অবহেলা পর্ব-০৭

0
3834

#অবহেলা (পর্ব ০৭)
#রনি_হাসান
.
.
.
ভাইয়াঃমিমি…..
মিমিঃজি ভাইয়া বলুন
ভাইয়াঃতোমার সাথে অইদিন কি কোনো বাজে ব্যবহার করেছিলো
মিমিঃনা
ভাইয়াঃতাহলে তুমার উচিত হইনি।তার গায়ে হাত তুলা।
মিমিঃ…..
ভাইয়াঃসেইদিন তোমাকে মারতে হুকুম দিয়েছে বলে। আর তুমি হইতো সেই সুযোগে সৎ ব্যবহার করেছো। এখন ছোট আমার সাথে কথা বলে না
মিমিঃসরি ভাইয়া আমার ভুল হয়েছে(কান্না করে)
ভাইয়াঃএখন কান্না করে কি হবে যা হবার তা হয়ে গেছে।
মাঃবাবা তুই একটু খুঁজে দেখ পাওয়া যাই কিংনা
ভাইয়াঃখুজে দেখেছি মা কোথাও নেই।
আমিঃএদিকে সব কিছু আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলাম বলে আমাদের থাকতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে।ইশানকে নিয়ে শুধু কান্না করে। আর হ্যা ইসান কে দেখাসুনা
রহিম চাচা ও তার স্ত্রী তারা দুইজন এ
ইসানকে দেখছে। এখন মিমিকে ফোর্স দেওয়াটা বাকি রয়েছে।
দুই পর মিমির কাছে ডিফোর্স পেপার পাঠিয়ে দিলাম
পিয়োনঃবাড়িতে কেউ আছেন
ফারিয়াঃজি বলুন
পিয়োনঃএই পেপারটা মিমির জন্য পাঠিয়েছে
ফারিয়াঃআচ্ছা আমাকে দিন
তারপর ফারিয়া মিমিকে দিল
ফারিয়াঃভাবি জন্য এই পেপার পাঠিয়েছে
মিমিঃকে
ফারিয়াঃদেখ(বলে চলে গেলো)
তারপর মিমি যা দেখলো যেন আকাশ ভেজ্ঞে তার মাথাই পরল
মিমিঃএতো ডিফোর্স পেপার সাথে চিঠি
মিমি পড়তে শুরু করল
মিমি আমি সাইন করে দিয়েছি। তুমি সাইন করলে। আমাদের ডিফোর্স হয়ে যাবে। আর ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে নিও।
আল্লাহ হাফেজ।
মিমিঃআমি তো চেয়েছিলাম তুমাকে কাছে পেতে তারপর ও আমাকে কেন দূরে ডেলে দিলে(কান্না যেন অবিরাম চলছে স্বামী আর সন্তান হারানো ব্যাথাই)
মিমিঃতুমি আমার সন্তানকে একবার দেখতে দিলে না(কান্নার আওয়াজ বেরেই চলেছে)
মাঃকেরে মা কান্না করিস কেন…?
মিমিঃমা রনি আমাকে ডিফোর্স পেপার পাঠিয়েছে
মাঃআসলে আমাদের উচিত নইনি ওকে অবহেলা করা।তাই আমাদেরকে সবাই কে ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে…
মিমিঃমা আমার সন্তানের মুখটাও দেখতে দিলো না(কান্না করে)
ফারিয়াঃভাবি কান্না করো না দেখবে। একদিন ঠিকই ভাইয়া আমাদের কাছে চলে আসবে।
মিমিঃও আর কখনো আমাদের কাছে আসবে না
মাঃকে বলেছে আসবে না।আমরা তাকে ফিরিয়ে আনব
এরমধ্যে ভাইয়া আসল
ভাইয়াঃমা মিমি ঠিকই বলেছে… ছোট আর আসবে না।
মাঃকেমনে বুঝতে পারলি….?
