#অভিমানী_বিকেল_শেষে ( নবম পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
সুপ্রিয়র মাইল্ড এটাক হয়েছিল সেইদিন। হার্টে ব্লকেজ ছিল। স্টেন্ট বসাতে হয়েছে তাই। রঙ্গনই করেছিল ওর অপারেশন। যদিও সুপ্রিয়র মুখটা দেখে মাঝে মাঝেই সেইদিনের দৃশ্যটা মনে পরে যাচ্ছিল। কিন্তু রঙ্গন নিজেকে স্থির রেখে অপারেশনটা করেছিল।
এরপর পরেরদিন সকালে সেন্স এসেছিল সুপ্রিয়র। সেদিন বাড়ির লোকেদের কাছে জানতে পেরেছিল প্রথম যে ওর অপারেশন করেছে ডক্টর রঙ্গন চ্যাটার্জি। কথাটা শুনেই কেমন ধাক্কা লেগেছিল যেন। রঙ্গন চ্যাটার্জি! মানে তুলির হাজবেন্ড রঙ্গন চ্যাটার্জি! যদিও শুনেছিল সেদিন পার্টিতে যে রঙ্গন এই শহরের একজন নাম করা হার্ট সার্জেন; কিন্তু সুপ্রিয়কে যে একদিন ঘুরে ফিরে এই মানুষটার কাছেই আসতে হবে নিজের জীবনের জন্য, সেটা ভাবেনি একবারও। কথাগুলো ভেবেই চোখটা কিরকম ঝাপসা হয়ে এলো ওর। সেদিন নিজের অহংকারে, নিজের ইগোকে স্যাটিসফাই করার জন্য এত নোংরা কাজ করেছিল ও তুলির সাথে! কথাটা মনে হতেই লজ্জায় কিরকম চোখটা নেমে গেল নিচে। আসলে এইসব করে তো ও রঙ্গন আর তুলির রিলেশনটা ভেঙে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু এত কিছুর পরও রঙ্গন ওর অপারেশন করলো! ওকে একটা নতুন জীবন দিল! কথাটা ভাবতেই কিরকম এলোমেলো লাগছিল আজ। মনে হচ্ছিল রঙ্গনকে সামনে পেয়েই সবার আগে ওকে সত্যি কথাগুলো বলতে হবে সেদিনের। নইলে নিজের দিকে কখনো চোখ তুলে তাকাতে পারবে না আয়নায়। এত খারাপ একজন মানুষ ও! এত বেশি অহংকার নিজেকে নিয়ে! যদি মৃত্যু এত সামনে থেকে এসে ছুঁয়ে না যেত, তাহলে নিজের এই অন্ধকার দিকটা কোনোদিন বোঝাই হতো না সুপ্রিয়র! কথাগুলো ভীষণ ভাবে মনে হচ্ছিল আজ।
যাইহোক, এই ভাবনার ভিড়ে সেদিন দুপুরবেলা রঙ্গন কেবিনে এসেছিল ওর চেক আপের জন্য। সুপ্রিয় সেই মুহূর্তে রঙ্গনকে দেখে প্রথমে চোখ তুলেও তাকাতে পারেনি। রঙ্গনও ভীষণ প্রফেশনাল হয়ে রিপোর্টগুলো চেক করে নার্সকে বলেছিল,
—–” আর তিনদিনের মধ্যে রিলিজ করে দেয়া যাবে পেশেন্টকে। আর বাকি যা টেস্ট আছে, আর পোস্ট অপারেটিভ মেডিকেশন, সব আমি পেশেন্টের বাড়ির লোককে জানিয়ে দেব।”
কথাগুলো বলেই রঙ্গন চলে যাচ্ছিল, কিন্তু সুপ্রিয় আর চুপ না থেকে ডেকে উঠলো ওকে। তারপর ভীষণ রিকোয়েস্ট করে বললো,
——” প্লিজ, একটু দাঁড়ান, আপনার সাথে কিছু কথা আছে আমার, তুলিকে নিয়ে।”
কথাটা শুনে রঙ্গন কিরকম ধৈর্য্যহীন হয়ে গেল যেন! ও খুব বিরক্ত হয়ে বললো,
——” এটা আমার কাজের জায়গা। এখানে আমি পার্সোনাল কোনো কথা শুনিও না, বলিও না। আর তোমার আর তুলির ব্যাপারে আমি লিস্ট ইন্টারেস্টেড.. তাই নতুন করে তোমাদের আফেয়ারের ব্যাপারে আমার কিছু জানার নেই!”
কথাটা বলেই রঙ্গন চলে যাচ্ছিল। কিন্তু সুপ্রিয় এবার ওই শরীরেই স্যালাইনের চ্যানেল নিয়ে উঠতে যাচ্ছিল ওকে থামানোর জন্য। রঙ্গন সেটা দেখে থমকে গেছিল এক সেকেন্ড। নার্সও সঙ্গে সঙ্গে এসে সুপ্রিয়কে ধরে ফেলেছিল। সেই মুহূর্তে সুপ্রিয় খুব অসহায় গলায় বলেছিল,
——” প্লিজ ডক্টর চ্যাটার্জি, একবার শুনুন আমার কথা। আপনি আমার জন্য তুলিকে ভীষণ ভাবে ভুল বুঝেছেন।”
কথাটায় রঙ্গন এবার স্থির না হয়ে পারলো না। ও তুলিকে ভুল বুঝেছে! কথাটা ভেবেই রঙ্গন নার্সকে এই মুহূর্তে বেরিয়ে যেতে বললো কেবিন থেকে, তারপর খুব কঠিন গলায় সুপ্রিয়র সামনে এসে বললো, —-” আর কি বলার আছে তোমার? সেদিন তোমাদের লাভ স্টোরির ডিটেলসটা কি কিছু কম ছিল! যে আজ নতুন কিছু শোনাবে?”
কথাগুলো শুনে সুপ্রিয় কেঁদে ফেলেছিল এবার অপরাধবোধে। ও খুব থমকে থাকা গলায় বলেছিল,
——” আপনি সব কিছু ভুল জানেন। শুরু থেকে শেষ অব্দি ভুল। হ্যাঁ, তুলির সাথে বিয়ের আগে আমার একটা রিলেশন ছিল ঠিকই, কিন্তু তিন বছর সম্পর্কটা রেখে আমি ওকে শেষে বিয়ের জন্য না বলে দিয়েছিলাম। তিন বছরের রিলেশনটা একদিনে শেষ করে দিয়েছিলাম স্বার্থপরের মতন। আসলে হঠাৎ করে খুব ফেমাস হয়ে গেছিলাম মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে। তাই সব কিছুকে খুব সস্তা মনে হতো। যেই মেয়েটা আমার স্ট্রাগল এর দিনগুলোতে প্রত্যেকটা সময় আমার সাথে ছিল, তাকে নিজের লাইফ থেকে বাদ দিতে এক সেকেন্ড ও ভাবিনি। তবে তুলি সেদিনের পর আমার সাথে একবারের জন্যও যোগাযোগ করেনি আর। কখনো একটা ফোন অব্দি করেনি। তারপর পার্টিতে যখন আমি তুলিকে আপনার সাথে দেখলাম, তখন কোথাও একটা মেল ইগো হার্ট হলো আমার! আমাকে ছেড়ে যে তুলি এত সহজে অন্য একজনের হাত ধরেছে, এটা আমি একসেপ্ট করতে পারিনি সেইদিন। একসেপ্ট করতে পারেনি যে তুলি এতদিন বাদে আমাকে দেখেও চিনলো না একবারও সবার সামনে! তাই ওয়েটারকে টাকা দিয়ে আমি তুলির শাড়িতে সফ্ট ড্রিঙ্কটা ফেলতে বলেছিলাম। তারপর ওয়াশ রুমে ওকে একা পেয়ে, আই মলেস্টেড হার.. খুব নোংরামি করেছিলাম সেদিন ওর সাথে ড্রিঙ্ক করে। তারপর আপনাকে দেখেও ইচ্ছে করে ওইসব কথা বলেছিলাম, যাতে আপনার আর তুলির রিলেশনটা শেষ হয়ে যায়! তুলি তো আমাকে ঘেন্না করে। ও আমার সাথে রিলেশন রাখা তো দূরে থাক, আমার মুখও দেখতে চায় না কখনো! আমি সেদিন যা বলেছি, সব মিথ্যে বলেছি, ট্রাস্ট মি.. আর এত বড় ভুল করেও কোন রিয়ালাইজেশন ছিল না আমার! যদি না এই হার্ট এটাকটা হতো। প্লিজ ডক্টর চ্যাটার্জি, আমার মতন একটা নোংরা লোকের জন্য তুলির সাথে নিজের সম্পর্কটা খারাপ করবেন না! প্লিজ!”
শেষ কথাগুলো সুপ্রিয় হাত জোড় করে বলেছিল রঙ্গনকে। কিন্তু রঙ্গন এই মুহূর্তে কিরকম স্তব্ধ হয়ে গেছিল যেন! এটা কি করলো ও! সেদিন তুলিকে মলেস্ট করা হয়েছিল, তারপরও রঙ্গন তুলিকে এত খারাপ কথা বললো! এত অপমান করলো! এমনকি ওকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বললো! একবারও তুলির কথাটা শোনার প্রয়োজন বোধ করলো না! এমনকি প্রায় এক মাস হতে চললো, ও তুলিকে একটা ফোন অব্দি করলো না! এতটা ভুল বুঝেছে মেয়েটাকে রঙ্গন! কথাগুলো ভেবেই কেমন শেষ হয়ে যাচ্ছিল নিজে! প্রচণ্ড রাগ আর লজ্জা হচ্ছিল হঠাৎ নিজের ওপরই। কেমন নিজেকেই একটা চর মারতে ইচ্ছে করছিল আজ!
সেই মুহূর্তে রঙ্গন আর দাঁড়ালো কেবিনে। এই ছেলেটার মতনই খারাপ মানুষ মনে হলো আজ নিজেকে। সত্যি! সুপ্রিয়র সাথে ওর কি তফাৎ! সুপ্রিয় একটা নোংরা কাজ করেছে, আর রঙ্গন তার থেকেও বেশি খারাপ করেছে তুলির সাথে। ও এতগুলো দিন তুলির সঙ্গে থেকেও ওকে সামান্য বিশ্বাস টুকু অব্দি করতে পারেনি! ওই রাত্রিবেলা তুলিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছে! তারপর একবারের জন্য খোঁজ অব্দি নেয়নি মেয়েটার। কথাগুলো ভেবে রঙ্গন আর সেদিন স্থির থাকতে পারলো না। এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে! এবার ওকে তুলির কাছে যেতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে তুলিকে যেভাবেই হোক নিজের কাছে।
<১৯>
সেদিন এসব ভাবনার ভিড়েই তুলিদের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে এসে হাজির হয়েছিল রঙ্গন। আজ খুব ইতঃস্তত হয়েই কলিংবেলটা বাজিয়েছিল এরপর। তবে তুলির বাবা দরজা খুলে খুব অবাক হয়ে গেছিল যেন ওকে দেখে! আসলে তুলি এতদিন এখানে এসে আছে, কিন্তু রঙ্গন তো একবারও দেখা করতে আসেনি এই বাড়ি! তাই বেশ আশ্চর্য হয়েই বলেছিল,
—–” তুমি! এখানে?”
রঙ্গন এর এই প্রশ্নে কেমন মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল এখন। সত্যি তুলির মা বাবা ওকে কি ভাবছে কে জানে! কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবছে হয়তো! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই তুলির বাবা এবার দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বললো,
—-” ভিতরে এসো। ”
এই কথায় রঙ্গন কিছুটা এলোমেলো হয়েই ভিতরে ঢুকলো। তারপর ধীর গলায় জিজ্ঞেস করলো,
—–” তুলি আছে বাড়িতে?”
এই প্রশ্নে অশোকবাবু অল্প কথায়ই বললেন,
——” ও মায়ের সাথে একটু বাজারে গেছে। ফেরেনি এখনও। তুমি চাইলে অপেক্ষা করতে পারো।”
কথাটা শুনে রঙ্গন নিজে থেকেই বললো,
—–” আমি ওর ঘরে গিয়ে বসছি। ”
অশোকবাবু এই কথায় একটু সময় নিয়ে একটা অন্য কথা বলে উঠলো হঠাৎ। আজ উনি বেশ ভারাক্রান্ত গলাতেই বললেন,
—–” আমি জানি না তোমাদের মধ্যে ঠিক কি হয়েছে! আসলে আমার মেয়ে খুব কষ্ট পেলে এরকম চুপ করে যায়। কিছু বলে না আর! তবে আমি তোমার থেকে এটা আশা করিনি রঙ্গন। একবার অন্তত তুমি তুলির খোঁজ নিতে পারতে! অন্তত একটা ফোন করে হলেও।”
কথাগুলো বলে উনি আর দাঁড়ালেন না। ঘরটা খালি করে চলে গেলেন সেই মুহূর্তে। কিন্তু রঙ্গন এর ভীষণ খারাপ লাগলো হঠাৎ নিজের ওপরই। কিভাবে পারলো এতটা ইন্সেন্সিটিভ হতে! অন্তত একবার তুলির জন্য ভাবতে পারলো না!
যাইহোক, সেদিন এই খারাপ লাগার মাঝেই ও অপেক্ষা করছিল তুলির ঘরে মেয়েটার জন্য। এরপর প্রায় আধ ঘন্টা বাদে হঠাৎ নিঃস্তব্ধ ঘরে সেই মেয়েটার চেনা স্বর কানে এলো! তুলি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভীষণ থমকে থাকা গলায় জিজ্ঞেস করেছিল,
——” তুমি এখানে! কোন দরকার ছিল?”
এই প্রশ্নে রঙ্গন পিছনে ফিরে তাকিয়েছিল তুলির দিকে, আর কেমন কথা হারিয়ে ফেলেছিল যেন। এতদিন বাদে ঠিক কোন মুখে ওর সামনে কথা বলবে! এতটা ভুল বুঝে, এত অপমান করে আজ সত্যিই আর কি বলার আছে নিজের হয়ে! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ও ভিজে চোখে দূর থেকেই বলেছিল,
——” বাড়ি চলো। প্লিজ!”
এই কথায় তুলি কিরকম নিরুত্তর হয়ে দাঁড়িয়েছিল এক জায়গায়। হঠাৎ এতদিন বাদে রঙ্গন এসে ওকে ফিরে যাওয়ার কথা বলছে কেন! কথাটা বুঝতে পারছিল না কোনোভাবে।
রঙ্গন তখন নিজের চোখ দুটো নিচে নামিয়ে খুব আস্তে গলায় বলেছিল,
——” সুপ্রিয়র হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল একটা কাল; ওকে আমাদের হসপিটালেই নিয়ে এসেছিল তারপর। আর আমিই ওর ট্রিটমেন্ট করেছি। তারপর ওর সেন্স ফিরে আসতে নিজের গিল্ট থেকে সমস্ত সত্যিটা একসেপ্ট করেছে আমার কাছে!”
কথাটায় তুলি এই মুহূর্তে ঠিক কি বলবে বুঝতে পারলো না! এত ভুল বোঝা, একাকীত্ব, অপমানের পর কেউ ওর সত্যিটা বললেই কি কিছু বদলে যাবে! সব আবার আগের মতন হয়ে যাবে! কথাটা ভাবতেই রঙ্গন এবার উঠে দাঁড়িয়ে ভীষণ অসহায়ভাবে প্রায় হাত জোড় করে বললো ওর সামনে,
——” প্লিজ বাড়ি চলো তুলি! আমি জানি আমি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি! আমার একবার অন্তত তোমার কথা শোনা উচিত ছিল। আমি জানি না আবার সব কিছু কিভাবে ঠিক করবো! কিন্তু প্লিজ বাড়ি চলো তুলি। প্লিজ!”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেছিল রঙ্গন। কিন্তু তুলি এই মুহূর্তে খুব স্থির গলায় উত্তর দিয়েছিল,
——” এটা আর সম্ভব না। আসলে আমি তোমাকে খুব আলাদা ভাবতাম! কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। তুমিও সবার মতনই! নইলে সেদিন অতো রাতে বৃষ্টির মধ্যে আমাকে একা বেরিয়ে আসতে হতো না রাস্তায়। আর ভুলটা হয়তো আমারই। আমিই নিজের জন্য সেই বিশ্বাসের জায়গাটা তৈরি করতে পারিনি তোমার কাছে! যাইহোক, ইউ ডিসার্ভ সমওয়ান বেটার..”
কথাটা বলেই ও পাশের টেবিলে রাখা পেপারটা রঙ্গন এর দিকে এগিয়ে দিয়ে খুব শান্ত গলায় বলেছিল, ——” এই যে। যেই ডিভোর্স পেপারটা পাঠিয়েছিলে সেটাতে সাইন করে দিয়েছি আমি। দেখে নিও সব ঠিক আছে কি না?”
কথাটা শেষ করে তুলি আর থাকলো না রঙ্গন এর কাছে। কোন প্রত্যুত্তর শোনার আগেই বেরিয়ে গেল ঘর থেকে তখনই। কিন্তু রঙ্গন এর কিরকম চারিদিকটা অন্ধকার হয়ে এলো যেন! এটা কি করেছিল ও! রাগের মাথায় নিজেই তো উকিলকে দিয়ে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছিল তুলির কাছে! এরপর আর কোন মুখে ফিরে যাওয়ার কথা বলবে তুলিকে! কিভাবে বোঝাবে যে ‘ ভালোবাসি ‘! কথাটা ভাবতেই কিরকম শেষ হয়ে গেল ভিতরে ভিতরে। নিজের ভুলের মধ্যেই খুব বেশি করে জড়িয়ে গেল আজ কেমন!
<২০>
তবে সেদিন তুলি নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা গেছিল এপার্টমেন্টের ছাদে। আসলে এখন কেমন দম বন্ধ করা কষ্ট হচ্ছে বুকে। রঙ্গনকে ভালোবেসে ফেলেছিল যে ও! ভীষণ মন থেকে। কিন্তু তার কাছ থেকেই যে একদিন এত অবিশ্বাস, অপমান ফেরৎ পাবে, এটা ভাবেনি! আর সব কিছুর শেষ ছিল ওই ডিভোর্স পেপারটা! রঙ্গন নিজে থেকে যদি ওই পেপারটা না পাঠাতো, তাহলেও হয়তো ছেলেটার একটা ডাকে তুলি ফিরে যেত আবার! কিন্তু ডিভোর্সের নোটিশে সাইন করার পর সেটা আর সম্ভব না। তুলি আর কক্ষনো যাবে না রঙ্গন এর কাছে। কোনভাবেই না।
সেদিন এইসব ভাবনার ভিড়েই ও অনেকটা সময় কাটিয়ে দিয়েছিল ছাদে। তারপর খুব ক্লান্ত মন নিয়ে যখন ঘরে এসেছিল, তখন সন্ধ্যে নেমে গেছে শহরে। কিন্তু এই মুহূর্তে ঘরে এসে তুলি স্থির হয়ে গেছিল হঠাৎ। ডিভোর্সের নোটিশটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে ওর বইয়ের টেবিলে! তাহলে কি রঙ্গন এটা করেছে! কিন্তু এইভাবে কাগজ ছিঁড়ে ও কি প্রমাণ করতে চায়! যে এই ডিভোর্সটা ও আর চায় না! কিন্তু রঙ্গন এর সব চাওয়ার দাম তো আর তুলি দিতে পারবে না। সেই রাতে রঙ্গন চেয়েছিল বলে তুলি ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল। এরপর রঙ্গন কোন যোগাযোগ রাখতে চায়নি বলে তুলি কখনো একটা ফোন করেও বিরক্ত করেনি ওকে। তারপর এই ডিভোর্স এর নোটিশ! সেটাও তো তুলিকে একবারও না জিজ্ঞেস করেই পাঠিয়েছিল রঙ্গন। তুলি এরপরও কিছু বলেনি। কিন্তু আর না! আর রঙ্গন এর ইচ্ছের দাম দেওয়া তুলির পক্ষে সম্ভব না। আর যে বিশ্বাসই করে না; তার কাছে ফিরে যাবে কেন! কথাগুলো ভেবেই তুলি কঠিন হলো আজ ভীষণ।
চলবে।