অবাধ্য অনুভূতি পর্ব- ০২ | Golpo poka Sad love story

0
3667

@অবাধ্য অনুভূতি
#পর্ব_০২
#লেখিকা_আমিশা_নূর

ভূমিকা’র কন্ঠস্বর শুনে সমুদ্রের বুঝতে বাকি রইলো না এইটা তার বকবক মণি নয়।কিন্তু সমুদ্র বুঝছে না ভূমিকা তার বাসর ঘরে কী করছে?

বিছানা থেকে উঠে কিছুটা দূরে গিয়ে সমুদ্র কর্কশ কন্ঠে বললো,”আপনি এখানে কী করছেন?সূচনা কই?”

ভূমিকা বরাবরই কারো কঠিন কন্ঠে ভয় পাই।সমুদ্রের কথা শুনে ভূমিকা কেঁপে উঠলো।কাঁপা কাঁপা স্বরে ও বললো,”আ..আপনার বি..বিয়ে আমার সাথে হ..হয়েছে।”
“হুয়াট?আর ইউ কিডিং উইথ মি?”

ভূমিকা এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়ালো।মানে সে মজা করছে না।সমুদ্র অবাকে চেয়ে বেশি অবাক হলো।ভূমিকা’র মাথার তার কী সব ছিড়ে গেছে?আবোল-তাবোল কেনো বকছে?

সমুদ্র নিজের পাঞ্জাবি’র পকেট থেকে মোবাইল বের করে সূচনার মোবাইলো ডায়াল করলো।প্রথম বারে ওপাশ থেকে কোনো উত্তর না পাওয়ায় সমুদ্র আবার নাম্বারে ডায়াল করলো।এবারে কোনো উত্তর এলো না।

রেগে গিয়ে সমুদ্র ফোন আছাড় দিয়ে বেলকোনিতে গিয়ে দরজা জোরে আটকে দিলো।এতো জোরে দরজা লাগানোর ফলে ভূমিকা ভয় পেয়ে নিজেকে বৃত্তের মতো গোল করে নিলো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সূচনা ফোনের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে।এখন সমুদ্রের সাথে কথা বললে কান্না ছাড়া আর কিছুই বলতে পারবে না।আর সূচনা চায় না সমুদ্র জানুক সে কাঁদছে।কিন্তু মোবাইল রিসিভ না করলেও রেগে গিয়ে ভূমিকা’কে আজেবাজে কথা বলতে পারে।সূচনা সমুদ্রের নাম্বাদের এসএমএস করার জন্য ফোন হাতে নিলো।মেসেজ বক্স ওপেন করলো ঠিকই কিন্তু লিখার মতো কিছু খোঁজে পেলো।সূচনা কাঁদছে!খু-ব করে কাঁদছে।নিয়তি এমন বাজে খেলা কেনো খেললো তার সাথে?

ভূমিকা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো।কিন্তু সমুদ্রের আসার নাম গন্ধ নেই।তাই ভূমিকা শাড়ি দু’হাতে ধরে বেলকোনি’র দিকে এগোলো।এখন তার সমুদ্রের সাথে কথা বলে সবকিছু ক্লিয়ার করা দরকার।

সমুদ্র ঘুটঘুটে অন্ধকারে বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে।তার মাথায় এখন কিছু ঢুকছে না।তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো সূচনার সাথে কিন্তু বিয়ে হলো ভূমিকা’র সাথে।কীভাবে হলো এটা?

চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজে সমুদ্র পেছন ফিরে তাকালো।ভয়ার্ত চেহেরা নিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে ভূমিকা দাঁড়িয়ে আছে।ভূমিকা’কে দেখে সমুদ্রের রাগ বেড়ে গেলো।ভূমিকা’কে একটানে বেলকোনির দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে রাগান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,”তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজী কেনো হয়েছো?সূচনা আর আমার মাঝখানে কেনো আসলে?”

সমুদ্রের কথায় ভূমিকা ভয়ে আরো বেশি কুঁকড়ে গেলো।আজ পর্যন্ত সমুদ্রই তার সাথে এতো রেগে কথা বলছে।ভূমিকা’র মনে হলো এক্ষুণি সে ভয়ে হার্ট-অ্যাটার্ক করে বসবে।চোখ বন্ধ করে হাত-পা কাঁপতে কাঁপতে ভূমিকা ওভাবেই থাকলো।

তখন তার কানে আবারো একই স্বরে কথা ভেসে আসলো,”কী হলো বলো?”

ভূমিকা আলতো আলতো স্বরে বললো,”সূ..সূচনা বলেছে আপ আপনাকে বিয়ে ক..করতে।”
“হুয়াট?সূচনা কেনো বলবে?”

এ প্রশ্নের উত্তর ভূমিকার জানা নেই।তাই সে চুপ করে রইলো।সমুদ্র কিছু দূরে সরে গিয়ে হাত’কে মুষ্টিময় করে দেওয়ালে আঘাত করলো।রাগে সমুদ্রের মাথা ফেটে যাচ্ছে।

ভূমিকা ভয়ে ভয়ে চোখ ভর্তি জল নিয়ে বললো,”সে..সেদিন আপনাদের বাড়ির স..সবাই আমাকে দেখতে গি..গিয়েছিলো।আপনাদের বাড়ির সবাই জানতো আমার সাথে আ..আপনার বিয়ে হবে।”
“সূচনা কেনো এমনটা করলো?”
“সূ..সূচি চেয়েছিলো বিয়েটা আপনার সাথে আ..আমার হোক।তাই ও আমাকে বাধ্য করে বিয়েটা করতে।”
“মানি না আমি তোমার কথা।যতোক্ষণ না পর্যন্ত সূচনা আমাকে সবটা বলছে আমি মানবো না।মাইন্ড ইট!”

ভূমিকা’র মুখের সামনে সমুদ্র তর্জনী আঙ্গুল দাড় করালো।ভূমিকা আগের মতোই ভয় পেয়ে আছে।শীতের মধ্যে হালকা কাঁপছে।

সমুদ্র রুমে এসে নিজের ফোন খোঁজে বের করলো বিছানার নিচ থেকে।তখন মোবাইলটা তিন-চার ভাঙ্গা হয়ে গেছিলো।নিজের দোষের জন্য সমুদ্র আরো বেশি রাগলো।কার্বাড থেকে তোয়ালে বের করে সমুদ্র বাথরুমে ঢুকে গেলো।এখন নরমাল হওয়ার জন্য শাওয়ার দরকার।

ভূমিকা’র নিজেকে যথেষ্ট দোষী মনে হচ্ছে।বোনের কথা রাখতে গিয়ে এখন মনে হচ্ছে তিন তিনটা জীবন জাহান্নাম হয়ে গেলো।ভূমিকা কেঁদে উঠলো।এখন তার কাঁদার সময়!কাঁদতে কাঁদতে একসময় সে বেলকোনিতে ঘুমিয়ে পড়লো।

ভূমিকা,সমুদ্র,সূচনা!তিনজন কোনোদিন ভাবেনি আজকের দিনটা এভাবে পার হবে!


সারারাত সমুদ্রের ঘুম হয়নি।ভোর চারটার সময় চোখ লেগে ছিলো।

কিন্তু দরজায় টক টক টুকা পড়ায় সমুদ্র বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতে গেলো।তখন তার মাথাতেই ছিলো না কাল তার বিয়ে হয়েছে।

দরজা খুলতে দেখলো তার ছোট ভাইয়ের বউ রাফিয়া আর তার মেঝ চাচা’র মেয়ে অধরা দাঁড়িয়ে আছে।সমুদ্র ভ্রু-কুচকে বললো,”কী হয়েছে?সকাল সকাল ডাকতে এলি ক্যান?”

সমুদ্রের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রাফিয়া রুমের দিকে দৃষ্টি দিলো।বিছানায় ভূমিকা’কে না দেখে রাফিয়া বললো,”বড় ভাইয়া,আপনার বউ কোথায়?”
“বউ?”

তখন সমুদ্রের মনে পড়লো বিয়ের কথা।সে তাড়াতাড়ি দরজার ফাঁকে দাড়ালো।এমনভাবে দাঁড়ালো যেনো রুমের ভিতরের কিছু দেখা না যায়।আমতা আমতা করে সে বললো,”বাথরুমে,বাথরুমে।”
“ওহ।”

তাদের মুখের রিয়াকশন দেখে সমুদ্র শান্ত হলো।কারণ তারা সমুদ্রের কথা বিশ্বাস করেছে।

তখন অধরা নামের মেয়েটি বললো,”তোমাদের খেতে ডাকছে।বড় ভাবি’কে সাথে করে আনো।”

সমুদ্র মাথা নাড়ালো।ওরা দু’জন কিছু একটা ফিসফিস করতে করতে চলে গেলো।সমুদ্র দরজা বন্ধ করে বেলকোনিতে গেলো ভূমিকা’কে যা ইচ্ছে তা বলবে বলে।কিন্তু বেলকোনিতে গিয়ে দেখলো ভূমিকা নিষ্পাপ চেহেরা নিয়ে ঘুমিয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মেয়ে।কিন্তু সমুদ্রের মনে হলো ভূমিকা মোটেও সুখি না।এমনটা কেনো মনে হলো তার উত্তর সমুদ্র খোঁজলো না।

সমুদ্র ভূমিকা’কে ডাকতে যাবে তখন মনে হলো সে কেনো ভূমিকা’র সাথে কথা বলবে?

চুপচাপ ওয়াশরুমে গিয়ে মগে করে পানি নিয়ে আসলো।তারপর হাতে করে পানি ভূমিকা’র মুখে ছিটিয়ে দিলো।

মুখের উপর পানি পড়তেই ভূমিকা চেহেরা কুঁচকে ফেললো।সমুদ্রের মনে হলো ভূমিকা খুব নিখুঁতভাবে চেহেরা কুঁচকা’তে জানে।প্রথমে দু’পাশের চোখ কুঁচকালো তার টানে গালের পাশটাও কিছুটা কুঁচলাকো।কপালে তিন-চারটা ভাজ পড়েছে।নাকটাও কেমন যেনো।

সমুদ্র এভাবে সবটা লক্ষ্য করেছে কারণ সূচনা তাকে বলেছিলো ভূমিকা সবকিছু নাকি নিখুঁতভাবে করে।এমনকি চোখ-মুখ কুঁচকানো টাও।

ভূমিকা পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো সমুদ্র তার মুখেট সামনে আছে।তা দেখে ভূমিকা মৃদ্যু হেসে বললো,”কেনো শুধু শুধু এভাবে সামনে আসো?তুমি তো সূচনা!আমার অনুভূতি তো শুধু অবাধ্য হয়েছিলো।”এটুকু বলে ভূমিকা শাড়ির আঁচল গায়ে জড়িয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো।

ভূমিকার কথা শুনে সমুদ্র অবাক থেকে বেশি অবাক হলো।এসব কী আবোল-তাবোল বকছে ভূমিকা?অবাধ্য অনুভূতি?আর কাকে বলছে এসব?পাগল হলো নাকি?

এসব ভেবে সমুদ্র কিঞ্চিৎ রাগলো।তার লাইফ হ্যাল করে এখন শান্তি মতো ঘুমাচ্ছে।সমুদ্র রাগিস্বরে বললো,”এই মেয়ে উঠেন ঘুম থেকে।”
“উহু.”
“উঠেন..”

অতিরিক্ত কর্কশ কন্ঠ ভূমিকা’র কর্ণ অবধি আসতেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো।ভয়ার্ত চেহেরায় সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলো।এই মানুষটাকে এখন সে প্রচন্ড ভয় পায়।অবশ্য ভূমিকা’র সামনে কেউ রাগ দেখালে সে সত্যি ভয় পায়।আর সমুদ্র তো সবসময় রেগে থাকে।

ভূমিকা’র ভয়ার্ত চেহেরা দেখে সমুদ্র বিরক্ত হলো।চুপচাপ সে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ভূমিকা রুমে এসে ভাবতে লাগলো এখন কী করবে?কাল রাতে যেভাবে ছিলো এখনো সেভাবেই আছে।এতো ভারি শাড়িটা পাল্টানো দরকার।বাড়ি থেকে আনা সুটকেস থেকে ভূমিকা একটা সুতির শাড়ি বের করলো।কিন্তু পাল্টাবে কোথায়?

সমুদ্র ওয়াশরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে বের হয়ে দেখলো ভূমিকা শাড়ি হাতে নিয়ে নিচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এখন তাকে সম্পূর্ণ সূচনার মতো লাগছে।কারণ এখন ভূমিকা’র তীল চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।সমুদ্র মুহুর্তে ভেবেছিলো সূচনা বুঝি তার সামনে।কিন্তু ভূমিকা মাথা তুলতে তার হুস এলো।চেহেরা কুঁচকে সমুদ্র রুম থেকে বের হলো।সমুদ্র রুম থেকে বের হতেই ভূমিকা নিজের শাড়ি পাল্টানোর জন্য দরজা বন্ধ করে নিলো।


ভূমিকা রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে সবাই খাবার টেবিলে আছে।আর দু’জন মহিলা সবাই’কে নাস্তা সার্ভ করে দিচ্ছে।মহিলা দুটির ড্রেসআপ দেখে ভূমিকা বুঝলো উনারা তার শ্বাশুড়ি হবেন।কিঞ্চিত লজ্জা পেয়ে ভূমিকা মাথা নিচু করলো।সে বাড়ির বউ হয়ে সবার শেষে খাবার টেবিলে উপস্থিত হলো।

“আরে বউমা,আসো মা বসো।”

কারো কন্ঠস্বর শুনে ভূমিকা মাথা তুলে দেখলো এ্যশ কালারের শাড়ি পরা একজন মাহিলা তাকে ডাকছে।ভূমিকা বুঝলো মহিলা’টি তার তিন শ্বাশুড়ির যেকোনো একজন হবে।ভূমিকা হাত কচলাতে কচলাতে মহিলা’টির সামনে গিয়ে বললো,”আব..আপনারা বসুন আমি সবাই’কে নাস্তা দিচ্ছি।”

ভূমিকা’র কথা শুনে এ্যশ কালার শাড়ি পরা মহিলাটি বললো,”আমি তোমার ছোট চাচি।আর উনি সমুদ্রের মা।বুঝেছো?”

ভূমিকা উপর-নিচ মাথা নাড়ালো।তারপর সমুদ্রের মা বললেন,”তুমি ধেরিতে ঘুম থেকে উঠেছো।বসো এখন।”

সমুদ্রের মায়ের কথা শুনে রাফিয়া হালকা হাসলো।তার হাসিটা ভূমিকা লক্ষ করলো।কিন্তু সবাই থাকায় কিছু বললো না।সমুদ্রের পাশে খালি থাকা চেয়ারটাতে ভূমিকা বসলো।ভূমিকা বসার একটু’র মধ্যেই সমুদ্র উঠে চলে গেলো।বিষয়টা ভূমিকা বেশ খারাপ লাগলো।আজ যদি তার জায়গায় সূচনা থাকতো তাহলে হয়তো সবটা অন্য রকম হতো।

[চলবে]

বি.দ্রঃভূলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে