অভিমান হাজারো পর্বঃ২০
আফসানা মিমি
স্পন্দনের বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে শুয়ে আছে অতশী। স্পন্দন তার চুলের গভীরে আঙুল চালাচ্ছে সন্তর্পণে। এলোমেলো চিন্তারা আচ্ছন্ন করে রেখেছে অতশীকে। তার ভাবনার সুতোয় টান পড়েছে হঠাৎ স্পন্দন কথা বলে উঠায়
—“অতশী তুমি কী জানো যে তোমার গৃহশিক্ষক তোমাকে পছন্দ করতো! এমনকি এখনও করে।”
স্পন্দনের এমন কথায় অতশী চমকে তার দিকে তাকালো। কিন্তু স্পন্দন তাকালো না। তার চোখ সিলিংয়ে নিবদ্ধ। সে অতশীর দিকে না তাকিয়েও ওর এভাবে চমকে যাওয়াটা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছে। তবুও কিছু না বলে নিশ্চুপ রইলো।
অপূর্ব তাকে পছন্দ করে এটা অতশী তখন থেকেই জানতো, যখন থেকে তাকে পড়ায়। তবে সাথে সাথেই টের পায়নি। কিছুদিন পার হওয়ার পর বুঝতে পেরেছে। কারণ কোন ছেলে, পুরুষ মেয়েদের দিকে কেমন নজরে তাকায় তা মেয়েরা খুব ভালো বুঝতে পারে। কারণ মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাদেরকে সতর্ক করে দেয় আগে থেকেই। এটা আল্লাহ্ প্রদত্ত এক অলৌকিক ক্ষমতা বলা যায়। অতশী অপূর্বর প্রতি কোন টান অনুভব করতে না পারলেও তার প্রতি অপূর্বর ফিলিংস সে বুঝতে পারতো। যতক্ষণ পড়াতো ততক্ষণ চোখ অবনত করেই রাখতো। যখন অতশী মাথানিচু করে কিছু লেখতো তখন কেমন যেন হা করে তাকিয়ে থাকতো। মাঝে মাঝে চোখে চোখ পড়ে যেত। তখন কেমন লজ্জাবনত হয়ে চোখ নামিয়ে নিত অপূর্ব। খুব লাজুক ধরনের ছেলে ছিল অপূর্ব। তাই তো সাহস করে কখনোই কিছু বলতে পারেনি অতশীকে। এরপর বেশ কয়েক বছর আগে দেশের বাইরে চলে যায় নিজের স্বপ্ন পূরণের তাগিদে। যাওয়ার আগের দিন তাদের বাসায় এসেছিল বিদায় নিতে। অতশীর বয়স তখন কম হলেও সে বুঝতে পেরেছিল হাজারো না বলা কথা অপূর্বর চোখেমুখে ফুটে আছে। যা সে বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। কেউ যেন তাকে বাধা দিচ্ছিল প্রবলভাবে। যার কারণে বেদনায় যেন মুখটা পাংশুটে বর্ণ ধারণ করেছিল। তাদের বাসা থেকে বের হওয়ার আগে অপূর্বর চোখের পানি অতশীর চোখ এড়াতে পারলো না। তারপর এতোগুলো দিন বাদে আজ অপূর্বকে দেখেছে। তার চোখ দেখেই যেন অতশী কিছু একটা বুঝে গিয়েছিল।
নীরবতা ভেঙে স্পন্দন অতশীকে ডাকলো
—“অতশী!”
আস্তে করে উত্তর দিল
—“হুঁ।”
—“তোমার প্রাইভেট টিউটরের মুখে তোমার ‘সায়রা’ নামটা শুনে কেন জানি বুকের ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছিল আমার। এর কোন কারণ খুঁজে পাইনি আমি। কেন এমন লাগছিল আমার বলতে পারো?”
স্পন্দনকে আরেকটু নিবিরভাবে জড়িয়ে ধরে অতশী জবাব দিল
—“আমি শুধুমাত্র তোমাকেই ভালবাসি স্পন্দন। দুনিয়া উল্টে যাক তবুও এ সত্য কোনদিনও মিথ্যা হবে না। চাঁদ, সূর্য, আকাশ, বাতাস যেমন সত্য। তেমন সত্য তোমার প্রতি আমার ভালবাসা। এগুলো যেমন কেয়ামতের আগ অবধি বিলীন হবে না। তেমনি তোমার প্রতি আমার ভালবাসাও মৃত্যুর আগ অবধি অপরিবর্তিত রয়ে যাবে। কখনোই তা বিলীন হতে দিব না আমি। এমনকি মৃত্যুর পরেও যদি কোন জীবন থাকে তাহলেও সে জীবনেও আমি তোমাকেই চাইবো। কারণ তুমি আমার আত্মার সাথে মিশে আছো। এতো সহজেই তা বিলীন হবার নয়। কারণ তোমার ভালবাসা-ই যে আমার একমাত্র সম্বল।” কথাগুলো বলেই থামলো অতশী। স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বলে
—“আমি মরে গেলে কী তুমি আরেকজনকে তোমার এই বুকে ঠাঁই দিবে?”
হঠাৎ অতশীর এমন কথা শুনে স্পন্দন চকিতে তার দিকে তাকালো। দেখলো অতশী কেমন অশ্রুসিক্ত আঁখি মেলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে স্থির দৃষ্টিতে। কয়েকটা মুহূর্ত স্পন্দনের মুখে কোন কথা জুগালো না। বেশ কিছুক্ষণ পর অতশীর মাথার চুলে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে তারপর বললো
—“তুমি ছাড়া আমি নিঃস্ব অতশী। যে জীবনে তুমি থাকবে না সে জীবনের কোন মূল্যই নেই। কোন অস্তিত্বই রাখবো না আমি সেই মূল্যহীন জীবনের। এই বুকে কেবল এবং কেবলমাত্র তোমার বসবাস। তোমার প্রতি সকল নিঃস্বার্থ ভালবাসা আমি এখানটায় লালন পালন করছি। সেখানে আমি অন্যকাউকে জায়গা দেই কী করে বলো! এখানে অন্যকাউকে স্থান দেওয়ার কথা আমি স্বপ্নেও ভাবি না। এখানে শুধুমাত্র তোমার স্থায়ী বসবাস অতশী।”
স্পন্দনের কথা শুনে অশ্রুসিক্ত আঁখি হতে আপনাতেই নোনাপানি ঝরতে লাগলো। এতো ভালবাসা যে তার কপালে সইবে না। সে দিন যে ঘনিয়ে আসছে যে দিন এই বুকে সে আর মাথা রাখতে পারবে না। এই বুকের ভিতরের প্রতিটি ঢিপঢিপ শব্দ যে তার নাম জপ করে তা আর শুনতে পারবে না। এখনই তো সময় ভালো করে শুনে নেওয়ার।
…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
অপূর্বর কলিজাটা যেন জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। সায়রাকে এতোদিন পর দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল। হৃদয়টা শীতল হয়ে গিয়েছিল। যেন কেউ শান্তির প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে তার কলিজায়। সায়রার প্রতি তার অনুভূতিটা একটুও ফিকে হয়নি। তখন বেকার ছিল বিধায় কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেনি। কারণ তখন বলে কোন লাভ হতো না। তাছাড়া সায়রার বয়স অনেক কম ছিল তখন। বলেই বা কী লাভ হতো! বরঞ্চ আরো কষ্ট পেতো। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের তাগিদে দেশ ছাড়তে হয়েছিল তার। কিন্তু সে ভাবতে পারেনি এক স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে গিয়ে সায়রাকে হারিয়ে ফেলবে। আগের চেয়ে কতটা পরিবর্তন এসেছে চেহারায়! না জানা অবধি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখছিল সায়রাকে। কিন্তু যখন সে বললো ‘স্যার, পরিচয় করিয়ে দেই। সে হচ্ছে স্পন্দন, আমার হাজবেন্ড।’ কথাটা শুনেই এক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিল সে। পৃথিবীর আলো, বাতাস, পাখির কিচিরমিচির, মানুষের কোলাহল, আশেপাশের সকল মর্মভেদী ধ্বনি থেমে গিয়েছিল বেশ কয়েকটা মুহূর্তের জন্য। সাথে থেমে গিয়েছিল তার হৃৎপিণ্ড নামক কম্পিত মাংসপিণ্ডটা। কয়েকটা মুহূর্ত স্থির চাহনি মেলে চেয়ে চোখ নামিয়ে নিয়েছিল তড়িৎবেগে। সেখানটায় যদি মানুষের কলকলধ্বনি না থাকতো, তাহলে নিশ্চিত উপস্থিত সকলে টের পেত কতটা দ্রুতগতিতে যে বীট করছিল তার হার্ট। কেন জানি অস্বস্তিতে কাঁটা কাঁটা হয়ে এসেছিল সর্বাঙ্গ। তারপর যখন শুনলো তাদের লাভ ম্যারেজ কেন জানি তখন তার মাথা পুরো ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। অসাড়ভাবে দাঁড়িয়েছিল নিষ্পলক চাহনি মেলে। তার মনে হচ্ছিল তার ভিতরটা সবাই পড়ে ফেলবে সেখানে থাকলে। তাই নিজেকে আড়াল করার জন্য দ্রুতই সেখান থেকে সরে এসেছে।
তবে একটা জিনিস তার কাছে বেশ খটকা লেগেছে। সে হানড্রেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে সায়রা ভালো নেই। কিছু তো একটা হয়েছেই তার। ওর চোখমুখ দেখেই বুঝতে পেরেছিল ভিতরের লুকানো বিশৃঙ্খল ব্যাধিটা। সে যা ভাবছে তা যেন কিছুতেই না হয়। নয়তো এখন তো সে অর্ধেক ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। সন্দেহটা সত্যি হলে পুরোপুরিই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে সে।
বদ্ধ রুমের ভিতরে অস্থিরভাবে পায়চারি করছিল অপূর্ব। খানিক বাদে বাদে নিজের মাথার চুল নিজেই টানছিল প্রচণ্ড আক্রোশে। এমনটা তো হবার কথা ছিল না। তবুও কেন এমন হলো! এটাকেই কী ভাগ্যের লিখন বলে! তার ভাবনার মাঝেই দরজা নকের আওয়াজ হলো। পিছন ফিরে দেখে মা দাঁড়িয়ে আছেন। হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে বললো
—“মা, ভিতরে আসো না! বাইরে দাঁড়িয়ে কেন?”
—“তুই কী ব্যস্ত বাবা?”
—“না, আমি তো ফ্রীই আছি। কিছু বলবা তুমি?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজিয়া খাতুন বললেন
—“কী আর বলবো! বললেই কী আর তুই শুনবি? আমাদের কথার দাম কী আর তোর কাছে আছে?”
অপূর্ব আর্তনাদ করে বললো
—“মা! তুমি অন্তত এভাবে বোলো না। তোমাদের কোন কথাটা আমি শুনি না, বলো তো? সারাজীবন তো তোমাদের কথামতোই পথ চলে এসেছি। এমনকি তোমাদের স্বপ্ন পূরণের জন্যই আমার দেশের বাইরে যাওয়া। তোমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে আমার স্বপ্নটা হাতছাড়া হয়ে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।” শেষ কথাটা অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে বিড়বিড় করে বললো অপূর্ব। তা পুরোপুরি বুঝতে না পেরে রাজিয়া খাতুন জিজ্ঞাসা করলেন
—“তোর কী স্বপ্ন?”
অপূর্ব আৎকে উঠে বললো
—“না না, কিছু না। কী বলতে এসেছিলে বলো।”
—“এভাবে আর কতদিন ইমতি? তোর একটা গতি না হলে যে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো না। এবার অন্তত নিজের জীবনটা গুছিয়ে নে। এভাবে একা একা আর কতদিন! তোর সুখ না দেখে যেতে পারলে যে আমরা মরেও শান্তি পাব না।”
—“কিসের কথা বলছো তুমি মা?” বুঝতে না পেরে অপূর্ব জানতে চায়লো।
—“বিয়েশাদী করবি না? এভাবে কারো জীবন চলে? এবার তো নিজের মতো করে গুছিয়ে নে জীবনটা।”
অপূর্বর বলতে মন চায়লো ‘আমার জীবনটা যে ঊষর মরূভূমির ন্যায় হয়ে গেছে মা। এক ফোঁটা পানির সন্ধানে এতোগুলো বছর যাবৎ তড়পাচ্ছিলাম। যা-ও দেখা পেয়েছিলাম। কিন্তু তা-ও ছিল শুধুই মরীচিকা। এই অগোছালো জীবনটা গোছানোর কোন ইচ্ছেই আমার নেই। তবুও তোমাদের কথায় নাহয় বিয়েটাও করলাম। হয়তো দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। কিন্তু তাকে কখনো ভালবাসতে পারবো না আমি মা। কারণ জোর করে বিয়ে, সংসার করতে পারলেও ভালবাসা যে জোর করে হয় না।’
কিন্তু তা না বলে বললো
—“করবো মা সময় হলে। তোমাদের কোন ইচ্ছেই আমি অপূর্ণ রাখবো না। এতে করে যদি আমার সব সুখ বিসর্জনও দিতে হয় তা-ও দিব। তবুও তোমাদের কথা অমান্য করবো না।”
রাজিয়া খাতুনের কাছে কেমন যেন লাগলো কথাগুলো। কাছে এগিয়ে এসে বললো
—“তুই এভাবে বলছিস কেন ইমতি? আমরা কী তোর সুখ চাই না? আমরা কী দেখতে চাই না যে সুখী থাক সবসময়? তাহলে এভাবে বলছিস কেন? যেন তোর ওপর জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছি সবকিছু।”
অপূর্ব মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। মা’কে বললো
—“চাপিয়ে দিবে কেন মা? তুমি তো শুধু আদেশ করবে। আর তা আমি মাথা পেতে মেনে নিতে বাধ্য। কারণ তোমার আদেশ শিরধার্য। আমার মাথার তাজ বানিয়ে রেখে দিব তা। আমার শরীরের চামড়া দিয়ে তোমার পায়ের জুতো বানালেও যে তোমার প্রতিদান আমি দিতে পারবো না মা।”
অপূর্বর কথা শুনে রাজিয়া খাতুনের চোখ ভরে এলো। কে বলেছে শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায়! জন্ম না দিয়েও যে মা হওয়া যায় তা তিনি আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছেন। সেই সুখে উনার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। অপূর্বর সামনে কাঁদা যাবে না। তাই অশ্রুসিক্ত চোখে অপূর্বর মাথায় একটা স্নেহের চুমু দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল আর একটিও কথা না বলে।
অপূর্ব সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তার বুক চিরে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। বড়ই আবেগী তার এই ‘মা’ নামক স্নেহময়ী সুদর্শনা রমণীটি। এই মানুষটার অনেক অবদান অপূর্বর এ পর্যন্ত আসায়। তাঁর ঋণ কোনদিন সে শোধ করতে পারবে না।
…
বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে এভাবে সেভাবে। যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নিজেকে নিয়ে। এক গোধূলি লগ্নে ইরিন এসে উপস্থিত অতশীর বাড়িতে। বেশ অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে ছিল একে অপরকে। যেন কত যুগ পর দেখা হয়েছে দুজনের। নিজেদের রুমে এনে এ কথা সে কথা বলতে বলতে হঠাৎই অতশী ইরিনকে জিজ্ঞাসা করে
—“কিরে রিমন তোকে মেনে নিয়েছে তো! যেভাবে হুট করে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তোদের বিয়েটা হলো। বনিবনা ভালো তো!”
ইরিন মুচকি হেসে জবাব দেয়
—“আমি জানিনা রিমনের সাথে বিয়ে না হয়ে অন্যকারো সাথে বিয়ে হলে এমন ভালবাসা পেতাম কিনা! কিন্তু অনেস্টলি বলছি রিমন অনেক ভালো একটা ছেলে। আমাকে খুব বুঝে। আমি মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই কিভাবে যেন বুঝে যায়। যদিও বিয়ের পরপর প্রথম কয়েকদিন দুজনের কেউই জড়তা কাটাতে পারিনি নিজেদের। কিন্তু আস্তে আস্তে দুজনের মনের মেঘ কেটে সেখানে দেখা দিয়েছে এক আলোকিত সূর্যরশ্মি। যার আলোক ছটায় আমার জীবনটা পরিপূর্ণ হয়েছে। অন্যান্য টিপিক্যাল স্বামীদের মতো নয় সে। আমাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছে। এ সব মিলিয়ে আমি সুখী।”
ইরিনের কথাগুলো শুনে যেন অতশীর অন্তরে প্রশান্তির প্রলেপ পড়লো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ইরিনের হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো
—“জানিস বিয়ের পর থেকে এটা ভেবে অনেক অপরাধবোধে ভুগছিলাম আমি। তোর মুখ থেকে এসব শুনে মনে হচ্ছে যেন বুকের ওপর থেকে চাপা পাথরটা সরে গেল। বেশ শান্তি পাচ্ছি আমি।”
—“কিন্তু এভাবে আর কয়দিন অতশী?” অসহায়ভাবে জানতে চায়লো ইরিন। অতশী বুঝতে না পেরে মলিন হেসে জিজ্ঞাসা করলো
—“কিসের কথা বলছিস তুই? বুঝতে পারছি না আমি।”
—“তুই কী সত্যি সত্যিই বুঝতে পারছিস না আমি কিসের কথা বলছি? নাকি না বুঝার ভান করছিস?” ভ্রু কুঁচকে গেল ইরিনের। এতোক্ষণে বুঝতে পারলো অতশী। কিছু না বলে মুখ নামিয়ে বসে রইলো নিশ্চুপ।
—“কিরে বল না এভাবে আর কতদিন? সত্যিটা কবে জানাবি তুই ভাইয়াকে? এভাবে তুই এই অমোঘ সত্যিটা কতদিন লুকিয়ে রাখতে পারবি”
—“কিসের সত্যির কথা বলছো ইরিন?”
পিছন থেকে আচমকা স্পন্দনের কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে দুজনেই অনেকটা চমকে উঠলো। স্পন্দন কিছু শুনে ফেললো না তো! কাছে এগিয়ে এসে আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়লো
—“কী হলো, বলো? কী সত্যি জানানোর কথা বলছো তুমি? অতশী আমার কাছ থেকে কী লুকাচ্ছে?”
দুজনেই থতমত খেয়ে গেল। কী উত্তর দেওয়া যায়! স্পন্দন এতো সহজে ছাড়বে বলে মনে হয় না। ইরিনকে বিশ্বাস নেই। সে বারবারই স্পন্দনকে সত্যিটা বলে দিতে চেয়েছে। এখনও যদি বলে দেয়! তাই ইরিন কিছু বলার আগেই হুট করেই অতশী বলে উঠলো
—“আ’ম প্রেগন্যান্ট।”
কথাটা যেন বোমার মতো ফাটলো দুইজনের কানে। অবিশ্বাস্য চোখে অতশীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো দুজনেই। মাথানিচু করে বসে আছে সে। আচমকা এমন আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না অতশী ও ইরিন কেউই। স্পন্দনের করা কাণ্ডে অতশী লজ্জা পেয়ে তার বুকে মুখ লুকালো। আর ইরিন বিব্রত হয়ে সেখান থেকে কোনমতে পালিয়ে বাঁচলো। পুরো ঘরময় অতশীকে কোলে নিয়ে হাঁটছে স্পন্দন। অতশী অবাক দৃষ্টিতে স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে আছে। কে বলবে এই মানুষটি কয়েকদিন আগে বলেছিল তার বাচ্চা চায় না। দরকার হলে দত্তক নিতে রাজী ছিল। কিন্তু এখন তাকে সম্পূর্ণই অচেনা ঠেকছে অতশীর কাছে। বাবা হওয়ার সুখানুভবে ফের অতশীকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলো স্পন্দন। যাকে বলে লিমিটেশন ছাড়া আদর। আবারো স্পন্দনের লোমশ বুকে মুখ লুকালো লজ্জায়। স্পন্দন আজকের মতো খুশি কখনোই হয়নি আগে।
কিন্তু স্পন্দন তো আর জানতো না যে এই ক্ষণস্থায়ী সুখের আড়ালে চিরস্থায়ী দুঃখটা ঘাপটি মেরে বসে আছে তার অজান্তে। সময় সুযোগ বুঝে ঠিক তার সামনে উন্মোচিত হবে।
চলবে…….