে বের করে দাও সবাই।
এসব শুনে গোধূলী ফুসে উঠল। বলল,
এতো যে ভাইয়ের জন্য দরদ দেখাচ্ছেন,আজীবনতো আমার বাবাকে জালিয়েছেন। কি আদায় করে নেবেন সেই ধান্দা করেছেন সবাই। কয়দিন খোঁজ রেখেছেন ভাইয়ের? এখন এসেছেন আমার দোষ ধরতে।
মিতা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল এর মাঝে নাজমা উঠে এসে ননদকে বললেন,
আহ মিতা,এখন এসব কথা বলার সময় না। মেয়ে তার বাপকে শেষ দেখা দেখতে এসেছে। বাড়িভর্তি লোক। তুমি শান্ত হয়ে বসো। তোমার ভাইয়ের জন্য দোয়া কালাম পড়ো। রাগারাগি, চিৎকার চেঁচামেচি করলে তোমার ভাইয়ের আত্মা কষ্ট পাবে।
চিৎকার চেঁচামেচি ওখানেই থেমে গেল। বাড়ির ভেতরে আবার কান্নার রোল উঠল।
গোধূলি খেয়াল করল মা একবারও তার সাথে কথা বলেনি। রাত্রি আপা ঘরে আছে। অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে বারবার। ও যখন বাড়িতে ঢুকল ওকে দেখে জড়িয়ে কান্না করল কিছু সময়। গলা ভেঙ্গে গেছে আপার। তারপর বাবার লাশের উপর আছড়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেল।
সবাই ধরাধরি করে ভেতরে নিয়ে গেল।
আছর এর পরপর দাফন হলো। আত্মীয় স্বজন কেউ কেউ থাকল। যারা কাছের তারা চলে গেলো।
সাব্বির গোধূলীকে থেকে যেতে বলল কিন্তু গোধূলির এই মনমরা বাড়িতে একদম থাকতে ইচ্ছে করছে না। এখানে থাকলে শুধু কান্না পাচ্ছে। মা একবারও তার সাথে কথা বললো না। মামা,চাচারাও ওর কাছে আসেনি। সাব্বির যে এসেছে সেদিকেও কারো খেয়াল নেই। হাজার হোক জামাই মানুষ। পরে আবার এটা নিয়ে কথা শোনাতে পারে। গোধূলির একটু রাগ হলো সবার ওপর। সন্ধ্যায় নীরবে বের হয়ে এলো বাড়ি থেকে।
বাসায় পৌছে সাব্বির বলল,
তুমি ওখানে আজ থাকতে পারতে।চলে আসাটা উচিত হয়নি।
ওখানে দেখেছেন কেউ কথা বলল ঠিক করে?
আহা মরা বাড়ি,কারো কি মাথা ঠিক আছে নাকি?
মাথা সবার ঠিকই আছে। আমার নামে তো ঠিকই সবাই বদনাম করছে। তখনতো আর শোক দেখলাম না কারো চেহারায়।
হুম,আমিও দেখলাম। সবাইতো তোমাকেই দায়ী করছে বাবার মৃত্যুর জন্য।
আপনিও শুনেছেন?
হুম বাইরে সবাই কানাঘুষা করছিলো।
এদিকে ছোট ফুফুতো মুখের ওপর যা তা বলল। আমাকে বলে কিনা বাড়ি থেকে বের করে দিতে।আমিও দুচার কথা শুনিয়ে দিয়েছি।
কাহিনী তো এখানেই। সবাই তোমাকে দোষ দিচ্ছে কিন্তু আসল ঘটনা কেউ জানেই না।
কি আসল ঘটনা!
তোমার বোন যে পাত্রের সাথে ঝামেলা করে হওয়া বিয়ে ভেঙে দিলো সেটা কি বলেছে একবারও। কেনাকাটা সব হয়ে গেছিল,দাওয়াত দেয়াও শেষ। কিন্তু হঠাৎ করেই তোমার বোন পাত্রের সাথে কি নিয়ে যেন ঝামেলা করেছে। এতবড় ধাক্কা না সামলাতে পেরেই তোমার বাবা মারা গেছেন।
কি বলেন! আমিতো জানিইনা কিছু।
জানালে তো জানবে। কেউ যেন না জানে এটাই তো ওরা চাইছে। আমি শুধু ভাবছি মা পর্যন্ত কিভাবে চুপ করে থাকলেন। তুমি ওনার নিজের মেয়ে তো? সবাই তোমাকে দোষ দিক কিন্তু উনিতো জানেন সব ঘটনা। অথচ একটা কথাও বললেন না!
আপনি এতসব কিভাবে জানেন।
আমার সাথে ঐ ঘটকের দেখা হয়েছিল। সেই বলল। তোমার বোনের দেখো অন্য কোনো কেইস আছে তাই বিয়ে করছে না। আর দোষ হচ্ছে তোমার। দেখো আলটিমেটলি বাবার মৃত্যুর জন্য তোমাকেই দোষী করতে চাইছে যেন তোমার ওপর থেকে সবার মন উঠে যায়।
তা কেনো করবে!
আরে মেয়ে ঢাকা শহরে বাড়ির জায়গা,পেনশন সব একাই ভোগ করবে। বোঝোনি?
তাইতো,এটাতো ভাবিনি। এজন্যই আমাকে কেউ থাকতে বললো না,ঠিকমতো কথা পর্বযন্ত বললো না।
একদম। এমন করেছে যাতে তুমি যেন ওখানে আর না যাও। তোমার উচিত হবে একবার যখন ঐ বাড়িতে ঢুকেছ, এখন থেকে ঘনঘন যাওয়া। ওখানে নিজের জায়গাটা নিশ্চিত করা। তোমারতো হক আছে তাই না? কেনো তুমি নিজের হক থেকে বঞ্চিত হবে। তুমি তো মানুষ খুন করোনি। বিয়ে করেছো। এক দিন না একদিন বিয়েতো দিতেই হতো। হয়তো মা বাবা পছন্দ করে দিতেন। আর হায়াত মউত সব খোদা ঠিক করেন। কারো মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী থাকে না। উনি অসুস্থ ছিলেন তাই মারা গেছেন। এটাতে তোমার যদি দোষ কেউ দেয় তবে সেটা ঠিক না। সেইভাবে দেখলে তোমার বোন দায়ী সবকিছুর জন্য। তুমি মনখারাপ করে থেকো না। এখন থেকে ও বাড়িতে নিয়ম করে যাবে বুঝলে?
হুম, আপনি ঠিক বলেছেন। আর আমি কিনা সবার কথায় রাগ করে চলেই আসলাম।
মৃত্যুর শোক কেটে একটা হিংসাত্মক অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল গোধূলীর মনে। সাব্বির খুব চতুরতার সাথে সেই বীজ বপন করে দিলো। গোধূলি ঠিক করল দোয়া পড়ার দিন বাবার বাড়িতে গিয়ে কয়টা দিন থেকে আসবে।
তিনদিনের দিন দোয়া পড়ার অনুষ্ঠানে গোধূলী এলো লাগেজসহ। সাব্বির বাইরে নামিয়ে দিয়ে গেছে। গোধূলি এমনভাবে বাড়িতে ঢুকল যেন কিছুই হয়নি। এ বাসায় স্বাভাবিক যাতায়াত আছে ওর। আগে ঘরে গিয়ে লাগেজ রাখল। তারপর বাইরে এলো।
নাজমা বসে ছিলেন বাইরের বারান্দায়।
গোধূলি বলল,
মা আমি ক’টা দিন এখানে থাকব।
নাজমা বললেন,
থাকো। তোমার কারণে কষ্ট পেয়ে তো লোকটাই চলে গেল। কিন্তু যাবার আগেও তোমার কথা ভেবেছেন উনি। আর তুমি কিভাবে সেই লোকটাকে এত কষ্ট দিতে পারলে।
গোধূলি দেখল মা তাকে তুমি তুমি করে বলছে। ওকে দূরের করে দিয়েছে। অভিমানে ফুঁসে উঠল ও।
এইসব ভুল কথা মা। আমার জন্য বাবা চলে যায়নি। আমি কি এমন করেছি! কাল থেকে একটা কথা বলেই যাচ্ছে সবাই। আসল ঘটনা লুকিয়ে রেখেছ তোমরা। আপার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণেই এসব হয়েছে।
এসব কি যা তা বলছিস ! ওরা কেনো বিয়ে ভাঙবে। তোর বাবাই মানা করে দিয়েছিল।
তুমি সবসময় তোমার বড় মেয়েকে নির্দোষ দেখাও। ওর জন্য বাবা চলে গেছে। ওর বাজে আচরণের জন্য বিয়ে ভেঙে দিয়েছে ছেলেপক্ষ। আর এখন আমাকে দোষী বানাচ্ছো। এসব করে আমাকে তাড়াতে পারবে ভেবেছ? কোনো লাভ নেই। এটা আমারো বাড়ি। আমার এখানে থাকবার অধিকার আছে। বাবার সবকিছুতেই আমার অধিকার আছে।
রাত্রি পাশের ঘরেই ছিলো। চিৎকার শুনে বেরিয়ে এসে বলল,
তুই ভুল বুঝছিস। তোকে কেউ তাড়াতে চাইছে না। তুই থাক না যতদিন খুশি।
কিরে আপা, আজকে বেশ কথা বলছিস। সেদিন সবাই আমাকে যা তা বলল তারপরেও তুই চুপ করে ছিলি। সত্যি টা লুকিয়ে রেখেছিস। ভালো মানুষের মুখোশ আর কত পড়ে থাকবি।
এসব আজেবাজে কথা বলার সময় এটা না। তুই সবটা জানিস না তাই উলটা পালটা বকছিস। তোকে কেনো তাড়াতে চাইব আমি। তুই নিজেই তো চলে গিয়েছিলি। যাই হোক,তোকে কেউ তোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না।
চাইলেও করতে পারবে না। সারাজীবন আমাকে অবহেলা করেছ তোমরা। এখন আর আমি একা না। কাউকে ছাড় দেবো না এক বিন্দুও।
(চলবে)