ভাইয়াঃ মা ছোট যে সিম ব্যবহার করে সেটা বন্ধ করে ফেলছে।আর কোথায় গেছে কেউ কিছু বলতে পারে না।আমি ছোটের সব ফেন্ডের কাছে গেছি কিন্তু কেউ কিছুই বলতে পারে না
মিমিঃভাইয়া ও কি আর কখনও আসবে না
ভাইয়াঃআসবে কি না জানি না।তবে এখন থেকে গিয়েও ভালো করে করেছে
মাঃকি বলছিস
ভাইয়াঃকেন মা ভুল কিছু বললাম..! মা কেউ ভুল কাজ করে সেই কাজে সে নিজেই অনুতপ্ত হই।তাহলে সে এমনিতে কষ্ট পাই আর তার মধ্যে তুমরা যা করেছো….
আমি মাঝে মধ্যে দেখতাম ছোট কান্না করত।আমি দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতাম। কারন ভুল্টা তার ছিল।
ভাইয়াঃমিমি আমি তোমাকে কখনও দোষ দিব না। শুধু একটাই কথাই বলব তুমি যা করেছো এমনটা না করলেও ভালো হত
মিমিঃভাইয়া আমি বুঝতে পারিনি এখন থেকে আর এরকম করব না(কান্না করে)
ভাইয়াঃএখন বলে আর কি হবে।ছোট তো আর নেই।
(এভাবেই চলছি আমার পরিবারের কথা)
আর এদিকে আমার অবস্থা বেশি একটা ভালো না। কারণ ইসান কে শান্ত করতে পারছি না। সারাক্ষণ কান্না করে।তারপর যখন রহিম চাচা আর চাচি এখানে আসলো।
তারপর থেকেই ইসান কান্না করলে চাচি সব দেখাশোনা করত। রহিম চাচা ও তার স্ত্রী আমাকে নিজের ছেলে মনে করে। এখন অফিসে থেকে ভালো সুবিধা দিচ্ছে।
এদিকে ইসানকে চাচা চাচি দেখছে। আর আমি অফিস সামলাচ্ছি।
এভাবে কেটে গেল ৬টা বছর। এখন নিজের বাড়ি গাড়ি সব হয়েছে।কিন্তু আফসোস একটাই যদি আমার পরিবারটা সাথে থাকতো। না থাক যে ভাবে চলছি আজীবন এভাবেই থাকব দরকার নেই। এরমধ্যেই ইসান আসলো
ইসানঃবাবা…..!
আমিঃজ্বী আব্বু বলো(কোলে নিয়ে)
ইসানঃবাবা আমার নতুন রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি লাগবে
আমিঃআমার ইসান বাবার খেলনা লাগবে আমি দিব না সেটা কি হই
ইসানঃবাবা আমরা এখনি যাবো
আমিঃএক্টু পরে যাই
ইসানঃআমি পরে যাবো না… এখনি যাবো
আমিঃআব্বু জিত করছো কেন…?
ইসানঃএখন না গেলে আর খেলনা নিব না
আমিঃআচ্ছা চলো
ইসানঃবাবা তোমাকে অনেক গুলা ধন্যবাদ
ফারিয়
(এই হলো ইসান আমার ছেলে। যদি কিছু চাই আর সেটা দিতে দেরি করলে। আর নিবে না। এই ইসানকে মিমি মারতে চাইছিলো। আমি থাকতে সেটা কি করতে দিতাম।সেটার জন্য আজ দূরে চলে আসছি।
তারপর ইসানকে নিয়ে তার খেলনা কিনতে যেতে হলো
ইসানঃবাবা আমার লাল কালার গাড়ি লাগবে
আমিঃওকে তোমার যেটা ভালো লাগবে সেটাই হবে।(ইসানকে খেলনা কিনার পর)
আমিঃইসান…
ইসানঃহুমম
আমিঃএখন তো গাড়ি কিনা হলো তাই বলছি এখন নতুন পোশাক কিনলে কেমন হই
ইসানঃবাবা অনেক ভালো হই। নতুন গাড়ি নতুন পোশাক সব মিলিয়ে অনেক ভালো হবে(অনেক খুশি হয়ে)
আমিঃআচ্ছা চলো
তারপর ইসানকে শপিংমলে নিয়ে গেলাম
তারপর যা দেখলাম….!
দেখলাম মা ভাইয়া ভাবি ফারিয়া মিমি সবাই একসাথে শপিং করছে। তাদের কে দেখেও না দেখার ভান করে আসতে যাবো এমন সময় ভাইয়া ডাক দিলো
ভাইয়াঃছোট………
আমিঃ(আমি শুনেও চলে যেতে ধরেছি তারপর ভাইয়া সামনে এসে)
ভাইয়াঃকেরে কোথাই পালাচ্ছিস
আমিঃ(আমি মাথা করে আছি কিছুই বলছি না)
ভাইয়াঃআজ
৬ বছর পর তোর সাথে দেখা আর তুই কথা না বলে চলে যাচ্ছিস…
আমিঃসরি ভাইয়া(এরমধ্যেই বাকি সবাই আসলো)
মাঃবাবা কেমন আসিস
আমিঃ….
ফারিয়াঃভাইয়া তোমাকে কত খুজছি কিন্তু পাইনি
ভাবিঃআমাদেরকে ক্ষমা করে দিও।
আমিঃআমি কারো উপর রেগে নেই। আর ক্ষমা চাওয়ার ও কিছু নেই তোমরা যা করেছো ভালোই করেছো
মাঃবাবা তোর সাথে কি সেই পিচ্চি দাদু ভাই(ইসানকে দেখিয়ে)
আমিঃ হ্যাঁ (কিছুক্ষণ পর মিমির দিকে খেয়াল করলাম আগেই তুলনায় অনেক শুকিয়ে গেছে আর এখন আমাকে দেখে কান্না শুরু করে দিয়েছে তাতে আমার কি এখন তো আমার স্ত্রী নেই।)
মিমিঃতুমি কেমনে করে আমার সন্তান কে এভাবে না দেখিয়ে দূরে চলে গেলে(কান্না করে)
আমিঃসরি আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে..
মিমিঃআমাকে আপনি করে বলছো…?
আমিঃঅপরিচিত কারো সাথে আপনি করে বলাই ভালো।
মিমিঃআমি কি সন্তানকে একটু দেখতে পারি(কান্না করে)
আমিঃভুলেও ওর দিকে হাত বাড়াবেন না
মিমিঃকেন…
আমিঃআপনার কোনো অধিকার নেই ইসানের প্রতি।
ভাইয়াঃ আচ্ছা অনেক কথা হইছে।এখন আমাদের সজ্ঞে বাড়িতে চল
আমিঃসরি ভাইয়া যেতে পারব না
ভাইয়াঃকি আমার মুখের উপর কথা
মাঃআজ তোকে এভাবে ছেড়ে দিব।আর দাদু ভাইয়ের সাথে আমার অনেক কথা আছে(ইসানকে কুলে নিয়ে)
ভাইয়া আর মার কথাতে বাড়িতে আসতে হলো। আসার পর আমি যে রুমে থাকতাম সে রুমে গেলাম
আমিঃবাহ… সেই আগের মতোই আছে(এরমধ্যেই মিমি আসলো হঠাৎ করে মিমি আমার পা জড়িয়ে কান্না করতে শুরু করল)
মিমিঃতুমি আমাকে একটিবার হলেও ইসানকে আদর করতে দাও(কান্না চলছে)
আমিঃ…..
মিমিঃআমি অনেক কেদেছি তোমার আর ইসানের জন্য। তবুও তোমাদের দেখতে পারিনি।
আজ কাছে পেয়েও দূরে তারিয়ে দিচ্ছো
আমিঃআপনার সাথে আমার ডিফোর্স হয়ে গেছে।
মিমিঃআমি সাইন করেনি
আমিঃমিমি একটা কথা স্পষ্টভাবে শুনে রাখো ইসান কিংবা আমার দারের কাছেও আসলে আমার চেয়ে আর কেউ খারাপ হবে না কথাটা মনে রেখো।
মিমিঃআমি তোমার পায়ে পড়ছি। আমার সন্তানকে একটু কাছে পেতে দাও(পা জড়িয়ে)
আমিঃমিমি ভুলে যেয়োও না।একদিন এই সন্তানকে তুমি মেরে ফেলতে চেয়েছো।নিজের সন্তানকে অস্বীকার করেছো। অনেক বাজে গালি ও দিয়েছো। সেদিন আমি তুমার পা জড়িয়ে ইসানের জীবন ভিক্ষা চেয়েছি।
মিমিঃতুমি যা শাস্তি দিতে চাও সেটাই মাথা পেতে নিব। কিন্তু ইসান আর আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে না(পা জড়িয়ে কান্না করে)
আমিঃপা ছাড়ো
মিমিঃনা ছাড়ব না। আগে বলো আমাকে ক্ষমা করেছো…?
আমিঃধুর ছাড়তো (পা ছারিয়ে নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলাম)
কিছুপর
মিমিঃইসান…
ইসানঃজ্বি আন্টি বলুন
মিমিঃআমি তোমার আন্টি নই
ইসানঃআপনি কে
মিমিঃতোমার আম্মু
ইসানঃ আপনি ভুল বলছেন। আব্বু বলেছে আমার মা অনেক আগেই না ফেরার দেশে চলে গেছে
মিমিঃতোমার আব্বু মিথ্যা বলেছে
ইসানঃআপনি আমার মা হলে তাহলে আমার থেকে দূরে কেন থেকেছেন। আমি স্কুলে দেখতাম সবারি মা আসতো কিন্তু আমার
আব্বু আসতো। আব্বুকে বললে আব্বু মন খারাপ করে বলতো যে আমার এই পৃথিবীতে নেই।
মিমিঃকে বলেছে তোর মা নেই আমি তোর মা(বুকে জড়িয়ে কান্না করে)
ইসানঃতোমার জন্য কতো কান্না করেছি।তুমি ভালো না
মিমিঃহ্যা বাবা তুই ঠিকই বলেছিস। আমি ভালো না। আজ থেকে তুই আমার কাছে থাকবি।
ইসানঃহুমম
মিমিঃআমার ইসান বাবা কতো বড় হয়েছে(মাথাই হাত বুলিয়ে দিয়ে)
আমিঃইসান……
ইসানঃবাবা ডাকছে যাই
মিমিঃআচ্ছা
মিমিঃ(শুধু নিজের ভুলের জন্য স্বামী আর সন্তানকে কাছে পেয়েও দূরে মনে হচ্ছে)
রাতে সবাই খাবার রেডি করে আমাকে ডাকছে
মিমিঃতোমাকে নিচে যেতে বলছে
আমিঃআচ্ছা আসছি
তারপর নিচে গেলাম দেখলাম টেবিলে অনেকগুলো খাবারের আইটেম
মাঃখেতে বস
ফারিয়াঃভাইয়া বসো অনেক দিন পর সবাই একসাথে খাবো
আমিঃসরি আমি খেতে পারব না
ভাবিঃকেন…?
আমিঃআমি হোটেল থেকে খেয়ে আসছি
ভাইয়াঃবাড়ি থাকতে হোটেল কেন…?
মিমিঃআমরা তুমার জন্য এত কষ্ট করে এতগুলো খাবার বানালাম সেটার কি হবে
আমিঃআমি না খেলেও চলবে।
মাঃকি বলছিস
আমিঃহ্যা ঠিকই বলছি
ফারিয়াঃভাইয়া কতদিন পর আসলে আর এখন খাবে না বলছো
আমিঃনারে তোরাই খেলেই হবে
মিমিঃইসান খেয়েছে
আমিঃসেটা না জানলেও চলবে(বলে আমার রুমে আসলাম)
কিছুক্ষণ পর মা খাবার নিয়ে আমার রুমে আসলো
মাঃবাবা তুই এখনো রেগে আছিস(কান্না করে)
আমিঃনা রাগ কেন করব(কান্না কেমনে চলে আসলো)
মাঃতাহলে খাচ্ছিস না কেন
আমিঃএই বাড়ির খাবার আমার হজম হবে না
মাঃকেন
আমিঃবাহিরে খেয়ে অভ্যাস হয়েছে তাই
মাঃনে বাবা হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি
আমিঃসরি মা এই খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না (মা কান্না করতে করতে চলে গেলো। কিছু ক্ষন পর মিমি আসলো)
.
.
.
চলবে…………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে