অবশেষে সন্ধি হলো পর্ব-০৫

0
1010

#অবশেষে_সন্ধি_হলো
#পর্ব:৫
#লেখিকা: ইনায়া আমরিন

অনেকদিনের কাঙ্ক্ষিত চাওয়া যখন পূর্ণ হয় তখন মানুষের মনটা আনন্দে পু’লকিত হয়ে ওঠে। প্রশান্তিতে ছেয়ে যায় হৃদয়। আহনাফের অবস্থাও তাই।মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরী হয়েছে।

আহনাফের পড়ালেখার সমাপ্তি ঘটেছে অনেক আগেই। কিন্তু পড়ালেখার পথটা সহজ ছিলো না তার জন্য।স’হ্য করতে হয়েছে অনেক ক’ষ্ট,করতে হয়েছে অনেক পরিশ্রম।আর সবকিছুতে ছিলো রাবেয়ার উৎসাহ অনুপ্রেরণা। পড়ালেখা শে’ষে চাকরি পাওয়াটাও সহজ নয়। অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে আজ অপেক্ষার ফল মিললো।এই সব অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড়ো অবদান তার মায়ের।তাই এই সুখবরটা সবার আগে মাকেই জানাবে সে।সে জানে এখন মাকে রান্নাঘরেই পাবে তাই চলে যায় সেখানে।
.

“আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। সকাল সকাল ভালো একটা খবর শোনালে।”

আহনাফের মুখ থেকে সুসংবাদ শুনে শুকরিয়া আদায় করে রাবেয়া। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে জড়িয়ে ধরেন।সবসময়ের মতো মন প্রাণ ভরে দোয়া করেন ছেলের জন্য।

“কনগ্রেচুলেশন ভাইয়া।”

উচ্ছাসিত হয়ে মুখভর্তি হাসি নিয়ে আহনাফকে কথাটা বলে উর্মি।সে যে কি পরিমান খুশি সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

আহনাফ মুখে হালকা হাসি টেনে বোনকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,”থ্যাংক ইউ।”

আশফাক সাহেব একপাশে দাড়িয়ে সব দেখছেন।তার গ’ম্ভীর ছেলের মুখে খুশির ছাপ যা তিনি স্পষ্ট দেখতে পারছেন। মানুষ যখন নিজের চেষ্টায় ক’ষ্ট করে কোনো কিছু অর্জন করে পায় তখন সেই আনন্দ খুশি তার চোখে মুখে প্রকাশ পায়। কিন্তু দুঃ’খের বিষয় ছেলের এই অর্জনে তার কোনো অবদান নেই। রাবেয়ার সহায়তা অনুপ্রেরণাই আহনাফকে আজ এখানে এনেছে।ছোট থেকে রাবেয়াই আহনাফকে সব রকমের সাপোর্ট দিয়ে এসেছে।ছেলে মেয়ের জন্য তেমন কিছুই করতে পারেন নি তিনি।এই নিয়ে প্রতিটা দিন অনু’তাপে ভোগেন। কিন্তু তারও বা কি করার ছিলো।সে ছিলেন পরিস্থিতির শিকার।

স্বামীর দিকে চোখ পড়ে রাবেয়ার।মায়া মায়া চাহনিতে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।তা দেখে রাবেয়া আহনাফকে ইশারা করে বাবার কাছে যাওয়ার জন্য।

মায়ের চোখের ইশারা বুঝতে পারে আহনাফ। এতোক্ষণ মুখে লেগে থাকা পাতলা হাঁসিটা নিভে যায়।বড়ো করে নিঃশ্বাস ফেলে আশফাক সাহেবের দিকে তাকায়। তৎক্ষণাৎ চোখে ছোটবেলার চিত্র ভেসে আসে।যখন তার বাবাকে দরকার ছিলো তখন সে বাবাকে পাশে পায় নি। মায়ের সাথে যখন একা থাকতো বাবাকে অনেক মিস করতো সে।রাতে মায়ের ফোন নিয়ে কল করতো বাবার নাম্বারে কিন্তু আশফাক সাহেব ধরতেন না। এছাড়াও যেদিন উর্মি হয়েছিলো, মায়ের কান্নায় যখন আহনাফের দিশেহারা অবস্থা তখন সবার আগে বাবার কথাই মনে পড়েছে।বাবাকে ফোন করে জানাতে চেয়েছে কিন্তু তিনি রিসিভ করে নি।স্কুলে যখন যেতো সবাইকে দেখতো বাবার হাত ধরে স্কুলে আসতে।তারও খুব ইচ্ছে করতো তার বাবার সাথে স্কুল যেতে কিন্তু তখন বাবা নামের মানুষটা ছিলো না তার কাছে।খা’রাপ সময়টাতে যখন পাশে ছিলো না আজ ভালো সময়টাতেও উনাকে আর পাশে চায় না আহনাফ।

চিবুক শ’ক্ত করে মায়ের উদ্দেশ্য বলে_
“আমার দ্বারা সম্ভব না।”

বলেই হনহন করে রুমে চলে যায়। অসহায় দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকায় উর্মি।বাবা আর ভাইয়ের এই দ্ব’ন্দ্ব তার আর ভালো লাগছে না। দোয়া করে খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাক,বাবা ছেলে এক হয়ে যাক।

পেছন থেকে রাবেয়া কয়েকবার ডাকে আহনাফকে। থামিয়ে দেয় আশফাক সাহেব।মলিন হেসে বলে_
“এটাই স্বাভাবিক রাবেয়া।ছেলেটা দুঃ’খের সময় যাদেরকে পাশে পেয়েছে সুখের সময়টাও তো তাদের সাথেই ভাগাভাগি করবে।বাবা হয়ে আমি ওর জন্য কিছু করতে পারি নি?আদর্শ বাবা হতে পারি নি।এটাই আমার প্রাপ্য ছিলো।”

“আপনার তো কোনো দো’ষ ছিলো না। একটা ভু’লবোঝাবুঝি থেকে…”

রাবেয়াকে থামিয়ে দেয় আশফাক সাহেব।বলে_
“যা হয়ে গেছে হয়ে গেছে।এগুলো মনে পড়লেও ক’ষ্টে বুকটা ভার হয়ে আসে। আর আজকে একটা খুশির দিন। ক’ষ্টের কথা মনে করে দিনটা মাটি করতে চাইছি না।”

তারপর চোখের কোণে জমা জল এক আঙ্গুল দিয়ে মুছে মুখে হাসি টেনে বলে_
“আমি বরং দোকানে যাই মিষ্টি কিনে আনি।এতো ভালো একটা খবর মিষ্টি ছাড়া চলে?”

রাবেয়া মলিন মুখে স্বামীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। তারপর মুখ ঘুরিয়ে আহনাফের বদ্ধ রুমের দিকে তাকায়। এভাবে আর চলে না। মানুষ কয়দিন বাঁচে?ছোট একটা জীবনে কী বাবা ছেলে মান অ’ভিমান করেই কা’টিয়ে দেবে নাকি? অনেক দিনের এই ঝা’মেলার এবার একটা সমাধান হওয়া চাই।

মায়ের কাঁধে হাত রাখে উর্মি,তাকায় রাবেয়া। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে।উর্মির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে_
“ঠিক হয়ে যাবে। ক্ষণিকের রা’গ অ’ভিমান মাত্র।”
.

বিকেলে অথৈ আসে।চোখে মুখে হাসির উচ্ছাস।তবে সে একা আসি নি। দুটো মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে এসেছে।একটাতে সাদা মিষ্টি আরেকটা প্যাকেটে কালো মিষ্টি।কালো মিষ্টি আনা আহনাফের উদ্দেশ্যে। আহনাফ কালো মিষ্টি খেতে বেশি পছন্দ করে।

সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে চা খাচ্ছিলেন আশফাক সাহেব।পাশে বসে ছিলো উর্মি। কলিং বেলের আওয়াজে দরজা খুলতে গেলো।আহনাফ মাত্র রুম থেকে বের হয়ে টেবিল থেকে পানি নিয়ে পানি খাচ্ছিলো। অ’সময়ে অথৈকে দেখে কপালে ভাঁ’জ পড়ে। আবার কী মতলবে এসেছে?

উর্মি অথৈকে বলে,”তুই আসবি বলিস নি তো?”
উর্মির কথায় চোখ মুখ কুঁ’চকে ফেলে অথৈ।যেনো চরম বির’ক্ত হয়েছে।তখন রান্না ঘর থেকে রাবেয়া প্লেট ভর্তি পাকোড়া নিয়ে আসছিলো। রাবেয়াকে দেখে অথৈ বলে_

“আন্টি এখন আমাকে আসতে হলে কী বলে আসতে হবে?তুমি না বললে আমিও তোমার আরেকটা মেয়ে।তাহলে মেয়ে মায়ের বাসায় আসতে হলে কেনো বলে আসবে। ঠিক বলেছি না আঙ্কেল?”

রাবেয়া রান্নাঘর থেকেই অথৈকে দেখেছে।অথৈয়ের কথা শুনে আশফাক আর রাবেয়া দুজনেই হেসে ফেলে। হাসতে হাসতেই রাবেয়া বলে_
“ঠিকই তো, মায়ের বাসায় মেয়ে আসবে এতে এতো বলাবলির কী আছে।অথৈ মা এসো,বসো। পাকোড়া বানিয়েছি তোমার তো পছন্দের।”

অথৈ উর্মির দিকে তাকিয়ে দু’ষ্টু হাসি দেয়।উর্মি অসহায় হয়ে বলে,”নরমাল কথাই তো জিজ্ঞাসা করলাম।”

দূর থেকে আহনাফ বির বির করে বলে,”নরমালটাকে এব’নরমাল বানানোই এই মেয়ের কাজ।”

অথৈ চ’ঞ্চল পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলে_
“আন্টি আঙ্কেল নিন মিষ্টি খান।”

সবাই একটু অবা’ক হয়ে অথৈয়ের কান্ড দেখছে। আশফাক সাহেব জিজ্ঞাসা করে_
“কীসের মিষ্টি মামনি?”

যেকোনো পরিস্থিতিতে মি’থ্যে সাজিয়ে ফেলতে পারে অথৈ।জবাব ঠোঁটের আগায় ছিলো,বলার অপেক্ষা মাত্র।

“হয়েছি কী আঙ্কেল,আমি টেস্ট এক্সামে সবগুলো সাবজেক্টসে ভালো মার্কস পেয়ে পাশ করেছি।সেই আনন্দে ফ্রেন্ডদেরকে আজকে ট্রিট দিয়েছি। আপনাদের জন্য মিষ্টি এনেছি।মা সবসময় বলে আনন্দটা সবার সাথে ভাগাভাগি করতে হয়।আমি সেটাই করছি।ভালো করেছি না আঙ্কেল?”

হো হো করে হেসে উঠলো সবাই। শুধু আহনাফ বাদে।সে ভ্রু কুঁচকে বলে_
“টেস্টে ভালো রেজাল্ট করার জন্য মিষ্টি এনেছো?আর ফাইনালে করলে কী করবে?পুরো দোকান তুলে নিয়ে আসবে?”

কথাটা ভালো লাগলো না অথৈয়ের। সূ’ক্ষ্ম ভাবে যে তাকে খোঁ’চা মা’রা হয়েছে তা সে খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে।তাই পাল্টা জবাবে বলে_
“দরকার হলে তাই করবো,আপনার কোনো স’মস্যা?”

আহনাফ উত্তর দেয় না।এই মেয়ের কথায় উত্তর দেয়া মানে নিজের এনার্জি ন’ষ্ট করা।

অথৈ সবাইকে নিজের হাতে মিষ্টি খাওয়ায়।মেয়েটার এই চ’ঞ্চলতা যেনো পরিবেশটাতে রমারমা ভাব নিয়ে এসেছে।সবাইকে খাওয়ানো শে’ষে সে প্যাকেটটা থেকে কালো মিষ্টি নিয়ে আহনাফের সামনে যায়। মিষ্টি করে হেসে বলে_
“নিন,আপনিও খান।”

গ’ম্ভীর কন্ঠে আহনাফ সুধায়_
“আমি চেয়েছি?”

“আহা!এতো কথা বলেন কেনো?সবাই খেয়েছে আপনিও খাবেন,নিন।”

“খেয়ে নাও। তোমার তো কালো মিষ্টি পছন্দ।”রাবেয়া আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বলে।

আর ত’র্ক করে না অথৈয়ের হাত থেকে মিষ্টিটা নিয়ে খায় আহনাফ।সবার অগোচরে অথৈ আস্তে করে আহনাফের উদ্দেশ্যে বলে_

“নতুন চাকরির জন্য শুভকামনা।”

অবা’ক হয়ে তাকায় আহনাফ।তার মানে মিষ্টিটা এইজন্যই আনা,বাকি সব বানোয়াট। কিন্তু এই মেয়ে জানলো কী করে? তারপর মনে পড়লো এই মেয়ের বেস্টফ্রেন্ড তারই বোন। উর্মির কাছেই শুনেছে হয়তো।

“তুমি একদম ঠিক দিনেই মিষ্টি এনেছো মামনি।আরো একটা ভালো খবর আছে।”আশফাক সাহেবের কথা অবাক হওয়ার ভান করে অথৈ। সেভাবেই বলে_

“কী খবর আঙ্কেল?”
“আহনাফের জব হয়েছে।”
“ওমা তাই নাকি? কনগ্রেচুলেশন ভাইয়া।”
নাটক দেখে বির’ক্ত লাগছে আহনাফের। কিন্তু বাবা মা সামনে তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলে_
“থ্যাংকস।”

নাটক শুধু আহনাফ দেখছে না,দেখছে উর্মিও।সে তো বলেই দিয়েছিলো জবের কথাটা। কিন্তু অথৈকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো সে জানতোই না। উর্মি প্রথম দেখেই বুঝেছিলো টেস্টের রেজাল্ট সব ভেল’কিবাজি। মিষ্টি আনার আসল কারণ আহনাফ।অথৈয়ের এমন কান্ড ভেবে দু পাশে মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে উর্মি।

কিন্তু রাবেয়ার বিচক্ষণ চোখ কোনো কিছুই এড়ালো না। অথৈয়ের চোখের ভাষা সে ঠিকই ধরতে পারে।মেয়েটা এসব কাজকারবার যে কেনো করে,কার জন্য করে তা বুদ্ধিমতী রাবেয়া বেগম জানেন।
.

সকালে আশফাক সাহেব অনেকগুলো মিষ্টি এনেছে এখন আবার অথৈও এনেছে।এতো মিষ্টি কেউ খাবে না। তাই সব বাসায় উর্মিকে দিয়ে মিষ্টি পাঠিয়েছে রাবেয়া।
এবার উর্মি বাড়িওয়ালারদের বাসায় গেলো মিষ্টি নিয়ে।মানে দীপ্তদের বাসায়। কলিং বেল বা’জালে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা দরজা খুলে। উর্মিকে দেখে চ’মৎকার এক হাসি দেয় মাহমুদা।হাসি বজায় রেখে বলে_

“আরে উর্মি যে।কেমন আছো?”

উর্মিও মুখে ভদ্রসূচক হাসি ফুটিয়ে বলে_
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”

“আমিও ভালো আছি। বাহিরে দাড়িয়ে কেনো?ভেতরে এসো।”

উর্মি হাসিমুখেই বলে,”না আন্টি,পরে আসবো। ভাইয়া চাকরি হয়েছে তাই আম্মু মিষ্টি পাঠিয়েছে।”

মাহমুদা “আলহামদুলিল্লাহ” বলে উচ্ছাস প্রকাশ করেন।আরো দুবার উর্মিকে ভেতরে আসতে বলে। কিন্তু উর্মি তাড়া দেখিয়ে ফিরে যায়।তিনিও ভেতরে চলে যান।

দীপ্ত এতোক্ষণ বাহিরে ছিলো,মাত্র ফিরেছে।ফ্রেশ হয়ে এসে রান্না ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। রান্নাঘরে রহিমা খালা আর তার মা মাহমুদা।দুজন মিলে কাজ করছে আর কথা বলছে। হ’ঠাৎ সে রহিমা খালার মুখে “উর্মির” নাম শুনলো মনে হলো তাই দাড়িয়ে পড়লো।রহিমা খালা উর্মির প্রশংসা করছে মাহমুদার কাছে।

“তো বুঝছেন খালাম্মা মাইয়াডা এত্তো ভালা।এক্কেরে লাখে একখান।কামকাইজ সব জানে।রান্ধন বাড়ন ধইরা ঘর ধোর ঘুছান বেক কাম জানে।চেয়ারা চুরুতও মাশাআল্লাহ।আচার আচরণের কতা আর কী কমু এতো ভালা, যেতে পাইতো হেতে জিতবো।”

মুচকি হাসে দীপ্ত। প্রিয় মানুষের প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে।তারও লাগছে,খুব ভালো লাগছে‌। কিন্তু ভালো লাগাটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না রহিমা খালার দ্বিতীয় কথা শুনে।

“মেলা সম্বন্ধ আহে।মাস খানেক আগেও আইছিলো তো। সব ভালা ভালা ঘরের পয়সাওয়ালা পোলা। কিন্তু আপায় তহন ফিরায়া দিছিলো,ভাইজান তো বিদাশ ছিলো।বাপ ছাড়া কী আর মাইয়ার বিয়া হইবো বলেন।অহন তো ভাইজান আইছে।অহন মনে হয় মাইয়াডারে বিয়া শাদি দিয়া দিবো।বিয়ার বয়সও তো হইয়া গেছে।”

মুচকি হেসে মাথা নাড়ায় মাহমুদা। মুখে বলে_
“আসলেই মেয়েটা খুব ভদ্র।এমন মেয়েকে কে না ঘরের বউ করতে চায়।”
নিঃশব্দে নিজের রুমে চলে যায় দীপ্ত।

রাত হয়েছে অনেক কিন্তু দীপ্তের চোখে ঘুম নেই।রহিমা খালার কথাগুলো কানে বাজছে।যদি সত্যি এমন হয়?সে কী দেরি করে ফেলছে? সত্যি যদি উর্মিকে হারিয়ে ফেলে?

হারিয়ে ফেলার কথা মাথায় আসতেই ত’ড়াক করে শোয়া থেকে উঠে বসে।ফোন হাতে নিয়ে আজ আর মেসেজ নয় সোজা কল দেয় দীপ্ত।

ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো উর্মি‌। রিংটোনের আওয়াজে সেইদিকে তাকায়।নাম দেখেই বি’ষ্মি’ত হয়।দীপ্ত ভাইয়া?এতো রাতে?
দীপ্ত তাকে সবসময় মেসেজ দেয় কখনও ফোন দেয় নি। তাহলে আজ হ’ঠাৎ কী হলো?ভাবে উর্মি। ভাবতে ভাবতে কল কেটে যায়।

অধৈ’র্য দীপ্ত আবার কল দেয়।এবার অপরপাশের মানুষটা রিসিভ করে।
“ঘুমিয়ে পড়েছিলে?ডি’স্টার্ভ করলাম?”

কল রিসিভ করে সালাম দিতে যাচ্ছিলো উর্মি।তার আগেই দীপ্তের প্রশ্নবান। উত্তর দেয়_
“না মাত্রই ঘুমোতে যাচ্ছিলাম,স’মস্যা নেই।”
“ওহ আচ্ছা।”
“হঠাৎ কী জন্য ফোন দিয়েছেন? কোনো দরকার?”

বড়ো করে দম ফেলে দীপ্ত। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে_
“কালকে একটু দেখা করতে পারবে? প্লিজ না করো না।”

খানিকটা চমকায় উর্মি।এতো রাতে ফোনকল। আবার দেখা করতে চাইছে।কেনো?
“খুব দরকার?”

“হ্যা।”
“ঠিক আছে।কাল ভার্সিটি শেষে দেখা করবো।”
চোখ বুজে শ্বাস ফেলে দীপ্ত।

.
চোখ ব’ন্ধ করে রকিং চেয়ারে বসে আছে আশফাক সাহেব।চোখ ঘুম নেই।পাশে এসে বসে রাবেয়া।

“আহনাফের কথা ভাবছেন তাই তো?”

চোখ মেলে তাকায় আশফাক সাহেব। দৃষ্টিতে কা’তরতা। হালকা হেসে রাবেয়া বলে_

“আর কতো?এবার ছেলেটার অ’ভিমান ভা’ঙান।”

আশফাক সাহেব নিজেও এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলেন এতোক্ষণ।স্ত্রীর কথা মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।কালই কথা বলবে আহনাফের সাথে। ছেলের সাথে এই দূরত্ব আর স’হ্য হচ্ছে না উনার।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে