অমানিশা পর্ব-১৩

0
434

ধারাবাহিক গল্প
অমানিশা
পর্ব : ১৩

রাত্রির খালাতো ভাই শোভনের বৌ রিমু। এই রিমুকে নিয়েই সেদিন বিয়ের শপিং এ সাথে নিয়ে গিয়েছিল রাত্রি। কামরুল কিভাবে যেন রিমুর সাথে যোগাযোগ করে রাত্রিকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাবার জন্য ম্যানেজ করল। রিমু ভাবি এসে বলল,

এই রাত্রি,কাল স্কুল থেকে একটু আগে বেরুতে পারবে?

কেনো ভাবি?

কেনো আবার? তোমার বরতো আমাকে ফোন করে করে পাগল করে দিচ্ছে। তোমার সাথে দেখা করতে চায়। ওর বন্ধু আর তাদের বৌয়েরা সবাই নাকি একটা পার্টি করছে তোমাদের দু’জনের বিয়ে উপলক্ষ্যে। সেখানে তোমাকে নিয়ে যেতে চায়।

এখনো উনি আমার বর হয়নি ভাবি। আর তোমাকে বলেছে এ কথা!

হুম, তুমি নাকি বলেছ যে এভাবে দেখা করতে পারবা না।‌ বাড়িতে এসব পছন্দ করবে না তাই আমাকে ধরেছে। আমি খালাকে বলেছি। উনি বলেছেন সমস্যা নেই। তবে সন্ধ্যার আগে ফিরতে হবে।

রাত্রির এই রিমু ভাবি মেয়েটা একটু সহজ সরল। কেউ একটু ভালো করে কথা বললেই তাকে ভালো ভেবে বসে। কামরুলের আসল ইচ্ছেটাতো রাত্রি ভালো করেই জানে। ও বলল,

এইতো একসাথে শপিং করলাম। আবার দেখা করতে হবে কেনো। আর বিয়ে হোক তখন ওনার বন্ধুদের সাথে তো দেখা হবেই। আগে পার্টি করার কি দরকার।

আরে বিয়ের আগে কিসব অনুষ্ঠান করে। ব্যাচেলর পার্টির মতো আর কি। আর আসল কথা হলো বিয়ের আগে একটু একসাথে সময় কাটাতে চায় তোমার সাথে। আজকালকার ছেলে। হবু বৌয়ের সাথে প্রেম করতে চায়।

রিমু চোখ টিপে হাসতে লাগল। রিমু সবসময় ইয়ার্কি ফাজলামো করে। বেশি কথা বলে মেয়েটা। রাত্রি বলল,

আমি যাবো না।

আরে কি বলো! যাও, ভালো লাগবে। এখনতো সবাই প্রেম করেই বিয়ে করে। তোমার তো আর প্রেম করা হয়নি। বিয়ের আগে একটু ভাব ভালোবাসা না করলে কি হয় নাকি!

আমার এসব পছন্দ না ভাবি।

গেলেই ভালো লাগবে।

শোনো ভাবি,ছেলেটাকে আমার সুবিধার মনে হয় না।

কি যে বলো। ছেলেতো ভালো। তা নাহলে আজকাল সম্বন্ধ করে বিয়ের অপেক্ষায় থাকে নাকি? নিজের পছন্দ থাকত।

ঐ ছেলে আমাকে কি বলে শুনবা?

কি বলে!

রাত্রি রুম ডেটের কথা বলতে গিয়েও থেমে গেলো।

চুপ হয়ে গেলে যে। কি বলছে।

আমার ব্লাউজের মাপ জানতে চাইছে।

রাত্রির কথা শুনে রিমু হো হো কর হেসে উঠল। এই কথা! আরে মেয়ে, ছেলেরা বিয়ের আগে এমন কত কথাই বলে। তোমার ভাই কি করছিলো জানো? বিয়ের আগের রাতে ছাদ বেয়ে চুপ করে আমার ঘরে এসেছিল। তারপর কথা বলতে বলতে আচমকা আমাকে বুকে টেনে চকাস করে চুমু খেয়েছিল। আমিতো ভয়েই শেষ। কেউ দেখলে কেলেঙ্কারির একশেষ হবে।

রাত্রি বুঝল রিমুকে এসব বলে লাভ নেই। ও আসলে বুঝতেই পারছে না কিংবা রাত্রি বোঝাতে পারছে না। কামরুল ছেলেটার কন্ঠে কোনো প্রেম ছিলো না এসব বলার সময়। আর তাছাড়া রিমু আর শোভন ভাইয়া পূর্ব পরিচিত। তাদের প্রেম না থাকলেও একজন আরেকজনকে পছন্দ করত মনে মনে। আর কামরুল সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন। তাও যদি এনগেজমেন্টের আগে এমন কিছু বোঝা যেত রাত্রি না করে দিত। এখন বিয়ের কেনাকাটা পর্যন্ত শেষ। বাবার এতগুলো টাকা খরচ হয়ে গেছে। আর তাছাড়া আত্মীয় স্বজন অনেকেই জানে। বারবার ওর বিয়ে নিয়ে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে বাবার জন্য সেটা খুব অসম্মানের হবে।
কিন্তু এখন এই ছেলেকে মোটেই বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না রাত্রির। কি করবে ও। মাকে কি সব কিছু খুলে বলবে? মা নিশ্চয়ই বাবাকেই বলবে। তাহলেও তো সেই আবার বিয়েটা ভেঙ্গে দেবার কথাই আসবে।

রাত্রি কিছুই বুঝতে পারছে না। কিছু কিছু সময় আসে মানুষের জীবনে যখন ভীষণ অসহায় লাগে। রাত্রির এখন তেমন সময় যাচ্ছে।

রাতে মা নামাজ শেষে ঘরে এলেন। রাত্রির গায়ে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিলেন। তসবিহ গোনা শেষ করে বললেন,

তোর চোখমুখ এতো শুকনা লাগছে কেনো,ঘুমাসনি রাতে?

ঘুমিয়েছি।

শোন, কামরুল ছেলেটার বন্ধুরা নাকি তোদের জন্য কাল কি একটা অনুষ্ঠান করতে চায়। রিমুকে জানিয়েছে। তুই তৈরি হয়ে থাকিস মা। ছেলেটা আশা করেছে। সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে দেবে বলেছে।

আমি যেতে চাইনা মা। আমার এখন কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।

পাগল‌ মেয়ে। বিয়ে জিনিস টাই এমন মা। তখন শুধু নিজের ইচ্ছায় সব করা যায় না।‌আরো কিছু মানুষের ইচ্ছেকে তখন মূল্যায়ন করতে হয়। যা,ছেলেটা ওর বন্ধুদের কাছে ছোট হয়ে যাবে না হলে। ওদের বৌয়েরাও থাকবেতো।

রাত্রি মাকে জড়িয়ে কান্না করে দিলো।

নাজমা ভাবলেন মেয়ের মন হয়তো খারাপ। বিয়ে হয়ে যাবে,এ বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে তাই মনটা এমন ভার হয়ে আছে। বিয়ের আগে আগে সব মেয়েরই এমনটা হয়।

পরদিন রাত্রির ঘুম ভাঙল একরাশ বিষন্নতা নিয়ে। সারারাত দুশ্চিন্তায় তেমন ঘুম হয়নি আসলে। কামরুলের সাথে আজ বাইরে যেতে হবে। কামরুল বন্ধুদের গেট টুগেদারের বিষয়টা বানিয়ে বলেছে। রাত্রি চেষ্টা করেও মাকে বলতে পারেনি সবটা। বিয়েটা না হলে বাবা যদি আবার আঘাত পায় এই ভাবনাটা ওর উচিত অনুচিত বোধকে গলা টিপে ধরেছে। ও হয়তো বেশি বেশি রিয়েক্ট করছে,এটাই হয়ত আজকাল স্বাভাবিক বিষয়। যাই হোক কামরুলের আশা সে পূরণ হতে দেবেনা। যেভাবেই হোক বিয়ের আগে কোনো অনৈতিক কাজ সে করবে না।

কামরুলের আসার কথা দুপুরে।‌ রাত্রি একটু আগেই তৈরি হয়ে নিলো। সিদ্ধান্ত নিলো পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াবে ও। ভীত হয়ে পালিয়ে যাবে না।

কামরুল গাড়ি নিয়ে নিজে আসেনি। ওর এক খালাতো বোনকে পাঠাল রাত্রিকে পিক করতে। একটু দূরে আসার পর কামরুল উঠল। ড্রাইভারের পাশে বসল। রাত্রি আর কামরুলের বোন পেছনে বসেছে। রাত্রিকে দেখে তেলতেলে হাসি দিলো। কামরুলের বোন একটা শপিং মলের সামনে নেমে বলল,

তোমরা যাও। আমার একটু কাজ আছে এখানে।

কামরুল নেমে পেছনে এসে রাত্রির পাশে বসল।

গাড়ি নিয়ে ওরা এলো উত্তরা দিয়াবাড়ির দিকে। কামরুল ড্রাইভারকে বলল,

গাড়িটা একপাশে সাইড করে রেখে এক প্যাকেট সিগারেট আনো।

ড্রাইভার গাড়ি সাইড করে নেমে পড়ল।

রাত্রি দেখল আশেপাশে কোনো দোকানপাট নাই। ও বলল,

এখানে তো দোকান দেখছি না।

কামরুল বলল,

একটু সামনে গেলেই আছে। ও নিয়ে আসবে। ওনার সামনে তোমার সাথে মন খুলে কথা বলা যাবে না।

কামরুল কাছে সরে এসে রাত্রির হাত ধরল।

রাতু,আমার তোমাকে খুব ভালো লাগছে। বিয়েটা আরো আগায় আনলে ভালো হতো। তোমাকে দেখার পর থেকে ঘুম নাই আমার রাতু। এতদিন কিভাবে থাকব।

রাত্রি হাত ছাড়িয়ে বলল,

কয়টাতো দিন,দেখতে দেখতে চলে যাবে।

কামরুল আচমকা রাত্রিকে চেপে ধরে পাগলের মতো গালে গলায় চুমু খেতে লাগল।

এখুনি ছাড়ুন আমাকে। নাহলে চিৎকার করব।

এখানে কেউ শুনবে না তোমার চিৎকার।

রাত্রি ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইলে কামরুল আরো উন্মাদ হয়ে গেল।

আহা,এমন করলে তোমার কষ্ট বেশি হবে। এমন করছো যেন কচি খুকি। একটু চেখে দেখতে দাও। তরকারি নামানোর আগে লবণটাতো চাখতে হয় সোনা। না দেখেশুনে কি বিয়ে করা যায় বলো।

হঠাৎ ঘাড়ের কাছটায় জলুনি টের পেল কামরুল। ধারালো কিছু চেপে ধরেছে রাত্রি।

রাত্রি বলল,

এখুনি ছাড়ুন,নাহলে পোচ দিতে দেরি হবে না।

কামরুল ভয় পেয়ে সরে গেল। ড্রাইভারকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এসব চরিত্রের ছেলেরা দূর্বল চিত্তের হয়। একা থাকলে বেশ ভয় পায়।

কামরুলের গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো ও। চিৎকার করে বলল,

তুই একটা দুশ্চরিত্র ছেলে। তোর মতো ছেলেকে বিয়ে করার থেকে আজীবন একা থাকা ভালো।

রাত্রি দরজা খুলে বেরিয়ে হাঁটতে লাগল। ও ঠিক করল বাড়িতে ফিরে বিয়ে ভেঙে দেবে ও নিজেই।

তবে ওকে কিছুই করতে হলো না। রাত্রি বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার একটু পরেই কামরুলের খালার ফোন এলো নাজমার কাছে।

আসসালামুয়ালাইকুম বিয়াইনি।

ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছেন?
সব ঠিক আছেতো?

