অবহেলার সংসার পর্ব-০৬

0
2020

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_০৬

জান্নাতুন তুই এগুলো কি বলতেছিস আমরা তোর বাবা-মা আর আমাদের চিনিস না বলতেছিস।(আমার নিজের বাবা বলতেছে )

হ‍্যা চিনি না তোমাদের আমি।আমার এই কথা শুনে বাবা-মা আর একটুও আমার শশুর বাড়িতে থাকেন নাই।সাথে সাথে চলে যেথে শুরু করেছে।

আরে বিয়ান সাব আপনারা উঠতেছেন কেনো মেয়ের কথা শুনে কি চলে যাচ্ছেন নাকি?

এখানে থেকে কি করবো বলেন আমাদের যে চিনে না তার সামনে কেমন করে থাকি।তাই এখানে বেশিক্ষন না থাকাই ভালো।চলো জান্নাতুন এর মা নিজের মেয়েই আমাদের চিনে না তাহলে এখানে থাকাটাই খুবেই অন‍্যই হবে।

ওকে চলো তুমি।আর জান্নাতুন শুন মা একটু দেখে শুনে থাকি আর এই হতভাগা মাকে একটু সরণ করিস যদি একবার মনে পড়লে।

আমি চূপ করে বসে আছি কি বলবো ভেবেই পাচ্ছি না?আমি ও তো মানুষ,মন বলে কিছু আছে।মা-বাবা দুইটি বছরে একবারো আমাকে দেখতে না আসায় তাহলে কেমন কষ্ট হয়েছিলো আমার।আমারো মনে অভিমান জমতে পারে তো সেই রকম অভিমান জমেছিলো মা-বাবার জন‍্য।আমার কষ্টটা কেউ বুঝলো না।এই মনে কতো কষ্ট জমা হয়ে আছে।

জান্নাতুন তোমার মা-বাবা তো চলে যাচ্ছে তুমি আটকাউ।(আমার শাশুড়ি বলতেছে)

না,মা ওনাদের আটকানোর দরকার নাই ওরা যাচ্ছে যাগ।

ভাবি আঙ্কেল-আন্টি তো কষ্ট পেয়ে চলে গেলো।(এশা )

চূপ করেই আছি।আসলেই আমার ব‍্যবহারে আজকে অনেক কষ্ট পেয়েছে।এটা করা আমার ঠিক হয়নি।কিন্তু এখন ভেবে কোন লাভ নাই,মা-বাবা তো চলেই গেছে।কথায় আছে না,
ভাবিয়া করিও কাজে,
করিয়া ভাবিও না!
সেই দশা হয়েছে।আগে ভাবি নি পরিস্থিতি এমন খারাপের পথে যাবে এখন অনুশুচনাই ভুগতেছি।

ভাবি শুনো যা হবার হয়েছে এখন মন খারাপ করে কোন লাভ নাই এখন চলো আমি তোমাকে তোমার রুমে রেখে আসি।

ওকে চলো তাহলে তুমি আমাকে রুমের ভিতরে রেখে আসো।

তারপর এশা আমাকে আমার রুমের ভিতরে রেখে চলে আসলো।আমি সোজা বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়লাম।ওনাকে রুমের আশে পাশে কোথাও দেখতেছি গেলো কই।কই গেছে যাগ আমার কি?
এভাবে তিনটাদিন চলে গেলো।এখন আমি অনেকটা সুস্হ।এতো তাড়াতাড়ি সুস্হ হওয়ার একমাত্র কারন হচ্ছে এশা ওর যত্নের কারনে আজকে তাড়াতাড়ি সুস্হ হয়েছি।আমার স্বামী আমাকে সুস্হ দেখে কাছে ঘেষার চেষ্ট করেছে কিন্তু কাছে ঘেষতে দেই না।এখন শুধু অবহেলা করি।বুঝতে পেরেছি এনার থেকে ভালোবাসা পেতে হলে আগে অবহেলা করতে হবে তাহলে তার আসল ঠিকানাটা বুঝতে পারবে ওনি কি করতেছেন?শয়তান এর পাল্লায় পড়লে যা হয়।দুইটা বছরের সংসারে কখনো ওনাকে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তে দেখি নি তাহলে ওনার মনটা পুরো শয়তান দকল করে নিয়েছে।তাই ন‍্যায়-অন‍্যায় কিছু বুঝতেছে না।প্রথমতো ওনাকে ভালো পথে আনতে হলে, আগে আল্লাহ্ পথে আনতে হবে।আজকের সকালের কাহিনী,

জান্নাতুন তুমি আমার থেকে শুধু শুধু পালিয়ে বেড়চ্ছো কেনো।আবার আগের মতো আর ঠিকভাবে কথা বলো না অবহেলা করতেছো।তোমার কাছে যেথে চাচ্ছি কিন্তু কাছে ঘেষতে দিচ্ছো না।

আমি আপনাকে অবহেলা করবো কেনো আমিতো আপনার কেউ না।যাকে স্ত্রী হিসাবে মানেন না তার সাথে কথা না বলায় ভালো ।

এগুলো তুমি কি বলতেছো আমার কিন্তু এইসব ব‍্যবহার ভালো লাগতেছে না?এর ফল ভালো হবে না কিন্তু।

কি করবেন মারবেন মানেন, আমাকে মারা ছাড়া কি আপনি কিছুই করতে পারবেন?আপনার মতো অনেক কাপুরুষ আছে যারা শুধু স্ত্রীকে মারতে জানে তাছাড়া কিছুই করতে পারে না কারন তাড়া পুরুষ নামে কাপুরুষ।যারা কথা কথা স্ত্রীকে মারার হুমকি দেয় সে কখনো সুপুরুষ হতে পারে না।এটা মনে রাখবেন স্ত্রীকে মেরে নিজেকে পুরুষ মানুষ ভাববেন না,স্ত্রীকে না মেরে ভালোবাসা দেখাতে শিখুন।

আমি কি করবো না করবো সেটা আমার বেপার?আমাকে জ্ঞান দিতে আসবে না তো।

ধেত আপনার সাথে কথা বলা মানে একটা গরুর সাথে কথা বলা।নিজের ইগোটাই ওনার কাছে বেশি কে কি বলে বলুক।আপনার সাথে কথা বলতেই ঘৃণা হয় আমার।(এগুলো কথা বলে রুম থেকে চলে আসি )

এই ঈমান হককে ঘৃণা করা এটার ফল ভালোহবে না।আজকে তোমার খবর করে ছাড়বো শুধু আজকে অফিস থেকে আসি।

আমি রুম থেকে এসে সোজা আমার শাশুড়ি মার কাছে আসলাম।

আরে বউমা তুমি এতো সকালে ঘুম থেকে উঠেছো কেনো এখনো ঠিকভাবে সুস্হ হও নাই তুমি।

মা আমি এখন অনেকটা সুস্হ তাই আপনাকে সাহায‍্য করার জন‍্য এখানে আসলাম।

বউমা আমাকে সাহায্য করতে হবে না, তুমি না হয় রুমে গিয়ে রেস্ট করো।

এখনে ঘুম থেকে উঠে আসলাম আবার রেস্ট করবো।মা আমার দাড়ায় আর রেস্ট করা হবে না।আর আমি তো এখন সুস্হ তাই তোমাকে একটু হেল্প করি না।কয়েক দিন ঘর বন্ধী হয়ে থাকতে থাকতে আর ভালোই লাগতেছে না।

আচ্ছা ঠিক আছে এতো করে যখন বলতেছো তখন থাকো কিন্তু কোন কাজে হাত দেওয়া যাবে না শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখো।

ঠিক আছে।আচ্ছা মা এশা ঘুম থেকে উঠে নাই।

এশা এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই বউমা।

ও।

মা আমাকে নাস্তা দেও আমার অফিসে যেথে হবে এমনিতে দেড়ি হয়ে গেছে।

মা আর আমি রান্না ঘরে গল্প করতেছি তাতে আমার স্বামী এভাবে মাকে বলতেছে।

বউ মা তুমি গিয়ে নাস্তাটা দিয়ে আসো ঈমানকে।

আমিমিমিই,

হুম অবাক হচ্ছো কেনো,তুমি ছাড়া কে যাবে,দেখতে পারতিছো না আমি কাজ করতেছী ?

ওকে মা তাহলে আমাকে নাস্তার প্লেট টা দেন আমি নাস্তাগুলো ওনাকে গিয়ে দেই।তারপর আমি নাস্তার প্লেটটা ওনার সামনে নিয়ে গিয়ে বলতেছি,

এই নেন আপনার নাস্তা আর তাড়াতাড়ি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন তো যতোসব।

তুমি এমন ভাবে বলতেছো কেনো আর সকাল থেকে দেখতেছি আমার সাথে তুমি খারাপ ব‍্যবহার করতেছো কেনো সমস‍্যা কি তোমার?

আমার কোন সমস‍্যা নাই আপনার থাকলে থাকতে পারে।আপনার সাথে বেশি প‍্যাচাল পাড়তে পারবো না আমি তাই বেশি কথা না তাড়াতাড়ি খ‍েয়ে নিজের কাজে চলে যান তো।

ঠিক আছে যাচ্ছি তবে কাজটা ঠিক করতেছো না তুমি।এর বিচার আমি ঠিকে করবো রাতে তখন কিন্তু পস্তাবে।

কে পস্তাবে সেটা পরে দেখা যাবে।

ঠিক আছে।তারপর আমি আর জান্নাতুনের সাথে কথা না বলে নাস্তা খেতে শুরু করলাম।নাস্তা করতেছি আর একটু পর পর ওকে দেখতেছি।ও তো দিব্বি সোফার উপরে পার উপরে পা দিয়ে বসে আছে।এর যে আজকে কি হলো বুঝতেছি না?আগে তো এমন করতো না তাহলে এখন এমন করতেছে কেনো।আগে যেটা বলতাম সেটাই করতো কথার উপরে কথা বলতো না, এখন বিন্দু মাত্র ভয় না করে আমার কথার উপরে কথা বলেই চলেছে। এগুলো ভাবতে ভাবতে নাস্তা খাওয়া শেষ আমার।তাই আর দেড়ি করা যাবে না এমনিতে দেড়ি হয়ে গেছে।
মা আমি অফিস গেলাম।

নাস্তা করেছিস বাবা।

হুম মা,আমি গেলাম এমনি দেড়ি হয়ে গেছে কথা বলার টাইম নাই ।

ওকে বাবা যা আর রাস্তা দেখে শুনে যাস।

ওকে।আমি যে চলে যাচ্ছি ও একবারো আমার দিকে তাকালো না।একটি বারো আমাকে বায় বললো না।ওনি ওনার মতো সোফায় বসেই আছে।কি মেয়েরে ভাই মাইরি?ও ছরি মেয়ে নয় বউ।তারপর আমি বাসার বাহিরে এসে গাড়িতে উঠে অফিসে যাওয়ার জন‍্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।তারপর গাড়িটা এস্টাট দিয়ে চালাতে শুরু করলাম।গাড়িটা একটু জোড়েই চালাচ্ছি কারন তাড়াতাড়ি অফিসে গিয়ে পৌছাতে হবে।হঠাৎ করে রাস্তার সাইটে এক বন্ধুকে দেখতে পেলাম।তাকে দেখে গাড়িটা ব্রেক করলাম।তারপর গাড়ি থেকে নেমে সোজা ওর কাছে চলে গেলাম কারন প্রায় আজ পাঁচবছর পরে দেখা ওর সাথে ,

কিরে সাজু কেমন আছিস আর তোর কোলে মেয়েটা কার।

আরে ঈমান তুই,বহুদিন পরে দেখা তোর তো কোন খবরেই নাই।আমি তো ভালো আছি তুই?

আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও ভালো।তুই তো ওই যে চলে গেলি গ্রামে আর শহরে আসলি না।

এমনি আসা হয় নি আর।

ও তাহলে তুই কই যাবি এখন।

আমি তো এখন ঢাকামোড় এর দিকে যাবো তারপর ওখান থেকে গাড়িতে করে গ্রামে চলে যাবো।

তাহলে চল আমার সাথে আমিও ওদিকে যাবো।

তাই তাহলে তো ভালোই হলো।

হুম।

তারপর সাজুকে আর ওর কোলে একটা মেয়েকে নিয়ে আমার গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছি ঢাকামোড় এর দিকে।
তো সাজু মেয়েটা কে তোর কোলে?

ও এটা আমার মেয়ে,নাম নূরে।বয়স পাঁচ বছর।

অনেক সুন্দর তো তোর মেয়েটা দেখতে।তবে তুই বিয়ে করলি কবে।আমি কোন খবর পেলাম না।

আমার বিয়ে করা প্রায় সাত বছর হচ্ছে।আর বিয়েটা হঠাৎ করে হয়ে যায় তাই তোকে জানাই নি রে।

ও।তবে তোর মেয়েটা দেখতে কিন্ত অনেক কিউট।

হুম সবাই এই কথায় বলে।মেয়েটা আমার ওর মার মতো দেখতে হয়েছে।মেয়েটাকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার বউটা মারা যায়।মেয়েটা হয়েছে আমাদের বিয়ের পাঁচটা বছর পরে।এই পাঁচ বছর ধরে কতো কান্না কাটি করেছি আল্লাহ্ কাছে একটা সন্তানের জন‍্য শেষে আল্লাহ্ পাঁচ পছর পরে আমাদের কোল জুড়ে একটা মেয়ে দেয়।একটা ছেলে বা মেয়ের বিয়ের পরে যখন বাচ্চা হয় না, তাদের কতোটা সমাজের মানুষের কাছে কটু কথা শুনতে হয় সেটা আমি বুঝতে পেরেছি যখন বিয়ের পাঁচ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও কোন সন্তান জন্ম হয় নাই।

#চলবে,,,,কী?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে