@অবাধ্য অনুভূতি
#পর্ব_১০ [সমাপ্তি পর্ব]
#লেখিকা_আমিশা_নূর
“উফফ,বাবা।আজকে মিটিংটা ভালো ভাবে মিটে গেলো।”
সমুদ্র ব্লেজার খুলে পানি খেলো।তারপর ওয়াশরুম থেকে গোসল করে বের হয়ে দেখলো ভূমিকা দাঁড়িয়ে আছে।গতদিন ভূমিকা সমুদ্রকে সম্পূর্ণ ইগনোর করেছে।কেনো করেছে সেটা সমুদ্র জানে না।তাই সেও রাগে আর কথা বলেনি।এখন ভূমিকা’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সমুদ্র অবাক হলেও কিছু বললো না।সে ভূমিকা’কে এড়িয়ে যেতে চাইলে ভূমিকা বললো,”কী চান আপনি।এন্ড একদম রাগ দেখাবেন না।”
ভূমিকার কথায় সমুদ্র রসিকতা করে তার কাছাকাছি এসে বললো,”রাগ না দেখিয়ে অন্যকিছু দেখাতে পারি।”
ভূমিকা সমুদ্রকে দূরে সরিয়ে বললো,”কী চান আপনি?সম্পর্ক ছিলো সূচনার সাথে ভালবাসতেন আরেকজন’কে অথচ আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছে না থাকলেও আমার সাথে নরমাল বিহেভ?কী হচ্ছে এসব?”
ভূমিকা’র কথা শুনে সমুদ্রের মুখের রং পাল্টে গেলো।সে কখন অন্যকাউকে ভালোবাসলো?আর ভূমিকা আজ এসব কথা কেনো বলছে?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সমুদ্র বললো,”অন্যকাউকে ভালোবাসি মানে?কী উল্টা পাল্টা বলছো?তোমার সাথে ভালো ব্যাবহার করছি দেখে কী ভালো লাগছে না?”
“না আমার ভালো লাগছে না।নিজের বোনের ভালোবাসা’র সাথে আমি ভালো থাকতে পারছি না।”
“আমি মোটেও সূচনাকে ভালোবাসিনি।আমি তোমাকে ভালোবাসি এন্ড ইউ হ্যাভ টু মাইন্ড ইট।নেক্সট টাইম না জেনে আমার সাথে কথা বলবে না।”
সমুদ্র রেগে কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।এই কথা শুনে ভূমিকা অবাক নয় অবাকের চেয়ে বেশি অবাক হলো।সমুদ্র তাকে ভালোবাসে?ভূমিকাকে?কিন্তু কখন?
.
.
সূচনার মোবাইলের চতুর্থ বারের মতো সুক্ষ্মের কল এলো।প্রতিবারই হ্যালো হ্যালো বলে সুক্ষ্ম কল কেটে দিয়েছে।সূচনা প্রথমে নেট প্রবলেম মনে করলেও পরে বুঝলো সুক্ষ্ম এটা ইচ্ছে করে করছে।কারণ সে ডাটা অন করে দিব্যি চ্যাট করতে পারছে।
পঞ্চম বারের মতো সুক্ষ্ম কল করতে সূচনা রিসিভ করে বললো,”আমি জানি নেট প্রবলেম না।কী বলবেন বলুন?”
“বলছিলাম যে এর পরের বারের কল রিসিভ করো।”
“মানে?”
সুক্ষ্ম আবার কল কেটে দিলো।সূচনা এবারে রেগে মেগে বোম হয়ে আছে।মনে মনে ঠিক করে রাখলো সুক্ষ্ম আবার কল করলে এক গাধা বকা দিয়ে ছাড়বে।সে মোটামুটি গালাগালের প্রস্তুতি নিয়ে রইলো।
সুক্ষ্ম আবার কল করলো কিন্তু সূচনা রিসিভ করতেই কেটে গেলো।এমনটা টানা দুইবার করলো।শেষে সুক্ষ্ম করলে সূচনা বললো,”বান্দর,পেত্না,হস্তি,নন্দঘোষ,মস্ত বিড়াল,নিজেকে কী মনে করেছিস?গন্ডার তুই?নাকি জলহস্তি?ফাজলামো করছিস ক্যান?তোর বিয়াইন লাগি আমি?লাথি দিবো এমন জায়গায় যে জীবনেও সম্মান পাওয়ার লাইক থাকবি না।বেয়াদব!তোরে আলো ভাজি করে নানরুটি’র সাথে খাবো।উফ!”
এতোকিছু বলে সূচনা ফুসস করে নিঃশ্বাস ফেললো।ওপাশে সুক্ষ্ম মৃদ্যু হাসলো।সে এতোক্ষণ ধরে এমন করছিলো সূচনাকে রাগাতে।এইটা সূচনার আসল রুপ!চঞ্চলবতী সূচনা।
.
.
“মাআআ,পেম আজ বলো চাচ্চুর
ল সাথে থাকবে।”
“ও মা!ওদের সাথে থাকবে কেনো?”
প্রেম তখন অশ্রুবিহীন কান্না শুরু করলো।সে জেদ ধরে রেখে আর সমুদ্রের সাথেই ঘুমাবে।তখন ভূমিকা এসে বললো,”আমার সাথে ঘুমাবে প্রেম?”
প্রেম মাথা নেড়ে বললো ঘুমাবে।তখন ভূমিকা তাকে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।সমুদ্র তখন অফিসের কাজ করছিলো সোফায় বসে।আজ সারাটা দিন সমুদ্র ভূমিকা’কে এড়িয়ে গেছে।ভূমিকা চাইছিলো কথা বলতে কিন্তু সমুদ্র ব্যস্ততা দেখিয়ে ইগনোর করেছে।
ভূমিকা প্রেমকে বিছানায় বসিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ভূমিকা এসে দেখলো প্রেম বিজ্ঞদের মতো সমুদ্রের দিকে চেয়ে আছে।তা দেখে ভূমিকা নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে কী দেখছো প্রেম?”
“চাচ্চি,চাচ্চু না ভিতলে লোবত।”
“রোবট?”
“হ্যাঁ।কথা বলা,লাগী লোবত।”
প্রেমের কথা শুনে ভূমিকা হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।প্রেম বাক্যটা এতো কিউট করে বললো যে না হেঁসে পারছে না।
উচ্চস্বরে হাসির শব্দ শুনে সমুদ্র ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে ভূমিকা’র দিকে তাকালো।ভূমিকা দাঁত কেলিয়ে হাসছে।তার কিলকিলিয়ে হাসা দেখে সমুদ্র থমকে গেলো।তার হাসি যেনো দেওয়া ধাক্কা খেয়ে বারবার ফিরে আসছে।সমুদ্র বেহেয়ার মতো হা করে তাকিয়ে আছে ভূমিকার দিকে।
হাসতে হাসতে ভূমিকার দৃষ্টি সমুদ্রের দিকে সে চুপ হয়ে গেলো।প্রেমকেও ইশারায় চুপ করতে বললো।দাঁত দেখিয়ে প্রেম ঠোঁটে আঙ্গুল দিলো।
সমুদ্র দৃষ্টি সরিয়ে আবারো কাজ করতে লাগলো।তখন প্রেম বিছানায় শুয়ে পরলে ভূমিকা ভাবতে লাগলো সে কোথায় শুবে?সোফায় সমুদ্র কাজ করছে আর সে তো নিচে শুই।কিন্তু প্রেম কী বলবে?
একরাশ দ্বিধা নিয়ে ভূমিকা সমুদ্রের সামনে গিয়ে বললো,”আমি কোথায় ঘুমাবো?”
সমুদ্র মাথা তুললো।ভূমিকা দৃষ্টি মাটির দিকে নিক্ষেপ করেছে।সমুদ্র বললো,”বিছানায় ঘুমাও।”
“আর আপনি?না মানে আপনি তো সোফায় ঘুমাতে পারেন না।”
“পারি আমি।”
ভূমিকা বিছানায় গিয়ে প্রেমকে কানে কানে কিছু একটা বললো।তারপর শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।প্রেম বিছানা থেকে নেমে সমুদ্রের কাছে গিয়ে বড়দের মতো দাঁড়ালো।কোমরে হাত রেখে আদেশের সুরে বললো,”চাচ্চু,এতো লাতে কাজ কলা ঠিক না।আতো ঘুমাবে।”
“বা’রে কে রে তুই?”
“চাচ্চু আসবে না বলো দাদুকে ডাকবো?”
“আচ্ছা ঘুমাচ্ছি।”
সমুদ্র ল্যাপটপ বন্ধ করে সোফায় ঘুমাতে চাইলে প্রেম বললো,”এখানে না।বাপি-মায়েল মতো একসাথে ঘুমাবো।ভ্যাএএ,চাচ্চু কথা শুনে না।”
সমুদ্র বুঝছে না হুট করে প্রেম এতো সাহস কোথায় পেলো?দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সমুদ্র বললো,”চল ঘুমাই।”
তিনজন এক বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লো।প্রেম মাঝখানে আছে দু’পাশে সমুদ্র-ভূমিকা।শুধু তাই নয় প্রেম তাদের দু’জনের হাত নিজের নিজের গায়ের উপর আলতো রেখে রেখেছে।যেখানে ভূমিকার হাত নিচে আর সমুদ্রের হাত উপরে।প্রেম হাই তুলে বললো,”গুড্ডু নাইট!”
ভূমিকা সমুদ্রের দিকে তাকাতেই সমুদ্র দৃষ্টি নামিয়ে নিলো।এখানে কী এমন ছিলো ভূমিকা জানে না।কিন্তু কষ্ট পেলো বটে।
.
.
সকাল বেলা সমুদ্রের ঘুম ভাঙ্গতে দেখলো ভূমিকাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।প্রেমকে কোথাও দেখছে না।হয়তো ঘুম থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেছে।
সমুদ্র ভূমিকা’র দিকে তাকিয়ে দেখলো সে নিষ্পাপ চেহেরা নিয়ে ঘুমিয়ে আছে।মুখে সামনের ছোট ছোট চুল গুলা এসে পড়ছে।সমুদ্র চুল গুলা ভূমিকা’র কানে গুঁজে দিলো।তখন ভূমিকা কেঁপে চোখ খুললো।সাথে সাথে সমুদ্র সরে গেলো।এই মাত্র কী হলো সেটা ভাবতে ভূমিকা’র দু’সেকেন্ড সময় লাগলো।ব্যাপারটা বুঝে ভূমিকা গা নেড়ে উঠে বসলো।তখন লক্ষ করলো সমুদ্র কোথাও যাচ্ছে।ভূমিকা ভাবলো তার প্রশ্নের উত্তর জানার এটাই সঠিক সময়।
ভূমিকা প্রশ্ন করলো,”কাল কী বলেছিলেন?দয়া করে ক্লিয়ার করবেন?”
সমুদ্র ভূমিকার দিকে তাকালো।তারপর বিছানায় বসে বললো,”তুমি ৬৫ নাম্বারে একবার রং মেসেজ পাঠিয়েছিলে মনে আছে?”
“রং নাম্বার?মনে পড়ছে না ঠিক।”
“তোমার মনেও থাকবে না।কারণ তোমার ভাঙ্গা কন্ঠ সেদিন আমাকে মুগ্ধ করেছিলো তোমাকে না।তখন থেকে তোমার প্রেমে পড়ে যায় আর সূচনা……”
সমুদ্র সবটা ভূমিকা’কে বললে ভূমিকা অনেকটা অবাক হলো।সমুদ্রের প্রেম এতে গভীর থেকে শুরু হয়েছে?আর সে কি’না?
হুট করে ভূমিকা’র কান্না পেলো।সে সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিলো কাঁদতে কাঁদতে বললো,”তিনটা বছর অনিশ্চয়তা অপেক্ষা করেছি তোমার।জানতাম তুমি আসবে না কিন্তু তাও করেছি।থ্যাংক ইউ সমুদ্র!থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
সমুদ্র ভূমিকা’র পিটে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,”কিন্তু তোমাকে আরো অপেক্ষা করতে হবে।”
সমুদ্রকে ছেড়ে দিয়ে ভূমিকা চোখের জল মুছে বললো,”মানে?”
“সূচনার সাথে তিনটে বছর কাটিয়েছি।ওর অভ্যাস হয়ে গেছে হালকা আর মায়াও হয়েছে কিছুটা।তার থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসতে হলে তো একটু সময় দরকার।”
“যত ইচ্ছে সময় নাও।কিন্তু শেষটা আমি হতে চাই।”
“হুম।”
.
.
“সেদিন ভূমিকা খুব কাঁদছিলো।খুব!মা যেমন ও কে নিজের মেয়ের মতো দেখে তেমন আমিও ও কে বোন ভাবি।তাই ওর চোখের জল সহ্য করতে না পেরে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতে সবটা বলে।বলে যে সমুদ্র তোমাকে ভালোবাসে আর ভূমিকা তোমাদের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি।কিন্তু বিষয়টা আমার এলোমেলো লাগে।তখন আমি সবকিছুর খবর নিয়ে তোমাকে শর্তটা জানায়।তখন তোমার উপর রাগ,ভূমিকা’র ভালো থাকা নিয়ে আমি সিদ্ধান্তটা নিই।তোমার উপর রেগে ছিলাম কারণ তুমি সমুদ্রকে ভালোবাসতে আমাকে না।তাই তোমাকে পাওয়া লোভ,আর ভূমিকা সুখে থাকা সব মিলিয়ে আমার তখন মনে হলো সমুদ্রের সাথে ভূমিকার বিয়ে হলে সব হবে।”
“আপনি ভাবলেন কী করে যে আমি আপনাকে বিয়ে করবো?সমুদ্রের সাথে বিয়ে না করলেই আমাকে পেয়ে যাবেন?আমি আপনাকে ভালোবাসবো?”
“আমি একবারও বলিনি তোমার ভালোবাসা পেতে চাই।”
“তাহলে বিয়ের প্রস্তাব কেনো এনেছেন?”
“আমি চায় তুমি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করে আমার পাশে।আর কিছু না।তোমার আমাকে ভালোবাসতে হবে না।শুধু আমার ভালোবাসা অনুভব করো তাহলে হবে।”
“সরি।আমি পারছি না।মাফ করবেন।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সূচনা সুর সুর করে নিচে নেমে গেলো।সমুদ্রও তার পেছনে গেলো।আজ সমুদ্র তার মা’কে নিয়ে সূচনার বিয়ের কথা বলতে এসেছে।আর তাতে আমিশা আলম খুব খুশি।সুক্ষ্ম’কে তারা অনেক আগে থেকে চিনে।আর ছেলে হিসেবেও ভালো।বারণ কে করে?
নিচে গিয়ে সূচনা সরাসরি ‘না’ বলতে আড়ষ্ট হচ্ছে।প্রথমত তার মা খুব খুশি আর দ্বিতীয়ত সুক্ষ্মের মাও হাজারটা আশা নিয়ে এসেছেন।এভাবে একটা ‘না’-এ এদের সবার খুশি সূচনা নষ্ট করতে পারছে না আর না পারছে হ্যা বলতে।কারণ সূচনা কোনোদিনই সুক্ষ্মকে বিয়ে করবে না।
.
.
“মা নাও,ওষুধ খাও।”
আমিশা আলম মুখে পানির সাথে ওষুধ গিলে খেয়ে সূচনার উদ্দেশ্য বললো,”তোর সুক্ষ্ম’কে পছন্দ হয়েছে তো?”
“মা আমি এখন বিয়ে করতে চাইছি না।আমিও যদি চলে যায় তাহলে তোমার খেয়াল কে রাখবে?ভূমি’র বিয়ের এক মাসও হয়নি এর মধ্যে আবার বিয়ে…মা তুমি প্লিজ এসব নিয়ে ভাবা বন্ধ করো।”
“প্রত্যেক মা-বাবা চায় তার সন্তানকে একজন ভালো জীবন সঙ্গীর হাতে তুলে দিতে।আমি আজ আছি কাল নেই।সুক্ষ্ম ছেলে হিসাবে তো যথেষ্ট ভালো।ওরা তো বলছে এখন শুধু কাবিন’টা করে রাখবে।তখন তুই আমার সাথেই থাকবি।”
“মা আমি বিয়ে করবো না।”
“বিয়ে করবো না বললে হয় না।সবার বিয়ে করতে হয়।আর তোর কী সুক্ষ্ম’কে পছন্দ হয়নি?”
“পছন্দ কেনো হবে না?আচ্ছা আমি ভেবে দেখবো।”
আমিশা আলম তার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।তিনি মনে মনে চাইছেন সূচনার উত্তর যেনো হ্যাঁ হয়।
সূচনা নিজের রুমে এসে ভূমিকাকে কল করার জন্য ফোন হাতে নিলো।তখন দেখলো সমুদ্রের নাম্বার থেকে একটা কল এসেছিলো।এতোদিন পরে সমুদ্রের নাম্বার থেকে কল দেখে সূচনা কল ব্যাক করলো।দু বার রিং হতে ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলো।
“হ্যালো,সূচনা।কেমন আছো?”
“ভালো।”
“শুনলাম তোমাকে নাকি আজ দেখতে এলো।”
সূচনা থমকে গেলো।তাহলে এজন্য কল করা হয়েছে।সূচনা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,”হুম।কিন্তু এখন আমি বিয়ে করবো না।”
“সূচনা,আমি তোমার কাছে শুধুমাত্র মরীচিকা ছিলাম।তাহলে মরীচিকা’র পেছনে দৌড়ে আসল জিনিসকে কেনো ফেলে দিচ্ছো?সুক্ষ্ম তোমাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে।”
“কিন্তু আমি ভালোবাসি না।”
“সুক্ষ্ম বলেছে শুধু তার পাশে থাকতে।ভালো তো বাসতে বলেনি।দেখো সূচনা,একদিন না একদিন তোমাকে বিয়ে করতে হবে।তখন কী সুক্ষ্মের মতো কেউ তোমাকে ভালোবাসবে?নাকি তোমার সব পাগলামো মানবে?সে তোমার ভালো কতোটুকু চাইবে?কেউ কী সুক্ষ্মের মতো বলবে যে “তুমি শুধু আমার পাশে থেকো।” জীবন আমাদের অনেকবার চান্স দে,আজ একবার নাহয় জীবনকে চান্স দাও।বর্তমান পরিস্থিতি না ভেবে ভবিষ্যত নিয়ে ভাবো।দেখবে দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে গেছে।রাখছি।”
সমুদ্র কল কেটে দিলো।জীবনটা সূচনার তাই সিদ্ধান্তটাও শুধু তার।সূচনা ভাবতে পারছে না এখন তার কী করা উচিত।সে ভূমিকা’কে কল দিলো।দু-তিনবার রিং হতে রিসিভ হলো।সূচনা বললো,
“ভূমি আমি কী করবো?আমি কোনোদিনই সুক্ষ্মকে মানতে পারবো না।”
“সূচি,তোকে আমি কোনো জ্ঞান দিবো না।তুই তোর নিজের মনের কথা শুন,পরিস্থিতি ভাব।একবার নাহয় সুক্ষ্ম আর আমাদের সবার কথাটা ভাব।”
সূচনা চোখ বন্ধ করে নিলো।তার একটা সিদ্ধান্তের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।সূচনার চোখে ভেসে উঠলো সমুদ্র আর ভূমিকার কাছাকাছি দৃশ্যটা।সমুদ্র তো দিব্যি ভালো আছে।তাহলে তার জন্য সে নিজে কেনো কষ্ট পাবে?নিজের চোখের জল আর কেনো ফেলবে মূল্য ছাড়া?সমুদ্রের বুক তো কাঁপে না তার চোখের জলে।কিন্তু সুক্ষ্মের কাঁপে।তাকে নিয়ে সুক্ষ্ম ভাবে।
সূচনা চোখ খুলে আবার কল করলো সুক্ষ্ম’কে।একবার রিং হতে না হতে রিসিভ হলো।যেনো এই কলের অপেক্ষায় ছিলো।
সূচনা ডাইরেক্ট বললো,
“আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজী কিন্তু আমি আপনাকে কোনোদিনই ভালোবাসতে পারবো না,আর মায়ের সাথে থাকবো আমি।”
“সূচনা তুমি রাজী?ও আল্লাহ,সূচনা তুমি জানো না তুমি আমাকে…”
“আমার পরের কথাগুলা মনে হয় খেয়াল করেননি।”
“করেছি।এমন অনেকে আছে যারা তাদের প্রথম ভালোবাসাকে ভুলতে পারে না।তুমি তাদের মধ্যে একজন।আমি তোমাকে ভালোবাসলেই যথেষ্ট হবে।তোমার বাসতে হবে না।আর আন্টি আমাদের সাথে থাকবে কারণ আমার মাও একা!চারজনের ছোট্ট পরিবারই নাহয় আমাদের পরিবার হবে।”
৬ মাস পর……
ভূমিকা দু’মাসের প্রেগন্যান্ট।সূচনার সাথে সুক্ষ্ম’র কাবিন হয়েছে।আরো একবছর পর তাদের বিয়েটা বড় করে হবে।
আজ অফিস থেকে ফিরার পথে ভূমিকা নিজের বাসায় ডুকেছে সাথে সুক্ষ্ম আর সমুদ্রও আছে।ছাঁদ থেকে ওদের তিনজনকে নিজের বাড়ি ঢুকতে দেখে সূচনার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।বিশেষ করে সুক্ষ্মকে দেখে।
এতোদিনে সে বহুবার চেষ্টা করেছে সুক্ষ্মকে ভালোবাসতে।কিন্তু কোথাও যেনো বাঁধা পেয়েছে।বারবার তার চোখের সামনে সমুদ্রের চেহেরা ভেসে উঠেছে।কিন্তু সে সুক্ষ্মের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ।মানুষটা তার সবদিক থেকে খেয়াল রাখে।সবসময় চেষ্টা করে কীভাবে তাকে ভালো রাখা যায়।আর আশ্চর্য হলো সুক্ষ্ম তাকে এখনো ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেনি।অথচ বিনিময়ে সূচনা কিছু দিতে পারেনি।কিন্তু সুক্ষ্ম’কে ছাড়া সে অঁচল।এর নাম মনে হয় মায়া!
এসব ভাবতে ভাবতে সূচনা ছাঁদ থেকে নামতে গিয়ে দেখলো সুক্ষ্ম ছাঁদে আসছে।তাকে দেখতে পেয়ে সূচনা আর নিচে গেলো না।সুক্ষ্ম তার কাছাকাছি এসে বললো,”সবসময় ছাঁদে থাকো কেনো?ভূত-পেত্নী ভর করেছে নাকি?ওপস সরি সরি তুমি তো নিজেই একটা ভূত।”
সুক্ষ্মের একথা শুনে সূচনা বেশ রেগে গেলো।সে হাত উঠিয়ে সুক্ষ্মকে মারতে লাগলো।
.
.
“ভূমিকা তোকে না বলেছি,অফিস না যেতে এই অবস্থায়।”
“আপনার মেয়ে কী আর আমার কথা শুনে মা?হাজার বার বলেছি যাতে অফিস না করে,কিন্তু উনি আমার কথায় কানই দেন না।”
ভূমিকা তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,”মা আমি ঠিক আছি।আগামী মাস থেকে আর যাবো না।সূচি কোথায়?”
“ছাঁদে ছিলো।”
ওরা তিনজন কথা বলতে বলতে সূচনা আর সুক্ষ্ম এসে পড়ে।ভূমিকাকে দেখে সূচনা তাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর কিছু বাণী শুনিয়ে রান্না ঘরের দিকে যায় সাথে সুক্ষ্ম আর আমিশা আলম নিজের রুমে পা রাখে।
ভূমিকা’র উদ্দেশ্য সমুদ্র বললো,”আসো ফ্রেশ হবে।আমরা কিন্তু আজকে বাড়ি চলে যাবো।”
“হুম।সূক্ষ্ম,সূচনাকে কতো ভালোবাসে তাই-না?”
“শুধু সুক্ষ্মের ভালোবাসাটা দেখলে।আমার ভালোবাসায় যেনো ছাউনি পড়েছে।”
“হ্যাঁ পড়েছে তো।তুমি আমাকে তো আর আগের মতো ভালোবাসো না।”
“ওহ আচ্ছা।আবার বলোতো কী বললে?”
সমুদ্রের মুখে কিঞ্চিৎ রাগ ফুটে উঠেছে।ভূমিকা থতমত করে বললো,”অনেক ভালোবাসো অনেক অনেক।”
সমুদ্র তাকে নিজের কাছে এনে বললো,”হুম।”
.
.
“চোখে জল কেনো চটপটি?”
“জ..জল?না তো।”
“সমুদ্র আর ভূমিকাকে একসাথে দেখলে এখনো কষ্ট লাগে?”
করুণ চাহনিতে সূচনা সুক্ষ্মের দিকে তাকালো।সুক্ষ্মের মুখটাও শুকনো।সূচনা বললো,”নাহ।ওদের একসাথে দেখলে কিঞ্চিৎ খারাপ লাগে কিন্তু তার জন্য চোখের জল ফেলি না।আপনার জন্য কষ্ট হচ্ছে।আপনি আমাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছেন অথচ আমি…আমি জানি কেনো আপনাকে ভালোবাসতে পারিনা কিন্তু আপনাকে ছাড়া চলবেও না।”
“তুমি আমার পাশে আছো সেটাই যথেষ্ট।”
হুট করে সুক্ষ্ম’কে জড়িয়ে ধরে সূচনা কেঁদে বললো,”আমার ভালোবাসাটা আপনি কেনো হলেন না?কেনো অবাধ্য অনুভূতিটা সমুদ্র হলো?”
“এখন তো আমরা হ্যাপি তাইনা।উই আর হ্যাপি।আর কিছু চাইনা।”
সূচনা সুক্ষ্মকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।যেনো কোথাও যেতে দিবে না তাকে।সুক্ষ্মও জড়িয়ে ধরেছে।সেও চায়না সূচনা অন্যকারো হোক।সে তো চায় সূচনা তারই থাকুক।
অনুভূতি কখন,কীভাবে হয় সেটা কেউ বলতে পারিনা।কিন্তু শেষে আফসোস হয় কোনো ওর প্রতি কেনো আমার অনুভূতি হলো?অনুভূতি বাধ্য নয়।সে অবাধ্য,অবাধ্য অনুভূতি।
[সমাপ্ত]