জি ভাই,সব ঠিক আছে। একটা কথা জানাতে ফোন দিলাম।

বলুন।

আমাদের কামরুতো সোনার টুকরা ছেলে। এই যুগে এমন ছেলে পাওয়া সহজ কথা না। এইতো আমাদের পাড়ায় এক মেয়ের বাবা ছেলেকে ফ্লাট লিখে দিতে চেয়েছিল।‌ কিন্তু ঐ মেয়ের গায়ের রঙ একটু ময়লা তাই কামরু রাজি হয়নাই। ছেলের আবার ইচ্ছা সুন্দর মেয়ে বিয়ে করবে।‌ আপনাদের মেয়েতো মাশাআল্লাহ ভালো দেখতে শুনতে। দু’জনকে মানাবে মাশাআল্লাহ।

জ্বি আপা,সব আল্লাহ পাকের ইচ্ছা।

তবে কিছু না মনে করলে একটা কথা ছিল।

জ্বি বলেন।

ছেলেতো আপনাদের ঘরের ছেলেই হলো বলা চলে। ছেলের একটা ছোট আব্দার আছে। এটাকে আবার অন্যভাবে নেবেন না।

না ঠিক আছে।‌ বলেন আপনি।

আপনারা তো জানেন ছেলেদের বাপ ভাইয়েরা একসাথে ব্যবসা করে। তবে ছেলে চাইছে আলাদা একটা দোকান দিতে। আপনাদের বাসার ছাদে একটা শোরুম দিতে চায়।

ভালো তো। বিয়েটা হোক,সেসব বিয়ের পর ভাবা যাবে। আমাদের তো একটাই মেয়ে। সবকিছু তো ওরই থাকবে।

না ভাবীসাব, এভাবে না। ছেলে বাড়ির ওপরের অংশ ওর নামে লিখে চাইছে।

কি বলেন, লেখালেখি করতে হবে কেনো।

আপনাদের তো আরও একটা মেয়ে আছে।‌ সেতো আপত্তি করতে পারে ভবিষ্যতে। তাই লিখেপড়ে দিলে ভালো না? ঐ মেয়েতো শুনছি নিজেই বিয়ে করে চলে গেছে। কিন্তু সময়মতো এসে দেখবেন ঠিক সম্পত্তির ভাগ দাবি করবে।

নাজমা অবাক হয়ে গেলেন। তারা নিজেরাই এতো কিছু ভাবেননি অথচ বাইরের লোকজন কতদূর ভেবে ফেলেছে। আর তাছাড়া গোধূলিকেতো তারা ত্যাজ্য করে দেননি। আর লোকজন সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা করে ফেলছে।

তিনি বললেন,

আমিতো কিছু একা বলতে পারি না আপা। ওর বাবার সাথে কথা বলতে হবে। আর তাছাড়া রাত্রির বাবা এসব একদম পছন্দ করবে না। এভাবে চাওয়া মানে তো যৌতুক দাবি করা।

ছি ছি যৌতুক কেনো। ছেলের ভালো মানেতো আপনার মেয়েরই ভালো। ওতো আপনাদের ছেলেই হয়ে গেল বলা চলে।

আচ্ছা দেখি,আমি জানাব।

নাজমা বিষয়টা রাত্রির বাবাকে বললেন। তরফদার সাহেব বললেন,

এরা তো দেখছি লোভী মানুষ। এই ঘরে মেয়ে বিয়ে দিবো না।

গোধূলি ভেবেছিল এ বাসায় উঠলে সব সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সমস্যা সবে শুরু হলো। সাবেরা কাজের লোককে বিদায় দিয়ে দিয়েছেন। এখন পুরো বাসায় কাজ ওকেই করতে হয়। এমনকি সাবেরা অফিস যাবার আগে বালতি ভরে সবার পরনের কাপড় পর্যন্ত ভিজিয়ে রেখে যান। সেসবও ওকে ধূতে হয়। সারাদিন কাজ করে হাঁপিয়ে ওঠে গোধূলি। তারপরেও সাবেরা ফিরে এসে এটা ওটা ভুল ধরতে থাকে। ঐ এক কথা বকবক করতে থাকেন,

কি মেয়ে যে আনল সাব্বির। কোনো গুন নাই, কামাই রোজগার নাই। আমার ছেলের ঘাড় ভেঙে খাচ্ছে। অথচ ঘরের কাজ পর্যন্ত ঠিকঠাক করতে পারে না। এর থেকে গ্রামের কোনো মেয়ে আনলে অন্তত ঘরের কাজগুলো ঠিকমত হতো।

সাব্বির এসব যেন দেখেও দেখে না। একদিন গোধূলি এতো কাজ করতে কষ্ট হয় এমন বোঝাতে গেলেই সাব্বির বলল,

সংসারে তো কাজ থাকবেই। আমার মাতো সারাজীবন চাকরি সংসার দুটোই করল। আর তুমিতো সারাদিন বাসাতেই শুয়ে বসে থাকো। তোমার আবার কষ্ট কি। আর তাছাড়া সংসারটাতো তোমারই। তোমার সংসারতো তোমাকেই দেখতে হবে।

গোধূলি আর কিছু বলতে পারলো না। সংসারের দায়িত্ব নামমাত্র তার। কি রান্না হবে, কি কিনতে হবে, কাজের লোক লাগবে কি না সব সিদ্ধান্ত তার শাশুড়ি নেয়। সে শুধু কাজের লোকের মতো হুকুম তামিল করে।

তবে গোধূলির সব কষ্ট দূর হয়ে যায় সাব্বির যখন ওকে কাছে টানে, পাগলামি করতে থাকে। তখন ও যেন অন্য এক মানুষ । তখন গোধূলি ওর জন্য সবচেয়ে প্রিয় । ওর কানে কানে যখন বলে,

তুমি একটা আগুন, তোমাকে ছেড়ে এক মূহুর্ত বাঁচতে পারবো না আমি।

গোধূলির তখন নিজেকে রানী মনে হয়।
সাব্বির এতোটাই পাগল ওর জন্য যখন কাছে চায় তখন কিছুই বুঝতে চায় না। এইতো সেদিন বিকেলে নাশতা করার পর গোধূলীকে সাবেরা বলল রাতের জন্য তরকারি করতে। গোধূলি সবজি কাটতে শুরু করেছে এমন সময় সাব্বির বাইরে থেকে এসে বলল,

গোধূলি একটু ঘরে আসো।

একটু পর আসছি।

উহু এখুনি আসো।

সাবেরার দিকে তাকিয়ে দেখল ওনার মুখ ভার হয়ে গেছে। গোধূলি সবজি কাটা রেখে উঠে ঘরে যেতেই সাব্বির দরজা লাগিয়ে দিলো। গোধূলি বলল,

এই কি করছেন,এখন এই সময় দরজা লাগালেন যে,মা কি ভাববেন!

সাব্বির গোধূলীকে টেনে বুকের কাছে নিয়ে বলল,

কে কি ভাবল জানি না, তোমাকে এখন কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।

গোধূলি টের পেল সাব্বির নেশা করেছে। মুখ থেকে মদের গন্ধ আসছে। ও আর না করলো না। নিজেকে ছেড়ে দিলো সাব্বিরের কাছে।

এই যে সবকিছু অগ্রাহ্য করে সাব্বির ওর‌ জন্য পাগল হয়ে যায় এতেই ভীষণ সুখী লাগে ওর নিজেকে।

আজ অফিস শেষে সাব্বির চলে গেল ওদের ভাড়া বাড়িতে। বাড়িওয়ালা এখনও জানে না যে গোধূলি এখন আর থাকবে না এখানে।‌ আজকে জানিয়ে দেবে সাব্বির। এডভান্স দিয়েই এ মাসের ভাড়াটা এডজাস্ট হবে তাহলে। উপরে এসে দরজা খুলতে যাবে এমন সময় নওমি পেছন থেকে বলল,

কি ব্যাপার দুলাভাই,কেমন আছেন?
দেখাই যায় না আজকাল।

সাব্বির ঘুরে দেখল নওমি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে বেশ টাইট একটা টপস আর স্কার্ট। ওড়নাটা গলায় পেঁচিয়ে রেখেছে। শরীরের ভাঁজ সব প্রকট হয়ে চোখে পড়ছে। সাব্বির চোখ সরিয়ে নিল।

এই মেয়েটা সাব্বিরকে পছন্দ করে এটা বোঝে সাব্বির। সবসময় অফিস যেতে আসতে যখনই সাব্বির সিঁড়ি দিয়ে নামত ওর সাথে দেখা হয়ে যাবে। মেয়েটা ইচ্ছে করেই ঐ সময়ে বের হয়। আর আগ বাড়িয়ে কথা বলে। প্রথম থেকেই দুলাভাই বলে ডাকে। অথচ গোধূলির সাথে তেমন আলাপ নাই।

নওমির বাবার বাড়ি গ্রামের দিকে। ওখানে কোন এক ছেলের সাথে কি যেন সমস্যা হয়েছে তাই এখানে মামার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে ওর মা বাবা। এসব অবশ্য নওমি বলেনি। দাড়োয়ানের কাছে শুনেছে। রাতে সিগারেট কিনতে তে যখন নিচে নামত তখন দাড়োয়ান গুটুর গুটুর করে গল্প করতো ওর সাথে । মেয়েটার মধ্যে একটু চুলবুলি ভাব আছে। অহেতুক শরীর কাঁপিয়ে হাসে কথা বলতে গিয়ে।

সাব্বিরের চেহারা বেশ ভালো। বয়স ঠিক কত তা বোঝা যায় না। কমবয়সী মেয়েরাও ওর প্রেমে পড়ে। বিষয়টা বেশ উপভোগ করে ও। বিভিন্ন মেয়েদের সাথে মেলামেশা করতে ভালো লাগে ওর। তবে ষোড়শী মেয়েদের দিকে ঝোঁক একটু বেশি। ঠিক এজন্যই রাত্রি মেয়েটাকে দেখতে গিয়ে গোধূলিকে পছন্দ হয় ওর।

সাব্বির নওমিকে বলল,

এই তো কেমন আছো?

মেয়েটা আহ্লাদ করে বলল,

ভালো নাই। আপনার দরজায় দু’দিন থেকে তালা ঝুলছে। বৌ সহ হানিমুন গেছিলেন নাকি?

আর হানিমুন। মনের মতো মানুষ না পেলে মুনে কি আর হানি পাওয়া যায় নাকি!

সাব্বির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল।

নওমিও দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়াল।
এমা! কেনো,বৌকি মনের মতো না ! দেখতে তো সুন্দর।

শুধু সুন্দর হলেই কি মনের মতো হয়।

তো,আর কি লাগে?

এই যেমন তুমি, তুমি যখন হাসো তোমার পুরো শরীর খিলখিল করে হেসে ওঠে। এমনটাতো সবাই না।

তাই বুঝি। ফ্লার্ট করছেন?

নওমি নিচের ঠোঁট কামড়ে চোখ নাচাল।

নাহ্ এই মেয়ে একেবারে নিজেই হেঁটে এসেছে ধরা দিতে। খুব সহজেই একে বিছানায় নেয়া যাবে। চাইলে এখুনি। সাব্বিরের ভেতরটা শিহরিত হলো।
সাব্বির একটু এগিয়ে এসে নওমির কাঁধে হাত রেখে বলল,

তোমাকে ছুঁয়ে বলছি। সত্যি, সত্যি সত্যি।

নওমি পুরো শরীর দুলিয়ে হেসে ওঠে।

বৌকি আজ আসবে নাকি?

নাহ,ওর সাথে ঝগড়া হয়েছে। বাড়িতে গেছে।

কি নিয়ে ঝগড়া হলো!

আরে আমার একটু চাহিদা বেশি। সে বুঝতে চায় না। কাছে আসতে চায়না সহজে।

তাহলেতো তোমার মনটা সত্যিই খারাপ। এই যা তুমি বলে ফেললাম।

ভালো লাগছে তোমার মুখে তুমি ডাক। ভেতরে এসে বসো। ঘরটা কিন্তু ভীষণ এলোমেলো হয়ে আছে।

আচ্ছা আমি গুছিয়ে দিচ্ছি।

নওমি ওড়নাটা খুলে মেঝেতে রেখে উপুড় হয়ে বিছানায় চাদর গোছাতে লাগল। ওর টপসের গলাটা একটু বড়। হেলে থাকার কারণে অনেকটা নেমে গেছে। সাব্বির এর নেশা ধরে গেলো। ও দরজায় ছিটকিনি তুলে দিয়ে নওমির কাছে চলে গেলো। নওমি সাব্বির কে টেনে নিলো নিজের দিকে।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে