অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-১০

0
2475

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ১০
Writer:Shakif Arefin

তাসু বলে_ কি খাবেন বলেন না কেন..?? রান্না বসাতে হবে তো..??নীল রেগে গিয়ে বলে__তোর যেটা খুশি সেটা গিয়ে রান্না কর। সামনে থেকে যা এখন কিছু ভালো লাগছে না।।

__তাসুও আর এখানে না দাঁড়িয়ে চলে যায় রান্না বসাতে। নীল একটু আরাম করে প্রতিদিনের নেয় আজও ল্যাপ্টপ নিয়ে কাজ করতে বসে যায়। আজকে কাজের প্রতি নীল এতোটাই মনযোগ দিয়েছে যে অন্য কিছু তার মনেই আসছে না।এক মনে কাজ করেই যাচ্ছে। এই দিকে কানে আবার হেডফোন কেউ চিল্লিয়ে ডাকলেও শুনতে পাবে না

__কাজ করতে করতে কিছু টা ক্লান্ত হলে একটু নড়েচড়ে বসে নীল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় বারোটা বেজে যাচ্ছে। নীল ভাবে__ এতো রাত হয়ে গেছে তাসু কি এখনো রান্না করতেছে নাকি..??কিচেনে এতো সময় ধরে করে টা কি..??একবারও তো এসে খাবার খেতে ডেকে গেলো না।

_কান থেকে হেডফোন খুলে খাবার রুমে যায় নীল। নীল সেখানে গিয়ে দেখে তাসু খাবার টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। নীল এটা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়।নীল তাসুর কাছে গিয়ে আসতে করে নাড়া দিয়ে ডাক দেয়। তাসুর ঘুম টা পুরোপুরি চোখে আসে নাই তাই নীলের ছোঁয়া পেতেই তাসু ঘুম থেকে উঠে যায়।

__নীল বলে__ এতো রাত হয়ে গেছে আমাকে একবারও ডাকলে না.?? আর এখানে পরে ঘুমাচ্ছো..??তাসু বলে__না না আপনার রুমে কয়েকবার গিয়ে ডাকছিলামও আমি। আপনি ল্যাপ্টপ নিয়ে কাজ করতেছিলেন। কানে হেডফোন থাকায় আমার কথা শুনতে পান নি।ভেবেছিলাম আপনার কাজ শেষ হলে আবার ডাকতে যাবো।আর দেখেন টেবিলে মাথা রাখতে আমি নিজেই ঘুমিয়ে গেছি।

__নীল বলে__ হায়রে ঘুম পাগলী মেয়ে রে।তাড়াতাড়ি খেতে দাও খুব ক্ষিধে পেয়েছে। তাসু বলে__হুম আপনি বসেন সব কিছু রাখাই আছে। তাসু নীল কে খাবার বেড়ে দেয়। প্রয়োজনীয় সব কিছু নীলের কাছে এনে দেয়। নীল খাবার প্লেটে হাত দিতেই তাসুর দিকে তাকায়।

__নীল বলে__ তুমি খেয়েছো..??তাসু বুঝতে পারে নীল তাকে খেতে বলবে কারণ কালকেও বলেছিল এক সাথে খেতে। তাই তাসু একটু ভেবে বলে__ হুম আমি খেয়ে নিয়েছি। নীল তাসুর কথার ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পারে তাসু মিথ্যে বলছে।নীল আরো জানে তাসু কখনো নীলের আগে খাবার খায়নি।নীল খেয়ে চলে গেলে তারপর তাসু খায়।

__নীল বলে__ সত্যিই কি তুমি খেয়েছো..??তাসু এবারও বলে__ হুম খেয়েছি। নীল বলে__মিথ্যে বলছো কেন..?? কখন তুমি খেয়েছো..??খাবার গুলো তো ঠিক আগের মতোই রাখা আছে। তাসু বলে__ সত্যি আমি খেয়ে নিয়েছি। আপনি খেয়ে নেন তো।নীল বলে__ তুমি ভাবতে পারছো যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি মিথ্যা কথা বলছো..??আর তুমি ভালো করেই জানো আমি মিথ্যা বলা একদম সহ্য করতে পারি না।

__তাসু বলে__হুম সেটাই তো,,মাহিরা আপু মিথ্যে বলার পরও আমার চড় থাপ্পড় খেতে হয়।কথা না বাড়িয়ে আপনি খেয়ে নেন তো।মাহিরার কথা টা শুনে নীল চুপসে যায়। সেই দিন মাহিরার মিথ্যে কথা শুনে তাসু শুধু শুধু চড় থাপ্পড় দিয়েছিল।অন্য মেয়ের মিথ্যা কথা শুনে তাসুর মার খাওয়া টা তাসু এখনো ভুলতে পারে নাই।

__তাসু নীলের কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে বসতে গেলে নীল তাসুর হাত ধরে নেয়। তাসু আশ্চর্য হয়ে নীলের দিকে তাকায়। তাসু বলে__ এভাবে ধরে বসলেন যে..??কিছু বলবেন..?? নীল বলে __ আজকে আমার একটা কথা রাখবে তুমি..?? তাসু বেশ আশ্চর্য হয়ে যায় নীলের কথা শুনে। তাসু ভাবে এই সময়ে উনি কি কথা বলতে পারে। তাসু কিছু ভেবে পাচ্ছে না কি কথা বলবে নীল এখন তাকে।

__তাসুর নিরবতা দেখে নীল বলে __ বলো রাখবে আমার কথাটা..?? তাসু বলে__ আমার সাদ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই আপনার কথা টা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবো।নীল বলে__ তুমি এখন আমার সাথে বসে খাবার খাবে।তুমি তো কখনো আমার সাথে বসে খাবার খাওনি।বিয়ের পর থেকে তো সব সময় একাই খেয়ে আসছি। চলো না আজ দুজন এক সাথে খাবার খাই।

__কথা টা শুনে তাসুর কলিজায় একটু মুচড় দিয়ে উঠে। বিয়ের এতো দিন পর নীল তাসু কে এভাবে খাওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করছে।তাসুর এখন অনুভূতি টা কি রকম তাসু তা বলে বুঝাতে পারবে না।কিছুক্ষণ নীলের দিকে তাকিয়ে থেকে নজর টা নিচে নামিয়ে নেয় তাসু।

__নীল আবারও বলে__ তুমি কি আমার কথা টা রাখবে না..??প্লিজ বসো না আমার সাথে..?? আমরা দুজন এক সাথে খাবার টা খেয়ে নেই। তাসু বলে __ আপনি খেয়ে নেন,, আমি আর এখন খাবো না।খেতে ইচ্ছে করছে না পরে এক সময় খেয়ে নিবো।নীল বলে __ এতো রাত হয়ে গেছে পরে আর কোন সময় খেয়ে নিবে..??তাসু বলে__ বললাম তো আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।

__নীল একটু মায়াবী কন্ঠে বলে~ আমি কি এতোটাই খারাপ হয়ে গেছি যে,, আমার সাথে বসে খেতে চাচ্ছো না..??তাসু বলে__ না না তা কেন হতে যাবে..??আমি কি কখনো বলেছি যে আপনি খারাপ..?? নীল বলে __ তাহলে আজকের মতো আমার সাথে খেতে বসো প্লিজ..?? তাসু আর নীলের আবদার টা ফেলে দিবে পারেনি।তাসু মনে মনে চিন্তা করে__ উনি তো শুধু এক সাথে বসে খেতে বলছে ডিভোর্স তো দিতে বলে নি।

__ তাসু বলে__ হুম ঠিক আছে খেতে বসছি।তাসু চুপচাপ বসে খেতে লাগে আর নীলের যা যা প্রয়োজন তা এনে দিচ্ছে বা বেড়ে দিচ্ছে। নীল নিজেও খাচ্ছে সেই দিকে তাসুর খাবার খাওয়ার ধরনটাও দেখছে।বিয়ের পর থেকে নীল হয়তো কখনো তাসুর খাওয়ার ধরন দেখেনি।দেখারও কথা না।কারণ নীল নিজেই তাসু কে নিষেধ করেছিল তাসু যেন তার সামনে বসে কখনো না খায়।

__বিয়ের পর থেকে যতক্ষণই তাসু ছিল নীল শুধু তাকে মারধর আর অবহেলা করেই গেছে। কখনো খেতে দেখেনি তাসু কে।সব সময় চুপচাপ থেকে বাসার কাজকর্ম করে গেছে। আর তাসুও নীলের সব কষ্ট অবহেলা সহ্য করে নিজের সাথে মানিয়ে নিয়েছে।

__এতো অবহেলা আর কষ্ট পাওয়ার পরেও তাসু কখনো কোন প্রতিবাদ করেনি।আর না করেছে নীলের কাছে কোন আপত্তির কথা।কখনো স্ত্রীর অধিকার নিয়ে নীলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়নি।কখনো নিজের ভালোবাসা টা টুকু নীলের সামনে গিয়ে প্রকাশ করেনি।এসবই তাসু পাথরের মতো ধৈর্য্য ধরে নেয়।

__তাসু অল্প কিছু খাবার খেয়ে হাত ধুয়ে নিতে যাবে তখনই নীল বলে__ এই কি করছো তুমি হাত ধুয়ে নিচ্ছো কেন..?? তাসু বলে__ হুম অনেক খেলাম তো..? আর কতো খাবো..??নীল আশ্চর্য হয়ে বলে__কোথায় আর খেলে তুমি.?? এক চামচ খাবার প্লেটে নিলে সেটা খেয়ে হাত ধুয়ে নিলে।এজন্যই তুমি মোটা হলে না সেই চিকনই রয়ে গেলে।।

__তাসু নীলের এরকম কথা শুনে মুচকি হেসে দেয়। তাসু ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি রেখে বলে__আপনার বুঝি মোটা মেয়ে খুব পছন্দ..?? নীল বলে__ দূর মোটা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক কোন টাকেই আমি পছন্দ করি না।তাসু বলে__ ওও আচ্ছা।তাসু নীলের প্লেটে তাকিয়ে বলে __ এমা আপনার প্লেটে দেখি কিছুই নাই। তাসু নীলের প্লেটে খাবার দিতে গেলে নীল বলে__এই আর কিছু দিবা না পেট ভরে গেছে। নীল খাবার শেষ করে রুমে চলে যায়।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে