গল্পঃ অবহেলার শেষে
পর্বঃ ৬
লেখকঃ সালাহ উদ্দিন
.
কথা শেষ হতেই ভাবী আমাকে একটা থাপ্পড় মারে। আমি গালে হাত দিয়ে কাঁদতে থাকি। আর ভাবী আমাকে বকতে থাকে, ” তুমি এটা কি করলে? স্বামী হাজারটা দোষ করলেও যেখানে মাটি কামড়ে পরে থাকতে হয় কথাটা ছোট থেকে শুনে আসছি। বারবার বুঝিয়ে ঠিক করতে হয় আর সেখানে তুমি কিনা…ছিঃ অবন্তী এটা তুমি কি করলে?আব্বা আম্মা যদি জানতে পারে কি হবে একবার ভেবে দেখোনি! আব্বা হার্টের রোগী তিনি এসব শুনলে কি একটা অবস্থা হবে ভেবেছো একবার,??তোমার ভাইয়া যে আমাকে এতো বকাঝকা করে এর পরেও কি ছেড়ে চলে গেছি? আর তুমি কিনা কোনো কারণ ছাড়াই স্বামীর সংসার ছেড়ে ছেড়ে চলে আসছো। ঐ’দিন আব্বা জামাইকে এতো গুলো কথা শুনিয়ে আসছে এখন কোন মুখে তুমি জামাইয়ের সামনে যাবে? আর আব্বা কি কোনোদিন’ও জামাইয়ের সামনে যেতে পারবে?আমি কিছু জানি না। এখনো সময় আছে কয়েকদিনের মাঝে যেভাবে পারো জামাইকে বুঝিয়ে চলে যাও। নয়তো পরে আর যেতে পারবে না। আর যেই ৫-৭ দিন আছে এর মাঝেই চলে যাও। নয়তো পরে সারা জীবন পস্তাতে হবে।”
আমি ভাবীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। কেননা, আমি কি করব তখন আমার মাথায় কিছুই আসছিলো না৷ আমি কেবল কান্নাকাটি ছাড়া আর কিছুই করতে পারছিলাম না৷ ভাবী আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “এখন আর কেঁদে কি হবে?যা করার তাতো করেই ফেলছো।আমি তোমার ভাইয়াকে বুঝিয়ে বলবো, দেখি কি হয়। ”
আমি ভাবীকে বার বার না করতে থাকি, “ভাবী ভাইয়ার যেই রাগ আমাকে আস্ত রাখবে না। ”
ভাবী বলে, “তাহলে কি আব্বাকে বলবো এখন, যাতে ওনি ষ্টোক করে”?
আমি বলি ভাবী, ” না না আব্বুকে ভুলেও বলা যাবে না। সব কিছু যদি ঠিক হয় তবেই আব্বুকে বলো”।
ভাবী বলে, “তাহলে দেখো আগে তুমি কথা বলে, যদি ঠিক না হয়, তবে নাহয় তোমার ভাইয়াকে বলবো৷”
অতপর ভাবী চলে যায়।আমি ওনাকে ফোন দেই, কিন্তু ফোন ঢুকেনা। আমার নাম্বার টা হয়ত ব্লক করে রেখেছে। আমি ভাবীর ফোন নিয়ে ফোন দেই। ২-৩ বার রিং হওয়ার পরে উনি ফোন ধরে৷
সালাম দিয়ে কেমন আছেন বলতেই উনি উওর দেয়, “আলহামদুলিল্লাহ,কে বলছেন”?
আমি আমতা আমতা করে বলি, ” আমি অবন্তী।”
উনি বলেন, “কেনো কল দিছেন”?
আমি উত্তর দেই, ” কথা ছিলো একটু সময় হবে আপনার”?
উনি বলেন, “আমার কোনো সময় নেই,আর একবার’ও কল দিবেন না”।
আমি কিছু বলতে পারিনা শুধু কাঁদতে থাকি। যতই চেষ্টা করি কান্না থামাতে কিন্তু থামাতে পারিনা।উনি ও-পাশ থেকে কল কেটে দেন। তখন পৃথিবীতে নিজেকেই সবচেয়ে বেশি অসহায় মনে হচ্ছিলো। হায়, এই আমি কি করলাম,, নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম।
পৃথিবীর সব সুখ হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। উনার জমানো সব ভালোবাসা হয়তো আমার ভাগ্যে জুটতো। কিন্তু আমি সব ছেড়ে অবৈধতার টানে চলে আসলাম? আমার ভিতরটা হাহাকার করতে থাকে। অনেকবার কল দিয়েছিলাম তারপর৷ একবারও কল রিং হয়নি৷ ওনার মনে হয়তোবা অভিমান গুলো তীব্র আকার ধারণ করেছে। কষ্ট পেতে পেতে ভিতরটা শক্ত হয়ে গেছে। আমার জন্য হয়তোবা শুধু ঘৃণা গুলোই অবশিষ্ট আছে।
বাধ্য হয়ে পরের দিন ভাইয়াকেই জানাতে হয় ব্যপার টা। আমার আর তখন কিছুই করার ছিলো না৷ ওনাকে আমি আর বুঝাতে পারবো না। এতটুকু জ্ঞান আমার হয়ে গিয়েছিলো। ভাইয়াকে কথা টা জানাতেই ঐ দিন রাতেই বাড়িতে আসে।
ভাইয়া যখন আমার সামনে দাঁড়ায়, আমি ভাইয়ার দিকে তাকাতে পারিনা ভয়ে।এমনিতেই ভাইয়া অনেক রাগী। তার উপর আমি যেই অপরাধ করছি এর কোনো ক্ষমা নেই। যদি ভাইয়া আমাকে মারে, সেই ভয়ে আমি আগেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। এতে করে ভাইয়া আমাকে আর মারতে পারেনি। কিন্তু কথা শুনিয়েছে প্রচুর। কেনো এই রকম একটা কাজ করেছি? তারা কি কখনো আমার খারাপ চেয়েছিলো কিনা, যার ফলে আমি এই ভুল কাজটা করেছি। আমি কোনো জবাব দিতে পারিনি সেই সময়।
পরে ভাইয়াই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আমার একটা মাত্র বোন তুই,, তোর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না। আব্দুল্লাহর (আমার স্বামীর নাম) কাছে নাহয় আমার একটু ছোট হতে হবে। তবুও তোর জীবনটা তো আমি নষ্ট হতে দিতে পারি না৷ তার আগে তুই একটা কথা বল। আর কোনোদিন তুই কোন প্রকার ভুল কাজ করবি না। আব্দুল্লাহর, আমার কথার বাইরে একটা কাজ ও করবি না। আর যদি করিস তবে মনে করবি যে তোর ভাই আর নেই। তুই আর জীবনে’ও আমার সামনে আসতে পারবি না।”
আমি কি উওর দিবো বুঝে পাইনি। ভাইয়াকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম৷ ‘আমি কোনোদিন’ও তোমার অমর্যাদা হতে দিবোনা ভাইয়া৷ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও ভাইয়া৷’ আমি তখন স্পষ্ট ভাবে ভাইয়ার চোখেও পানি দেখতে পাচ্ছিলাম। ভাইয়েরা যতই রাগী হোক না কেনো ছোট বোন গুলো যে তাদের কলিজা সেটা আমি ঐদিন বুঝতে পারি। আমিও অঝোরে কাঁদতে থাকি। আর বলতে থাকি, ‘ভাইয়া আই এম সরি ভাইয়া।’
ভাইয়া আমাকে কিচ্ছু বলতে পারেনি। আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে, ‘তুই যে আমার কলিজা, তোর কান্না আমার সহ্য হয়না। আর কাঁদতে হবে না। আব্দুল্লাহ্কে আমি খুব ভালো করেই চিনি। সব ঠিক হয়ে যাবে। ‘
ভাইয়ার কথা শুনে আমার কান্না থামেনি রবং বেরে গিয়েছিলো। কিন্তু ঐ কান্নাটা ছিলো খুশির, ভাইয়ার মুখ থেকে আমার প্রতি ভালোবাসার কথাটা শোনা।
পরদিন শনিবার আমার স্বামীর অফিস বন্ধ এটা আমি জানতাম। সকাল বেলায় ভাইয়া আমাকে নিয়ে আমার স্বামীর বাড়িতে যায়। দরজায় নক করার কিছুক্ষনের মাঝেই উনি দরজা খুলে দেন। ওনার মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। ঘামার্ত মুখটা দেখে বুঝতে পারছিলাম উনি রান্না করছিলেন। উনি আমাকে দেখেই আবার মুখ ঘুরিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে ভাইয়াকে দেখে আর দরজা লাগাতে পারেনি। আমরা দু’জনে ঘরে ঢুকে পড়ি। ভাইয়া আমাকে দুরে যেতে বলে। তারপর ওনার হাত ধরে কি সব যেনো বলছিলেন। আমি কিছুই শুনতে পাইনি। কিন্তু সুমুন্দি হয়ে এভাবে ছোট বোনের জামাইর হাত ধরে আকুতি করে কথা বলায় আমার স্বামী বেশ লজ্জা পাচ্ছিলেন। এটা আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারি। কথা শেষ করে ভাইয়া এক মুহুর্তও দেরি করে নি হনহন করে বেড়িয়ে যায়৷ ভাইয়া চলে যেতেই উনি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষন কি যেনো ভাবতে থাকেন। তারপর ঠাস করে আমার গালে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেন।
আর বলেন, “মেয়েদের মুখের উপরে মারা নিষিদ্ধ তারপরও মারলাম। কেনো আসছেন আবার হুম, কেনো আসছেন৷ আপনার না কোন দরদী আছে? গেলেন না তার কাছে? কেনো আসছেন এইখানে। কি দরকার ছিলো আসার। আজকে আপনার জন্য ভাইয়াকে এইভাবে আমার সামনে দাঁড়াতে হইছে৷ আমি কি জীবনেও আর ভাইয়ার দিকে তাকাতে পারবো। ভাইয়াই বা লজ্জায় আমার সামনে আসতে পারবে? আব্বা সেই দিন এতো গুলো কথা বলে গেছে আমাকে৷ এখন আমিই বা কি করে আব্বার সামনে যাবো৷ আর আব্বা জীবনে আমার সামনে দাঁড়াতে পারবে? আমি তাকালেই তো অপমানিত হবেন।কি ভাবছেন কি নিজেকে? পৃথিবীতে একমাত্র আপনিই সব বুঝেন! আর কেউ কিছু বুঝে না! আপনাকে আর কোনোদিন’ও এই ঘরে আনার ইচ্ছে ছিলোনা আমার। শুধু ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমি কিছু বলতে পারিনি। তবে মনে রাখবেন আসছেন এ বাড়িতে থাকেন কোন সমস্যা নেই, কিন্তু ভুলেও আমার কোনো খাদেমদারি করতে আসতে হবে না। এতোদিন যেমন ভাবে চলে আসছি বাকি দিনও চলতে পারবো।”
অতঃপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রান্না ঘরে চলে যান।
আমি যে জীবনে কি জিনিস হারিয়েছি তা তখন বুঝতে পারি৷ কত আদর আহলাদ ভালোবাসা হয়তো আমার জন্য ছিলো। কিন্তু ক্ষনিকের ভুলে আমি সব হারিয়েছি৷
বাবা-মার সামনেও আমি অপরাধী হয়ে গেলাম। আমার ভাইয়াকে আমার জন্য নিজের ছোট বোন জামাইয়ের কাছে ছোট হতে হলো৷ আর যিনি আমাকে এতো ভালোবাসতেন তিনিও আমাকে অবহেলা করে চলে গেলেন। তারপরও অন্য কেউ হলে হয়তোবা আর কোনোদিন আমার এ বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুন ও পেতাম না। কিন্তু উনি তো তবু আমাকে অন্তত ঠাঁই দিয়েছেন। তাতেই আমি খুশি ছিলাম।
ঐ দিনের পর থেকে আর কখনো উনার ভালোবাসা টুকু পাইনি। কখনো সুযোগ পাইনি ওনার বুকে একটু মাথা রাখার । ঘুমের মাঝেও একবারের জন্য জড়িয়ে ধরতে পারিনি৷ একটি বারের জন্যও কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে পারিনি। উনি বিছানায় ঘুমাতেন না, আমার স্পর্শ পাবেন বলে৷ সেই আগের মতো সোফাতেই ঘুমিয়ে পরতেন। কত বার চেষ্টা করেছি ফ্লোরে বসে অন্তত ওনার হাতে মাথা রেখে ঘুমাতে। পারিনি, কখনো ঘুম থেকে উঠে ধমকাতে একটুও দেরি করেনি। কতো বার চেষ্টা করেছি পা ছুঁয়ে ক্ষমা চাইতে কিন্তু একটি বারের জন্যও ওনাকে ছুঁতে পর্যন্ত দেন নি৷ আমার ভিতরে কষ্ট গুলো পাহাড়ের মতো বিশাল হতে থাকে৷ প্রতিনিয়ত চোখের পানি ঝরিয়েও কষ্ট কমাতে পারিনি আমি। মাঝে মধ্যে মাঝরাতে উঠে চুপ করে ফ্লোরে বসে থাকতাম। একদৃষ্টিতে ওনার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কত সুন্দর একটা মুখ ছিলো আগে। আমি যাওয়ার পরে একদম শুঁকিয়ে গেছে। যে মানুষটা কখনো রান্না করেনি, সে ঐ ক’টা দিন কি খেয়ে বেঁচে ছিলেন তা আল্লাহ্ তা’য়ালাই ভালো জানেন। ওভাবে কখনো ঘন্টার পর ঘন্টাও বসে থাকতাম। চোখ থেকে পানি গুলো গাল বেয়ে বেয়ে পড়ে গলা পর্যন্ত ভিজিয়ে দিতো। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে আবারও ঘুমিয়ে যেতাম।
একদিন রাতে উনি অফিস থেকে ফিরতে খুব দেরি করছিলো, টেনশনে আমার বুক শুকিয়ে আসছিলো, অতঃপর প্রায় ১০টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরে। সারা শরীরের কাপড় ভিজে একাকার। একদম কাক ভেজা হয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ঢুকেন। তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টে কোন রকমে ক’টা খেয়ে কাঁথা-মুড়ি দিয়ে সোফায় শুয়ে পড়েন।
রাতে প্রচুর জ্বর আসে। আধোঘুমে গোঙাতে গোঙাতে আবল-তাবল বকতে থাকে৷ ঘুম থেকে উঠিয়ে কাঁধে ভর দিয়ে সোফা থেকে কোন রকম বিছানায় নিয়ে আসি ওনাকে। শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। মাথার নিচে পলিথিন কাগজ দিয়ে মাথায় প্রায় ২ বালতি পানি দিতে হয়। তারপর জ্বর কিছুটা কমে আসে। ভেজা বালিশ থেকে মাথা সরিয়ে আমার পায়ের উপরে শুইয়ে দিই৷
রাত তখন প্রায় ১ টা বাজে আমার চোখেও প্রচুর ঘুম আসে। কিন্তু ওনার মাথাটা পা থেকে সরিয়ে বালিশ দিয়ে আমিও যে একটু ঘুমাবো তার সাহস হয় না। কতোদিন পরে উনাকে কাছে পাওয়ার একটু সুযোগ পেয়েছি সেই ভাবনায়৷ পিঠ দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে থাকি। কখন যে ঘুমিয়ে পরি নিজেও জানিনা।
হঠাৎ ওনার ডাকে ঘুম ভেঙে যায়, “এই অবন্তী, অবন্তী এই উঠো”
আমি ঘুম জড়ানো কন্ঠে উত্তর দেই, “কি হয়েছে, আবার খারাপ লাগছে”?
উনি বলে, ” না এখন একটু ভালো লাগতেছে।”
আমি বলি, “আচ্ছা তবে ঘুমিয়ে থাকুন সব ঠিক হয়ে যাবে।”
উনি বলে, “তুমি এভাবে ঠেস দিয়ে ঘুমাতে পারবে? বালিশ নিয়ে শুয়ে পরো।”
আমি উত্তর দেই, “আসলে বালিশ একটা ভিজে গেছে আর একটাতে কি করো দু’জন ঘুমাবো, তার চেয়ে ভালো এভাবেই ঘুমিয়ে থাকুন আমিও ঘুমাই।”
আর কোনো কথা না বলে উনি উঠে বলিশ নিয়ে শুয়ে পরেন। আর একটু পরে আমাকে’ও টেনে শুইয়ে দেন। আমি এমনিতেই বসে বসে ঘুমিয়েছি, আমার ঘুম ভালো হয়নি। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তাই বিছানায় মাথা রাখতেই আমি ঘুমে তলিয়ে যাই৷
সকালে ঘুম থেকে উঠে নড়তে পারিনা। তখন ও পুরো পুরি সকাল হয়নি। আমি নিজেকে আবিষ্কার করি ওনার বুকে। একটা মাত্র বালিশে উনি শুয়ে আছেন আর আমি ওনার হাতের উপরে শুয়ে আছি। ওনার ডান হাতের উপরে আমার মাথা আর বাম হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন৷ তখন আমার যে কতোটা ভালো লাগে আমি বলে বুঝাতে পারব না। খুশিতে আমার কান্না চলে আসতে থাকে। আমি কোনো রকমে মাথাটা ওনার দিকে ঘুরিয়ে ওনার বুকে মুখ রেখে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করি৷ কিন্তু বিভিন্ন ভাবনা আমাকে ঘুমাতে দেয় না। তাই বিড়ালছানার মতো গুটি মেরে সজাগ হয়েই শুয়ে থাকি৷ উঠতে মন চায় না৷ কিন্তু বেশী দেরি হলে আবার নামাজ কাযা হয়ে যাবে৷ আর ওনাকে যদি নামাজের জন্য না ডেকে দিই তবে হয়তো আবার রাগ করতে পারে৷ তাই কোনো রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওজু করে এসে ওনাকে ডেকে দিই। কিন্তু রাতে জ্বর থাকার কারনে হয়তো উঠতে কষ্ট হচ্ছিলো। খালি বার বার হু হু করে আবারও ঘুমিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি ওনার কপালে চুমু দিয়ে কানে কানে বলি, “এই যে এতো ঘুমালে হবে নামাজ পড়তে হবে না, উঠুন নামাজ পড়ে তারপর আবার মন চাইলে ঘুমাবেন।”
এবার তিনি ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি গিয়ে ওজু করে আসেন৷ দু’জনে এক সাথে নামাজ শেষ করি৷
নামাজ শেষ হতেই উনি বলেন, “দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নাও।”
আমি ও ওনার কথা মতো নফল নামাজ পরে নিই৷ তবে নামাজ শেষে বুঝতে পারি এটা হলো সেই নামাজ যা দুই প্রান্তের দুজন এক সাথে হওয়ার শুকরিয়া সরূপ আদায় করে।
ঐ দিনের পর থেকে আমি কিছুটা ভালোবাসা পাই। কিছু টা বলতে আমাকে আগের মতো অতটা অবহেলা করতোনা। অবহেলা কমে গেছে ঠিকই কিন্তু আজও আমি ভালোবাসা টা পাইনি। জানিনা সেটা আর কবে পাবো।।
হঠাৎ বাস ড্রাইভার হার্ড ব্রেক করতেই সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে অবন্তী আর অপরিচিতা। নিজেদের’কে তাড়াতাড়ি সামলে নেয় তারা। এতোক্ষণ ধরে ঝিম ধরে অবন্তীর কথা গুলো শুনতে থাকা অপরিচিতা বলে, “আপু তবে এখন আমার কি হবে আমিও যে বড় একটা ভুল করে ফেলেছি”।
.
.
.
চলবে………….