অবহেলার শেষে পর্ব-৪+৫

0
2560

গল্পঃ অবহেলার শেষে
পর্বঃ (৪+৫)
লেখকঃ সালাহ উদ্দিন

ডিভোর্স লেটারটা বাবার হাতে পরতেই বাবা আমাকে ডাকতে থাকেন আর বলতে থাকেন “এই সব কি? মা মরছে এখনো ১৫ দিন হয় নাই, এর আগেই তোরে ডিভোর্স দিছে?ও ভাবছেটা কি?। আমার আগেই সন্দেহ হইছিলো, খালি যখন ওর মা আইসা বিয়া ঠিক করে গেছে। তোর মা তো খালি লাফাইছে, পোলা ভালা পোলা ভালা কইয়া এখন যে তোর জীবনটা নষ্ট কইরা দিলো।”
ততক্ষণে আমার ভাবি রান্না ঘর থেকে দৌড়ে আসে। এসেই বলতে থাকে

— “পোলাটা এতো ভালা ভাবছিলাম আর তার ভিতরে ভিতরে এই, মার পছন্দে বিয়া কইরা এখন মা মরতেই ডিভোর্স দিয়া দিছে। এতক্ষণে বুঝলাম তাইলে মনে হয় মারে খুশি করার লাইগাই বিয়া করছিলো। এখন মা মইরা গেছে গা আর বউ ডিভোর্স দিয়া দিছে।”

আমি শুধুই অভিনয়ের কান্না করতে থাকি। ভাবী আমার মাথায় হাত দিয়ে বলতে থাকে “কান্দিস না আমরা আছি না, কাঁদতে হইব না তোর। আমরাই তোরে দেইখা রাখমু।”
আমি শুধুই অভিনয়ের কান্নাকাটি করে নিজের ঘরে এসে দরজা দিয়ে বসে থাকি। আর ভাবতে থাকি। সব কিছু তো আমার কারনেই হয়েছে, সব দোষ তো আমার, ওনার তো কোনো দোষ নেই৷আমার পরিবারের সবার কাছে উনি এতো প্রিয় ছিলো। আর আজকে সবাই ওনাকে নিয়ে কতো খারাপ মন্তব্য করতেছে৷ সব কিছুতে তো আমারই দোষ। এখন যদি গিয়ে আমি আমার দোষের কথা বলি আব্বা আমাকে আস্ত রাখবেন না।

আমি ওই দিন রাতে বয়ফ্রেন্ড কে ফোন দিয়ে ডিভোর্স এর কথা জানাতেই ও যেনো চমকে উঠে, আর বলতে থাকে, “কি বলো এই সব ফাজলামো বন্ধ কর, ডিভোর্স দিছে বললেই হয়ে গেলো”?
আমি বলি “হ্যা মোহরানার সব টাকা আগেই পরিশোধ করা ছিলো। বিয়ের দিনই দিয়ে দিছিলো, তাই সমস্যা হয় নাই”।

ও বলে “তবে এখন কি করবো?”.।
আমি বলি “তুমি এবার তোমার বাসায় জানাও”।
সে উওর দেয় ” কি বলছ তুমি বাসায় জানালেই হবে নাকি? আমার বাড়িতে রাজি হবেনা,আর তাছাড়া ডিভোর্সি মেয়ে কি ভালো”???।

আমি বলি “কি বলতে চাও তুমি? ডিভোর্সি মেয়ে ভালো না মানে আমি কি করছি? তোমার কথা মতোই তো আমি আমার স্বামীর সংসার ছেড়ে আসছি এবার তুমি তোমার বাড়িতে জানাও”।
সে বলে “এটা কোনোদিন ই সম্ভব না,আমি পারবো না।আর তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে চাও তবে পালিয়ে বিয়ে করতে হবে”।
আমি বলি “পালিয়ে বিয়ে করবো কেনো? এতোদিন তো আমাকে জ্বালিয়ে মারছ খালি ডিভোর্স আর ডিভোর্স। এখন এই কথা বলতেছো কেনো? আমি ওতো কিছু বুঝি না৷ তুমি কবে আমাকে বিয়ে করবে সেটা বলো।
সে বলে ” ইসলামি শরিয়ত তো বলে মেয়েদের ডিভোর্স হলে ৪ মাস (ফিকহের মাসায়ালাতে এটাকে তিন তুহুর ও বলা হয়,যদি এটা অনেক দিন আগে পড়েছিলাম যদি ভুল হয়ে থাকে আমাকে বলে দিবেন দয়া করে) ইদ্দত পালন করতে হয়। ঐ কয়টা দিন আগে শেষ হোক তারপর বলি”।

আমি বলি “আমার সেটা প্রয়োজন নেই, ঐটা প্রেগনেন্সি সিওর হওয়ার জন্য,আর আমাদের এমন কোনো সম্পর্কই ছিলনা যে, আমার বাবু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”
সে বলে, “তুমি বললেই হলো, একসাথে ২ মাস থাকছো কতো কিছুই তো হতে পারে।” কিভাবে শিউর হলে?

