#অবেলার_মেঘ
#পর্ব_১
#জীহানূর
বিনা অপরাধেই আমাকে ফ্লাট থেকে বের করে দিলো।তাও আবার এই সন্ধেবেলা। একবার ভাবা উচিৎ ছিল একা একটা মেয়ে এই সময়ে কোথায় যাবে।অন্তত আমার অপরাধটা বলতে পারতো। এভাবে কারণ ছাড়া ফ্লাট থেকে নামিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয়!
এসব বলতে বলতে মার্জিয়া নিজের লাগেজটা টেনে নিয়ে রাস্তার পাশের বেঞ্চটাতে এসে বসলো। পড়াশোনার জন্য পরিবার ছেড়ে এখানে একটা ফ্লাটে এসে থাকছে ও। সাথে আরো চারজন রুমমেট ছিল।কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি।যদিও একটু চঞ্চল স্বভাবের তবুও অন্যদের চেয়ে বেশ মার্জিত এবং ভদ্র। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে বাড়ির মালিক এসে ওকে বাসা থেকে নেমে যেতে বললো,কোনো কারণ ছাড়াই।ও জিজ্ঞেস করেছিল অনেকবার কিন্তু সে কিছুই বলেনি।আজকের রাতটা থাকার অনুমতিও সে দিলো না।পাষাণের মতো মেয়েটাকে নামিয়ে দিলো।
রাস্তার পাশে অসহায়ের মতো বসে আছে ও।বাসায়ও ফোন করে জানাতে পারবেনা। বাসায় জানলেই সবাই চিন্তা করবে ওর জন্য। তেমন কেউ পরিচিতও নেই যার কাছে যাওয়া যাবে।ওখানে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় ওর নেই। খুব মন খারাপের সাথে ওর চোখের কোণায় দু’ফোটা অশ্রুকণা জমে আসলো। হঠাৎ ওর মনে পড়ে গেলো আজ দুপুরের সেই লোকটার কথা। ক্লাস শেষ করে যখন বাসায় ফিরছিল তখন ভার্সিটির বাইরে একজন লোক ওর হাতে একটা কার্ড দিয়েছিল,একটা বাসার জন্য। সেখানে থাকার জন্য কাউকে প্রয়োজন আর সাথে ছোট্ট একটা কাজও দেওয়া হবে।লোকটাকে দেখে মোটেই লিফলেট বিলি করা কাজে নিয়োজিত কেউ মনে হয়নি, আর তার হাতে সেই কার্ডের অন্যকোন কপিও ছিল না। যাইহোক, তখন ওর ঐ কার্ডটার প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু এখন আছে। ও সাইড ব্যাগের ভিতর থেকে কার্ডটা খুঁজে বের করলো। “অবেলা ম্যানশন” বাসার নাম। নিচে নাম্বার লিখা আছে।এই সময়ে তারা বাসা দিবে কি না সেটা নিয়ে একটু টেনশন হলো।তবুও সব দ্বিধা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ও ফোন বের করে সেই নাম্বারে কল করলো। প্রথমবার রিং বাজতেই পুরুষ কণ্ঠে একজন সালাম দিলো –
-আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। এটা কি অবেলা ম্যানশন?
-আপনার বাসার প্রয়োজন?
লোকটার এমন সোজাসুজি প্রশ্নে মার্জিয়া একটু চমকে উঠলো। একটু চাপা স্বরে বললো-
-জ্বী।আমার বাসার খুব প্রয়োজন। আমি কি এই মুহূর্তে কোনো থাকার জায়গা পেতে পারি?
-কার্ডে ঠিকানা লেখা আছে।আপনি চলে আসুন।
আর কিছু বলার আগেই লোকটা ফোন কেটে দিলো।ও সেখান থেকে একটা রিক্সা নিয়ে সেই ঠিকানায় যায়। খুব অন্ধকার রাস্তা।একটা বনেদী বাড়ির সামনে এসে রিক্সা থামে।রিক্সা থেকে নেমে ও লাগেজ নিয়ে বাড়ির বিশাল বড় গেটের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। মনে হচ্ছে যেন কোনো রাজবাড়ির চৌকাঠে এসে দাঁড়িয়ে আছে। দারোয়ান গেট খুলে দেয়।একজন মধ্যবয়সী মহিলা এগিয়ে আসে-
-আপামণি, আমার সাথে ভিতরে আসেন।
মার্জিয়া ভিতরের দিকে এগোতে থাকে।খুব বেশি আলো না থাকায় ভালভাবে কিছু দেখা যাচ্ছেনা। কিন্তু বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত যতখানি পথ হেটে আসলো তার আশেপাশে বেশ বড় জায়গা আছে।ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে ও চমকে গেলো। বিশাল বড় বাড়ি। যেন কোনো রাজপ্রাসাদ। উপরে যতদূর চোখ গেলো ও ততদূর পর্যন্ত নিরিখ করে দেখতে লাগলো। ঘরের মাঝখান দিয়ে উঠে বেশ বড় রাজকীয় কাঠের সিঁড়িটা উপরের দিকে দুইপাশে পথ করে দিয়েছে।কেমন একটা গা ছমছমে পরিবেশ। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। মার্জিয়া এক ধ্যানে বাড়ি টা দেখছিল।হঠাৎ পিছন থেকে একজন পুরুষ কণ্ঠে বললো-
-অনেকটা রাত হয়ে এসেছে। সায়লা আপনাকে আপনার রুম দেখিয়ে দেবে।আপনি বিশ্রাম নিন। সকালে কথা হবে।
এই বলেই সে চলে গেলো। ওকে কোনো কথা বলার সময় দিলো না। ও ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। এদিকে দরজায় কেউ কড়া নেড়ে জানায় খাবার নিয়ে এসেছে।
ও দরজা খুলে দিতেই সায়লা খাবারে ট্রে টা টেবিলের উপরে রেখে দেয়।
-আপনার নাম সায়লা?
-হ, আপা।
-আপনি এইখানেই থাকেন?
-হ। আমার মা’র পরে আমিই এইহানে আছি।
-আচ্ছা সবাই কি ঘুমিয়ে গেছে?
-সবাই?!
-হ্যা, বাড়ির বাকি লোকেরা..
-আরে না না।এইহানে আমি,হিরক ভাই আর দারোয়ান ভাই থাকে। আর কেউ থাকে না।আমনে ঘুমাইয়া পড়েন।
মার্জিয়া একটা ফাঁকা ঢোক গিললো।এতো বড় বাড়িতে মাত্র তিনজন থাকে শুনে একটু ভয় পাচ্ছে।সায়লা চলে যাওয়ার পর দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়ে ও। খোলা জানালা থেকে কামিনী ফুলের ঘ্রাণ নাকে আসছে,সাথে কিছু শীতল হাওয়ার ঢেউ। কেবল চোখে ঘুম নেমে আসছিল। আর অমনি মনে হলো একজোড়া চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে..
চলবে…