অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৩
Writer: Shakif Arefin
নীল তাসু কে বলে__ তুমি যে এভাবে কাপছো কখন না জানি আমার বুকেই সুই গেঁথে দাও। তাসু কষ্ট ভরা বুক নিয়ে বলে __ ভয় নেই আমি কারো বুকে_ মনে বা শরীরে আঘাত করি না।
__নীল এই কথার ইংগিত টা ঠিকই বোঝতে পারে। নীল কথা ঘুরিয়ে বলে ___ তুই সব সময় এই অবস্থায় থাকিস কেন…?? একটু শরীরের যত্ন নিতে পারিস না..?ঢাকা শহরে থাকিস এখন যদি সেই গ্রামের মতোই থাকিস তাহলে কেমন দেখা যায় বল তো..??নিজেকে একটু পরিবর্তন কর।
__নীলের এমন কথায় বুকটা ফেটে যাচ্ছিল তাসুর। এই মূহুর্তে ভিষণ কান্না করতে ইচ্ছে করছে তার।তবুও তাসু পাহাড় সমান কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে চুপ করে আছে। কবে সে একটু সাজুগুজু করেছিল তা হয়তো বলতে পারবে না।
__তাসু বলে__ কার জন্য শরীরের যত্ন নিবো..?? যার জন্য যত্ন নিবো সে_ই তো কখনো আমাকে ছুঁয়ে দেখেনি।কখনো এক প্লেটে খেতে বলবে তো দূরের কথা কখনো টেবিলেই খেতে বলে নি।তাহলে এই শরীরের যত্ন নিয়ে কি হবে বলতে পারেন..??
__নীলের কাছে এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। চুপ করে দাড়িয়ে তাসুর দিকে তাকিয়ে আছে। বোতাম লাগানো শেষ হলে নীল বলে__ আচ্ছা.. মীরা কে একটু ডেকে দে তো।তাসু বলে__ আমাকে বলেন না কি কাজ…?? আমি করে দিচ্ছি।
__নীল বলে __ কোন কাজের জন্য না।মীরার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে তাই, যা ডেকে নিয়ে আয়।মীরা আসলে নীল বলে__ শুন মীরা তোকে আমি আর বাসায় রাখছি না তুই আজই চলে যাবি।
__কথা টা শুনে যেন মীরার মাথায় আসমান ভেঙ্গে পরে।সকাল সকাল এমন একটা কথা শুনতে হবে তা মীরা হয়তো ভাবতেও পারে নি। তাসুও হঠাৎ এমন কথা শুনে বেশ আশ্চর্য হয়।মীরা বলে__ ভাইজান আমি কি করেছি..?আমি তো কোন দোষ করি নাই।তাহলে আমাকে কেন চলে যেতে বলছেন..??
__নীল বলে__এই বাসায় তেমন কোন কাজ থাকে না।যার জন্য তোর প্রয়োজন হবে। এই বাসার কাজ করার জন্য তাসু আছে। সেই সব কাজ করতে পারবে।কথা টা শুনে তাসু আৎকে উঠে।তাসু ভাবে__আবারও প্রমাণ হলো আমি উনার বউ হওয়ার যোগ্য না। আমি তো এই বাসার কাজের মেয়ে। কাজের মেয়ে হয়ে-ই যে আমার এখানে থাকতে হবে।খুব কষ্ট হচ্ছে তাসুর কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না।
__নীল তার ওয়ালেট থেকে কিছু টাকা বের করে বলে__ এই টাকা গুলো রাখ,, এই মাসে যা তুই পেতি তার চেয়ে পাঁচ হাজার টাকা বেশি আছে। এটা বলে নীল তার রুমে চলে যায় অফিসের ব্যাগ হাতে নেওয়ার জন্য।
__তাসুর খুব কষ্ট হচ্ছে কারণ ছোট বোনের মতো একজন মানুষ কে হারাচ্ছে। বিপদের সময় যে এই মেয়েটাই তাসুর সেবা যত্ন করতো।তাসু রুম থেকে বের নীল সামনে পরে। নীল পাশ কেটে অফিসে যাওয়ার জন্য বাহিরে চলে যায়।
__তাসু নীল কে এক নজর দেখবে বলে বেলকনিতে চলে যায়। তাসু প্রতিদিনই নীল অফিসে যাওয়ার সময় এভাবে এক নজর দেখার জন্য তাকিয়ে থাকে। তবে নীল কখনো বোঝতে পারে নি যে তাসু প্রতিদিন তাকে দাড়িয়ে দেখে।আজ-ও তার বেতিক্রম হলো না।তাসু নিচে তাকিয়ে দেখে নীল এখনো নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আজ নীল কে একটু বেশিই সুন্দর দেখাচ্ছিলো।কালো শার্ট ইন করে পড়ছে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো তার বর টাকে।অপলক চোখে তাকিয়ে দেখছে নীল কে।
__এরই মাঝে মীরা এসে তাসু কে ডাক দেয় আপা বলে।তাসু পিছনে তাকিয়ে বলে_ _ কিছু বলবা মীরা..??মীরা তাসু কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। তাসুও নিজের কান্না কে আটকিয়ে রাখতে পারলো না।কেঁদে দিলো অঝোরে। বোনের মতো মানুষ টাকে যে আর দেখতে পারবে না।মীরা বলে __ আপা আমি এখই গ্রামে মা বাবার কাছে চলে যাবো। আপনি একটু ঐ অমানুষ টার কাছ থেকে সাবধানে থাকবেন।বজ্জাত লোকটা তার ভালোবাসার মানুষ মাহিরার কথা শুনে তো আপনাকে আর কম অবহেলা করছে না।আমার তো মনে হচ্ছে ঐ শাঁকচুন্নির কথায়-ই আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে যেন আপনাকে দিয়ে বাসার সব কাজ করানো যায়। যেন আপনি আরো বেশি কষ্ট পান।
__তাসু বলে__ কষ্ট হলে কি হবে..??আমার_ই তো সংসার। সব কিছু তো আমাকেই করতে হবে।জ্বি আপা।তাসু বলে__ সাবধানে বাসায় যেয়ো বোন। এরপর মীরা এই বাসা থেকে একেবারেই চলে যায়।
__মীরা চলে যাওয়ার পর বাসার টুকটাক কাজ করতে থাকে তাসু।যদিও মীরা চলে যাওয়াতে মন টা খারাপ হয়ে আছে।হাতের কাজ শেষ করে এগারো টার দিকে নীলের কিছু কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াসরুমে যেতেই কলিংবেল টা টুং করে বেজে উঠলো।
__তাসু দরজা টা খুলে আশ্চর্য হয়ে যায়। দরজার সামনে মাহিরা দাঁড়িয়ে আছে। তাসু খুব ভয় পাচ্ছে বাসায় নীল নাই এই মূহুর্তে মাহিরা আসার কথা না।তাসু ভয়ে ভয়ে বলে–আপু তততুমি…?? মাহিরা বলে__ কেন আমি এসে তোর কোন সমস্যা করলাম নাকি..?আর এটা তো একদিন আমারও বাসা হবে তাই না..??
__তাসু বলে__ জ্বি আপু ভিতরে এসো।তাসু গিয়ে তাড়াতাড়ি এক মগ কফি বানিয়ে নিয়ে এসে মাহিরার হাতে দেয়। তাসু মাহিরার সামনে এক মূহুর্তও দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না।কারণ তার স্বামীর ভালোবাসা থেকে যে এই মেয়ে টাই বঞ্চিত করে রেখেছে।তাসু চলে যেতে চাইলে মাহিরা ডাক দিয়ে বলে__যাস কোথায় তুই ফকিন্নির মেয়ে..? আমি কি তোকে আমার সামনে থেকে যেতে বলছি..??নাকি আমি তোর স্বামীর গার্লফ্রেন্ড বলে আমাকে সহ্য করতে পারছিস না..?? কোন টা হুম.??
__মাহিরার মুখ থেকে ফকিন্নি শব্দ টা শুনে তাসু খুব কষ্ট পাচ্ছে। মনে হয়েছিল তাসুর কলিজায় কেউ আঘাত করছে। তাসু এই কথার কোন প্রতিবাদ করতে পারছে না।প্রতিবাদ করলে নীলের কাছে আরো উল্টো পাল্টা কথা লাগিয়ে দিয়ে তাসু কে মার খাওয়াবে।তাই তাসু সব মুখ বোঝে সহ্য করে নেয়।
__তাসু বলে__না আপু হাতে কাজ আছে তো তাই আর কি। কিছু লাগলে বলো আমি এনে দিচ্ছি।
__মাহিরা হেসে বলে–তোর জন্য খুব মায়া হয় রে।তোর স্বামী তোকে একটুও ভালোবাসে না।আর দেখ আমি তোর স্বামীর গার্লফ্রেন্ড সে আমার কথা শুনে। আমি যদি তোর স্বামী কে বলি আমার সাথে এক বিছানায় রাত কাটাতে সেটাও তোর স্বামী করতে রাজি আছে।
__আর তুই নীলের বউ হয়েও প্রতিটা রাত একা একা কাটিয়ে দিস।তোর জন্য সত্যি আমার বড় মায়া হয়।উপহাস করে বললো কথা টা।
__আর আজকের প্ল্যান টা কেমন হলো..??আমার কথায় নীল কাজের মেয়ে টাকে বের করে দিলো।শুধু কাজের মেয়ের কাজ গুলো তোকে দিয়ে করাবো বলে।স্বামীর ভালোবাসা তো কখনোও তুই পাবি না।কাজের মেয়ে হয়ে-ই তুই আমার আর নীলের মাঝে থাকবি।
__ তাসু আর এসব কথা দাঁড়িয়ে সহ্য করতে পারছে না।তার যে খুব কষ্ট হচ্ছে এসব কথা শুনতে।তাসু বলে__আপু আমি আসতেছি তুমি কফি টা খেয়ে নাও।
__এই বলে তাসু কান্না জড়িত চোখে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে বিছানায় উপুর হয়ে বালিশে মুখ চেপে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।
__কাঁদতে কাঁদতে তাসু বলে__ আমার সাথে তো এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।তাহলে কেন আমার সাথে এমন টা হলো..??আমার তো কোন দোষ ছিল না..??বাবা মা আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে যেতে। কেন আমাকে এমন কষ্টের জীবনে রেখে চলে গেলে..?আমি এখন কার বুকে মাথা রাখবো..??এসব কথা গুলো বলে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।
__সন্ধ্যা সময় নীল অফিস শেষ করে বাসায় আসে।অফিসে মিটিং ছিল তাই খুব টায়ার্ড লাগছে। ফ্রেশ হয়ে তাসু কে ডাকে কফি দিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাসুর কোন সাড়া নেই।তাসু কে এক মগ কফির জন্য দুই তিনবার ডেকেছে নীল কিন্তু তাসুর আসার কোন খবরই নেই। নীলের মেজাজ টা প্রায় খারাপ হয়ে গেছে। খুব রাগ উঠে গেছে তাসুর উপর।
__প্রচন্ড রাগ নিয়ে তাসুর রুমে যায়। রুমে গিয়ে দেখে সেখানেও তাসু নেই। তাই তাসুর রুমেই রেগে বসে আছে। কয়েক মিনিট পর তাসু বাসায় আসলে তাসু দেখে নীল তার রুমে কেমন একটা লোক নিয়ে বসে আছে।
__তাসু জিজ্ঞেস করে আপনি কখন আসলেন.??নীল কোন উত্তর না দিয়ে ঠাসস ঠাসস করে তাসুর গালে দুই টা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। তাসু থাপ্পড়ের আঘাত খেয়ে ফ্লোরে ছিটকে পড়ে যায়।
নীল তাসুর চুলে ধরে ভয়ানক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করে __তুই কখন বাসা থেকে বের হয়েছিস..?? আর কোথায় বা গিয়েছিলি..?তোকে এতো ডাকার পরও কেন আমি বাসায় পেলাম না।
__তাসু কান্না মিশ্রিত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে~দুই তলার ভাবি এসে তার বাসায় আমাকে নিয়ে গেছে। কথা বলতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। নীল চুল ছেড়ে দিয়ে বলে__ আর কখনো আমার অনুমতি ছাড়া ঘরের বাহিরে পা রাখবি না।আর যদি কখনো আমার কথার অমান্য করিস তাহলে সেদিনই হবে তোর জীবনের শেষ দিন এটা মনে রাখিস। আর হ্যা একবার ডাকার পর যেন দ্বিতীয়বার আমার তোকে ডাকতে না হয়।এটা মাথায় রাখিস।
__তাসু কাঁপতে কাঁপতে বলে __ জিজি-জ্বি। নীল বলে_ যা এখন আমার সামনে থেকে ভালো করে কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।তাসু বলে__আআআপনি এএএকটু রুমে গিয়ে ববসুন আআমি এখই নিয়ে আআসছি।
চলবে…