আমি বলি, “কি বলতে চাও তুমি! তোমার কি আমার প্রতি বিশ্বাস নেই, আর আমি না করার পরেও তুমি এ কথাটা কিভাবে বলতে পারলে?”
সে বলে, ” বলতে পারলাম কি আবার তুমি কি দুধে ধোঁয়া তুলশী পাতা নাকি,না মহা মনীষী যে তোমার কথা বিশ্বাস করতেই হবে?”
আমি বললাম, “এই ৩ বছরে তুমি আমাকে এতো টুকু চিনলে? আমাকে এতো অবিশ্বাস হলো তোমার? নাকি আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই তোমার?”

সে বলে, “আমি জানিনা,আমি বাড়িতে কোনোদিনই তোমার কথা বলতে পারবো না।যদি পালিয়ে যেতে পারো তবেই আমি রাজি আছি।”
আমি পুরা উত্তাল সাগরের মাঝে পরে যাই। কোন দিক যাবো কোন কিছু মাথায় আসে না। এখন যদি পালিয়ে না যাই তবে ও আমাকে বিয়ে করবে না।আবার পালিয়ে গেলে আমার বাবার সব মানসম্মান ধুলায় মিশে যাবে। সবাই টিটকারী করবে। তার পর’ও আমি বাধ্য হয়ে ওকে বলি যে, “হ্যা আমি পালিয়ে যেতে রাজি আছি।এখন বলো কবে বিয়ে করবে?”

সে বলে, “সেটা আমি কি করে বলবো? তুমিই ঠিক করো।আর টাকা মেনেজ হলে তারপর আমাকে বলবে।”
আমি বলি, “টাকা মেনেজ হলে মানে? টাকা কি আমি দিবো নাকি?টাকা আমি কোথায় পাবো?”
সে বলল, ” টাকা কোথায় পাবে মানে?দেনমোহর এর টাকা কি করছো?”
আমি বলি, “দেনমনোহর এর টাকা উনি বিয়ের সময়ই পুরোটা দিয়ে দিছিলো, ওটা আব্বুর কাছ থেকে আমি নিতে পারবনা।”
সে বলে, “নিতে না পারলে বিয়ে হবে কি করে?আমি একটা টাকাও খরচ করতে পারবো না।আমার কাছে কোনো টাকা নাই।”

আমি বলি, “কি বলছো তুমি এই সব? তোমার কাছে যদি বিয়ে করার মতো টাকাই না থাকে। আবার বাড়িতেও জানাতে না পারো তবে আমার সংসার ভাঙলে কেনো?”
সে বলে, “আমিতো ভাবছিলাম দেনমোহর এর ২-৩ লাখ টাকা পাবা ওই গুলো দিয়েই হবে”।
আমি বলি, ” তুমি ইদ্দত পালনের কথা সেটা জানো, এটা জানো না?যে স্ত্রী নিজে ডিভোর্স দিলে ওইটা খোলা তালাক বলে, এতে স্বামীর টাকা দিতে হয়না উল্টো স্বামীকে টাকা দিয়ে ওই তালাক নিতে হয়।,তুমি কেনো তবে শুধু শুধু আমার সংসার ভাঙলে??

ও বলে, “দেখো যা হওয়ার হয়ে গেছে তুমি আবার চলে যাও,আমার তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না ।”
আমি বলি, ” সম্ভব না মানে? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?যদি আমাকে বিয়েই না করো তবে আমার সাথে রিলেশন করলে কেনো?”

সে বলে, “তোমার বিয়ের আগে হলে হয়তো বাড়িতে বলতে পারতাম।এখন তুমি একটা ডিভোর্সি মহিলা। ডিভোর্সি মহিলাকে বিয়ে কোনো পরিবার মেনে নিবে? আর আমি ভাবছিলাম তুমি দেনমোহরের টাকা পাবে সেটা দিয়ে না হয় বিয়ে করে নিবো। পরে ২-১ বছর পরে বাড়িতে আসলে ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু এখন তুমিই টাকা দিতে পারবেনা। তাই আমিও বিয়ে করতে পারবো না। আর আমি তোমাকে আজ থেকে ভালোবাসিনা। আমাকে আর ফোন দিবা না।”
এটা বলেই সে ফোন কেটে দেয়। আমি ফোন দিলে আর রিসিভ করে না। আমি কার জন্য সব ছেড়ে চলে আসলাম, আজ সে আমাকে এই কথা বলতেছে? কার জন্য আমি এতো কিছু করলাম। আমি এখন কোন দিকে যাবো। আমি আমার বাবা মা’কে কি বলবো। আর যদি আমি আবার আমার স্বামীর কাছে ফিরে যাই, তবে উনার সামনে আমি কোন মুখে দাঁড়াবো। কি বা জবাব দিবো ওনার কথা গুলোর৷ আমার চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে। এতো কিছুর চাপ সহ্য করতে না পেরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমার পাশে আমার মা আর ভাবী বসা।

ওনারা আমার অজ্ঞান হওয়াটাকে সেই ভাবেই দেখে যেভাবে আট আট দশটা নব বিবাহিত মেয়ের মাথা ঘুরে পরে যাওয়া আর অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটাকে দেখে। মানে আমি প্রেগনেন্সির কথা বলতেছি আর কি। কিন্তু আমি তো জানি, যে আসলে কি হয়েছে। আম্মু চলে গেলে আমি ভাবীকে বলি যে, ” ভাবী তোমরা যা ভাবছো আসলে তা না।আমার অনেক টেনশন হচ্ছিলো যার ফলে এমনটা হয়েছে।আর আমার প্রেগনেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই।উনার সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্কই ছিল না।”

আমার ভাবী বলে, “কি বলছো তুমি এসব, ও তোমাকে ১ম থেকেই মেনে নেইনি সেটা তুমি আমাদের বলোনি কেনো”?
আমি কি বলব ভেবে পাইনা। কারন উনিতো আমাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়নি। আমার জন্যই তো এই সব হলো। তাই আমি আর কোনো উওর দিতে পারিনি, শুধু বলি ” ভাবী বাদ দিন তো ওই সব আর বলবেন না।”
ভাবী ও আর কিছু না বলে চলে যায়।
পর দিন আমি আবার আমার বয়ফ্রেন্ড কে ফোন দিই। তখন ও আমাকে যেই কথা গুলো বলল, তা শুনে আমার ইচ্ছা করছিলো এখনি আমার পায়ের নিচের মাটি দুভাগ করে ডুকে যাই, আমার আর এই পৃথিবীতে থাকার প্রয়োজন নেই৷।

……………
চলবে…….
…………….

👉 গল্পঃ অবহেলার শেষে

👉 পর্বঃ ৫

👉 লেখকঃ সালাহ উদ্দিন
.
.
যাকে এতো বছর ধরে ভালোবাসি। যার মায়ায় আমি স্বামী সংসার ছেড়ে চলে এসেছি। যার জন্য আমার স্বামীর মনে কষ্ট দিয়েছি৷ আমার অসুস্থ শাশুড়ীর মনে কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করতে হয়েছে। সে কিনা আজকে বলল, “আমি কেবল তোমার টাকা গুলোর জন্যই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম,এখন তুমি নাকি টাকাই খরচ করতে পারবে না।আমি অতো টাকা কোথাও পাবো না, আর বিয়েও করতে পারবো না। আর বাড়িতে আমি একজন অবিবাহিত ছেলে হয়ে যদি একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ের কথা বলি, তবে আমার বাবা আমাকে ত্যাজ্য পুত্র ও করতে পারেন। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না৷ আর ভালো’ও বাসি না।আমাকে আর ২য় বার কল দিবে না।”

আমি কার জন্য এতো কিছু করলাম। কার জন্য? কার জন্য সব কিছু ছেড়ে চলে আসলাম! আমার আর কিছুই ভালো লাগছেনা।
আমার বাড়িতে প্রতিনিয়ত আমার স্বামীকে নানান কথা বলতে থাকে। আগে সহ্য হলেও পরে আর আমার ওই কথা গুলো সহ্য হয়না৷ উনি কেনো এতো কথা শুনবেন? ওনার তো কোনো দোষ ছিলো না। ওনার মাঝেতো কোন কিছুরই কমতি ছিলো না৷ আমিই তো ভালোবাসা গুলোকে দুরে ঠেলে দিয়েছি। কেনো করলাম আমি এইসব, কেনো?একটা বারের জন্য’ও আমি ওনার কথা ভাবলাম না! আমি এতোটাই সার্থপর হয়ে গেলাম! উনি কি কখনো আমাকে ক্ষমা করতে পারবেন? আর কি কোনো সুযোগ আছে আমার ওনার কাছ থেকে ক্ষমা নেয়ার?

এমন হাজারটা প্রশ্ন আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করতে থাকে। বিবেকের ছুঁড়ে দেওয়া প্রতিটা গভীর প্রশ্ন আমার হৃদয়টাকে ক্ষত বিক্ষত করতে থাকে৷ আমার মন চায় যদি একটি বারের জন্য হলেও উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে পারতাম। চোখের পানিতে ওনার বুকটা ভিজিয়ে দিতে পারতাম। হয়তোবা উনিও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতো, “আর কাদতে হবে না,ভালোবাসি তোকে,খুব ভালোবাসি, কথা দে আর কখনো ছেড়ে যাবিনা।”

আমি তখন ওনার বুকে মুখ লুকিয়ে বলতাম, “এ জীবন যতদিন আছে কখনো আর ছেড়ে যাবোনা।শুধু একটি বার আপনার বুকে ঠাঁই দিবেন আমায়?”
কিন্তু?
এই কথা গুলোকে কেবল কল্পনায় জায়গা দেয়া যায়৷ বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। আমি কী কখনো ওনার সামনে দাঁড়াতে পারবো? ওনার চোখে চোখ রাখতে পারবো?ওনার বুকে মাথা রাখতে পারবো? শক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরতে কি পারবো?
জানিনা কখনো সম্ভব কিনা,,আমি হয়তো পারবো না। তবে আজ কেনো জানি মনে হচ্ছিলো, হ্যাঁ আমিও ওনাকে খুব করে ভালোবেসে ফেলেছিলাম৷ ঐ পুরোনো সিম কার্ড। সেই ৩ বছরের মায়া আমাকে শেষ করে দিয়েছে, আমার ভালোবাসাকে শেষ করে দিয়েছে।
এসব ভাবতেছিলাম ঠান্ডা ফ্লোরে বসে। অঝোরে কান্না করছিলাম,,কাঁদতে’ও শরীরের অনেক শক্তি ব্যায় হয়।তাই খুব ক্লান্ত লাগছিলো। একটু ঘুমালে মনে হয় ভালো হতো। এই ভেবে ফ্লোর থেকে উঠে বিছানার কাছে যেতেই ঝুনঝুন শব্দ আমার কানে বাজতে থাকে।
আরে আমিতো ঐ দিন আসার সময় পায়েল গুলো রেখে আসিনি। উনিও আমাকে বারণ করেনি। হয়তোবা ভালোবাসতেন বলেই কিছু বলেনি। নতুবা আমার সাথে আর কথা বলার কোনো রুচি হয়নি। তাই আমার ও আর রাগের সময় খেয়াল ছিলোনা।
বিছানায় বসে এক নজরে তাকিয়েছিলাম পায়েল গুলোর দিকে। রেডিমেড জিনিস নয়। অর্ডার দিয়ে বানানো৷ একটা পায়েল খুলে প্রতিটা অংশ ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখছিলাম৷ খোদাই করে খুব সুন্দর করে লিখা ছিলো। “A”..

আবার একটু দুরেই লেখা ” I”..একটু উচু করে আঁকা ❤.. তারপরই লেখা “U”..
এই ছোট ছোট সংক্ষিপ্ত লেখা গুলোর মানে সবাই বুঝে। আমি ও সেদিন বুঝেছিলাম। পায়েলটা বুকে জড়িয়ে আবারো অনেক কান্না করি। এতো ভালোবাসা জমা ছিলো আমার জন্য। আর আমি কিনা একটুও অর্জন করতে পারলাম না। পায়েলেই কি কেবল এটা লিখা ছিলো! না প্রতিটা জিনিসেই এভাবে লেখা ছিলো! আর আমি সেগুলোকে আমার গলায়,আমার হাতে এক জায়গায় ও স্থান দিতে পারলাম না।শুধুমাত্র পায়েই স্থান দিতে পারলাম। আমি নির্বোধ সব চেয়ে বড় নির্বোধ। বৈধ ভালোবাসা গুলোকে দুরে ঠেলে দিয়ে একটা অবৈধ মায়ায় জড়িয়ে ছিলাম৷ অন্ধকার হয়ে আসে আমার পৃথিবীটা।

(বিঃদ্রঃ পাঠক পাঠিকা ভাই বোনেরা,,উপরের ওই একটা লাইন ভালো করে খেয়াল করবেন। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যে বৈধ ভালোবাসা রেখে অবৈধ মায়ায় জড়িয়ে যায়,,, Aman)

অনেকে হয়তোবা ঐ সময়ে আত্মহত্যা করেও ফেলতো,, কিন্তু আমি করিনি। আমার যে সেই হারানো ভালোবাসা পেতেই হবে। এ পৃথিবীতে যদি না-ও পাই। পরের জগতে হয়তোবা পাবো। আর যদি আত্মহত্যা করি তবে তো আর কোনো জগতেই আমি সেই ভালোবাসা পাবোনা। সেই চিন্তায়ই বেঁচে ছিলাম।

প্রতিদিন ভাবতে থাকি ওনাকে একটু ফোন দেই অন্তত। কিন্তু সাহসে কুলোয় না। আমি পারিনা ফোন দিতে। এভাবে প্রায় ১০ দিন কেটে যায়। মনে হয় আরো বেশিও হতে পারে। একদিন রাতে খেতে বসেছি তখন একটা মেসেজ আসে। আমি খাওয়া শেষ করে আর সেটা দেখতে মনে ছিলো না। পরে রাতে ঘুমানোর আগে ফোন হাতে নিলে মেসেজ টা দেখি। মেসেজ টা আমার স্বামীর নাম্বার থেকে এসেছে।

আমি তাড়াতাড়ি সেটা পড়তে উঠে বসি। অনেক বড় একটা মেসেজ, কি রেখে কি পড়বো আমি বুঝতে পারিনা। অবশেষে শুরু থেকে খুব মন দিয়ে পড়তে শুরু করি।

উনি লিখেছেন, “কেমন আছো? আশাকরি খুব ভালো আছো।আমি কেমন আছি তা না বল্লেও চলবে৷ আজ আম্মুর মৃত্যুর ৪০ দিন হলো৷ যদিও এই দিন হিসেবে বিশেষ কোন কিছু নেই৷ তবুও আমি এই দিনটা একটা বিশেষ দিন ধরে নিয়েছিলাম। ইসলামী শরিয়তে ৪০ খুব প্রশংশনীয়, তাই আরকি৷ আমি ঠিক করে রেখেছিলাম আম্মুর মৃত্যুর ৪০ দিন পর্যত্ন তোমাকে সময় দিবো।কিন্তু তুমি এইদিন গুলোর মাঝে একটা বারের জন্যও যোগাযোগ করোনি। কি দোষ করেছিলাম। না হয় রাগের মাথায় একটা থাপ্পড়ই দিয়েছিলাম৷ কই এতোদিন তো কিছু বলিনি৷ তোমার এতো অনিয়মের পরেও কিছু বলিনি৷ কিন্তু যেদিন শুনি যে আমার আম্মু সব জেনে গেছে। ঐদিন থেকে আমার রাগ চলে আসে৷ তবুও তোমাকে এই কয়দিনের সময় দিয়েছিলাম। খুব ভালোবাসতাম তোমাকে। খুব খুব। তাই সহজেই ভুলতে পারিনি৷ তুমি নিজে যদি ডিভোর্স টা দিতে, তবে তোমার বাড়িতে অনেক সমস্যা হতো, তাই বাধ্য হয়ে আমিই ডিভোর্স দেই। আজ প্রায় ২২ দিন হয়ে গেছে তুমি চলে গেছো। একটা বারের জন্য’ও মনে হলোনা যে আমি একা একা কিভাবে চলি! কে রান্না করে দেয়৷ কিভাবে সময় মতো অফিসে যাই৷ আমি কি ঠিক মতো অফিসে যেতে পারি,ঠিক সময় মতো খেতে পারি, সময় মতো ঘুম থেকে উঠতে পারি! একটা বারের জন্যও জানতে মন চাইলোনা? আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি তারও খোঁজ নাও নি। ঐদিন আমার অফিসে এসে সবার সামনে তোমার বাবা আমাকে প্রায় ৩০ মিনিট নানান কথা বলেছে৷ কতোটা অপমান করেছে সবার সামনে৷ একটা বারও আমি উনার দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারিনি৷ একবার ও বলিনি যে আমি কিছুই করিনি আপনার মেয়ের জন্যই এই সব হয়েছে। বললে হয়তো তুমি অনেক কথা শুনতে। লোকে তোমাকে খারাপ ভাবতো, তুমি অনেক বকা খেতে। তাই ঐদিন তোমার নামে কোন অভিযোগ করতে পারিনি। কেনো জানো? বড্ড ভালোবাসতাম যে তোমাকে। অফিসের কলিগ রা আমায় বাজে ছেলে ভেবেছে ঐদিন। কিন্তু আমি একবার’ও তাদের ভুল শুধরে দেইনি। কারণ একটাই বড্ড ভালোবাসতাম তোমাকে। কিন্তু তুমি একটু’ও ভালোবাসোনি আমাকে৷ একটু ও না। তাই প্রতিটি মুহুর্তে কষ্টে কষ্টে তোমাকে ভুলতে শিখেছি। একাকী বাঁচতে শিখেছি। হ্যাঁ এখন থেকে আর ভালোবাসিনা তোমাকে। না একটু ভালোবাসিনা। সব ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে। এখন তোমার জন্য আমার মনে কেবল ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নেই। ক্ষমা করে দিও তোমার জীবনের অনেকটা সময় আমার কারনে নষ্ট হয়ে গেছে। আর একটা কথা আজ থেকে আর কোনো সম্পর্ক নেই তোমার সাথে। তাই আর আমার খোঁজ নেয়ার ও প্রয়োজন নেই৷ আর কোনো ফোন দেয়ার ও প্রয়োজন নেই । ভালো থাকবেন!”

মেসেজ টা পড়ার পর আমার কেমন লাগছিলী তা আমি নিজেও বলতে পারবো না। আমি চিৎকার করে কেঁদেছিলাম ঐদিন। অতো কান্না আমি জীবনেও করিনি। আমার ঘরটা থেকে আব্বুর ঘর দুরে, ভাইয়ার ঘর থেকেও দুরে। আর রুমের দরজা ও লাগানো তাই কেউ শুনতে পায়নি আমার কান্না। সারাটা রাত ঘুমাতে পারিনি। কান্নায় কান্নায় কাটে পুরো রাত। শেষ রাতে ক্লান্ত হয়ে একটু ঘুমাই।
সকাল বেলা ঘুম থেকে দেরীতে উঠি। তখন রান্না প্রায় শেষ তবুও ভাবীকে সাহায্য করার জন্য যাই৷ ভাবী আমার দিকে তাকিয়েই বলতে থাকে, “অবন্তী তোমার চোখ এমন লাল কেনী,ঘুমাও নি ঠিক মতো”?
আমি বলি, ” হুম ভাবী ঘুম হয়নি বেশী”।

ভাবী বলে, “তোমাকে বলছি না কান্নাকাটি করবে না৷যে কিনা ২ মাসের বউকেই ডিভোর্স দিয়ে দেয়৷ তাও মা মরার ১৫ দিনের মাঝেই ঐ রকম বাজে লোকের জন্য কান্নার কোনো মানে হয়না৷ আমরা আছি না, কোনো টেনশন করবা না।”
আমি বলি, “ভাবী প্লিজ ওনাকে কিছু বলবেন না।”
ভাবী রাগে ফুলতে ফুলতে বলে, “এহ.. দরদ উতলায়া পরতাছে এই সব হারামির জন্য কিসের দরদ এতো। ”
আমি শুধু বলি, “ভাবী প্লিজ এখন কিছু বলোনা, রাতে তোমার সাথে কথা আছে। সবাই ঘুমালে তারপর আমার রুমে এসো।”
ভাবী বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে। যাও এখন গিয়ে ভালো করে হাত মুখ ধোও চোখ যেনো লাল না থাকে”।
আমি এসে হাত মুখ ধুয়ে নিই ভালো করে। যেনো আব্বু আম্মু লাল চোখ না দেখে।
রাতে খাওয়ার পরে সবাই যখন ঘুমিয়ে যায়। তখন ভাবী আমার রুমে আসে। আমি ভাবীকে আস্তে আস্তে সব বলি।
কথা শেষ হতেই ভাবী জ্বলজ্বল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর হঠাৎই জোরে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় আমার গালে। আমি হতভম্ব হয়ে গালে হাতে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।তারপর……
….

.
চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে