#অবশেষে_সন্ধি_হলো
#পর্ব:৭
#লেখিকা: ইনায়া আমরিন
পৃথিবীতে সব সন্তানের জন্য মা একটা বিশ্বাস,আস্থা, ভরসার জায়গা।মা মানে সন্তানের কাছে একটা শ’ক্তি।মা মানে যার কাছে সব সমস্যার সমাধান থাকে। মায়ের একটা উৎসাহমূলক কথা সন্তানের সা’হসিকতা বাড়িয়ে দিতে পারে আবার মায়ের একটা নে’তিবাচক কথাই সন্তানের সা’হসিকতার ভি’ত না’ড়িয়ে দিতে পারে।প্রত্যেক সন্তানের কাছে মা একটা দু’র্বল জায়গা।তারা ভাবে পৃথিবীর সবাই তাদের বি’পক্ষে যাক,কিন্তু মা পাশে থাকবে।মায়েরা সবসময় সন্তানের ভালোটাই চায়।কখনো খা’রাপ কামনা করে না। আশফাক সাহেবও তাই ভাবতেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন নি বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে উনার মা সেলিনা খাতুন উনার ঘরেই আ’গুন লাগিয়ে দেবেন,স্ত্রীর সাথে ভু’ল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করিয়ে দিবেন।
“তোমার মায়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি।কিন্তু যোগাযোগ করতে পারি না।ওর বাবার বাড়িতেও ফোন করি তারা জানায় ওখান থেকে চলে গেছে, কোথায় গেছে ঠিকানা জানে না,রাবেয়া কাউকে জানায় নি।ওরা আমাকে দো’ষারোপ করেছে। ভেবেছিলাম কবিরের সাথে কথা বলবো কিন্তু বিদেশে আসার পর ওখানকার সিম ব্যবহার করতে হয়।খুব কাছের মানুষ ব্যতিত আর কারো নাম্বার ছিলো না আমার কাছে।ওখান থেকে কোনো ভাবে কিছু করতে পারছিলাম না।রাবেয়ার ওপর রা’গ হয়েছিল, ও কেনো আমার সাথে যোগাযোগ করলো না।সেই রা’গ থেকে আমিও আর কোনো যোগাযোগ রাখি নি।কিন্তু আমি তখন বুঝতে পারি নি মা একা আমাকে নয়, রাবেয়াকেও ভুল বুঝিয়ে রেখেছে। মায়ের কথা ধরে রাবেয়াও আমাকে ভুল বুঝেছিলো,রা’গ করেছিলো,সেই রেশ থেকেই সেও কোনো যোগাযোগ করে নি আমার সাথে।”
এই কথার মানে বুঝতে পারে না আহনাফ।বলে_
“মানে?”
শব্দ করে শ্বাস ছাড়ে আশফাক সাহেব।বলে_
“মা রাবেয়াকে বলেছে_
কবিরের সাথে জড়িয়ে যেই ঘটনা র’টানো হয়েছে সেটা নাকি আমি বিশ্বাস করেছি,বলেছি আমি রাবেয়াকে আমার জীবনে আর চাই না,তার মুখটাও নাকি দেখতে চাই না।এবং এও বলেছি বিদেশ থেকে এসে তাকে তা’লাক দেবো। চরি’ত্র’হীন মহিলা বলে সম্বোধন করেছি সাথে আরো নানা রকম বা’নোয়াট কথা বলে তোমার দাদি রাবেয়াকেও ভু’ল বুঝিয়ে দেয়।
তোমার মা তখন এমন ছিলো না। খুব সহজ সরল একজন মহিলা ছিলো।পারিপা’র্শ্বিক জ্ঞান কম ছিলো।মনে কোনো প্যা’চ ছিলো না।তাই যে যা বলতো বিশ্বাস করে ফেলতো,যাচাই বাছাই করে নি।আমিও তাই, রাবেয়া ওপর রা’গ করে মায়ের কথাগুলো যাচাই বাছাই করি নি।আর এখানেই ছিলো আমাদের ভু’ল। ভু’ল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়,তৈরি হয় দূ’রত্ব।কেউ কারো সাথে যোগাযোগ রাখি নি আর।”
এবার আহনাফের মনে পড়ে সে যখন বাবাকে মিস করতো তখন মাকে বলতো বাবাকে ফোন করতে। কিন্তু রাবেয়া করতো না।এখন বুঝতে পেরেছে কেন করতো না।
আশফাক সাহেব আবার বলেন_
“ভু’লটা আমারই বেশি ছিলো। রাবেয়া তখন অবুঝ ছিলো।ঠিক ভু’লের বিবেচনা বোধ কম ছিলো।তবে আমার উচিত হয় নি মায়ের কথা ধরে বসে থাকা,ব্যাপারটা খুঁ’টিয়ে দেখা উচিত ছিলো। কিন্তু ওই যে রা’গ,মা’ত্রারি’ক্ত রা’গ ছিলো।এই রা’গই তোমাদের থেকে আমাকে এতো দূরে নিয়ে গেছে।
এইসব ঘ’টনা নিয়ে অনেকদিন ধরে হ’তাশাগ্র’স্থ ছিলাম। খুব মনে পড়তো তোমাদের কথা কিন্তু রা’গ আর ই’গো আমাকে ঝোঁ’কের মতো ধরে ছিলো।সব এক পাশে রেখে কাজে মন দিয়েছি।এসব কথা ভুলে থাকার জন্য সারাদিন কাজে ডুবে থাকতাম।টাকা পাঠাতাম মায়ের কাছে।তখন তোমাদের কথা ভাবতাম কোথায় আছো?কেমন আছো? মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করতাম যদি কোনো খবর দিতে পারেন। কিন্তু আশানুরূপ কিছুই পেতাম না,হ’তাশ হতাম। এভাবেই একা একা প্রবাসে কা’টিয়েছেন।ক’ষ্ট করে টাকা পয়সা ইনকাম করে দেশে পাঠাতাম,আর তোমাদের কথা ভাবতাম।অনেক নি’র্ঘুম রাত কে’টেছে আমার।
একদিন আমার বিদেশি নাম্বার জোগাড় করে কবির আমাকে ফোন দেয়।ওর সাথে কথা বলে আমার মাথায় যেনো আকাশ ভে’ঙ্গে পড়ে।মা যে ওর সাথে রাবেয়াকে জড়িয়ে এতো বড়ো মি’থ্যে একটা কা’ন্ড করেছে তা ও বা রুমি কেউই জানতো না।জেনেছে অনেক পরে,তাও আবার রাবেয়ারই কাছে।ওর কাছেই জানতে পারি রাবেয়া একটা ছোট বাসা ভাড়া করে তোমাকে নিয়ে থাকে।তবে তোমরা দুজন নও,আরো একজন আছে।আমার উর্মি মামনি।ওর কাছে জেনেছি আমার ফু’টফু’টে একটা মেয়ে হয়েছে।রা’গের ব’শে প্রায় ভু’লে বসেছিলাম রাবেয়া তখন অ’ন্তঃস’ত্ত্বা ছিলো।বুকটা কেঁ’পে উঠেছিলো এসব শুনে।বিশ্বাস করো বাবা,আমি তোমার মাকে অ’বিশ্বাস করি নি শুধু আমার রা’গ হয়েছিল কেনো সে আমার সাথে যোগাযোগ করলো না।পরে জানতে পারি সেও তো আমাকে ভু’ল বুঝে বসে আছে।মাথা কাজ করা ব’ন্ধ করে দিয়েছিলো।তারপর কবিরই আমাকে সব ঘটনা খুলে বলে। রাবেয়া আর ওর নামে মায়ের সব কথা বা’নোয়াট ছিলো।রাবেয়াকে উনি যা যা বলে ভু’ল বুঝিয়েছে সবকিছু আমি কবিরের কাছেই জানতে পারি।রা’গে শরীর কাঁ’পছিল আমার।সবকিছু ছি’ন্ন ভিন্ন করে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো।
বিদেশে আর থাকতে পারছিলাম না।চলে আসি দেশে।মা কেনো এতো বড়ো একটা অ’ন্যায় করলো তার কৈফিয়ত তো নিতে হবে।
আমাকে বাড়িতে দেখে তোমার দাদি ভী’ষণ চম’কায়। হ’ঠাৎ আমাকে এভাবে তিনি আশা করেন নি।প্রথমে সুন্দরভাবেই কথা বলে কিন্তু যখন আমি ওনার এই নোং’রা কাজে জন্য কৈফিয়ত চাই তখন তিনি প্রচ’ণ্ড অশা’ন্তি শুরু করেন। ঘুরিয়ে পেঁ’চিয়ে নিজের দো’ষ ঢাকার চেষ্টা করেন।তখন আমিও থেমে থাকি নি,আমার স্ত্রী সন্তানের সাথে এতো বড়ো অ’ন্যায় করার জন্য ক’ঠিন ক’ঠিন কথা শুনাই। সেইদিন তুমুল ঝ’গড়া হয় মায়ের সাথে আমার।
রা’গের মাথায় বিদেশ থেকে চলে এসেছি।তখন আমি পুরোপুরি শূ’ন্য।হাতে কোনো জামানো টাকা পয়সা ছিলো না।যা ইনকাম করতাম সব দেশে পাঠাতাম মায়ের কাছে।লাখ লাখ টাকা পাঠিয়েছি,মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করা ক’ষ্টের টাকা। নিজের জন্য কিছু রাখতাম না,ভাবতাম সংসার চালানোর সাথে সাথে কিছু টাকা হয়তো মা জমিয়ে রাখে আমার জন্য।দেশে আসার পর আমার কাছে কোনো টাকা ছিলো না,তাই উনার কাছে আমি টাকা চাই,যা আমার প্রাপ্য ছিলো।উনি তখন আমাকে বলে_
“কীসের টাকা? কোনো টাকা নেই,সব টাকা তো সংসারেই খরচ হয়ে যায়।”
শুধু এই বলেই থেমে থাকে না,টাকা চাওয়ার জন্য যা তা বলে বসে আমায়। কা’ন্নাকা’টি করে,ইমো’শনাল ব্ল্যা’কমে’ইল করে।নি’র্বাক হয়ে অ’বিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ।বুকটা ফে’টে চৌ’চির হয়ে যাচ্ছিলো।খেয়ে না খেয়ে পরিবারের কথা চিন্তা করে রাত দিন এক করে খেটে টাকা কামিয়ে পরিবারকে পাঠিয়েছি।দেশে ফিরে সেই টাকা চাওয়ার পর শুনতে হচ্ছে “কোনো টাকা নেই।”
কোনো কথা বলি নি,একটা শব্দ ব্যয় করি নি আর।বাড়ি ছেড়ে চলে আসি।তোমার দাদি আমাকে অনেকবার আ’টকানোর চেষ্টা করে, কান্নাকা’টি করে। কিন্তু উনার কান্না আমার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারি নি সেইদিন।সব ছেড়ে ছু’ড়ে চলে আসি।
তখন নিজেকে এক পরা’জিত সৈ’নিক মনে হচ্ছিলো। সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি।কি করবো,কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। মানুষিক ভাবে খুব ভে’ঙে পড়েছিলাম।মনে পড়ে রাবেয়ার কথা,ও তো আমাকে ভু’ল বুঝেছে।আমাদের দুজনের মধ্যে ভু’ল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে।সেটাতো ভা’ঙতে হবে তো।কবিরকে ফোন করি,রাবেয়ার ঠিকানা জোগাড় করি।
চলে যাই তোমাদের কাছে। তোমার মা আমাকে দেখে কথা বলতে চাইছিলো না প্রথমে।যখন সব কথা খুলে বলি তখন ও নিজেও অবা’ক হয়, বিশ্বাস করতে পারছিলো না মা এমন কাজ করেছে। নিজের ভেতরের কথাগুলোও আমাকে বলে,যা যা মি’থ্যে মা ওকে বলেছে।ওর মনের সব ভুল ভা’ঙে। দুজন দুজনের কাছে ক্ষ’মা চাইলাম।সব ভু’ল বোঝাবুঝি মিটমাট করে নিলাম সেইদিন।
কিন্তু তখন তুমি আমাকে স’হ্য করতে পারতে না।এটাই স্বাভাবিক ছিলো,বাবা।তুমি যা দেখেছো তাতে এমন করারই কথা,তা আমি বুঝতাম।কিন্তু তোমাকে সব খুলে বলার মতো অবস্থা আমার ছিলো না।পরিবার থেকে এমন আঘা’ত পেয়ে আমি মানুষিক ভাবে খুব বিপ’র্যস্ত হয়ে পড়ি।সবসময়ের মতো তোমার মা সাপোর্ট করেছে,পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছে। সেবাযত্ন করে স্বাভাবিক করেছে।এর মধ্যে ছোট উর্মিকে দেখে আমার বুকটা পু’ড়ে যেতো।ওকে আর তোমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করতো খুব,পারতাম না।
তারপর ভাবলাম আবার বিদেশে যাবো। এবার যা করবো তোমাদের জন্য করবো,নিজের জন্য করবো।আবার চলে যাই প্রবাসে।
আমার জীবনের একটা বা’জে অভিজ্ঞতা ছিলো এটা,যা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না।
তবে জানো বাবা?এই অভিজ্ঞতা থেকে বড়ো একটা শিক্ষা পেয়েছি আমি তা হলো,কখনো কারো মুখের কথা শুনে বিশ্বাস করে ফেলা ঠিক নয় সে যতো আপন মানুষই হোক না কেনো।সব কিছু যাচাই করেই একটা মানুষেকে বিচার বিবেচনা করা উচিত যে সে আদেও দো’ষী কী না।
আরো একটা ব্যাপার হচ্ছে স্বামী-স্ত্রী।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে দেওয়া বা তৃতীয় ব্যক্তির কথা শুনে চলা একদমই উচিত নয়।সেটা মা হলেও নয়।মাকে মায়ের জায়গায় আর স্ত্রীকে স্ত্রীর জায়গায় রাখা উচিত।এক জনের কথা শুনে আরেকজনকে ক’ষ্ট দেওয়া একধরনের কা’পুরুষের লক্ষণ।স্বামী স্ত্রী দুইটি দেহ তবে একটি প্রাণ এটাই ভাবা উচিত।ঝ’গড়া ঝা’মেলা,ভু’ল বোঝাবুঝি যা কিছুই হোক দেরিতে হলেও নিজেদেরটা নিজেরা মিটমাট করা বুদ্ধিমানের কাজ।এটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।
তোমার মা একটা মাটির মানুষ।পুরো পৃথিবীর সামনে আমি বুক ফুলিয়ে বলতে পারবো আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে রাবেয়ার মতো একজনকে আমার জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছি।”
নিজের কথা শে’ষ করে বড়ো একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন আশফাক সাহেব। এতো দিন থেকে চেপে রাখা কথাগুলো ছেলেকে বলতে পেরে বড়োই শান্তি অনুভব করছেন তিনি।উনার ধারনা আহনাফ বুদ্ধিমান,সে অবশ্যই বুঝতে পারবে তার বাবা ইচ্ছে করে কিছু করে নি।
মাথা নিচু করে বসে আছে আহনাফ।এতো কিছু সত্যিই তার অজানা ছিলো।সে যা দেখেছে তার মধ্যেও যে আরো দেখা আরো জানা বাকি ছিলো তা কখনোই ভাবতে পারে নি।মানুষ এতোটা নি’চু মেন্টালিটির কী করে হতে পারে?কী করে?
ঘৃ’ণায় শরীর কেঁ’পে ওঠে তার।রা’গ হয় বাবা মায়ের ওপর।এই কথাগুলো ওকে আগে কেনো জানানো হয় নি।কেনো ধোয়াসার মধ্যে রাখা হয়েছে।দা’রাজ কন্ঠে বলে_
“এইসব কথা আগে কেনো জানান নি আমাকে?”
কন্ঠে কী রা’গ ছিলো নাকি অ’ভিমান?ধরা গেলো না।
“আমি বলতে বারণ করেছিলাম।”
আশফাক সাহেব কিছু বলার আগেই রাবেয়া কথাটা আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বলে।বাবা ছেলে দুজনেই দরজার দিকে তাকায়। রাবেয়া আর উর্মি এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কথাই শুনছিলো।উর্মির চোখে টলমলে পানি। মায়ের কথা শুনে দাড়িয়ে যায় আহনাফ।
অধৈ’র্য কন্ঠে বলে_
“কিন্তু কেনো,আম্মু?”
এগিয়ে এসে ছেলের সামনে দাঁড়ায় রাবেয়া।মায়ের সাথে উর্মিও ভেতরে আসে। রাবেয়া মুখে হাসি টেনে ছেলের গালে স্নেহের হাত রাখেন।অত্যন্ত কোমল কন্ঠে বলেন_
“সব কিছুর একটা সঠিক সময় থাকে বাবা।তখন তুমি টিনেজার ছিলে,অ’বুঝ ছিলো।তার ওপর এমনেই তোমার বাবার ওপর তোমার রা’গ ছিলো এসব কথা বললে কিছুই বুঝতে চাইতে না বরং আরো রা’গারা’গী করতে। পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হতো।কোনটা ঠিক কোনটা ভু’ল তা বুঝতে পারতে না।
এখন তুমি বড়ো হয়েছো,ম্যাচিউর হয়েছো। সবকিছু বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বোঝার মতো জ্ঞান তোমার হয়েছে।এখন এই কথাগুলো শোনার পর তুমি ঠিক ভু’ল বিবেচনা করতে পারবে। এবার বুঝেছো কেনো বলি নি?”
চুপ হয়ে যায় আহনাফ।মায়ের কথার মানে সে ধরতে পেরেছে।ভুল কিছু বলে নি রাবেয়া।বুঝতে পেরেছে আহনাফ।
রাবেয়া ছেলের কাধে হাত রাখে,তাকায় আহনাফ।ইশারা করে আশফাক সাহেবের দিকে।ইশারায় বাবার দিকে তাকায় সে। মাথা নিচু করে বসে আছেন আশফাক সাহেব।আজকে আর আহনাফকে কিছু বলতে হয় নি।সে নিজেই আস্তে করে যেয়ে বাবার পাশে বসে। আহনাফকে পাশে বসতে দেখে তার দিকে তাকায় আশফাক সাহেব। আশফাক সাহেব তাকানোর সেকেন্ডের মাথা আহনাফকে উনি নিজের বুকে আবিষ্কার করেন।
“আ’ম স্যরি আব্বু।”বাবাকে জড়িয়ে ধরে ভেজা কাঁ’পা কন্ঠে সুধায় আহনাফ।
পা’থর হয়ে গেলেন আশফাক সাহেব।কতো বছর পর? ঠিক কতো বছর পর আহনাফের মুখে “আব্বু” ডাকটা শুনলেন।বিমূ’ঢ় হয়ে বসে আছেন। আহনাফ উনাকে জড়িয়ে ধরেছে,আব্বু বলে ডেকেছে সাথে স্যরিও বলেছে।ব্যাপারটা যখন ব্রেনে প্র’সেস হলো তখন ছেলে মেয়ে আর স্ত্রীর সামনেই হু হু করে কেঁ’দে ফেললেন মধ্যবয়ষ্ক আশফাকুর রহমান।
চোখে টলমলে পানি নিয়ে হেসে ফেললো উর্মি।অবশেষে,,, অবশেষে বাবা আর ভাইয়ার মান অভিমানের চ্যাপ্টার ক্লো’জ হলো।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে ছেলে আর স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছেন রাবেয়া।চোখ দিয়ে এক ফোঁটা সুখের অ’শ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে গেলো।কথায় বলে না,সবরে মেওয়া ফলে।আজ আল্লাহ উনার সবরের ফল দিয়েছেন।মুখে তৃপ্তময় হাসি নিয়ে বাবা ছেলের আবেগঘন মুহূর্তটা উপভোগ করছেন।
অনেক অপেক্ষা,মান অভিমানের পর অবশেষে সন্ধি হলো আশফাকুর রহমান এবং আহনাফ রহমানের।
চলবে….