অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৭
Writer:Shakif Arefin
__কি থেকে কি হয়ে গেলো নীল তার কিছুই বুঝতে পারছে না।নীলের তখন হঠাৎ তাসুর কথা মনে পরে গেলো।তাসু কে শুধু শুধু মেরে নীলের কাছেও ভালো লাগছে না।নীলের মন টা শুধু অস্থির অস্থির করছে।তাসু এখন কি করছে নীল তার কিছুই জানে না।অফিস থেকে এসে নীল একটু আরামও করতে পারে নাই। নীল চেয়েছিল একটু শান্তি খুঁজ করতে। আর এখন নীলের পুরো জীবনটাই অশান্তিতে ভরে গেছে।
__নীল আর সাত পাঁচ না ভেবে তাসুর রুমে যায় তাসু কি করছে সেটা দেখার জন্য। নীল তাসুর রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে তাসু বালিশে মুখ লুকিয়ে ইচ্ছে মতো কান্না করছে।
__নীল এখন বুঝতে পারছে তাসু কতো টা কষ্টে আর মনের ব্যথায় এভাবে শুয়ে থেকে ফুপিয়ে কান্না করছে। নীল যে কতো টা মনুষ্যত্বহীন আর বোকা যে অন্য মেয়ের ইশারায় আর তার মিথ্যে অভিনয়ে বিশ্বাস করে নিজের স্ত্রীর উপর হাত তুলছে নীল তা এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছে।
__এখন নীলেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। নীল ভাবতে থাকে তাসু তো আমার কাছে কখনো নিজের অধিকার চাইতে আসেনি।অথচ আমাকে সুখী দেখার জন্য নিজের অধিকার টা আরো বিসর্জন দিতে চেয়েছিল।তাসু তো আমার কাছে তেমন কিছুই চায় নি শুধু চেয়েছে নিজের জন্য একটু আশ্রয়। তাহলে আমি কি করে পারলাম তাসু কে প্রতিদিন এতো কষ্ট দিতে টর্চার করতে।
__নীল এসব ভেবে মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে যায়। নীলের এখন বড্ড কষ্ট হচ্ছে। হয়তো নিজের ভুল টা কোথায় ছিল সেটা অনুভব করতে পারছে। নীল কোথাও স্থীর হয়ে বসতে পারছে না।রুমের মধ্যে কিছুক্ষন পায়চারি করতে থাকে।নিজের উপর এখন নীলের খুব রাগ উঠছে। ইচ্ছে করছে নিজেকেই এখন শেষ করে দিতে।
__নীল পায়চারি করতে থাকে আর রেগে রেগে ভাবতে থাকে __ আমি এতো টা নিষ্ঠুর আর নির্দয় কিভাবে হতে পারলাম। তাও আবার শুধু তাসুর মতো একজন সহজ সরল মেয়েটার সাথে। কেন আমার জীবনে এমন টা হতে গেল..??আমার ভাগ্যে কি শান্তি ছিল না..??নিজেকেই নীল প্রশ্ন করে।
নীল এসব চিন্তা করে এক গ্লাস পানি খেয়ে খাটে বসে পরে।
__রাতে খাবারের সময় হয়ে গেছে কিন্তু তাসু এখনো নীল কে এসে খাবার খেতে বলছে না।এই দিকে নীলের ক্ষুধাও লেগেছে খুব। নীল ভাবে __ তাসু কি আজ আমাকে খেতে বলবে..??খাবার কি আগের মতো টেবিলে সাজিয়ে রাখবে..?এসব চিন্তা নীলের মাথায় আসে। নীল একটু উঠে গিয়ে দেখে তাসু টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে কি না..?কিন্তু না নীল দেখে খাবার টেবিল পুরোটাই ফাকা পড়ে আছে।
__নীল বুঝে নেয় তাসু আজকে আর খাবার দিবে না।।তাই না খেয়েই বসে থাকে।এর কিছুক্ষণ পরই তাসু এসে নীলের ভাবনা ভেঙ্গে দিয়ে বলে__আপনার খাবার দিয়েছি টেবিলে খেতে আসুন।
__নীল কিছু বলতে যাবে এর আগেই তাসু চলে যায়। তবে নীল বুঝতে পারে তাসুর মনে অনেক কষ্ট। যার কারণে নীলের সামনে এক মহূর্তও দাঁড়ায় নি।খাবার টেবিলে সব কিছুই আগের মতো সাজানো আছে তবুও কেন নীলের কিছুই ভালো লাগছে না।তাসু সব কিছুই আগের মতো নীল কে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। তবে কেন না জানি আজ নীল তাসুর হাতে বেড়ে দেওয়া খাবার খেতে পারছে না।আগের মতো আর আরাম ফিল করতে পারছে না।নীল আজ তাসুর সামনে নিজেকে বড় অপরাধী ভাবছে।
__নীল অবাক হয়ে তাসুর কাজ দেখে।নীল ভাবে __অন্য মেয়ে হলে হয়তো আজ বিনাকারণে মার খেয়ে এখানে পরে থাকতো না।আর তাসু আমাকে আজ খাবার বেড়ে দিচ্ছে।মেয়েটার কাছে কি রাগ অভিমান বলতে কিছু নাই..?? সত্যি তাসু তুমি একজন মহান নারী। তোমার তুলনা মাহিরার সাথে করা নেহাৎ বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
___নীল বলে__ তুই কি শুধু আমাকেই বেড়ে খাওয়াবি..??তুই কখনো আমার সাথে খাবিনা.?? তাসু বলে__ আপনার সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়ার সাদ্য কি আর আমার আছে…?? হয়তো আর কখনো হবেও না।একা একা খেয়ে যে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনার খাওয়ার পরই আমি খেয়ে নিবো।
__এরপর নীল কয়েক লোকমা খেয়ে বাকি খাবার গুলো রেখে হাত ধুয়ে উঠে যায়। তাসু জিজ্ঞেস করে__কি হলো হাত ধুয়ে নিলেন যে..?? কিছুই তো খেলেন না।নীল বলে__ আজ কেন না জানি খেতে ইচ্ছে করছে না।নীল অন্য দিন গুলোতে তাসুকে মারার পরও খুব তৃপ্তি নিয়ে খেতো। কিন্তু আজ নীলের গলা দিয়ে খাবার_ই নামছে না।তাই তো নীল অল্প কিছু খেয়ে উঠে চলে যায় নিজের রুমে।
__এই দিকে তাসুরও কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।তাই তাসু না খেয়ে খাবার গুলো গুছিয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়। রুমে গিয়ে তাসু ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তাসুর চোখে ঘুম আসছে না।এই সময়ে তার মা বাবার কথা খুব মনে পরছে।মা বাবা থাকলে হয়তো তাসু একটু আস্থা পেতো।
__রাত প্রায় এগারো টা বাজে নীলের চোখেও ঘুম নাই।চোখ বন্ধ করলেই তাসুর প্রতিচ্ছবি বারবার ভেসে আসছে।তাসুর ভাবনা কোন ভাবেই মাথা থেকে সরাতে পারছে না।নীল চটপট করছে কিন্তু চোখে ঘুম নেই। নীল বুঝতে পারছে না কেন সে বিয়ের পর থেকে তাসুর উপর এতো অত্যাচার করছে। আর নীল এও ভাবতে থাকে__তাসু এতো মার খেয়েও কেন তার কাছে পড়ে আছে।
__এভাবে ভাবতে ভাবতে মাঝরাতে নীল ঘুমিয়ে পরে। সকালে নীল ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নেয়। চোখে এখনো ঘুমের আভাস রয়ে গেছে। অফিসেও যেতে হবে।অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নীল খাবার টেবিলে যায়। খাবার গুলো ঠিকঠাক আগের মতোই রাখা তবে আজ তাসু সামনে নেই। তাসু সামনে নেই দেখে নীল একটু এদিক সেদিক তাকায় তবে তাসু কে খুঁজে পাচ্ছে না।
__নীলের বুক টা কেমন ধুক করে উঠলো।তাই উঠে গিয়ে খুঁজ করতে থাকে। প্রথমে তাসুর রুমে যায়। সেখানেও খুঁজে পেলো না।কিচেনে যায় কিন্তু সেখানেও নাই। নীলের ভয় টা আরো বেড়ে গেলো।কোথাও না পেয়ে হতাশা হয়ে নাস্তার টেবিলে বসে পরে।
__ নীলের কাছে কিছুই ভালো লাগছে না।মাথার চিন্তা টা আরো বেড়ে গেলো।বাসা থেকে রাগ করে তাসু কোথাও চলে গেলো না তো..??মাথায় হাত দিয়ে টেবিলে বসে আছে। এর কিছুক্ষণ পরই তাসু এসে বলে__ আপনি নাস্তা করতে চলে আসছেন..??একটু বসুন আমি চা নিয়ে আসছি।
__তাসুর কন্ঠ টা শুনে যেন নীলের আত্মা টা আবার ফিরে আসলো।নীল বলে__ তুমি কোথায় গিয়েছিলে..??তাসু বলে__ স্যরি আসলে একটা কাজের জন্য বাসার নিচে যেতে হয়েছে। আমি এখনই আপনার চা নিয়ে আসছি।
__এরপর নীল নাস্তা করে অফিসে চলে যায়। অফিসে গিয়ে নিজের মতো কাজ করতে থাকে।তবে মাঝে মধ্যে কাজের উপর থেকে মন উঠে যায়। কাজ করতে ইচ্ছে করছে না।বারবার তাসুর কথা মনে পরছে।অফিসের পিওন এসে নীল কে বলে বসের কেবিনে যাওয়ার জন্য।
__নীল তার বসের কেবিনে গেলে বস নীল কে বলে__নীল সাহেব প্রজেক্টের কাজ টা কি ঠিক মতো করতেছেন..??নীলের মুখে হাসি নেই তবুও মুখে একটু হাসি নিয়ে বলে __ জ্বি বস কাজ টা ঠিক মতোই করছি। নীলের বস বলে__হুম কাজ টা শেষ করে সময় মতো জমা দিয়ে দিবেন।যদি আপনার কাজ দেখে ক্লায়েন্ট পছন্দ করে তাহলে আপনার প্রমোশন বাড়িয়ে দেওয়া হবে। নীল কথা টা শুনে খুশি হওয়ার কোন ফিল পাচ্ছে না।তবুও বস কে দেখানোর জন্য জোর করে খুশি হওয়ার অভিনয় করে।
__অফিসের কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় নীল বাসায় আসে।কলিংবেল বাজালে তাসু এসে দরজা খুলে দেয়। তাসু আগের মতো কোন কথা বললো না।তাই নীল তাসুর মুখের দিকে তাকায়। নীল দেখে তাসু মুখ টা কেমন কালো গাম্ভীর্য করে রেখেছে।
চলবে…..